ঢাকা ০২:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লোকসানি ব্যাংকের শেয়ারদরও দ্বিগুণ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:০৪:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০১৭
  • ৩৪৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আইন পরিপালন করলে লোকসান হবে—এমন ব্যাংকের শেয়ারের দামও বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বিশেষ সুবিধা নিয়ে মুনাফা করার তথ্য শেয়ারহোল্ডারদের অবহিতও করেনি ব্যাংকগুলো। ফলে না বুঝেই এসব ব্যাংকের শেয়ারের দিকে ঝুঁকেছেন বিনিয়োগকারীরা। যাতে বেড়ে গেছে এসব শেয়ারের দাম। ব্যাংক খাতের শেয়ারের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে পুরো শেয়ারবাজারে। এ সুযোগে কয়েকটি ব্যাংকও সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ করেছে, যাতে জরিমানার মুখে পড়েছে সাত ব্যাংক।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষক মোহাম্মদ মুসা বলেন, কয়েকটি ব্যাংকের শেয়ারের দাম সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই অতিমূল্যায়িত হয়েছে।
সূত্র জানায়, খেলাপি ঋণ বাড়ায় বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংককে ২০১৬ সালের আর্থিক হিসাবে ৮৬৪ কোটি টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়। এই পরিমাণ সঞ্চিতি রাখতে হলে ব্যাংকটি লোকসানে চলে যেত। এ কারণে ব্যাংকটিকে বিশেষ সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৬ সালের সঞ্চিতি সংরক্ষণে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময় পায় ব্যাংকটি। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৬ সালে ১৫ শতাংশ সঞ্চিতি রেখে পরবর্তী তিন বছরে ২৫, ৩০ ও ৩০ শতাংশ করে সংরক্ষণের বিশেষ সুযোগ দেয়। ফলে ব্যাংকটি গত বছরে ৫৬০ কোটি নিট মুনাফা করার সুযোগ পায়।
সঞ্চিতি রাখতে হয় মুনাফা থেকে। মুনাফা থেকে নিয়মিত সঞ্চিতি সংরক্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী শেয়ারধারীদের নগদ লভ্যাংশ দিতে পারেনি ব্যাংকটি। এরপরও ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ারের দিকে ঝুঁকেছেন গ্রাহকেরা। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৮ টাকা, গত সপ্তাহে তা ১৬ টাকা পর্যন্ত ওঠে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম বুলবুল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, বিশেষ এই সুবিধার ফলে আর্থিক প্রতিবেদন ভালো করা গেছে।
একইভাবে প্রিমিয়ার ব্যাংককেও গত বছর ৭০৫ কোটি টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়। তার মধ্যে ব্যাংকটি গত বছরের হিসাবে ৩০ কোটি টাকা সঞ্চিতি রেখে আর্থিক হিসাব চূড়ান্ত করার সুযোগ পায়। বাকি ৬৭৫ কোটি টাকা পরবর্তী তিন বছরে মুনাফা থেকে রাখার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে গত বছর শেষে ব্যাংকটি ১৬০ কোটি টাকা নিট মুনাফা করতে পেরেছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৯ টাকা, গত সপ্তাহে তা ১৮ টাকা পর্যন্ত ওঠে।
শুধু বেসরকারি খাতের ব্যাংক নয়, রাষ্ট্রমালিকানাধীন রূপালী ব্যাংকের শেয়ার নিয়েও একইভাবে টানাটানি করেছেন বিনিয়োগকারীরা। ২০১৬ সালে আর্থিক অবস্থার অবনতির কারণে রূপালী ব্যাংককে আড়াই হাজার কোটি টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণের প্রয়োজন দেখা দেয়। বিশেষ সুবিধা দিয়ে ব্যাংকটি ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই সঞ্চিতি সংরক্ষণের সুযোগ পায়। ফলে ২০১৬ সালে ব্যাংকটির লোকসান কমে হয় ১২১ কোটি টাকা। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২৮ টাকা, গত সপ্তাহে তা ৭০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। এভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ এই সুবিধা নিয়ে ব্যাংকগুলোর কোনোটি মুনাফা বাড়িয়ে দেখিয়েছে, আবার কেউ লোকসান কমিয়েছে। ফলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর প্রকৃত মুনাফা সম্পর্কে অনেকটাই বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়েছেন শেয়ারধারীরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সূত্র জানায়, সিটিসেল, রাইজিং গ্রুপ ও অফশোর ব্যাংকিংয়ের ঋণখেলাপি হওয়ায় ২০১৬ সালের আর্থিক হিসাবে এবি ব্যাংকের ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার সঞ্চিতি সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। ২০১৬ সালে ১০ শতাংশ সঞ্চিতি রেখে পরবর্তী তিন বছরে ৩০ শতাংশ করে সঞ্চিতি সংরক্ষণের সুযোগ পায় ব্যাংকটি। ফলে গত বছরে ব্যাংকটি ১৫০ কোটি টাকা নিট মুনাফা দেখাতে পেরেছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২০ টাকা, এরপরও তা ২৪ টাকা পর্যন্ত ওঠে।
ব্যাংক এশিয়াও একই সুযোগ পেয়ে মুনাফা বাড়িয়ে দেখানোর সুযোগ নিয়েছে। জানা গেছে, আদালতে রিট থাকায় ঋণের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঞ্চিতি রাখার নির্দেশনার পর ব্যাংকটি বিপাকে পড়ে। পরে বিশেষ সুবিধা নিয়ে ১৫৪ কোটি টাকা নিট মুনাফা দেখানোর সুযোগ পেয়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১৬ টাকা, গত সপ্তাহে তা ২৩ টাকা পর্যন্ত ওঠে।
চলতি বছরের শুরুতে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের পর আর্থিক অবস্থার অবনতি হয়। এরপরও ব্যাংকটির শেয়ারের দামে উল্লম্ফন ঘটছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২৮ টাকা, গত সপ্তাহে তা ৪০ টাকা পর্যন্ত ওঠে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

লোকসানি ব্যাংকের শেয়ারদরও দ্বিগুণ

আপডেট টাইম : ০৫:০৪:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আইন পরিপালন করলে লোকসান হবে—এমন ব্যাংকের শেয়ারের দামও বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বিশেষ সুবিধা নিয়ে মুনাফা করার তথ্য শেয়ারহোল্ডারদের অবহিতও করেনি ব্যাংকগুলো। ফলে না বুঝেই এসব ব্যাংকের শেয়ারের দিকে ঝুঁকেছেন বিনিয়োগকারীরা। যাতে বেড়ে গেছে এসব শেয়ারের দাম। ব্যাংক খাতের শেয়ারের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে পুরো শেয়ারবাজারে। এ সুযোগে কয়েকটি ব্যাংকও সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ করেছে, যাতে জরিমানার মুখে পড়েছে সাত ব্যাংক।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষক মোহাম্মদ মুসা বলেন, কয়েকটি ব্যাংকের শেয়ারের দাম সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই অতিমূল্যায়িত হয়েছে।
সূত্র জানায়, খেলাপি ঋণ বাড়ায় বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংককে ২০১৬ সালের আর্থিক হিসাবে ৮৬৪ কোটি টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়। এই পরিমাণ সঞ্চিতি রাখতে হলে ব্যাংকটি লোকসানে চলে যেত। এ কারণে ব্যাংকটিকে বিশেষ সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৬ সালের সঞ্চিতি সংরক্ষণে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময় পায় ব্যাংকটি। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৬ সালে ১৫ শতাংশ সঞ্চিতি রেখে পরবর্তী তিন বছরে ২৫, ৩০ ও ৩০ শতাংশ করে সংরক্ষণের বিশেষ সুযোগ দেয়। ফলে ব্যাংকটি গত বছরে ৫৬০ কোটি নিট মুনাফা করার সুযোগ পায়।
সঞ্চিতি রাখতে হয় মুনাফা থেকে। মুনাফা থেকে নিয়মিত সঞ্চিতি সংরক্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী শেয়ারধারীদের নগদ লভ্যাংশ দিতে পারেনি ব্যাংকটি। এরপরও ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ারের দিকে ঝুঁকেছেন গ্রাহকেরা। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৮ টাকা, গত সপ্তাহে তা ১৬ টাকা পর্যন্ত ওঠে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম বুলবুল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, বিশেষ এই সুবিধার ফলে আর্থিক প্রতিবেদন ভালো করা গেছে।
একইভাবে প্রিমিয়ার ব্যাংককেও গত বছর ৭০৫ কোটি টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়। তার মধ্যে ব্যাংকটি গত বছরের হিসাবে ৩০ কোটি টাকা সঞ্চিতি রেখে আর্থিক হিসাব চূড়ান্ত করার সুযোগ পায়। বাকি ৬৭৫ কোটি টাকা পরবর্তী তিন বছরে মুনাফা থেকে রাখার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে গত বছর শেষে ব্যাংকটি ১৬০ কোটি টাকা নিট মুনাফা করতে পেরেছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৯ টাকা, গত সপ্তাহে তা ১৮ টাকা পর্যন্ত ওঠে।
শুধু বেসরকারি খাতের ব্যাংক নয়, রাষ্ট্রমালিকানাধীন রূপালী ব্যাংকের শেয়ার নিয়েও একইভাবে টানাটানি করেছেন বিনিয়োগকারীরা। ২০১৬ সালে আর্থিক অবস্থার অবনতির কারণে রূপালী ব্যাংককে আড়াই হাজার কোটি টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণের প্রয়োজন দেখা দেয়। বিশেষ সুবিধা দিয়ে ব্যাংকটি ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই সঞ্চিতি সংরক্ষণের সুযোগ পায়। ফলে ২০১৬ সালে ব্যাংকটির লোকসান কমে হয় ১২১ কোটি টাকা। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২৮ টাকা, গত সপ্তাহে তা ৭০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। এভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ এই সুবিধা নিয়ে ব্যাংকগুলোর কোনোটি মুনাফা বাড়িয়ে দেখিয়েছে, আবার কেউ লোকসান কমিয়েছে। ফলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর প্রকৃত মুনাফা সম্পর্কে অনেকটাই বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়েছেন শেয়ারধারীরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সূত্র জানায়, সিটিসেল, রাইজিং গ্রুপ ও অফশোর ব্যাংকিংয়ের ঋণখেলাপি হওয়ায় ২০১৬ সালের আর্থিক হিসাবে এবি ব্যাংকের ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার সঞ্চিতি সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। ২০১৬ সালে ১০ শতাংশ সঞ্চিতি রেখে পরবর্তী তিন বছরে ৩০ শতাংশ করে সঞ্চিতি সংরক্ষণের সুযোগ পায় ব্যাংকটি। ফলে গত বছরে ব্যাংকটি ১৫০ কোটি টাকা নিট মুনাফা দেখাতে পেরেছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২০ টাকা, এরপরও তা ২৪ টাকা পর্যন্ত ওঠে।
ব্যাংক এশিয়াও একই সুযোগ পেয়ে মুনাফা বাড়িয়ে দেখানোর সুযোগ নিয়েছে। জানা গেছে, আদালতে রিট থাকায় ঋণের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঞ্চিতি রাখার নির্দেশনার পর ব্যাংকটি বিপাকে পড়ে। পরে বিশেষ সুবিধা নিয়ে ১৫৪ কোটি টাকা নিট মুনাফা দেখানোর সুযোগ পেয়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১৬ টাকা, গত সপ্তাহে তা ২৩ টাকা পর্যন্ত ওঠে।
চলতি বছরের শুরুতে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের পর আর্থিক অবস্থার অবনতি হয়। এরপরও ব্যাংকটির শেয়ারের দামে উল্লম্ফন ঘটছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২৮ টাকা, গত সপ্তাহে তা ৪০ টাকা পর্যন্ত ওঠে।