বাজারে ধানের প্রত্যাশিত দাম না থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন বোরোচাষিরা। লাভ তো দূরের কথা, খরচের টাকা উঠবে কি না তা নিয়ে এখন তাদের দুশ্চিন্তা। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষক ও মিলমালিকদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে। বোরো মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সে জন্য দামও ধরে দিয়েছে সরকার।
খাদ্য অধিদপ্তর মণপ্রতি ধানের দাম ৮২১ টাকা ধরে দিলেও তার প্রভাব নেই উত্তরাঞ্চলের বাজারে। সেখানে মান ভেদে মণপ্রতি সাড়ে ৫০০ ও ৫০০ টাকায় ধান বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় ধান ব্যবসায়ীদের অনেকের কাছে এখনও আমন ধান থাকায় নতুন করে বোরো ধান কেনায় তারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বলে এক মিলমালিক জানিয়েছেন। এরও প্রভাব পড়েছে ধানের দামে।
নীলফামারী সদর উপজেলার পলাশবাড়ীর কৃষক মো. মইনুল ইসলাম বলেন, চার বিঘা জমিতে এবার বোরো চাষ করেছেন তিনি। কৃষাণ দিয়ে বাড়িতে ধান আনা পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ পড়ছে সাত হাজার ২০০ টাকা। তার জমিতে এবার বিঘা প্রতি ১২ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ মণ ধান হবে বলে মনে করছেন মইনুল।
তিনি বলেন, ”১৫ মণ ধান হলে শুকানোর পর তা কমে ১৩ থেকে সাড়ে ১৩ মণ হয়ে যায়। ভালো ধান হলে সেটার দাম বাজারে বস্তা (দুই মণ) ১১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু আমার ধানের কোয়ালিটি ভালো না। এটার দাম বস্তা প্রতি ১ হাজার টাকা হবে বলে মনে হচ্ছে।”
সে হিসাবে প্রতিবিঘার ধান বিক্রি করে তার ছয় হাজার টাকার মতো আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, ”বিঘাপ্রতি প্রায় দুই হাজার টাকা করে লস। এত লস দিয়া কেমনে চলে! নিজের খাটাখাটনির লসতো আছেই।”
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব দেবীডুবার বর্গাচাষি মো. আতাউর রহমান জানান, তাদের ওখানে দুইভাবে জমি বর্গা দেওয়া হয়। বিঘা প্রতি চার হাজার টাকা বা ৫ মণ শুকনা ধান দিতে হয়।
তিনি বলেন, তার চাষ করা জমিতে এবার বিঘাপ্রতি ১৭ থেকে ১৮ মণ করে ধান হবে। শুকানোর পর জমির মালিককে দিয়ে তার ভাগে ১০ মণ করে থাকতে পারে। ৬০০ টাকা মণ ধরে ছয় হাজার টাকা আসবে। অথচ খরচ প্রায় সাত হাজার টাকা। সেক্ষেত্রে কোনো কোনো জমিতে মুখে মুখে খরচ উঠে আসবে, আবার কোনোটিতে লস হবে। তবে মুখে মুখে আসলেও আমি চলব কেমনে? আমার সংসার কীভাবে চলবে- প্রশ্ন রাখেন চার ছেলে-মেয়ের বাবা আতাউর।
গত মঙ্গলবার এই বর্গাচাষি বলেন, ধান উঠার পর কৃষককে সেচের মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এ ছাড়া ধান উঠানোর খরচও ধান বিক্রির টাকা থেকেই আসে। ঋণ থাকলেতো কোনো কথাই নেই। ধান উঠার সাথে সাথে পাওনাদাররা বসে থাকে। তাই দাম যাই হোক, কৃষককে তাৎক্ষণিকভাবেই ধান বিক্রি করতে হয়।
গত কয়েক দিনে ধানের দাম মণপ্রতি এক শ টাকার মতো বাড়লেও অনেক কৃষক এরই মধ্যে ধান বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
দেবীগঞ্জে ২০ বিঘা ধানী জমির মালিক গোলাম মোস্তফাও তার আগামী দিনগুলো নিয়ে চিন্তামুক্ত নন।
তিনি বলেন, ”নিজে চাষ না করে অন্যকে দিয়ে দিলেও বর্গার ১০০ মণ ধান পেতাম। পুরোটাই লাভ থাকত। কিন্তু এখন তো লসে আছি।”
লালমনিরহাট সরকারি কলেজের সাবেক অফিস সহকারী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ”আমারও জমি আছে। জমি বর্গা দেই। সেই জমি থেকে কৃষক আমাকে ধান দেয়। কাঁচা ধানের দাম অন্তত ৭০০ টাকা হলে কৃষক বাঁচতে পারত।”
নীলফামারী জেলা সদরের ছবিরউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক (আইসিটি) মিজানুর রহমান বলেন, বিঘাপ্রতি জমি চাষে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চারা রোপনে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, সারে দুই হাজার টাকা, কীটনাশকে ৪০০ টাকা, নিড়ানিতে ৫০০ টাকা, সেচে ১৫০০ টাকা এবং ধান কাটা ও মাড়াই ১৬০০ টাকা। সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি খরচ ৭ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৭ হাজার ৮০০ টাকার মতো। এর বাইরে লেবার খরচ লাগে, যা অনেক সময় কৃষক নিজেই করেন। সেটা বাদ দিলেও এবারের বাজার অনুসারে কৃষকের লাভ কোনো জায়গায় থাকে?
জেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নে পারিবারিক জমিতে কৃষির সঙ্গে যুক্ত এই শিক্ষক বলেন, ”আগে আমাদের সব জমি নিজেরাই চাষ করতাম। এখন কয়েক বিঘা রেখে বাকিটা বর্গা দিয়ে দিয়েছি। “লস হচ্ছে জেনেও চাষ করি। কারণ এত বছরের কাজ কেমনে ছেড়ে দেই?”
গত বছরের চেয়ে খরচ বাড়লেও ধানের দাম কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন দৈনিক লেবার খরচ সাড়ে তিন শ টাকা। গত বছরও এটা আড়াই শ থেকে তিন শ টাকা ছিল। এ বছর মাড়াইতে ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা লাগলেও গত বছর এটা ছিল ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। তার আগের বছর ছিল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার হক রাইস মিলের মালিক ফিরোজ চৌধুরী বলেন, দেশীয় যে সব ব্যবসায়ী ধান কেনেন তাদের কেনার আগ্রহ এবার কম। কারণ তাদের কাছে এখনও আমন ধান রয়ে গেছে। বাজারে ভারতীয় চাল প্রবেশ করায় এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। গত আমন মৌসুমে শুকনা ধান মণপ্রতি ৬০০ টাকা দাম ছিল। সেখানে বোরোর দাম তো কমই হবে। কারণ মণপ্রতি বোরো ধানে ২২ কেজি চাল হয়, যেখানে আমনে ২৬ থেকে ২৭ কেজি হয়। সেখানে বেশি দামে বোরো কেন কিনবে?
খাদ্য অধিদপ্তর মণপ্রতি ধানের দাম ৮২১ টাকা ধরে দিলেও তার প্রভাব নেই উত্তরাঞ্চলের বাজারে। সেখানে মান ভেদে মণপ্রতি সাড়ে ৫০০ ও ৫০০ টাকায় ধান বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় ধান ব্যবসায়ীদের অনেকের কাছে এখনও আমন ধান থাকায় নতুন করে বোরো ধান কেনায় তারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বলে এক মিলমালিক জানিয়েছেন। এরও প্রভাব পড়েছে ধানের দামে।
নীলফামারী সদর উপজেলার পলাশবাড়ীর কৃষক মো. মইনুল ইসলাম বলেন, চার বিঘা জমিতে এবার বোরো চাষ করেছেন তিনি। কৃষাণ দিয়ে বাড়িতে ধান আনা পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ পড়ছে সাত হাজার ২০০ টাকা। তার জমিতে এবার বিঘা প্রতি ১২ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ মণ ধান হবে বলে মনে করছেন মইনুল।
তিনি বলেন, ”১৫ মণ ধান হলে শুকানোর পর তা কমে ১৩ থেকে সাড়ে ১৩ মণ হয়ে যায়। ভালো ধান হলে সেটার দাম বাজারে বস্তা (দুই মণ) ১১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু আমার ধানের কোয়ালিটি ভালো না। এটার দাম বস্তা প্রতি ১ হাজার টাকা হবে বলে মনে হচ্ছে।”
সে হিসাবে প্রতিবিঘার ধান বিক্রি করে তার ছয় হাজার টাকার মতো আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, ”বিঘাপ্রতি প্রায় দুই হাজার টাকা করে লস। এত লস দিয়া কেমনে চলে! নিজের খাটাখাটনির লসতো আছেই।”
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব দেবীডুবার বর্গাচাষি মো. আতাউর রহমান জানান, তাদের ওখানে দুইভাবে জমি বর্গা দেওয়া হয়। বিঘা প্রতি চার হাজার টাকা বা ৫ মণ শুকনা ধান দিতে হয়।
তিনি বলেন, তার চাষ করা জমিতে এবার বিঘাপ্রতি ১৭ থেকে ১৮ মণ করে ধান হবে। শুকানোর পর জমির মালিককে দিয়ে তার ভাগে ১০ মণ করে থাকতে পারে। ৬০০ টাকা মণ ধরে ছয় হাজার টাকা আসবে। অথচ খরচ প্রায় সাত হাজার টাকা। সেক্ষেত্রে কোনো কোনো জমিতে মুখে মুখে খরচ উঠে আসবে, আবার কোনোটিতে লস হবে। তবে মুখে মুখে আসলেও আমি চলব কেমনে? আমার সংসার কীভাবে চলবে- প্রশ্ন রাখেন চার ছেলে-মেয়ের বাবা আতাউর।
গত মঙ্গলবার এই বর্গাচাষি বলেন, ধান উঠার পর কৃষককে সেচের মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এ ছাড়া ধান উঠানোর খরচও ধান বিক্রির টাকা থেকেই আসে। ঋণ থাকলেতো কোনো কথাই নেই। ধান উঠার সাথে সাথে পাওনাদাররা বসে থাকে। তাই দাম যাই হোক, কৃষককে তাৎক্ষণিকভাবেই ধান বিক্রি করতে হয়।
গত কয়েক দিনে ধানের দাম মণপ্রতি এক শ টাকার মতো বাড়লেও অনেক কৃষক এরই মধ্যে ধান বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
দেবীগঞ্জে ২০ বিঘা ধানী জমির মালিক গোলাম মোস্তফাও তার আগামী দিনগুলো নিয়ে চিন্তামুক্ত নন।
তিনি বলেন, ”নিজে চাষ না করে অন্যকে দিয়ে দিলেও বর্গার ১০০ মণ ধান পেতাম। পুরোটাই লাভ থাকত। কিন্তু এখন তো লসে আছি।”
লালমনিরহাট সরকারি কলেজের সাবেক অফিস সহকারী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ”আমারও জমি আছে। জমি বর্গা দেই। সেই জমি থেকে কৃষক আমাকে ধান দেয়। কাঁচা ধানের দাম অন্তত ৭০০ টাকা হলে কৃষক বাঁচতে পারত।”
নীলফামারী জেলা সদরের ছবিরউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক (আইসিটি) মিজানুর রহমান বলেন, বিঘাপ্রতি জমি চাষে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চারা রোপনে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, সারে দুই হাজার টাকা, কীটনাশকে ৪০০ টাকা, নিড়ানিতে ৫০০ টাকা, সেচে ১৫০০ টাকা এবং ধান কাটা ও মাড়াই ১৬০০ টাকা। সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি খরচ ৭ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৭ হাজার ৮০০ টাকার মতো। এর বাইরে লেবার খরচ লাগে, যা অনেক সময় কৃষক নিজেই করেন। সেটা বাদ দিলেও এবারের বাজার অনুসারে কৃষকের লাভ কোনো জায়গায় থাকে?
জেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নে পারিবারিক জমিতে কৃষির সঙ্গে যুক্ত এই শিক্ষক বলেন, ”আগে আমাদের সব জমি নিজেরাই চাষ করতাম। এখন কয়েক বিঘা রেখে বাকিটা বর্গা দিয়ে দিয়েছি। “লস হচ্ছে জেনেও চাষ করি। কারণ এত বছরের কাজ কেমনে ছেড়ে দেই?”
গত বছরের চেয়ে খরচ বাড়লেও ধানের দাম কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন দৈনিক লেবার খরচ সাড়ে তিন শ টাকা। গত বছরও এটা আড়াই শ থেকে তিন শ টাকা ছিল। এ বছর মাড়াইতে ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা লাগলেও গত বছর এটা ছিল ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। তার আগের বছর ছিল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার হক রাইস মিলের মালিক ফিরোজ চৌধুরী বলেন, দেশীয় যে সব ব্যবসায়ী ধান কেনেন তাদের কেনার আগ্রহ এবার কম। কারণ তাদের কাছে এখনও আমন ধান রয়ে গেছে। বাজারে ভারতীয় চাল প্রবেশ করায় এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। গত আমন মৌসুমে শুকনা ধান মণপ্রতি ৬০০ টাকা দাম ছিল। সেখানে বোরোর দাম তো কমই হবে। কারণ মণপ্রতি বোরো ধানে ২২ কেজি চাল হয়, যেখানে আমনে ২৬ থেকে ২৭ কেজি হয়। সেখানে বেশি দামে বোরো কেন কিনবে?