ঢাকা ০১:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাখাইনে সেনা-তান্ডব থামেনি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:২১:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৭
  • ২৪৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়েছে
রাখাইনে ক্ষুধার প্রকোপ আর সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের সম্মিলিত নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে এখনও নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে আসছেন রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘ এরইমধ্যে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার খরব দিয়েছে। এদিকে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টায় সীমান্তে অপেক্ষমান রয়েছে।
২৫ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলার পর ক্লিয়ারেন্স অপারেশন জোরদার করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তখন থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে শুরু করে মৌসুমী বাতাসে। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ে দেয় সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয় তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মানুষকে।
জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন ইন্টারসেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ- আইএসসিজি তাদের রবিবারের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগস্টে সহিংসতা জোরালো হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখ তিন হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আর গত এক সপ্তাহে এসেছে ১৪ হাজার রোহিঙ্গা। আইএসসিজি কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকায় ত্রাণ বিতরণের কাজ পরিচালনা করছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবির কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলাম ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি-কে বলেন, রাখাইন থেকে আসা রোহিঙ্গারা তাদের পরিবারের লোকজন তাদের কাছে সরবরাহকৃত ভিডিওতে দেখিয়েছে, সীমান্তের ক্রসিং পয়েন্টে বহু শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। এমন মানুষের সংখ্যা বিশাল বলে জানিয়েছেন ওই সেনা কর্মকর্তা।
রোববার রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, গ্রামে গ্রামে বৌদ্ধদের সহিংসতা চলছে এবং ব্যাপক খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গত ১০/১৫ ধরে তাদের কাছে তেমন কোনো খাদ্য ছিল না এবং সেনারা ও উগ্রবাদী বৌদ্ধরা ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় চলে আসা ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো উপায় ছিল না। গত সপ্তাহে সীমান্তের আঞ্জুমানপাড়া গ্রামের কাছে নোম্যান্স ল্যান্ডে তিন দিন ধরে ১০ হাজার রোহিঙ্গা আটকা পড়ে ছিল। এছাড়া, গত কয়েকদিনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছে।
জসিম উদ্দিন নামে এক স্বেচ্ছাসেবক জানান, মিয়ানমার থেকে আসা লোকজন জানিয়েছে, নাফ নদীর ওপারে আরও হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়ে রয়েছে।
জাতিসংঘ সপ্রতি প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য ৪৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে। এর তিন সংস্থার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নিশ্চিতে সীমান্ত খুলে দিয়েছে। পালিয়ে আসা মানুষদের জন্য নিশ্চিত করেছে নিরাপত্তা আর আশ্রয়। রোহিঙ্গাদের প্রতি স্থানীয়দের আর্তি আর উদারতা আমাদের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে গেছে। জাতিসংঘের মতে, এ অঞ্চলে কয়েক দশকের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি সংখ্যাক ‘শরণার্থীর’ প্রবেশ। এএফপি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রাখাইনে সেনা-তান্ডব থামেনি

আপডেট টাইম : ০১:২১:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়েছে
রাখাইনে ক্ষুধার প্রকোপ আর সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের সম্মিলিত নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে এখনও নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে আসছেন রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘ এরইমধ্যে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার খরব দিয়েছে। এদিকে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টায় সীমান্তে অপেক্ষমান রয়েছে।
২৫ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলার পর ক্লিয়ারেন্স অপারেশন জোরদার করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তখন থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে শুরু করে মৌসুমী বাতাসে। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ে দেয় সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয় তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মানুষকে।
জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন ইন্টারসেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ- আইএসসিজি তাদের রবিবারের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগস্টে সহিংসতা জোরালো হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখ তিন হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আর গত এক সপ্তাহে এসেছে ১৪ হাজার রোহিঙ্গা। আইএসসিজি কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকায় ত্রাণ বিতরণের কাজ পরিচালনা করছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবির কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলাম ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি-কে বলেন, রাখাইন থেকে আসা রোহিঙ্গারা তাদের পরিবারের লোকজন তাদের কাছে সরবরাহকৃত ভিডিওতে দেখিয়েছে, সীমান্তের ক্রসিং পয়েন্টে বহু শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। এমন মানুষের সংখ্যা বিশাল বলে জানিয়েছেন ওই সেনা কর্মকর্তা।
রোববার রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, গ্রামে গ্রামে বৌদ্ধদের সহিংসতা চলছে এবং ব্যাপক খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গত ১০/১৫ ধরে তাদের কাছে তেমন কোনো খাদ্য ছিল না এবং সেনারা ও উগ্রবাদী বৌদ্ধরা ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় চলে আসা ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো উপায় ছিল না। গত সপ্তাহে সীমান্তের আঞ্জুমানপাড়া গ্রামের কাছে নোম্যান্স ল্যান্ডে তিন দিন ধরে ১০ হাজার রোহিঙ্গা আটকা পড়ে ছিল। এছাড়া, গত কয়েকদিনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছে।
জসিম উদ্দিন নামে এক স্বেচ্ছাসেবক জানান, মিয়ানমার থেকে আসা লোকজন জানিয়েছে, নাফ নদীর ওপারে আরও হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়ে রয়েছে।
জাতিসংঘ সপ্রতি প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য ৪৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে। এর তিন সংস্থার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নিশ্চিতে সীমান্ত খুলে দিয়েছে। পালিয়ে আসা মানুষদের জন্য নিশ্চিত করেছে নিরাপত্তা আর আশ্রয়। রোহিঙ্গাদের প্রতি স্থানীয়দের আর্তি আর উদারতা আমাদের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে গেছে। জাতিসংঘের মতে, এ অঞ্চলে কয়েক দশকের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি সংখ্যাক ‘শরণার্থীর’ প্রবেশ। এএফপি।