সুনামগঞ্জের হাওরে মাছ ও হাঁসের মড়কের জন্য ফসলের মাঠে ব্যবহার করা কীটনাশকও একটি কারণ বলে মনে করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা দল। তারা বলছে, বন্যার পানি ফসলের মাঠ ডুবিয়ে দেয়ায় এই কীটনাশক ও এসিড ছড়িয়ে পড়েছে।
সুনামগঞ্জের হাওরে মাছ ও জলজপ্রাণীর অস্বাভাবিক মড়কের কারণ খতিয়ে দেখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের একটি দল শনিবার সকালে তাদের কাজ শুরু করে। এ সময় তারা এই মত প্রকাশ করেন।
দলটি সারাদিনই বিভিন্ন হাওরের পানি পরীক্ষা করবেন। দাকার হাওরে সকাল আটটায় পানি পরীক্ষা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আজমল হোসেন ভূঁইয়া জানান, অন্যান্য এলাকা থেকেও এসিডিটি ও কীটনাশক পানির সঙ্গে আসতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। যার ফলে মাছের মড়ক দেখা দিছে।
দলটির আরেক সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনিরুজ্জামান খন্দকার জানান, ধানের পচা দুর্গন্ধ থেকে মানুষের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এটা সাময়িক।
দলটি আরও জানিয়েছে, বিশ্ব ঐতিহ্য টাঙ্গুয়ার হাওরে মাছ ও জলজ প্রাণী মারা গেলেও অন্য হাওরের তুলনায় তা কম। তবে হাওরের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
গত তিন দিন ধরে বিভিন্ন গবেষকরা একাধিক হাওর পরিদর্শন করে জানিয়েছে অ্যামোনিয়া গ্যাস বৃদ্ধি, অক্সিজেন ও ক্ষারের অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় মাছ মারা যাচ্ছে এবং পানি দূষিত হচ্ছে।
শুক্রবার থেকে হাওর এলাকায় শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টি এখনও পুরোপুরি থামেনি। বন্যা আক্রান্ত জনপদের বাসিন্দারা এতে ভীত হয়ে উঠলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দলটি বলছে এই বৃষ্টি পানির দূষণ দূর করে দিতে পারে।
মৎস্য অধিদপ্তর এবং প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ এপ্রিল রাতে কালবৈশাখী ঝড় হয়। পরদিন থেকেই মাছ মরা শুরু হয়। জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরে প্রথমে মাছ মরার কথা জানায় মৎস্য বিভাগ। সেখানে প্রথমে চুন ও জিওলাইট ছিটানো হয়।
সুনামগঞ্জে প্রথমেই এই উপজেলার নলুয়ার হাওরটি বাঁধ ভেঙে কাঁচা ধান নিয়ে তলিয়ে যায়। পরদিন জেলার সকল হাওরেই কম বেশি মাছ মরতে থাকে। ১৮ এপ্রিল থেকে মাছের মড়কের পাশাপাশি হাওরে পচা দুর্গন্ধ বেরুতে থাকে। ধান গাছের পাশাপাশি মাছ পচে যাওয়ায় এই দুর্গন্ধ ক্রমেই বাড়ছে।