হাওর বার্তা ডেস্কঃ অভাবের সংসারে ভাগ্য ফেরাল লতিরাজ কচু। কচু চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়ে বেশ ভালোই আছেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের সাতনালা গ্রামের জসিনেম্বার পাড়ার মো. মনজের আলী। মৃত বাবার আজগার আলীর ২৫ বছরের পুরোনো এই কচু চাষকে আঁকড়ে ধরেই নিজেকে পাল্টে দিয়েছেন মনজের আলী।
কচু চাষ তার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। তাকে দেখে ও পরামর্শ নিয়ে ওই এলাকার বিভিন্ন জায়গার অনেকেই কচুর আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। কৃষক মনজের দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে লতিরাজ কচু চাষে বেশ ভালোই দিন কাটাচ্ছেন।
বাবা মারা যাওয়ার পর বাবার রেখে যাওয়া জমিতে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে মনজের আলী আবার কচু চাষ শুরু করেন। এখন তিনি উপজেলার সফল ‘লতি রাজ’ কচু চাষি। চার বিঘা জমিতে কচুর চাষ করছেন তিনি। মাসিক আয় লাখ টাকা ছাড়িয়ে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা মনজের আলীর কাছ থেকে চারা ও পরামর্শ নিয়ে ‘লতি রাজ’ কচুর চাষ করছেন।
সম্প্রতি জসিনেম্বার পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, মনজের আলী কচু জমি থেকে তুলে বাজারজাত করার জন্য পরিষ্কার করছেন।
তিনি জানান, প্রথম দিকে আমি ২৫ শতক জমিতে স্বল্প পরিসরে কচু চাষ শুরু করি। শুরুতেই আমি কচু চাষে বেশ লাভবান হলে পরের বছর নিজের ২৫ শতক জমির সাথে অন্যের সাড়ে তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়ে মোট ৪ বিঘা মাটিতে ‘লতি রাজ’ কচুর চাষ শুরু করি।
কচু চাষ করতে খুব তেমন বেশি মজুরি খরচ হয় না বলে তিনি জানান, কচুর চারা রোপনের ২০ দিন পরপর ৬ মাস পর্যন্ত হালকা নিড়ানি দিতে হয়। কচু গাছের যখন তিন মাস বয়স হয়, তখন গাছের গুড়ায় যে লতি বের হয় তা কেজি প্রতি খুচরা বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। চার বিঘা জমিতে আমি প্রায় লতি বিক্রি করি ৬০ হাজার টাকা। কচু গাছের ছয় মাস বয়স সম্পূর্ণ হলে তা বাজারজাত করার উপযোগী হয়। এক একর জমিতে কচু গাছ হয় প্রায় ১২ হাজার, যার প্রতিটি কচুর পাইকারি মূল্য ২০ থেকে ৩০ টাকা হলে মোট কচু বিক্রি হয় প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এক একর জমিতে কচু চাষে মজুরি খরচ ও যাতায়েত খরচসহ মোট উৎপাদন খরচ হয় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা।
একর প্রতি কচু চাষে লাভ হয় প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। মনজেরের বাড়ি থেকে অনেক পাইকাররা কচু নিয়ে যায় জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ স্থানীয় হাট-বাজারে।
তিনি আরো বলেন, লতিরাজ কচুর চাষ করে তিনি কিছু ধানি জমিও কিনেছেন। এছাড়া আধাপাকা বসতবাড়ি তৈরি করেছেন। কচু চাষে মনজেরের কাছ থেকে বুদ্ধি-পরামর্শ নেন এলাকার অনেক কৃষকরা।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান জানান, মনজের দারিদ্র্য জয় করেছেন। লেখাপড়া না জানলেও তিনি উপজেলার সবার কাছে অনুকরণীয়। চিরিরবন্দরের অনেক এলাকায় বর্ষাকালীন সময়ে কচু চাষের যথেষ্ট উপযোগী। ইতোমধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে দেশি কচুর পাশাপাশি আমরা ‘লতিরাজ’ নামে একটি কচু কৃষকদের আবাদের পরামর্শ দিচ্ছি। যার সুফল এখন পাচ্ছেন কৃষক।