অতিবৃষ্টি ও বন্যায় গত এক মাসে এক লাখ ৫৭ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ডুবেছে। এতে ৩৯ হাজার একশ দুই হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
আর এর মধ্যে ২৩ হাজার ৮১১ হেক্টর জমির চাষিরা পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ৩৪ জেলার মধ্যে কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
ক্ষতি হওয়া ফসলের মধ্যে রয়েছে- আউশ ও আমন ধান, আমন বীজতলা, বোনা আমন, সবজি, মরিচ, পানের বরজ ও কলা।
বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিইএ) সূত্র এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে। ১ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত চলা বৃষ্টি ও বন্যায় এ ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিইএ) মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান বলেন, বন্যা ও জলাবদ্ধতায় যে ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। কৃষকের সমস্যা বুঝে কৃষি উপকরণ ব্যবহারের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
এ কৃষিবিদ বলেন, বিভিন্ন তথ্যসংবিলত লিফলেটের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে পরামর্শমূলক তথ্য পৌঁছে দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা। ২০০ ধরনের বীজতলা তৈরি ও কৃষকের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শীতকালে কীভাবে আগাম সবজি চাষ করতে হবে, সে বিষয়ে ধারণা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন এ কৃষি কর্মকর্তারা। ফলে, জনপ্রতিনিধিরাও কৃষকের জন্য কাজ করছেন।
বাগেরহাট জেলার যাত্রাবাড়ী ইউনিয়নের মশিদপুর গ্রামের সবজি চাষি শেখ মো. আনোয়ার হোসেনের তিন বিঘা জমির মধ্যে আড়াই বিঘা জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তিনি বেগুন, কাকরোল, করলাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছিলেন।
আনোয়ার হোসেন বলেন, যে সময়ে সবজি ঘরে তুলবো, ঠিক সেই সময়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব শেষ হয়ে গেল। ৫০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। আয় তো দূরের কথা, খরচই তো উঠবে না।
তিনি জানান, ধানচাষিদের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ কৃষকই ধান লাগাতে পারছেন না। সব মিলিয়ে তাদের এলাকায় বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট গ্রামের ধানচাষি শরিফুল ইসলাম জানান, অতিবৃষ্টির কারণে তার পাঁচ বিঘার জমির স্বর্ণা ধান ডুবে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর দেখা যায়, অধিকাংশ জমির ধানের গোড়া পচে গেছে। আড়াই বিঘার জমির ধান একেবারেই নষ্ট হয়ে হয়েছে শরিফুলের।
শুধু তারই নয়, ওই এলাকাসহ চলনবিলের অধিকাংশ জমির ধানচাষির একই অবস্থা, জানালেন শরিফুল।
ডিএই সূত্র জানায়, এ মৌসুমে প্রধান ফসল আমন ধান। কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সমন্বিত পদক্ষেপে নাবি জাতের বীজ (ব্রি ২৩, ৪৬, ৬২-সহ একাধিক) সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া ভাসমান বীজতলাসহ অন্যান্য বীজতলাও তৈরি করা হয়েছে।
কৃষকরা ইচ্ছা করলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ ও সেবা পেতে পারেন।
ডিইএ সূত্র জানায়, সম্পূর্ণ ক্ষতি হওয়া ফসলের মধ্য আউশ ১১ হাজার ২০০ হেক্টর, আমন বীজতলা ১৩ হাজার ৩৭৬ হেক্টর, রোপা আমন পাঁচ হাজার ৯৪৩ হেক্টর, বোনা আমন ১৯১ হেক্টর, সবজি সাত হাজার ৪৭৭ হেক্টর, মরিচ ৫২৪ হেক্টর, পানের বরজ ২৮১ হেক্টর, ফুল ১১ হেক্টর, কলা ৮৮ হেক্টর রয়েছে।
ডিএই’র উইং উপপরিচালক (মনিটরিং) ও কৃষিবিদ চৈতন্য কুমার দাস জানান, আমনসহ ধানের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু সবজি, পানের বরজ, কলার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। সবজির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম সবজি চাষ করতে হবে। আর পানের বরজ ও কলা নতুন করে শুরু করতে হবে।
সবশেষে, ডিএই মহাপরিচালক ও কৃষিবিদ হামিদুর রহমান জানান, অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে, তা বলা যাবে না। দেশের আবহাওয়া ও প্রকৃতির পরিবেশ অনুযায়ী প্রতিবছরই এমনটা হয়ে থাকে।
এ কারণে কৃষি কর্মকর্তারা তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কাজ করছেন। সব শ্রেণির কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে কাজ করছেন।