ঢাকা ১০:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পররাষ্ট্রনীতিতে কতটা সফল নরেন্দ্র মোদি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১১:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০১৭
  • ৩২৫ বার

২০১৪ সালের ২৬ মে নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনের খোলা চত্বরে উপস্থিত অতিথিরা একটা নজিরবিহীন দৃশ্যের সাক্ষী। ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি দেশটির ১৫তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদিকে সেদিন শপথবাক্য পাঠ করান। অনুষ্ঠানে সামনের সারিতে বসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় অধিকাংশ নেতা এ ঘটনার সাক্ষী হন। এর মাত্র ৪ মাস পর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আহমেদাবাদের সবরমতি নদীর তীর ধরে হাঁটেন মোদি। ধারাবাহিক এ দুটি ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মোদির প্রবেশ এবং ভারতের পররাষ্ট্রনীতি যে তার কর্মকাণ্ডের অগ্রাধিকারে থাকবে কার্যত সেই ঘোষণারই ইঙ্গিত মেলে। তিন বছর পর মনে হচ্ছে, মোদির মোটা দাগের পদক্ষেপগুলো অপ্রস্ফুটিত রয়ে গেছে। ইসলামাবাদের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক ছেঁড়া কাপড়ের ওপর দাঁড়িয়ে, নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক মেঘের আড়ালে এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল বন্ধুত্ব স্বতন্ত্র মেজাজের রুক্ষতায় আবর্তিত হয়েছে। মোদির বৈদেশিক নীতির সাফল্য সম্পর্কে প্রশ্ন থাকলেও তার অর্থনৈতিক কূটনীতি উচ্চমাত্রায় পৌঁছেছে বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ‘মোদি অ্যান্ড হিজ চ্যালেঞ্জ’ গ্রন্থের লেখক এবং অর্থনীতিবিদ রাজিব কুমার বলেন, তিনি তার পররাষ্ট্রনীতি সেভাবেই শুরু করেছিলেন যেমনটি তার বিশ্বাসে ছিল। কিন্তু পরে হঠাৎ বুঝতে পারলেন যে পৃথিবী এমন ভালো জায়গায় নেই। দিল্লিভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক ব্রুকিংস ইন্ডিয়ার একটি সেমিনারে রাজিব বলেছিলেন, আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী মোদি একটি বড় পার্থক্য তৈরি করেছেন যে তিনি পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করেছেন। পূর্বসূরি মনমোহন সিংয়ের মতো যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের মধ্যে সফল সম্পর্কও গড়েন মোদি। এর শুরুটা হয়েছিল ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ভারতীয় অভিবাসীদের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।

ইউরেশিয়া গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক শাইলেশ কুমার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে সামনে রেখে তিনি খুব ভালো করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা থেকে বহু পথ পাড়ি দিয়েছে ভারত। পূর্ববর্তী সরকার এর কিছু সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে মোদি ভারতের পররাষ্ট্রনীতিকে পুনরায় অগ্রাধিকার দিয়েছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির এখনও সাক্ষাৎ হয়নি। তবুও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং প্রতিরক্ষা যন্ত্রপাতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি যৌথ সম্পর্কের ভিত্তি গড়তে দিল্লি অগ্রবর্তী হবে বলে প্রত্যাশা করেন কুমার। মোদি প্রশাসনের অনেকেই এমন আশা করেন। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) পররাষ্ট্রবিষয়ক নেতা বিজয় চাতুরওয়ালি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রত্যেকে এমন সম্পর্কই প্রত্যাশা করে। এ ক্ষেত্রে সবাই ভবিষ্যদ্বাণী করছে যে, ব্যক্তিগত সম্পর্কের চেয়ে এটি হবে অধিক দেনদরবারের সম্পর্ক। সামগ্রিকভাবে, ভারত তার কূটনৈতিক প্রচারের ক্ষেত্রে ভিন্ন পদ্ধতি স্থাপন করেছে। কুমার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক নীতিমালায় পরিবর্তন হচ্ছে। বাস্তববাদী রাজনীতির ওপর ভিত্তি করে মোদি প্রশাসন সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করছে এবং ভারতের কল্যাণ যারা চায় তাদের সঙ্গে কাজ করছে।’ ইউরোপের সঙ্গেও জড়িত হচ্ছেন মোদি। ২০১৫ সালে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল যখন নয়াদিল্লি সফর করেছিলেন, তখন দু’দেশ সৌরশক্তি ও জ্বালানি খাতে ২২৫ কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের সঙ্গে শতকোটি ডলারের ৩৬টি রাফালে ফাইটার জেট ক্রয়ের চুক্তি স্বাক্ষর করেন মোদি। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে ভারতে যান। সেখানে তিনি দিল্লির সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করেন।

মোদির কূটনৈতিক উদ্যোগ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলেও প্রমাণিত হয়েছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর এ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, লাওস, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও ফিজিতে সফর করেছেন তিনি। আইএইচএস মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রধান অর্থনীতিবিদ রাজিব বিশ্বাস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি এশিয়ার অর্থনীতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য ভারতের বৈদেশিক নীতির কৌশল উল্লেখযোগ্যভাবে তুলে ধরেছেন এবং জাপানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ককে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছেন। দেশটি ভারতের একটি দীর্ঘমেয়াদি অংশীদার।’

পাকিস্তান ভারতের জন্য বছরব্যাপী ভীতির কারণ হলেও চীন দেশটির আরেক শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। যদিও ক্ষমতার প্রথম বছরে জিনপিং দিল্লিতে ও মোদি বেইজিং সফর করেছেন, তবুও ভারতের প্রধানমন্ত্রী দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম হননি। কুমার বলেন, চীনের ব্যাপারটি একটু জটিল। এ অঞ্চলে চীনের বিনিয়োগের প্রতি কড়া নজর রেখেছে ভারত। চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্পে অস্বস্তিতে রয়েছে নয়াদিল্লি। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের ব্যাপারে আশঙ্কায় রয়েছে ভারত।’ আগামী দিনগুলোতে ভারত-চীন সম্পর্ক মোদির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপারে বেশ ভালো করেছেন তিনি। আরব রাষ্ট্রগুলোর পাশাপাশি ইরান ও ইসরাইলের সঙ্গে ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক বজায় রেখেছেন তিনি। মোদি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার সফর করে এসব দেশের বিনিয়োগ এনেছেন আবার ইরানের চবাহার বন্দর উন্নয়নে ৫০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছেন। ইউরেশিয়া গ্রুপের কুমার মনে করেন, মোদির সফল কূটনীতির কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলো ভারতে পণ্য তৈরি ভারতে বিক্রি করতে আগ্রহী হয়েছে। এর প্রমাণ হচ্ছে গত অর্থবছরে ভারতের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৬২০০ কোটি ডলার, যদিও একই সময় সারা বিশ্বে বিদেশি বিনিয়োগপ্রবাহ কমেছে।

কোয়ার্টসে প্রকাশিত দেবজ্যোতি ঘোষালের নিবন্ধ

ভাষান্তর : সালমান রিয়াজ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

পররাষ্ট্রনীতিতে কতটা সফল নরেন্দ্র মোদি

আপডেট টাইম : ১০:১১:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০১৭

২০১৪ সালের ২৬ মে নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনের খোলা চত্বরে উপস্থিত অতিথিরা একটা নজিরবিহীন দৃশ্যের সাক্ষী। ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি দেশটির ১৫তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদিকে সেদিন শপথবাক্য পাঠ করান। অনুষ্ঠানে সামনের সারিতে বসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় অধিকাংশ নেতা এ ঘটনার সাক্ষী হন। এর মাত্র ৪ মাস পর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আহমেদাবাদের সবরমতি নদীর তীর ধরে হাঁটেন মোদি। ধারাবাহিক এ দুটি ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মোদির প্রবেশ এবং ভারতের পররাষ্ট্রনীতি যে তার কর্মকাণ্ডের অগ্রাধিকারে থাকবে কার্যত সেই ঘোষণারই ইঙ্গিত মেলে। তিন বছর পর মনে হচ্ছে, মোদির মোটা দাগের পদক্ষেপগুলো অপ্রস্ফুটিত রয়ে গেছে। ইসলামাবাদের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক ছেঁড়া কাপড়ের ওপর দাঁড়িয়ে, নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক মেঘের আড়ালে এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল বন্ধুত্ব স্বতন্ত্র মেজাজের রুক্ষতায় আবর্তিত হয়েছে। মোদির বৈদেশিক নীতির সাফল্য সম্পর্কে প্রশ্ন থাকলেও তার অর্থনৈতিক কূটনীতি উচ্চমাত্রায় পৌঁছেছে বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ‘মোদি অ্যান্ড হিজ চ্যালেঞ্জ’ গ্রন্থের লেখক এবং অর্থনীতিবিদ রাজিব কুমার বলেন, তিনি তার পররাষ্ট্রনীতি সেভাবেই শুরু করেছিলেন যেমনটি তার বিশ্বাসে ছিল। কিন্তু পরে হঠাৎ বুঝতে পারলেন যে পৃথিবী এমন ভালো জায়গায় নেই। দিল্লিভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক ব্রুকিংস ইন্ডিয়ার একটি সেমিনারে রাজিব বলেছিলেন, আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী মোদি একটি বড় পার্থক্য তৈরি করেছেন যে তিনি পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করেছেন। পূর্বসূরি মনমোহন সিংয়ের মতো যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের মধ্যে সফল সম্পর্কও গড়েন মোদি। এর শুরুটা হয়েছিল ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ভারতীয় অভিবাসীদের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।

ইউরেশিয়া গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক শাইলেশ কুমার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে সামনে রেখে তিনি খুব ভালো করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা থেকে বহু পথ পাড়ি দিয়েছে ভারত। পূর্ববর্তী সরকার এর কিছু সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে মোদি ভারতের পররাষ্ট্রনীতিকে পুনরায় অগ্রাধিকার দিয়েছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির এখনও সাক্ষাৎ হয়নি। তবুও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং প্রতিরক্ষা যন্ত্রপাতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি যৌথ সম্পর্কের ভিত্তি গড়তে দিল্লি অগ্রবর্তী হবে বলে প্রত্যাশা করেন কুমার। মোদি প্রশাসনের অনেকেই এমন আশা করেন। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) পররাষ্ট্রবিষয়ক নেতা বিজয় চাতুরওয়ালি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রত্যেকে এমন সম্পর্কই প্রত্যাশা করে। এ ক্ষেত্রে সবাই ভবিষ্যদ্বাণী করছে যে, ব্যক্তিগত সম্পর্কের চেয়ে এটি হবে অধিক দেনদরবারের সম্পর্ক। সামগ্রিকভাবে, ভারত তার কূটনৈতিক প্রচারের ক্ষেত্রে ভিন্ন পদ্ধতি স্থাপন করেছে। কুমার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক নীতিমালায় পরিবর্তন হচ্ছে। বাস্তববাদী রাজনীতির ওপর ভিত্তি করে মোদি প্রশাসন সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করছে এবং ভারতের কল্যাণ যারা চায় তাদের সঙ্গে কাজ করছে।’ ইউরোপের সঙ্গেও জড়িত হচ্ছেন মোদি। ২০১৫ সালে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল যখন নয়াদিল্লি সফর করেছিলেন, তখন দু’দেশ সৌরশক্তি ও জ্বালানি খাতে ২২৫ কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের সঙ্গে শতকোটি ডলারের ৩৬টি রাফালে ফাইটার জেট ক্রয়ের চুক্তি স্বাক্ষর করেন মোদি। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে ভারতে যান। সেখানে তিনি দিল্লির সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করেন।

মোদির কূটনৈতিক উদ্যোগ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলেও প্রমাণিত হয়েছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর এ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, লাওস, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও ফিজিতে সফর করেছেন তিনি। আইএইচএস মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রধান অর্থনীতিবিদ রাজিব বিশ্বাস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি এশিয়ার অর্থনীতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য ভারতের বৈদেশিক নীতির কৌশল উল্লেখযোগ্যভাবে তুলে ধরেছেন এবং জাপানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ককে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছেন। দেশটি ভারতের একটি দীর্ঘমেয়াদি অংশীদার।’

পাকিস্তান ভারতের জন্য বছরব্যাপী ভীতির কারণ হলেও চীন দেশটির আরেক শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। যদিও ক্ষমতার প্রথম বছরে জিনপিং দিল্লিতে ও মোদি বেইজিং সফর করেছেন, তবুও ভারতের প্রধানমন্ত্রী দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম হননি। কুমার বলেন, চীনের ব্যাপারটি একটু জটিল। এ অঞ্চলে চীনের বিনিয়োগের প্রতি কড়া নজর রেখেছে ভারত। চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্পে অস্বস্তিতে রয়েছে নয়াদিল্লি। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের ব্যাপারে আশঙ্কায় রয়েছে ভারত।’ আগামী দিনগুলোতে ভারত-চীন সম্পর্ক মোদির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপারে বেশ ভালো করেছেন তিনি। আরব রাষ্ট্রগুলোর পাশাপাশি ইরান ও ইসরাইলের সঙ্গে ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক বজায় রেখেছেন তিনি। মোদি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার সফর করে এসব দেশের বিনিয়োগ এনেছেন আবার ইরানের চবাহার বন্দর উন্নয়নে ৫০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছেন। ইউরেশিয়া গ্রুপের কুমার মনে করেন, মোদির সফল কূটনীতির কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলো ভারতে পণ্য তৈরি ভারতে বিক্রি করতে আগ্রহী হয়েছে। এর প্রমাণ হচ্ছে গত অর্থবছরে ভারতের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৬২০০ কোটি ডলার, যদিও একই সময় সারা বিশ্বে বিদেশি বিনিয়োগপ্রবাহ কমেছে।

কোয়ার্টসে প্রকাশিত দেবজ্যোতি ঘোষালের নিবন্ধ

ভাষান্তর : সালমান রিয়াজ