হাওর পরিস্থিতি দেখতে নেত্রকোনা খালিয়াজুরীতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী

অকালবন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা দেখতে আগামী বৃহস্পতিবার নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করবেন। তাঁর এ সফর ঘিরে নেত্রকোনার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা আশার আলো দেখছেন। প্রধানমন্ত্রী সরেজমিন হাওর এলাকা ঘুরে দেখবেন বলে প্রত্যাশা করছেন অনেকে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে রওনা দিয়ে সকাল পৌনে ১০টায় নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে তাঁর। এরপর খালিয়াজুরী কলেজমাঠে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও দুস্থ মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করবেন। পরে তিনি নগর ইউনিয়নের বল্লভপুর এলাকা পরিদর্শনে যাবেন। জেলা পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সুধীজনদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করবেন তিনি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে।
এর আগে গত ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালিয়াজুরীর পার্শ্ববর্তী সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা পরিদর্শন এবং বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।

স্থানীয় সাংসদ রেবেকা মমিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, খালিয়াজুরীতে বঙ্গবন্ধুকন্যার এটিই হবে প্রথম সফর। তাঁর আসার খবর দুর্গত খালিয়াজুরী উপজেলাবাসীকে আনন্দিত করেছে। তিনি হাওরবাসীর কষ্ট বোঝেন। তাঁর আগমন উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

নেত্রকোনার পুলিশ সুপার (এসপি) জয়দেব চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে খালিয়াজুরীতে সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য খালিয়াজুরীতে রয়েছেন। এ ছাড়া সাড়ে ১২ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. মুশফিকুর রহমান জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

সম্প্রতি ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার ৮৯টি ছোট-বড় হাওরের ২০ হাজার ৭০ হেক্টর জমির শতভাগ তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত ৩০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ছাড়া হাওরের প্রায় ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন মাছের মড়কে মৎস্যজীবী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত পাঁচ হাজার।

জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৮৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬৯টি ইউনিয়নে পানিতে ৭৯ হাজার ৭১০ হেক্টর জমির বোরো ধান নষ্ট হয়েছে। নিঃস্ব কৃষকের সংখ্যা ১ লাখ ৬৭ হাজার। এ বছর জেলায় বোরো আবাদ হয় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে। ধান নষ্টের পর পানি দূষিত হয়ে হাওরগুলোতে ১ হাজার ১৮০ মেট্রিক টন মাছ মরে নষ্ট হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৬ হাজার ১২০ জেলে পরিবার। এ ছাড়া চার লাখের মতো গবাদিপশু হুমকির মুখে রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ২ কোটি ৭৫ লাখ নগদ টাকা ও ২ হাজার ২৯২ মেট্রিক টন ভিজিএফ ও জিআর চাল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলায় ৭২টি ইউনিয়নে ডিলারের মাধ্যমে প্রতিদিন দুই মেট্রিক টন করে ওএমএসের চাল বিক্রি করা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর