ঢাকা ১১:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালের সাক্ষী ৩০০ বছরের প্রাচীনতম নি-দারিয়া মসজিদ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৩৯:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই ২০১৫
  • ৩২০ বার

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সীমান্তবর্তী ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউপির ৩নং ওয়ার্ডে অবস্থিত কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রাচীনতম মরহুম সুবেদার মুনসুর খাঁর নির্মিত প্রায় ৩০০ বছরের পুরাকীর্তি নি-দারিয়া জামে মসজিদ। ওই পুরাকীর্তিটির গায়ে পাথরে খোদাই করে আরবিতে লেখা হিজরি ১১৭৬ সনে মসজিদটি নির্মিত হওয়ার কথা লেখা রয়েছে। তৎকালীন সময়ে ওই পুরাকীর্তিটি রড ছাড়া শুধুমাত্র ইট-সিমেন্ট ও বালু দিয়ে তৈরিকৃত ভবনটির ৪টি পিলারের উপর শত শত বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদটির তিন পার্শ্বে ৫টি দরজা রয়েছে। পূর্ব দিকে মুসল্লিদের প্রবেশের জন্য ৩টি, উত্তর দিকে ১টি এবং দক্ষিণ দিকে ১টি করে দরজা রয়েছে। মসজিদে প্রবেশের সঙ্গে নির্মিত ছোট একটি ছাদ ঢালাই করা ওই সময়কার একটি ভবন রয়েছে। বর্তমানে ওই ছোট ভবনটিতে মসজিদে আযান দেয়ার জন্য মাইকের মাউথ ফিস বসানো হয়েছে। মসজিদ নির্মাণের সময় একই ধরনের কারুকাজে তৈরি করা একটি কবর রয়েছে। স্থানীয়রা কেউ এখনও সঠিক বলতে পারছে না, আসলে ওই কবরটি কার? তবে একাধিক প্রবীণ ব্যক্তিরা এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা বাপ-দাদার কাছ থেকে শুনেছি, ওই কবরটি মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম সুবেদার মুনসুর খাঁর। এখন পর্যন্ত ওইভাবে কবরটির পরিচয় রয়েছে। তবে সঠিকভাবে কেউ বলতে পারছে না। মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম সুবেদার মুনসুর খাঁ তৎকালীন মসজিদ নির্মাণের সময় মসজিদের জায়গাসহ মসজিদটির নামে ১০ একর ৫৬ শতাংশ জমি দান করার কথা জানালেন, বর্তমান মসজিদটির মুয়াজ্জিন মো. আনছার আলী।
বর্তমান মসজিদের নামে দানকৃত বাকি জমিগুলো কোথায় এবং কি অবস্থায় রয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাদাদের কাছ থেকে শুনেছি, মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সুবেদার মুনসুর খাঁ তৎকালীন এলাকার ভূষপু ও ভুরিয়া নামের দু’ব্যক্তিকে মসজিদটির দানের জমিগুলোর কাগজপত্র তাদের দুজনের হাতে তুলে দেন এবং ওই জমিগুলো চাষাবাদ করে অর্ধেক ফসল মসজিদে দেয়ার জন্য বর্গা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ভূষপু ও ভুরিয়া মারা গেলে তাদের সন্তানরা অভাবের তাড়নায় মসজিদের বেশিরভাগ জায়গা-জমি বিক্রি করে দেন। বর্তমান মসজিদটির জমির সঠিক হিসাব নেই। এদিকে মসজিদটির ভেতরে নামাজের জন্য দুটি কাতার রয়েছে। পরবর্তীতে মুসল্লিদের নামাজের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মসজিদ কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ও সরকারি অর্থায়নে মুসল্লিদের নামাজের জন্য পূর্বদিকে ৮-১০টি কাতার পাকাকরণ এবং উপরে টিনশেডের ব্যবস্থা করেন। মসজিদটির বাইরে সরকারিভাবে সাইনবোর্ড সম্বলিত একটি নোটিশ টাঙানো রয়েছে। ওই নোটিশটিতে পরিচালক, যাদুঘর ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিভিন্ন আইন মেনে চলার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। উল্লেখ রয়েছে, ওই পুরাকীর্তিটির কেউ কোন ধরনের ক্ষতি সাধন করিলে ১৯৬৮ সালের পুরাকীর্তি আইনে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১ বছরের কারাদণ্ডসহ সমপরিমাণ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। অপরদিকে ওই মসজিদটিতে এলাকাসহ দূর-দূরান্ত হতে আগত ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ প্রতি শুক্রবার জুমার দিনে সকাল থেকে অনেকে মানত স্বরূপ নামাজ আদায় এবং মিলাদ মাহফিল ও দোয়া নেয়ার জন্য আসেন। এলাকাবাসী ঐতিহ্যবাহী ৩০০ বছরের পুরাকীর্তিটি সংরক্ষণ করার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার জোর দাবি জানিয়েছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

কালের সাক্ষী ৩০০ বছরের প্রাচীনতম নি-দারিয়া মসজিদ

আপডেট টাইম : ০৪:৩৯:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই ২০১৫

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সীমান্তবর্তী ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউপির ৩নং ওয়ার্ডে অবস্থিত কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রাচীনতম মরহুম সুবেদার মুনসুর খাঁর নির্মিত প্রায় ৩০০ বছরের পুরাকীর্তি নি-দারিয়া জামে মসজিদ। ওই পুরাকীর্তিটির গায়ে পাথরে খোদাই করে আরবিতে লেখা হিজরি ১১৭৬ সনে মসজিদটি নির্মিত হওয়ার কথা লেখা রয়েছে। তৎকালীন সময়ে ওই পুরাকীর্তিটি রড ছাড়া শুধুমাত্র ইট-সিমেন্ট ও বালু দিয়ে তৈরিকৃত ভবনটির ৪টি পিলারের উপর শত শত বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদটির তিন পার্শ্বে ৫টি দরজা রয়েছে। পূর্ব দিকে মুসল্লিদের প্রবেশের জন্য ৩টি, উত্তর দিকে ১টি এবং দক্ষিণ দিকে ১টি করে দরজা রয়েছে। মসজিদে প্রবেশের সঙ্গে নির্মিত ছোট একটি ছাদ ঢালাই করা ওই সময়কার একটি ভবন রয়েছে। বর্তমানে ওই ছোট ভবনটিতে মসজিদে আযান দেয়ার জন্য মাইকের মাউথ ফিস বসানো হয়েছে। মসজিদ নির্মাণের সময় একই ধরনের কারুকাজে তৈরি করা একটি কবর রয়েছে। স্থানীয়রা কেউ এখনও সঠিক বলতে পারছে না, আসলে ওই কবরটি কার? তবে একাধিক প্রবীণ ব্যক্তিরা এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা বাপ-দাদার কাছ থেকে শুনেছি, ওই কবরটি মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম সুবেদার মুনসুর খাঁর। এখন পর্যন্ত ওইভাবে কবরটির পরিচয় রয়েছে। তবে সঠিকভাবে কেউ বলতে পারছে না। মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম সুবেদার মুনসুর খাঁ তৎকালীন মসজিদ নির্মাণের সময় মসজিদের জায়গাসহ মসজিদটির নামে ১০ একর ৫৬ শতাংশ জমি দান করার কথা জানালেন, বর্তমান মসজিদটির মুয়াজ্জিন মো. আনছার আলী।
বর্তমান মসজিদের নামে দানকৃত বাকি জমিগুলো কোথায় এবং কি অবস্থায় রয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাদাদের কাছ থেকে শুনেছি, মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সুবেদার মুনসুর খাঁ তৎকালীন এলাকার ভূষপু ও ভুরিয়া নামের দু’ব্যক্তিকে মসজিদটির দানের জমিগুলোর কাগজপত্র তাদের দুজনের হাতে তুলে দেন এবং ওই জমিগুলো চাষাবাদ করে অর্ধেক ফসল মসজিদে দেয়ার জন্য বর্গা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ভূষপু ও ভুরিয়া মারা গেলে তাদের সন্তানরা অভাবের তাড়নায় মসজিদের বেশিরভাগ জায়গা-জমি বিক্রি করে দেন। বর্তমান মসজিদটির জমির সঠিক হিসাব নেই। এদিকে মসজিদটির ভেতরে নামাজের জন্য দুটি কাতার রয়েছে। পরবর্তীতে মুসল্লিদের নামাজের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মসজিদ কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ও সরকারি অর্থায়নে মুসল্লিদের নামাজের জন্য পূর্বদিকে ৮-১০টি কাতার পাকাকরণ এবং উপরে টিনশেডের ব্যবস্থা করেন। মসজিদটির বাইরে সরকারিভাবে সাইনবোর্ড সম্বলিত একটি নোটিশ টাঙানো রয়েছে। ওই নোটিশটিতে পরিচালক, যাদুঘর ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিভিন্ন আইন মেনে চলার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। উল্লেখ রয়েছে, ওই পুরাকীর্তিটির কেউ কোন ধরনের ক্ষতি সাধন করিলে ১৯৬৮ সালের পুরাকীর্তি আইনে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১ বছরের কারাদণ্ডসহ সমপরিমাণ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। অপরদিকে ওই মসজিদটিতে এলাকাসহ দূর-দূরান্ত হতে আগত ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ প্রতি শুক্রবার জুমার দিনে সকাল থেকে অনেকে মানত স্বরূপ নামাজ আদায় এবং মিলাদ মাহফিল ও দোয়া নেয়ার জন্য আসেন। এলাকাবাসী ঐতিহ্যবাহী ৩০০ বছরের পুরাকীর্তিটি সংরক্ষণ করার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার জোর দাবি জানিয়েছেন।