ঢাকা ১১:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১০৬৯ বাঘ উধাও

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪২:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ অগাস্ট ২০১৫
  • ৪৫৯ বার

সুন্দরবনসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে গত ১০ বছরে কমপক্ষে ১ হাজার ৬৯টি বাঘ উধাও হয়েছে। অবৈধ বাঘ শিকারিরা ২০০০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১০ সালের এপ্রিলের মধ্যে এ বাঘগুলোকে হত্যা করেছে। বাঘের হাড় ও চামড়ার জন্যই বাঘগুলো শিকার করা হয়।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড ফান্ড ফর নেচার (ডব্লিউডব্লিউএফ) এবং ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়নের (আইইউসিএন) সহযোগিতায় পরিচালিত ব্রিটেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রাফিক ইন্টারন্যাশনাল বাঘবিষয়ক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে।

২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বের ১৩টি দেশে বাঘের অস্তিত্ব রয়েছে। দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, চীন, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, থাইল্যান্ড, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া।

এর মধ্যে ১১টি দেশ থেকে এ বাঘগুলো উধাও হয়েছে। এ দেশগুলো থেকে বাঘের চামড়া ও কঙ্কাল পাচার হয়। অনেক সময় পুরো বাঘও (জীবিত কিংবা মৃত) পাচার হয়। কারণ বাঘের মাংস, নখ, হাড়, দাঁত, খুলি, পুরুষাঙ্গ ও অন্যান্য অংশেরও কদর রয়েছে। বাঘের শরীরের বিভিন্ন অংশ সাধারণত তিনটি কাজে ব্যবহার করা হয়। এগুলো হচ্ছে ঘর সাজাতে, ওষুধ তৈরিতে এবং সৌভাগ্য বা পৌরষের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করতে।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে বাঘের বিভিন্ন অংশ দিয়ে তৈরি পণ্যের সরবরাহকারী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এর মধ্যে নেপালকে বাঘ পাচারের জন্য মোক্ষম বলে গণ্য করা হয়। নেপালকে বাঘ পাচারের জন্য ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে অবৈধ বাঘ ব্যবসায়ীরা। তা ছাড়া ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত, মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্ত, মিয়ানমার-চীন সীমান্ত এবং রাশিয়া-চীন সীমান্ত বাঘ পাচারের জন্য কুখ্যাত। দক্ষিণ এশিয়ার বাঘবহুল সংরক্ষিত এলাকার ৫০ কিলোমিটারের মধ্যেও বেআইনিভাবে বাঘ শিকার করা হয় বলে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বাঘকে বাঁচাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং একটি যৌথ বাহিনী তৈরির পরামর্শও দেওয়া হয়।

সূত্র জানিয়েছে, বাঘের অংশ দিয়ে তৈরি পণ্যের অন্যতম বড় বাজার সিঙ্গাপুর। অ্যানিমেল কনসার্নস রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন সোসাইটি (এসিআরইএস) ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তদন্ত করে সিঙ্গাপুরের ১৩৪টি গয়নার দোকানের মধ্যে ৫৯টি দোকানে বাঘের অংশ দিয়ে তৈরি গয়নার তথ্য পায়।

শুধু তাই নয়, তদন্ত দল প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তারা সিঙ্গাপুরে ১৫৯টি বাঘের নখ, ৩৩৩টি দাঁত এবং ৩৮টি চামড়ার সন্ধান পেয়েছেন, যা বিক্রির জন্য থাইল্যান্ড, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, লাওস ও কম্বোডিয়া থেকে অবৈধভাবে আমদানি করা হয়েছে।

এদিকে, ২০০৪ সালের বাঘের পায়ের ছাপ গণনার হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে রয়াল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি। এর সিংহভাগই সুন্দরবনের বাসিন্দা, তবে অল্পসংখ্যক দেশের পূর্ব দিকের পার্বত্য অঞ্চলে দেখা যায়।

বর্তমানে অর্থাৎ সর্বশেষ চলতি বছরের জুনে প্রকাশিত ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতির গণনায় বাঘের সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ১০৬ এ। সে হিসাবে গত ১১ বছরে সুন্দরবন থেকে বাঘ উধাও হয়েছে ৩৩৪টি। তবে বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসন বলছে, আগের গণনা ভুল ছিল। অনেক ক্ষেত্রে একই বাঘের পায়ের ছাপ একাধিকবার গণনা করা হয়। ফলে বাঘের সংখ্যা বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতি সঠিক হওয়ায় প্রকৃত সংখ্যা উঠে এসেছে। তবে সুন্দরবন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৪১টি বাঘ হত্যার তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু বাকিগুলো হত্যা কিংবা পাচার হয়েছে কি না, সে বিষয়টি অজানা রয়ে গেছে।

সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের তথ্যমতে, ২০০১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে মোট ৪১টি বাঘ শিকারিদের হাতে হত্যা, লোকালয়ে প্রবেশে গণপিটুনি ও বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যায়।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলাম বলেন, ২০০১ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে দুটি, ২০০২ সালে শিকারিদের হাতে একটি, ২০০৩ সালে লোকালয়ে প্রবেশের সময় গণপিটুনিতে তিনটি, ২০০৪ সালে শিকারিদের হাতে একটি, ২০০৫ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে একটি, ২০০৬ সালে শিকারিদের হাতে একটি, ২০০৭ সালে দুটি (বার্ধক্যে ১টি ও সিডরে ১টি), ২০০৯ সালে লোকালয়ে প্রবেশের সময় গণপিটুনিতে একটি, ২০১১ সালে শিকারিদের হাতে চারটি, ২০১২ সালে শিকারিদের হাতে একটি, ২০১৫ সালে শিকারিদের হাতে দুটি বাঘের মৃত্যু হয়।

তবে ২০০৮, ২০১০, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে কোনো বাঘ হত্যার খবর বন বিভাগের কাছে নেই। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০০১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নয়টি বাঘ লোকালয়ে প্রবেশের সময় গণপিটুনিতে এবং ছয়টি বাঘ বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যায়। ২০১৪ সালে দুটি ও ২০১৫ সালে শিকারিরা পাঁচটি বাঘ হত্যা করে।

২০১০ সালের নভেম্বরে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বাঘ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়। বলা হয়, লাওস, বাংলাদেশ ও নেপাল বাঘ সংরক্ষণে অগ্রগতি দেখিয়েছে। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, বাঘ সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকার ‘টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান ২০০৯-১০’ অনুমোদন এবং ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন, ২০১০’ প্রণয়ন করেছে। আইনে বাঘ শিকারের জন্য ১২ বছরের কারাদণ্ড এবং অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে অপরাধীর জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তা ছাড়া বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর ২০০১ সালে ‘সুন্দরবন বাঘ প্রকল্প’ নামে বাঘ সংরক্ষণ কার্যক্রম হাতে নেয়। ২০০৫ সালে প্রকল্পটি মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করে।

সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড ফান্ড ফর নেচারের (ডব্লিউডব্লিউএফ) পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে সবচেয়ে বেশি বাঘ বসবাস করে। পৃথিবীর মোট ৩ হাজার ৫০০ বাঘের ১ হাজার ৪টি ভারতে রয়েছে। অতীতের তুলনায় বর্তমানে ভারতে বাঘের আবাসভূমি মাত্র ১১ শতাংশ, যদিও দেশটিতে একটি কঠোর বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন (১৯৭২) রয়েছে।

ভারতে বাঘকে বাঁচাতে ১৯৭৩ সালে সবচেয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেয় ইন্দিরা গান্ধী প্রশাসন। তার বাঘ প্রকল্প (টাইগার প্রোজেক্ট) কার্যক্রম সফল হয়। ১৯৭৩ সালে ভারতে বাঘের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০, ১৯৯০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫০০ তে। তারপর আবার পতন।

বন্য প্রাণী সংরক্ষণ সোসাইটি (ডব্লিউপিএসআই) ১৯৯৪ এবং ২০০৯ সালের মধ্যে মোট ৮৯৩টি বাঘ হত্যার ঘটনা নথিভুক্ত করে। ২০০৬ সালে দেশটির সারিস্কা টাইগার রিজার্ভ তাদের ২৬টি বাঘের সব কটি হারায়, অধিকাংশই অবৈধ শিকারিদের হাতে পড়ে। একই ভাবে ২০০৯ সালে পান্না টাইগার রিজার্ভ হারায় ২৪টি বাঘ।

২০০৭ সালের বাঘশুমারির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতে বাঘের সংখ্যা ৬০ শতাংশ কমেছে। অর্থাৎ বাঘের সংখ্যা কমবেশি ১ হাজার ৪১১ তে নেমে আসে। এই ভয়াবহ প্রতিবেদনের পর ভারত সরকার তাদের বাঘ প্রকল্পে নতুন করে ১৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেয়। এই অর্থ দিয়ে টাইগার প্রোটেকশন ফোর্স গঠন করা হয় এবং বনাঞ্চল থেকে প্রায় ২ লাখ গ্রামবাসীকে সরিয়ে পুনর্বাসিত করা হয়। এ সুবাদে ২০১১ সালে ভারতের বাঘের সংখ্যা ১ হাজার ৭০৬ এ উঠে আসে।

গবেষণা সূত্র জানায়, চীনে বাঘের চামড়া ব্যবসা নিষিদ্ধ। বিশেষ করে চীনের তিব্বতে বিপন্ন প্রাণীর অংশ বেচাকেনা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ভারতের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ সোসাইটি (ডব্লিউপিএসআই) ২০০০ সালে তদন্ত করে জানতে পারে, তিব্বতে অবাধে বাঘের চামড়ার ব্যবসা চলে এবং তিব্বতিরা বাঘের চামড়ার পোশাক পরে। সেখানে ভারত থেকে নেওয়া বাঘের চামড়া ক্রয়-বিক্রয় হয়। তারা জানান, ভারত থেকে নেপাল হয়ে বাঘের চামড়া ও অন্যান্য অংশ চীনে পৌঁছায়।

লন্ডন ভিত্তিক পরিবেশবিষয়ক তদন্ত সংস্থা (ইআইএ) জানিয়েছে, চীনের কালোবাজারে বাঘের একটি দাঁতের দাম গড়ে ৭০০ মার্কিন ডলার, বাঘের চামড়া ২০ হাজার ডলার এবং ১ কিলোগ্রাম বাঘের হাড়ের মূল্য ৬০০ পাউন্ড। যদিও দেশটির আইনে অবৈধ বাঘ ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

১৯৯৩ সাল থেকে চীনে অভ্যন্তরীণ বাঘ বাণিজ্য নিষিদ্ধ। তারপরও দেশটিতে বেশ কিছু বাঘের খামার রয়েছে, যারা বাঘ নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত, নেপাল ও চীন বাঘ বাণিজ্যের জন্য কুখ্যাত। এই দেশগুলোতে পেশাদার অবৈধ বাঘ শিকারির বহু দল রয়েছে। এরা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে গিয়ে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। দুর্গম এলাকায় এরা ঘাঁটি স্থাপন করে এবং সেখানে বাঘের চামড়া শুকায়। শুকনো চামড়া তারা ডিলারদের কাছে বিক্রি করে। ডিলাররা চামড়া ভারতের ট্যানারিতে পাঠায়। ট্যানারি বা ডিলারের কাছ থেকে বায়াররা চামড়া কিনে ভারতের বাইরে, প্রধানত চীনের বাজারে পাঠিয়ে দেয়।

বাঘ নিধনের কারণ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক গবেষণায় বলা হয়, কুসংস্কার বাঘ নিধনের অন্যতম কারণ। কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ বাঘের বিভিন্ন অংশ দিয়ে তৈরি পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি করে। এসব মানুষের বিশাল চাহিদা পূরণে অবাধে বাঘ হত্যা করে অবৈধ শিকারিরা। অনেক অঞ্চলে বাঘের ছোট এক টুকরো চামড়া কালো জাদুর রক্ষক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাঘের কপালের চামড়া সবচেয়ে মূল্যবান হিসেবে গণ্য করা হয়। মনে করা হয় বাঘের কপালের চামড়া সৌভাগ্যের প্রতীক।

অলংকার তৈরিতে বাঘের দাঁত ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। এই দাঁত ভাগ্য ফেরায় বলেও ধারণা করা হয়। নখও অলংকারে ব্যবহৃত হয়। বাঘের লেজেরও কদর রয়েছে, লেজকে অনেকে অভিশাপ থেকে মুক্তির কবজ বলে মনে করেন। বাঘের গোঁফে জাদুশক্তি আছে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। বাঘের পুরুষাঙ্গ দিয়ে তৈরি ওষুধ যৌনশক্তি বর্ধক বলেও মনে করা হয়।

এ ছাড়া অনেকেই চর্মরোগ নিরাময়ের উপায় হিসেবে বাঘের মাংস খান। বাঘের চর্বি বন্য শূকরদের তাড়াতে ব্যবহৃত হয়। বাঘের হাড়ের গুঁড়ো মাথা, পেশি ও হাড়ের ব্যথায় নিরাময়ে ব্যবহার জনপ্রিয় এবং মদ তৈরিতেও হাড়ের গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়। আর তিব্বতসহ বহু অঞ্চলের মানুষ বাঘের চামড়ার পোশাক পরাকে সংস্কৃতি বলে জানেন।

বাঘের শরীরের অংশ দিয়ে সবচেয়ে বেশি ওষুধ তৈরি করা হয় চীনে। চীনে কমপক্ষে ১ হাজার বছর ধরে বাঘের হাড় ওষুধ বানাতে ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও এ কাজকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে চীন সরকার। বাঘের হাড় বা অন্যান্য অংশ দিয়ে তৈরি ওষুধের বৈজ্ঞানিক অনুমোদন নেই।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফি জানিয়েছে, এক শতাব্দীর মধ্যে ৯৫ শতাংশ বাঘ হারিয়ে গেছে। ফলে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্লভ প্রাণীর তালিকায় উঠেছে বাঘের নাম। বিশ্বের যে কটি দেশ বাঘের জন্য প্রসিদ্ধ বর্তমানে প্রতিটি দেশই বাঘ সংকটে রয়েছে।

এক শতাব্দী আগে পৃথিবীতে বনের বাঘের সংখ্যা ছিল প্রায় এক লাখ। আর এখন রয়েছে মাত্র ৩ হাজার ২০০ বা ৩ হাজার ৫০০ বাঘ। প্রধানত দুটি কারণ বাঘকে বিলুপ্তির সীমানায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে। এর মধ্যে প্রথমত অবৈধ বাঘ শিকার এবং দ্বিতীয়ত বাঘের আবাসভূমি অভয়ারণ্য নষ্ট হওয়া। বাঘকে বাঁচাতে তাকে তার প্রাপ্য অভয়ারণ্য ফিরিয়ে দিতে হবে এবং বাঘ শিকার বন্ধে যুগোপযোগী ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি এখন সব মহলের।

চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়াসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে বাঘের চামড়া, মাংস, হাড় ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচারসংক্রান্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) জহির উদ্দিন আহমেদ। তবে সুন্দরবন থেকে বাঘ ও এর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচার রোধে যৌথ টাস্কফোর্স কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

১০৬৯ বাঘ উধাও

আপডেট টাইম : ১১:৪২:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ অগাস্ট ২০১৫

সুন্দরবনসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে গত ১০ বছরে কমপক্ষে ১ হাজার ৬৯টি বাঘ উধাও হয়েছে। অবৈধ বাঘ শিকারিরা ২০০০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১০ সালের এপ্রিলের মধ্যে এ বাঘগুলোকে হত্যা করেছে। বাঘের হাড় ও চামড়ার জন্যই বাঘগুলো শিকার করা হয়।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড ফান্ড ফর নেচার (ডব্লিউডব্লিউএফ) এবং ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়নের (আইইউসিএন) সহযোগিতায় পরিচালিত ব্রিটেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রাফিক ইন্টারন্যাশনাল বাঘবিষয়ক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে।

২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বের ১৩টি দেশে বাঘের অস্তিত্ব রয়েছে। দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, চীন, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, থাইল্যান্ড, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া।

এর মধ্যে ১১টি দেশ থেকে এ বাঘগুলো উধাও হয়েছে। এ দেশগুলো থেকে বাঘের চামড়া ও কঙ্কাল পাচার হয়। অনেক সময় পুরো বাঘও (জীবিত কিংবা মৃত) পাচার হয়। কারণ বাঘের মাংস, নখ, হাড়, দাঁত, খুলি, পুরুষাঙ্গ ও অন্যান্য অংশেরও কদর রয়েছে। বাঘের শরীরের বিভিন্ন অংশ সাধারণত তিনটি কাজে ব্যবহার করা হয়। এগুলো হচ্ছে ঘর সাজাতে, ওষুধ তৈরিতে এবং সৌভাগ্য বা পৌরষের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করতে।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে বাঘের বিভিন্ন অংশ দিয়ে তৈরি পণ্যের সরবরাহকারী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এর মধ্যে নেপালকে বাঘ পাচারের জন্য মোক্ষম বলে গণ্য করা হয়। নেপালকে বাঘ পাচারের জন্য ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে অবৈধ বাঘ ব্যবসায়ীরা। তা ছাড়া ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত, মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্ত, মিয়ানমার-চীন সীমান্ত এবং রাশিয়া-চীন সীমান্ত বাঘ পাচারের জন্য কুখ্যাত। দক্ষিণ এশিয়ার বাঘবহুল সংরক্ষিত এলাকার ৫০ কিলোমিটারের মধ্যেও বেআইনিভাবে বাঘ শিকার করা হয় বলে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বাঘকে বাঁচাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং একটি যৌথ বাহিনী তৈরির পরামর্শও দেওয়া হয়।

সূত্র জানিয়েছে, বাঘের অংশ দিয়ে তৈরি পণ্যের অন্যতম বড় বাজার সিঙ্গাপুর। অ্যানিমেল কনসার্নস রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন সোসাইটি (এসিআরইএস) ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তদন্ত করে সিঙ্গাপুরের ১৩৪টি গয়নার দোকানের মধ্যে ৫৯টি দোকানে বাঘের অংশ দিয়ে তৈরি গয়নার তথ্য পায়।

শুধু তাই নয়, তদন্ত দল প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তারা সিঙ্গাপুরে ১৫৯টি বাঘের নখ, ৩৩৩টি দাঁত এবং ৩৮টি চামড়ার সন্ধান পেয়েছেন, যা বিক্রির জন্য থাইল্যান্ড, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, লাওস ও কম্বোডিয়া থেকে অবৈধভাবে আমদানি করা হয়েছে।

এদিকে, ২০০৪ সালের বাঘের পায়ের ছাপ গণনার হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে রয়াল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি। এর সিংহভাগই সুন্দরবনের বাসিন্দা, তবে অল্পসংখ্যক দেশের পূর্ব দিকের পার্বত্য অঞ্চলে দেখা যায়।

বর্তমানে অর্থাৎ সর্বশেষ চলতি বছরের জুনে প্রকাশিত ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতির গণনায় বাঘের সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ১০৬ এ। সে হিসাবে গত ১১ বছরে সুন্দরবন থেকে বাঘ উধাও হয়েছে ৩৩৪টি। তবে বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসন বলছে, আগের গণনা ভুল ছিল। অনেক ক্ষেত্রে একই বাঘের পায়ের ছাপ একাধিকবার গণনা করা হয়। ফলে বাঘের সংখ্যা বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতি সঠিক হওয়ায় প্রকৃত সংখ্যা উঠে এসেছে। তবে সুন্দরবন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৪১টি বাঘ হত্যার তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু বাকিগুলো হত্যা কিংবা পাচার হয়েছে কি না, সে বিষয়টি অজানা রয়ে গেছে।

সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের তথ্যমতে, ২০০১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে মোট ৪১টি বাঘ শিকারিদের হাতে হত্যা, লোকালয়ে প্রবেশে গণপিটুনি ও বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যায়।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলাম বলেন, ২০০১ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে দুটি, ২০০২ সালে শিকারিদের হাতে একটি, ২০০৩ সালে লোকালয়ে প্রবেশের সময় গণপিটুনিতে তিনটি, ২০০৪ সালে শিকারিদের হাতে একটি, ২০০৫ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে একটি, ২০০৬ সালে শিকারিদের হাতে একটি, ২০০৭ সালে দুটি (বার্ধক্যে ১টি ও সিডরে ১টি), ২০০৯ সালে লোকালয়ে প্রবেশের সময় গণপিটুনিতে একটি, ২০১১ সালে শিকারিদের হাতে চারটি, ২০১২ সালে শিকারিদের হাতে একটি, ২০১৫ সালে শিকারিদের হাতে দুটি বাঘের মৃত্যু হয়।

তবে ২০০৮, ২০১০, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে কোনো বাঘ হত্যার খবর বন বিভাগের কাছে নেই। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০০১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নয়টি বাঘ লোকালয়ে প্রবেশের সময় গণপিটুনিতে এবং ছয়টি বাঘ বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যায়। ২০১৪ সালে দুটি ও ২০১৫ সালে শিকারিরা পাঁচটি বাঘ হত্যা করে।

২০১০ সালের নভেম্বরে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বাঘ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়। বলা হয়, লাওস, বাংলাদেশ ও নেপাল বাঘ সংরক্ষণে অগ্রগতি দেখিয়েছে। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, বাঘ সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকার ‘টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান ২০০৯-১০’ অনুমোদন এবং ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন, ২০১০’ প্রণয়ন করেছে। আইনে বাঘ শিকারের জন্য ১২ বছরের কারাদণ্ড এবং অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে অপরাধীর জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তা ছাড়া বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর ২০০১ সালে ‘সুন্দরবন বাঘ প্রকল্প’ নামে বাঘ সংরক্ষণ কার্যক্রম হাতে নেয়। ২০০৫ সালে প্রকল্পটি মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করে।

সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড ফান্ড ফর নেচারের (ডব্লিউডব্লিউএফ) পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে সবচেয়ে বেশি বাঘ বসবাস করে। পৃথিবীর মোট ৩ হাজার ৫০০ বাঘের ১ হাজার ৪টি ভারতে রয়েছে। অতীতের তুলনায় বর্তমানে ভারতে বাঘের আবাসভূমি মাত্র ১১ শতাংশ, যদিও দেশটিতে একটি কঠোর বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন (১৯৭২) রয়েছে।

ভারতে বাঘকে বাঁচাতে ১৯৭৩ সালে সবচেয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেয় ইন্দিরা গান্ধী প্রশাসন। তার বাঘ প্রকল্প (টাইগার প্রোজেক্ট) কার্যক্রম সফল হয়। ১৯৭৩ সালে ভারতে বাঘের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০, ১৯৯০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫০০ তে। তারপর আবার পতন।

বন্য প্রাণী সংরক্ষণ সোসাইটি (ডব্লিউপিএসআই) ১৯৯৪ এবং ২০০৯ সালের মধ্যে মোট ৮৯৩টি বাঘ হত্যার ঘটনা নথিভুক্ত করে। ২০০৬ সালে দেশটির সারিস্কা টাইগার রিজার্ভ তাদের ২৬টি বাঘের সব কটি হারায়, অধিকাংশই অবৈধ শিকারিদের হাতে পড়ে। একই ভাবে ২০০৯ সালে পান্না টাইগার রিজার্ভ হারায় ২৪টি বাঘ।

২০০৭ সালের বাঘশুমারির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতে বাঘের সংখ্যা ৬০ শতাংশ কমেছে। অর্থাৎ বাঘের সংখ্যা কমবেশি ১ হাজার ৪১১ তে নেমে আসে। এই ভয়াবহ প্রতিবেদনের পর ভারত সরকার তাদের বাঘ প্রকল্পে নতুন করে ১৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেয়। এই অর্থ দিয়ে টাইগার প্রোটেকশন ফোর্স গঠন করা হয় এবং বনাঞ্চল থেকে প্রায় ২ লাখ গ্রামবাসীকে সরিয়ে পুনর্বাসিত করা হয়। এ সুবাদে ২০১১ সালে ভারতের বাঘের সংখ্যা ১ হাজার ৭০৬ এ উঠে আসে।

গবেষণা সূত্র জানায়, চীনে বাঘের চামড়া ব্যবসা নিষিদ্ধ। বিশেষ করে চীনের তিব্বতে বিপন্ন প্রাণীর অংশ বেচাকেনা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ভারতের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ সোসাইটি (ডব্লিউপিএসআই) ২০০০ সালে তদন্ত করে জানতে পারে, তিব্বতে অবাধে বাঘের চামড়ার ব্যবসা চলে এবং তিব্বতিরা বাঘের চামড়ার পোশাক পরে। সেখানে ভারত থেকে নেওয়া বাঘের চামড়া ক্রয়-বিক্রয় হয়। তারা জানান, ভারত থেকে নেপাল হয়ে বাঘের চামড়া ও অন্যান্য অংশ চীনে পৌঁছায়।

লন্ডন ভিত্তিক পরিবেশবিষয়ক তদন্ত সংস্থা (ইআইএ) জানিয়েছে, চীনের কালোবাজারে বাঘের একটি দাঁতের দাম গড়ে ৭০০ মার্কিন ডলার, বাঘের চামড়া ২০ হাজার ডলার এবং ১ কিলোগ্রাম বাঘের হাড়ের মূল্য ৬০০ পাউন্ড। যদিও দেশটির আইনে অবৈধ বাঘ ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

১৯৯৩ সাল থেকে চীনে অভ্যন্তরীণ বাঘ বাণিজ্য নিষিদ্ধ। তারপরও দেশটিতে বেশ কিছু বাঘের খামার রয়েছে, যারা বাঘ নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত, নেপাল ও চীন বাঘ বাণিজ্যের জন্য কুখ্যাত। এই দেশগুলোতে পেশাদার অবৈধ বাঘ শিকারির বহু দল রয়েছে। এরা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে গিয়ে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। দুর্গম এলাকায় এরা ঘাঁটি স্থাপন করে এবং সেখানে বাঘের চামড়া শুকায়। শুকনো চামড়া তারা ডিলারদের কাছে বিক্রি করে। ডিলাররা চামড়া ভারতের ট্যানারিতে পাঠায়। ট্যানারি বা ডিলারের কাছ থেকে বায়াররা চামড়া কিনে ভারতের বাইরে, প্রধানত চীনের বাজারে পাঠিয়ে দেয়।

বাঘ নিধনের কারণ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক গবেষণায় বলা হয়, কুসংস্কার বাঘ নিধনের অন্যতম কারণ। কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ বাঘের বিভিন্ন অংশ দিয়ে তৈরি পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি করে। এসব মানুষের বিশাল চাহিদা পূরণে অবাধে বাঘ হত্যা করে অবৈধ শিকারিরা। অনেক অঞ্চলে বাঘের ছোট এক টুকরো চামড়া কালো জাদুর রক্ষক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাঘের কপালের চামড়া সবচেয়ে মূল্যবান হিসেবে গণ্য করা হয়। মনে করা হয় বাঘের কপালের চামড়া সৌভাগ্যের প্রতীক।

অলংকার তৈরিতে বাঘের দাঁত ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। এই দাঁত ভাগ্য ফেরায় বলেও ধারণা করা হয়। নখও অলংকারে ব্যবহৃত হয়। বাঘের লেজেরও কদর রয়েছে, লেজকে অনেকে অভিশাপ থেকে মুক্তির কবজ বলে মনে করেন। বাঘের গোঁফে জাদুশক্তি আছে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। বাঘের পুরুষাঙ্গ দিয়ে তৈরি ওষুধ যৌনশক্তি বর্ধক বলেও মনে করা হয়।

এ ছাড়া অনেকেই চর্মরোগ নিরাময়ের উপায় হিসেবে বাঘের মাংস খান। বাঘের চর্বি বন্য শূকরদের তাড়াতে ব্যবহৃত হয়। বাঘের হাড়ের গুঁড়ো মাথা, পেশি ও হাড়ের ব্যথায় নিরাময়ে ব্যবহার জনপ্রিয় এবং মদ তৈরিতেও হাড়ের গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়। আর তিব্বতসহ বহু অঞ্চলের মানুষ বাঘের চামড়ার পোশাক পরাকে সংস্কৃতি বলে জানেন।

বাঘের শরীরের অংশ দিয়ে সবচেয়ে বেশি ওষুধ তৈরি করা হয় চীনে। চীনে কমপক্ষে ১ হাজার বছর ধরে বাঘের হাড় ওষুধ বানাতে ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও এ কাজকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে চীন সরকার। বাঘের হাড় বা অন্যান্য অংশ দিয়ে তৈরি ওষুধের বৈজ্ঞানিক অনুমোদন নেই।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফি জানিয়েছে, এক শতাব্দীর মধ্যে ৯৫ শতাংশ বাঘ হারিয়ে গেছে। ফলে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্লভ প্রাণীর তালিকায় উঠেছে বাঘের নাম। বিশ্বের যে কটি দেশ বাঘের জন্য প্রসিদ্ধ বর্তমানে প্রতিটি দেশই বাঘ সংকটে রয়েছে।

এক শতাব্দী আগে পৃথিবীতে বনের বাঘের সংখ্যা ছিল প্রায় এক লাখ। আর এখন রয়েছে মাত্র ৩ হাজার ২০০ বা ৩ হাজার ৫০০ বাঘ। প্রধানত দুটি কারণ বাঘকে বিলুপ্তির সীমানায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে। এর মধ্যে প্রথমত অবৈধ বাঘ শিকার এবং দ্বিতীয়ত বাঘের আবাসভূমি অভয়ারণ্য নষ্ট হওয়া। বাঘকে বাঁচাতে তাকে তার প্রাপ্য অভয়ারণ্য ফিরিয়ে দিতে হবে এবং বাঘ শিকার বন্ধে যুগোপযোগী ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি এখন সব মহলের।

চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়াসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে বাঘের চামড়া, মাংস, হাড় ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচারসংক্রান্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) জহির উদ্দিন আহমেদ। তবে সুন্দরবন থেকে বাঘ ও এর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচার রোধে যৌথ টাস্কফোর্স কাজ করছে বলেও জানান তিনি।