ঢাকা ০৮:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোনালি অাঁশে হাসি নেই পাটের বাজারদর কম : উৎপাদন খরচ উঠছে না

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৩:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ অগাস্ট ২০১৫
  • ৪৩২ বার

দেশি পাটের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য আবিষ্কার করেছে বাংলাদেশ প্রায় দুই বছর আগে। সেই থেকে আশা জেগেছিল, হারিয়ে যাওয়া সোনালি অাঁশের রাজত্ব ফিরে পাবে বাংলাদেশ। পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়িয়ে বহির্বিশ্বে আবারও ঠাঁই করে নেবে বাংলার পাট। সরকারি উদ্যোগ কিছুটা দেখা দিলেও উৎপাদন খরচের সঙ্গে বাজারমূল্যের ব্যবধানের কারণে কৃষক নিরাশার সাগরে ডুবছেন। দাম না পেয়ে কৃষক বছরের পর বছর ঠকেই যাচ্ছেন। এর প্রভাব পড়ছে রফতানি বাজারেও।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টন। তবে মৌসুমের শেষে পর্যাপ্ত বৃষ্টি থাকায় পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ থেকে ৭ শতাংশ বেশি হতে পারে।

বাংলাদেশ জুট মিল অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি এ বারিক খান বলেন, পাটের উৎপাদন সন্তোষজনক হলেও এর ব্যবহার সে অনুপাতে আশানুরূপ নয়। তাছাড়া পাটকলগুলোতে যে যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয় সেগুলোর মানও ভালো নয়। তাছাড়া পাটপণ্যের বাজার বাড়াতে হলে ২০১০ সালের বস্তা ব্যবহারের নির্দেশনাটি বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, সরকারি পাটকলগুলো যে পরিমাণ সুবিধা ভোগ করে, বেসরকারি কলগুলো যদি তা ভোগ করে তবে পাট উৎপাদন বাড়বে। বাড়বে এর ব্যবহারও। তিনি জানান, দেশের ৪ কোটি লোক পাট উৎপাদন ও এর পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাটের উৎপাদন ও বাজারদর নিয়ে ব্যুরো ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর-

ফরিদপুর : জেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। এখন পাট জাগ দিয়ে তা থেকে অাঁশ ছাড়িয়ে নিচ্ছেন কৃষক। আলাদা করা হচ্ছে পাটখড়ি। চাষি পরিবারের প্রায় সবাই এ নিয়ে মহাব্যস্ত। তবে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় শঙ্কিত চাষীরা। ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪ হাজার ৯৫৬ হেক্টর জমিতে, কিন্তু সেখানে চাষাবাদ হয়েছে ৭৭ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে। ওই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ৯ লাখ বেল পাট উৎপাদন হওয়ার কথা।

জানা যায়, চলতি সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন হাটে মানভেদে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। সরকারি ক্রয় কেন্দ্রগুলো মণপ্রতি বাজারের চেয়ে ৩০ থেকে ৬০ টাকা বেশি দরে কিনছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরিদপুর পাট গবেষণা ইনিস্টিটিউটের একজন পাট গবেষক বলেন, পাট নিয়ে আসলে তাদের দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা নেই। ভারতে যেখানে একের পর এক নতুন পাটকল হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের সরকারি পাটকলগুলো সেভাবে চলছে না। তিনি বলেন, সোনালি অাঁশ আবার স্বরূপে ফিরে আসতে পারে। কারণ কৃত্রিম তন্তু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হচ্ছে। তাই বিশ্বব্যাপী পাট ও পাটপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এক্ষেত্রে আশা জোগাচ্ছে পাটের জিন আবিষ্কার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ফরিদপুর অঞ্চলের উপপরিচালক সুজন মজুমদার জানান, জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পাটের আবাদ হয়েছে; তবে কৃষক পাটের মূল্য ঠিকমতো পেলে চাষিরা লাভবান হবেন, এতে পাট চাষে তারা বেশি আগ্রহী হবেন।

গাইবান্ধা : হাটবাজারগুলোতে বেচাকেনা শুরু হয়েছে নতুন পাটের। কষ্ট-ক্লিষ্টে পাট চাষীরা বাজারে পাট বিক্রি করতে এলেও অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে তারা পাটের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে উৎপাদন খরচ না ওঠায় পাট চাষিরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

এদিকে, পুরোদমে পাট বেচাকেনা শুরু হলেও এখনও সরকারিভাবে নির্ধারণ হয়নি ক্রয়মূল্য। এতে চাষিদের উৎপাদন ব্যয়ের বিপরীতে লোকসান গুনতে হচ্ছে। সরকারনির্ধারিত মূল্য না থাকায় ক্রেতারাও স্থানীয় বাজারগুলোতে পাট ক্রয় করছেন নিজেদের ইচ্ছেমতো। এজন্য ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে নতুন পাট। এরপরও প্রতি হাটেই পাটের মূল্য গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে কমছে বলে পাট চাষিরা জানান।

চলতি বছর গাইবান্ধা জেলার ৭টি উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়, যা গত বছরের চেয়ে ২০ ভাগ কম। এই অঞ্চলের পাট ঢাকা, নায়ায়ণগঞ্জ, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদাও পূরণ করত। কিন্তু গত কয়েক বছরে পাটের চাষ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।

বরিশাল : ভরা মৌসুমেও পাটের কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না কৃষক। মণপ্রতি মাত্র ১১০০ থেকে ১৩০০ টাকা বিক্রি চলছে বরিশালের বিভিন্ন হাটবাজারে। এ অবস্থায় উৎপাদন খরচ মিটিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারছেন না চাষিরা। অভিযোগ উঠেছে, ব্যবসায়ীরা হাটবাজারে সিন্ডিকেট করে পাটের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কমিয়ে দিয়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর অবশ্য জানিয়েছে, এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পাট অর্জিত হয়েছে।

বরিশাল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক রমেন্দ্রনাথ বাড়ৈ বলেন, জেলায় এবছর পাটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৭৮৬ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে দেশি ৮৫৪ হেক্টর, তোষা ২ হাজার ৪৪৩ হেক্টর ও মেস্তা ৩ হাজার ৪৮৯ হেক্টর। তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অপেক্ষা এরই মধ্যে বরিশাল জেলায় পাট উৎপাদন হয়েছে ৬ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে। বিশেষ করে জেলার গৌরনদী, উজিরপুর, মুলাদী, হিজলা, বাবুগঞ্জে ফলন বেশ আশাব্যঞ্জক হয়েছে। উপপরিচালক রমেন্দ্রনাথ বলেন, সাধারণত জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত পাটের ভরা মৌসুম থাকে। এবার বরিশালের পাটের গুণগত মানও বেশ ভালো। কিন্তু কেন কৃষক কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না তা খতিয়ে দেখতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হবে।

গৌরনদীর দক্ষিণ বহেরগতি এলাকার পাট চাষি আঃ কাশেম মুন্সি জানান, তার এবার ৭ থেকে ৮ মণ পাট উৎপাদন হয়েছে। বদলা খরচ গেছে ৩০০ টাকা। দুই বেলা খাওয়াতেও হয়েছে। অন্যান্য খরচসহ উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। অথচ টরকি বন্দর হাটে গিয়ে মণপ্রতি ১২০০ টাকার বেশি দাম পাননি। তিনি বলেন, গত বছর তার এলাকায় প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকা।

তিনি বলেন, বন্দরের কয়েক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পাটের দাম কমিয়ে দিচ্ছেন। দাম না পেয়ে একইভাবে হতাশা প্রকাশ করেছেন ওই এলাকার কৃষক গনি সিকদার, বেল্লাল খান ও আতাহার চৌকিদার।

গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, এবছর তার এলাকায় পাটের আবাদ ছিল ৭৬০ হেক্টর। পাটের ফলন বেশ ভালো হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়েছে। পর্যাপ্ত পানি এবং আবহাওয়া অনুকূল ছিল। কিন্তু দাম একটু কম। মণপ্রতি ১২০০ টাকা বিক্রি চলছে। তিনি বলেন, আরও একটু বেশি দাম হওয়া উচিত।

মুলাদী উপজেলার খাসেরহাট বন্দর পাটের প্রধান মোকাম। এখানে ফলন ভালো হলেও কৃষক দাম পাচ্ছেন না। উপজেলার খাসেরহাট সংলগ্ন কৃষক ইমরান হোসেন বলেন, শুক্রবার খাসেরহাট বন্দরে হাট বসে। তিনি মণপ্রতি ১১০০ টাকা দরে পাট বিক্রি করেছেন। অবশ্য গত বছর পাটের মণ ছিল ১৫০০ টাকার ওপর। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম কমাচ্ছেন।

মুলাদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, তিনি কৃষকদের স্বার্থে সিন্ডিকেট ভেঙে ন্যায্যমূল্যে যাতে পাট বিক্রি হয় সেটি দেখবেন। একইভাবে ভালো আবাদ হলেও দাম না পেয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ জেলার বাকেরগঞ্জ, বাবুগঞ্জ ও উজিরপুরের কৃষক।

ময়মনসিংহ : কৃষাণ-কৃষাণী মহানন্দে পাটের অাঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত। কৃষি বিভাগের মতে, চলতি বছর ময়মনসিংহের ১৩ উপজেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল ৯ হাজার ২৩ হেক্টর জমি। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ১৭৫ হেক্টর। এর মধ্যে দেশি ৪ হাজার ৬৪৪, তোষা ১ হাজার ৯৯৩, কেনাফ ১ হাজার ২২১ ও মেস্তা জাতের পাট ৩১৭ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ কৃষি বিভাগের উপপরিচালক মোঃ আলতাবুর রহমান জানান, জেলার সবচেয়ে বেশি পাট আবাদ হয় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায়। এ উপজেলায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। এছাড়া ফুলপুরে ১ হাজার ২৬০ হেক্টর, নান্দাইলে ১ হাজার ১৫৩ হেক্টর, গফরগাঁওয়ে ১ হাজার ১০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের পাট আবাদ করা হয়েছে।

ফুলবাড়ীয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আহসানুল বাশার জানান, এবার ফুলবাড়ীয়ায় গত বছরের চেয়ে ১০ ভাগ বেশি পাট আবাদ হয়েছে। বাজারমূল্য বেশ ভালো। ফলে আগামীতে পাট আবাদ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কয়েকজন পাট ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে দেশি পাট প্রতি মণ ১ হাজার ৪০০ ও তোষা পাট ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে ক্রয় চলছে। তবে সরকারিভাবে কোনো বাজারদর তারা পাননি।

পাবনা : আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়। ফলন ভালো হওয়ায় অতীতের সব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পাটের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা। অপরদিকে, ব্যাপকভাবে পাট কাটার হিড়িক পড়ায় জেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষি শ্রমিকের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিভূতি ভূষণ সরকার জানান, চলতি মৌসুমে পাবনায় পাটের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৮৭৯ হেক্টর জমিতে। কিন্তু আবাদ হয় ৩৭ হাজার ২৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে। বিঘাপ্রতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ টন। তবে অতিবৃষ্টিতে জেলার কিছু অঞ্চলে পাট চাষ ব্যাহত হলেও উঁচু জমিতে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি আরও জানান, গতবার পাটের বাজারমূল্য ছিল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, এবার বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।

টাঙ্গাইল : পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। পাটকে সোনালি অাঁশ বলা হয়। কিন্তু বছরের পর বছর টাঙ্গাইলে কমছে পাটের চাষ। পাটের আবাদ কমার কারণে কমছে পাটের উৎপাদন। বর্তমানে পাট চাষের বদলে ইরি ও আমন ধান চাষ হচ্ছে। পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেক পাট চাষি পাট আবাদ বন্ধ করে দিয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ হাজার ৮৭০ হেক্টর, অর্জিত হয় ১৫ হাজার ৯৬ হেক্টর। উৎপাদন হয় ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৩ বেল।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোঃ আবুল হাশিম জানান, এক সময় টাঙ্গাইলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ পাট চাষ হতো। কিন্তু কৃষক ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

সিরাজগঞ্জ : নতুন পাট বাজারে উঠলেও মূল্য কম থাকায় সংশ্লিষ্ট কৃষকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলার ১৮ হাজার ২৮৬ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে পাট চাষাবাদ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৮৫ বেল পাট।

এরই মধ্যে নতুন পাট কৃষকরা স্থানীয় হাটবাজারে বিক্রি করছেন অনেকটা কম দামে। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ পাট তোষা ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকায় ও দেশি পাট প্রতি মণ ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ওমর আলী শেখ বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবার পাট চাষাবাদে লক্ষ্যমাত্রা থেকে সামান্য কম হয়েছে। নতুন পাট বাজারে উঠলেও কৃষকরা তুলনামূলকভাবে মূল্য কিছুটা কম পাচ্ছেন। কৃষকরা যেন ন্যায্যমূল্য পান, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে খুব শিগগিরই অবহিত করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সোনালি অাঁশে হাসি নেই পাটের বাজারদর কম : উৎপাদন খরচ উঠছে না

আপডেট টাইম : ১০:২৩:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ অগাস্ট ২০১৫

দেশি পাটের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য আবিষ্কার করেছে বাংলাদেশ প্রায় দুই বছর আগে। সেই থেকে আশা জেগেছিল, হারিয়ে যাওয়া সোনালি অাঁশের রাজত্ব ফিরে পাবে বাংলাদেশ। পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়িয়ে বহির্বিশ্বে আবারও ঠাঁই করে নেবে বাংলার পাট। সরকারি উদ্যোগ কিছুটা দেখা দিলেও উৎপাদন খরচের সঙ্গে বাজারমূল্যের ব্যবধানের কারণে কৃষক নিরাশার সাগরে ডুবছেন। দাম না পেয়ে কৃষক বছরের পর বছর ঠকেই যাচ্ছেন। এর প্রভাব পড়ছে রফতানি বাজারেও।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টন। তবে মৌসুমের শেষে পর্যাপ্ত বৃষ্টি থাকায় পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ থেকে ৭ শতাংশ বেশি হতে পারে।

বাংলাদেশ জুট মিল অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি এ বারিক খান বলেন, পাটের উৎপাদন সন্তোষজনক হলেও এর ব্যবহার সে অনুপাতে আশানুরূপ নয়। তাছাড়া পাটকলগুলোতে যে যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয় সেগুলোর মানও ভালো নয়। তাছাড়া পাটপণ্যের বাজার বাড়াতে হলে ২০১০ সালের বস্তা ব্যবহারের নির্দেশনাটি বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, সরকারি পাটকলগুলো যে পরিমাণ সুবিধা ভোগ করে, বেসরকারি কলগুলো যদি তা ভোগ করে তবে পাট উৎপাদন বাড়বে। বাড়বে এর ব্যবহারও। তিনি জানান, দেশের ৪ কোটি লোক পাট উৎপাদন ও এর পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাটের উৎপাদন ও বাজারদর নিয়ে ব্যুরো ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর-

ফরিদপুর : জেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। এখন পাট জাগ দিয়ে তা থেকে অাঁশ ছাড়িয়ে নিচ্ছেন কৃষক। আলাদা করা হচ্ছে পাটখড়ি। চাষি পরিবারের প্রায় সবাই এ নিয়ে মহাব্যস্ত। তবে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় শঙ্কিত চাষীরা। ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪ হাজার ৯৫৬ হেক্টর জমিতে, কিন্তু সেখানে চাষাবাদ হয়েছে ৭৭ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে। ওই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ৯ লাখ বেল পাট উৎপাদন হওয়ার কথা।

জানা যায়, চলতি সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন হাটে মানভেদে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। সরকারি ক্রয় কেন্দ্রগুলো মণপ্রতি বাজারের চেয়ে ৩০ থেকে ৬০ টাকা বেশি দরে কিনছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরিদপুর পাট গবেষণা ইনিস্টিটিউটের একজন পাট গবেষক বলেন, পাট নিয়ে আসলে তাদের দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা নেই। ভারতে যেখানে একের পর এক নতুন পাটকল হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের সরকারি পাটকলগুলো সেভাবে চলছে না। তিনি বলেন, সোনালি অাঁশ আবার স্বরূপে ফিরে আসতে পারে। কারণ কৃত্রিম তন্তু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হচ্ছে। তাই বিশ্বব্যাপী পাট ও পাটপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এক্ষেত্রে আশা জোগাচ্ছে পাটের জিন আবিষ্কার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ফরিদপুর অঞ্চলের উপপরিচালক সুজন মজুমদার জানান, জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পাটের আবাদ হয়েছে; তবে কৃষক পাটের মূল্য ঠিকমতো পেলে চাষিরা লাভবান হবেন, এতে পাট চাষে তারা বেশি আগ্রহী হবেন।

গাইবান্ধা : হাটবাজারগুলোতে বেচাকেনা শুরু হয়েছে নতুন পাটের। কষ্ট-ক্লিষ্টে পাট চাষীরা বাজারে পাট বিক্রি করতে এলেও অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে তারা পাটের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে উৎপাদন খরচ না ওঠায় পাট চাষিরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

এদিকে, পুরোদমে পাট বেচাকেনা শুরু হলেও এখনও সরকারিভাবে নির্ধারণ হয়নি ক্রয়মূল্য। এতে চাষিদের উৎপাদন ব্যয়ের বিপরীতে লোকসান গুনতে হচ্ছে। সরকারনির্ধারিত মূল্য না থাকায় ক্রেতারাও স্থানীয় বাজারগুলোতে পাট ক্রয় করছেন নিজেদের ইচ্ছেমতো। এজন্য ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে নতুন পাট। এরপরও প্রতি হাটেই পাটের মূল্য গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে কমছে বলে পাট চাষিরা জানান।

চলতি বছর গাইবান্ধা জেলার ৭টি উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়, যা গত বছরের চেয়ে ২০ ভাগ কম। এই অঞ্চলের পাট ঢাকা, নায়ায়ণগঞ্জ, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদাও পূরণ করত। কিন্তু গত কয়েক বছরে পাটের চাষ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।

বরিশাল : ভরা মৌসুমেও পাটের কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না কৃষক। মণপ্রতি মাত্র ১১০০ থেকে ১৩০০ টাকা বিক্রি চলছে বরিশালের বিভিন্ন হাটবাজারে। এ অবস্থায় উৎপাদন খরচ মিটিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারছেন না চাষিরা। অভিযোগ উঠেছে, ব্যবসায়ীরা হাটবাজারে সিন্ডিকেট করে পাটের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কমিয়ে দিয়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর অবশ্য জানিয়েছে, এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পাট অর্জিত হয়েছে।

বরিশাল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক রমেন্দ্রনাথ বাড়ৈ বলেন, জেলায় এবছর পাটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৭৮৬ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে দেশি ৮৫৪ হেক্টর, তোষা ২ হাজার ৪৪৩ হেক্টর ও মেস্তা ৩ হাজার ৪৮৯ হেক্টর। তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অপেক্ষা এরই মধ্যে বরিশাল জেলায় পাট উৎপাদন হয়েছে ৬ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে। বিশেষ করে জেলার গৌরনদী, উজিরপুর, মুলাদী, হিজলা, বাবুগঞ্জে ফলন বেশ আশাব্যঞ্জক হয়েছে। উপপরিচালক রমেন্দ্রনাথ বলেন, সাধারণত জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত পাটের ভরা মৌসুম থাকে। এবার বরিশালের পাটের গুণগত মানও বেশ ভালো। কিন্তু কেন কৃষক কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না তা খতিয়ে দেখতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হবে।

গৌরনদীর দক্ষিণ বহেরগতি এলাকার পাট চাষি আঃ কাশেম মুন্সি জানান, তার এবার ৭ থেকে ৮ মণ পাট উৎপাদন হয়েছে। বদলা খরচ গেছে ৩০০ টাকা। দুই বেলা খাওয়াতেও হয়েছে। অন্যান্য খরচসহ উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। অথচ টরকি বন্দর হাটে গিয়ে মণপ্রতি ১২০০ টাকার বেশি দাম পাননি। তিনি বলেন, গত বছর তার এলাকায় প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকা।

তিনি বলেন, বন্দরের কয়েক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পাটের দাম কমিয়ে দিচ্ছেন। দাম না পেয়ে একইভাবে হতাশা প্রকাশ করেছেন ওই এলাকার কৃষক গনি সিকদার, বেল্লাল খান ও আতাহার চৌকিদার।

গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, এবছর তার এলাকায় পাটের আবাদ ছিল ৭৬০ হেক্টর। পাটের ফলন বেশ ভালো হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়েছে। পর্যাপ্ত পানি এবং আবহাওয়া অনুকূল ছিল। কিন্তু দাম একটু কম। মণপ্রতি ১২০০ টাকা বিক্রি চলছে। তিনি বলেন, আরও একটু বেশি দাম হওয়া উচিত।

মুলাদী উপজেলার খাসেরহাট বন্দর পাটের প্রধান মোকাম। এখানে ফলন ভালো হলেও কৃষক দাম পাচ্ছেন না। উপজেলার খাসেরহাট সংলগ্ন কৃষক ইমরান হোসেন বলেন, শুক্রবার খাসেরহাট বন্দরে হাট বসে। তিনি মণপ্রতি ১১০০ টাকা দরে পাট বিক্রি করেছেন। অবশ্য গত বছর পাটের মণ ছিল ১৫০০ টাকার ওপর। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম কমাচ্ছেন।

মুলাদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, তিনি কৃষকদের স্বার্থে সিন্ডিকেট ভেঙে ন্যায্যমূল্যে যাতে পাট বিক্রি হয় সেটি দেখবেন। একইভাবে ভালো আবাদ হলেও দাম না পেয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ জেলার বাকেরগঞ্জ, বাবুগঞ্জ ও উজিরপুরের কৃষক।

ময়মনসিংহ : কৃষাণ-কৃষাণী মহানন্দে পাটের অাঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত। কৃষি বিভাগের মতে, চলতি বছর ময়মনসিংহের ১৩ উপজেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল ৯ হাজার ২৩ হেক্টর জমি। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ১৭৫ হেক্টর। এর মধ্যে দেশি ৪ হাজার ৬৪৪, তোষা ১ হাজার ৯৯৩, কেনাফ ১ হাজার ২২১ ও মেস্তা জাতের পাট ৩১৭ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ কৃষি বিভাগের উপপরিচালক মোঃ আলতাবুর রহমান জানান, জেলার সবচেয়ে বেশি পাট আবাদ হয় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায়। এ উপজেলায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। এছাড়া ফুলপুরে ১ হাজার ২৬০ হেক্টর, নান্দাইলে ১ হাজার ১৫৩ হেক্টর, গফরগাঁওয়ে ১ হাজার ১০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের পাট আবাদ করা হয়েছে।

ফুলবাড়ীয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আহসানুল বাশার জানান, এবার ফুলবাড়ীয়ায় গত বছরের চেয়ে ১০ ভাগ বেশি পাট আবাদ হয়েছে। বাজারমূল্য বেশ ভালো। ফলে আগামীতে পাট আবাদ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কয়েকজন পাট ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে দেশি পাট প্রতি মণ ১ হাজার ৪০০ ও তোষা পাট ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে ক্রয় চলছে। তবে সরকারিভাবে কোনো বাজারদর তারা পাননি।

পাবনা : আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়। ফলন ভালো হওয়ায় অতীতের সব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পাটের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা। অপরদিকে, ব্যাপকভাবে পাট কাটার হিড়িক পড়ায় জেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষি শ্রমিকের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিভূতি ভূষণ সরকার জানান, চলতি মৌসুমে পাবনায় পাটের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৮৭৯ হেক্টর জমিতে। কিন্তু আবাদ হয় ৩৭ হাজার ২৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে। বিঘাপ্রতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ টন। তবে অতিবৃষ্টিতে জেলার কিছু অঞ্চলে পাট চাষ ব্যাহত হলেও উঁচু জমিতে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি আরও জানান, গতবার পাটের বাজারমূল্য ছিল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, এবার বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।

টাঙ্গাইল : পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। পাটকে সোনালি অাঁশ বলা হয়। কিন্তু বছরের পর বছর টাঙ্গাইলে কমছে পাটের চাষ। পাটের আবাদ কমার কারণে কমছে পাটের উৎপাদন। বর্তমানে পাট চাষের বদলে ইরি ও আমন ধান চাষ হচ্ছে। পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেক পাট চাষি পাট আবাদ বন্ধ করে দিয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ হাজার ৮৭০ হেক্টর, অর্জিত হয় ১৫ হাজার ৯৬ হেক্টর। উৎপাদন হয় ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৩ বেল।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোঃ আবুল হাশিম জানান, এক সময় টাঙ্গাইলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ পাট চাষ হতো। কিন্তু কৃষক ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

সিরাজগঞ্জ : নতুন পাট বাজারে উঠলেও মূল্য কম থাকায় সংশ্লিষ্ট কৃষকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলার ১৮ হাজার ২৮৬ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে পাট চাষাবাদ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৮৫ বেল পাট।

এরই মধ্যে নতুন পাট কৃষকরা স্থানীয় হাটবাজারে বিক্রি করছেন অনেকটা কম দামে। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ পাট তোষা ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকায় ও দেশি পাট প্রতি মণ ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ওমর আলী শেখ বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবার পাট চাষাবাদে লক্ষ্যমাত্রা থেকে সামান্য কম হয়েছে। নতুন পাট বাজারে উঠলেও কৃষকরা তুলনামূলকভাবে মূল্য কিছুটা কম পাচ্ছেন। কৃষকরা যেন ন্যায্যমূল্য পান, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে খুব শিগগিরই অবহিত করা হবে।