ঢাকা ১০:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউজিসির সুপারিশ পাত্তা দিচ্ছে না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০৭:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ অগাস্ট ২০১৫
  • ৩০০ বার

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এই ইউজিসির সুপারিশকেই পাত্তা দিচ্ছে না দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রস্তাবনায় বলেছে- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ৮টি গুচ্ছে এ পরীক্ষা নেয়া যায়। এরই অংশ হিসেবে প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৩টি গুচ্ছ ছাড়াও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য ৫টি গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া যায়।

সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি গুচ্ছ হচ্ছে- বিজ্ঞান অনুষদ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানসহ অন্যান্য অনুষদের জন্য আলাদা গুচ্ছে পরীক্ষা। এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা গেলে শিক্ষার্থীদের এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে দৌড়ঝাঁপ, আলাদা ফরম কেনা ও পরীক্ষায় বসার জন্য সময়, শ্রম, অর্থ গচ্চা এবং ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলত।

কিন্তু বড় ও প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনীহার কারণে আদৌ এ পদ্ধতি চালু হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘কোনো দিনই এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন হবে না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হলে তাদের সেই ইনকাম বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে তারা এ পদ্ধতির বরাবরই বিরোধিতা করে আসছে।’

জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আমরা মন থেকেই চাই সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় আসুক। কিন্তু তারা আসছে না। এটাই দুঃখজনক।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাধ্য করতে পারি না। কারণ তারা স্বাধীন। তবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি ও ব্যয় সংকোচনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় আসা উচিত।’

সূত্র জানায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় আনতে প্রায় একযুগ ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে ইউজিসি। ২০১৩ সালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব উপাচার্যকে নিয়ে বৈঠক করে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ পদ্ধতিতে (এক পরীক্ষার মাধ্যমে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন) নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু ওই শিক্ষাবর্ষে পুরাতন নিয়মেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি পরীক্ষায় মাত্র দুজন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ার পর এ ধরনের ভর্তি প্রক্রিয়াকে ‘ক্রুটিপূর্ণ’ মন্তব্য করে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে আবার গুচ্ছ পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দেয় শিক্ষামন্ত্রী।

এ সময় তিনি সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘ভর্তি বাণিজ্য, কোচিং-গাইড বাণিজ্যের জন্যই অনেকে এ পদ্ধতির বিরোধিতা করছে। তবে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পৃথক পৃথক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার সময়সূচিও ঘোষণা করেছে।

তবে বর্তমানে মেডিক্যাল কলেজগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। এ ছাড়া এইচএসসি ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও অনেকটা এ ধরনের পদ্ধতি চালু হয়েছে সম্প্রতি।

কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আদৌ গুচ্ছ পদ্ধতি চালু হবে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ”আমরা চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজি হয়নি, ছোট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজি আছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের সব শিক্ষার্থীই পড়তে চায়।মধ্যে আমরা যে তাদের বাছাই করব সে জন্য একটি নিজস্ব পদ্ধতি আছে, আইন আছে। তা মেনে পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের ভর্তি না করলে যথার্থ বাছাই হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে আরও বিশদ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৯০টি বিভাগ রয়েছে, তো এ সবের ধরন ৯০ রকমের। একটি পরীক্ষার মাধ্যমে সবগুলোর মান নির্ধারণ কঠিন। কারণ আমরা কয়েকটি ইউনিট করে পরীক্ষা নিয়ে থাকি, তাতেই দেখা যায় সব বিভাগের জন্য তা যথার্থ হয় না। তাই গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা নিয়ে সংশয় থাকছেই।’

সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা বাধ্য করতে পারি না। কারণ তাদের অটোনমি আছে। আমরা শুধু সুপারিশ করতে পারি। মন্ত্রণালায়ের মাধ্যমে সেগুলোকে বাস্তবায়ন করতে হয়।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ইউজিসির সুপারিশ পাত্তা দিচ্ছে না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

আপডেট টাইম : ১০:০৭:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ অগাস্ট ২০১৫

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এই ইউজিসির সুপারিশকেই পাত্তা দিচ্ছে না দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রস্তাবনায় বলেছে- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ৮টি গুচ্ছে এ পরীক্ষা নেয়া যায়। এরই অংশ হিসেবে প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৩টি গুচ্ছ ছাড়াও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য ৫টি গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া যায়।

সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি গুচ্ছ হচ্ছে- বিজ্ঞান অনুষদ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানসহ অন্যান্য অনুষদের জন্য আলাদা গুচ্ছে পরীক্ষা। এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা গেলে শিক্ষার্থীদের এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে দৌড়ঝাঁপ, আলাদা ফরম কেনা ও পরীক্ষায় বসার জন্য সময়, শ্রম, অর্থ গচ্চা এবং ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলত।

কিন্তু বড় ও প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনীহার কারণে আদৌ এ পদ্ধতি চালু হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘কোনো দিনই এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন হবে না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হলে তাদের সেই ইনকাম বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে তারা এ পদ্ধতির বরাবরই বিরোধিতা করে আসছে।’

জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আমরা মন থেকেই চাই সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় আসুক। কিন্তু তারা আসছে না। এটাই দুঃখজনক।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাধ্য করতে পারি না। কারণ তারা স্বাধীন। তবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি ও ব্যয় সংকোচনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় আসা উচিত।’

সূত্র জানায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় আনতে প্রায় একযুগ ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে ইউজিসি। ২০১৩ সালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব উপাচার্যকে নিয়ে বৈঠক করে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ পদ্ধতিতে (এক পরীক্ষার মাধ্যমে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন) নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু ওই শিক্ষাবর্ষে পুরাতন নিয়মেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি পরীক্ষায় মাত্র দুজন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ার পর এ ধরনের ভর্তি প্রক্রিয়াকে ‘ক্রুটিপূর্ণ’ মন্তব্য করে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে আবার গুচ্ছ পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দেয় শিক্ষামন্ত্রী।

এ সময় তিনি সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘ভর্তি বাণিজ্য, কোচিং-গাইড বাণিজ্যের জন্যই অনেকে এ পদ্ধতির বিরোধিতা করছে। তবে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পৃথক পৃথক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার সময়সূচিও ঘোষণা করেছে।

তবে বর্তমানে মেডিক্যাল কলেজগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। এ ছাড়া এইচএসসি ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও অনেকটা এ ধরনের পদ্ধতি চালু হয়েছে সম্প্রতি।

কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আদৌ গুচ্ছ পদ্ধতি চালু হবে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ”আমরা চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজি হয়নি, ছোট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজি আছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের সব শিক্ষার্থীই পড়তে চায়।মধ্যে আমরা যে তাদের বাছাই করব সে জন্য একটি নিজস্ব পদ্ধতি আছে, আইন আছে। তা মেনে পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের ভর্তি না করলে যথার্থ বাছাই হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে আরও বিশদ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৯০টি বিভাগ রয়েছে, তো এ সবের ধরন ৯০ রকমের। একটি পরীক্ষার মাধ্যমে সবগুলোর মান নির্ধারণ কঠিন। কারণ আমরা কয়েকটি ইউনিট করে পরীক্ষা নিয়ে থাকি, তাতেই দেখা যায় সব বিভাগের জন্য তা যথার্থ হয় না। তাই গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা নিয়ে সংশয় থাকছেই।’

সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা বাধ্য করতে পারি না। কারণ তাদের অটোনমি আছে। আমরা শুধু সুপারিশ করতে পারি। মন্ত্রণালায়ের মাধ্যমে সেগুলোকে বাস্তবায়ন করতে হয়।’