হাওর বার্তা ডেস্কঃ সন্তানদেরকে দুধেভাতে রাখতে নিতান্তই শখের বসে একটি বিদেশী জাতের গাভী কিনেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস কজাকাবাদ গ্রামের আশিক মিয়া। শখ পেয়েই বসে তাকে। কিনেন একই জাতের আরও দুটি গাভী। শুরু হয় এগুলোর বংশ বিস্তার। তিনি উদ্যোগ নেন ছোট পরিসরে বাড়ির আঙিনাতেই খামার গড়ে তোলার। ‘বিসমিল্লাহ ডেইরী ফার্ম’ নাম নিয়ে সেই যে শুরু হয়েছিল আশিক মিয়ার খামার, আজ সেটি বাণিজ্যিক খামারে রুপ নিয়েছে। দুধ ও গরু বিক্রি করে তিনি এখন বছরে আয় গুনেন ৩৫ লক্ষের অধিক টাকা।
আশিকের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, উঠোনের উত্তর-পূর্বদিকের অংশে বিশাল পরিসরে তার খামার। তার ভেতরে বৃহৎ ঘরটিতে রাখা হয়েছে গাভী ও বাছুর। অপেক্ষাকৃত ছোট ঘরটিতে দশের অধিক ষাড় রাখা। এসময় আশিক মিয়া নিজ হাতে গাভীদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছিলেন। ঘরের পরিচ্ছন্নতায় ব্যস্ত রয়েছেন দুজন কর্মচারী। আরও কয়েকজন কর্মচারীকে দেখা গেল খামারের অন্যান্য কাজে ব্যতিব্যস্ত। এরই ফাঁকে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বললেন আশিক মিয়া। জানালেন তার সফলতার পেছনের গল্প। বললেন, ‘সন্তানদের দুধেভাতে রাখতে ২০১১ সালের প্রথম দিকে অর্ধলক্ষাধিক টাকায় একটি বিদেশী গাভী কিনি। সেটি যে পরিমাণ দুধ দিত, তা পরিবারের চাহিদা মেটানোর পরও বিক্রি করা যেত। মনে হল, বিদেশী গাভী পালন করলে এর দুধ বিক্রয়টা বাড়তি আয়ের পন্থা হতে পারে। যেই ভাবা সেই কাজ। শখের বসেই আরও দুটি বিদেশী গাভী কিনে ফেলি। বংশ বিস্তারের ফলে বাড়তে থাকে গাভীর সংখ্যা। গড়ে তুলি ডেইরী ফার্ম। তারপর আর আমাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
আশিক মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, কোনো রকম সরকারী আর্থিক সহায়তা ছাড়াই সম্পূর্ণ ব্যক্তিগতভাবেই তিনি এ খামার গড়ে তুলেছেন। প্রায় ১২ শতক জায়গার উপর গড়ে উঠা খামারে এখন গাভীর সংখ্যা ৩০টি। এছাড়া রয়েছে ১০টি ষাড় ও বাদবাকি বাছুর। যেগুলোর বাজার মূল্য আনুমানিক দুই কোটি টাকার উপরে। ৩০টি গাভী থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৭৫ লিটার দুধ দোহন করে বিক্রি করা হয়। এক সময় হাত দিয়ে দুধ দোহন করা হলেও এখন আশিক মিয়ার খামারে হাতের স্পর্শ ছাড়াই সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দুধ দোহন করা হয়। এছাড়াও তার খামারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হয়েছে ৬ জন লোকের। তিনি আরও জানান, প্রতিদিন দুই বেলা মিলিয়ে ২৭৫ লিটার দুধ বিক্রি করে এবং ঈদসহ বিভিন্ন সময়ে ষাড় অথবা গাভী বিক্রি করে বছরে ৩৫ লক্ষাধিক টাকা আয় হয় তার।
এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, আশিক মিয়ার খামারের শুরু থেকেই ব্যবস্থাপনা ও ঘাস উৎপাদনের প্রক্রিয়া মানানসই থাকার কারণে সেটা গাভীর মোটাতাজা হওয়া এবং দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আর এ জন্যে তিনি তার খামারের মাধ্যমে সফলতার মুখ দেখেন। একটি গ্রামীণ জনপদে সফল খামারী হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আশিক মিয়া। তার এমন সফলতা অনুপ্রাণিত করছে বিশ্বনাথের বেকার যুবকদের।