প্রতিদিনই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরা আধা পাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছে কৃষক। এ অবস্থায় প্রতিটি কৃষক পরিবারের মাঝে কান্নার রোল পড়ে গেছে। এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। সোমবার হাওরের পাঙাইয়া বাঁধটি ভেঙে কয়েকশত একর বোরো জমি তলিয়ে গেছে।
পাশের হাসনপুর বাঁধটি রক্ষার জন্য শতাধিক কৃষক দিন রাত পরিশ্রম করছেন। বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে মিঠামইন, করিমগঞ্জ ও নিকলী উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের স্বপন বোরো ফসল পানির নিচে তলিযে যাবে। এই চিন্তায় কৃষকদেরকে পেয়ে বসেছে। কেবল বাঁধ ভেঙ্গে নয়, হাওরের ভিতর দিয়ে প্রবাহমান নদীগুলোর পাড় উপছে পানি বোরো জমিতে গিয়ে পড়ছে। আর সাথে সাথেই তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল। পুরো হাওর এলাকার একই চিত্র। অনেক কৃষক জমিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
বিস্তীর্ণ হাওরে সোনালী রঙ ধারণ করছিল ধান। বৈশাখে ধান কাটার স্বপ্ন দেখছিল কৃষক। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্নের ধান। অনেক কৃষক আধা পাকা ধান কোনো রকমে কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। মিঠামইনের পাঙ্গাইয়া বিলের বাঁধ ভেঙ্গে জমিতে পানি ঢুকায় কৃষক সবুজ মিয়ার ২০ একর কাঁচা বোরো জমি তলিযে গেছে। এখন তিনি ওই জমি কাটতে শ্রমিক পাচ্ছেন না। কৃষক দানিছ মিয়া জানান, তার জমি পুরোটাই পানির নিচে।
ধারদেনা ও ঋণ করে তিনি এবছর বোরো আবাদ করেছিলেন। জমি পানির নিচে থাকায় এখন পরিবার পরিজন নিয়ে কি করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। কাটখান ইউনিয়নের কৃষক মহসিন জানান, তাদের ২০ একর বোরো জমিতে এখন তিন থেকে চার ফুট পানির নিচে। নিকলীর কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, বোরো জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদেরকে পথে বসতে হবে বলে তিনি জানান।
মিঠামইন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ময়না আক্তার জানান, হাওরের কৃষকরা যেখানে উৎসবমুখর পরিবেশে বোরো মাড়াই করার কথা। ঠিক সে সময় বোরো ফসল পানির নিচে থাকায় কৃষকরা কাঁদছে। তাদেরকে শান্তনা দেয়ার কোনো ভাষা নেই।
মিঠামইন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রাফিউল ইসলাম জানান, কেবল মিঠামইনেই অন্তত ৫ হাজার একর বোরো জমি বিনষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, ইতিমধ্যে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার হাওরে ১০ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। সর্বশেষ পরিস্থিতিতে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এনিয়ে কৃষি বিভাগ সরেজমিনে কাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
তবে বেসরকারি হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর হবে বলে ভূক্তভোগীরা ধারণা করছেন। কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি বলেন, হাওরের কৃষকরা কেবল একটি ফসলের উপর নির্ভরশীল। এই প্রাণের বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষকরা চরম ক্ষতির শিকার হয়েছেন। তাই হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তিনি।কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের অন্তত ১৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে পানির তোড়ে ভেঙে গেছে অনেক বাঁধ।