ঢাকা ০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাবিক ছাড়াই চলবে জাহাজ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৪২:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুন ২০১৫
  • ৩৬২ বার
আকাশে ভাসমান ড্রোন চালায় দূরে বসা মানুষ। ভবিষ্যতে বিশাল মালবাহী জাহাজও সেভাবে কনট্রোল রুমে বসে চালানো সম্ভব করতে চান জার্মান বিজ্ঞানীরা।
ভবিষ্যতের জাহাজ হয়তো শীঘ্র একেবারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মহাসাগর পাড়ি দেবে। শুধু বন্দরের মধ্যে এলে কয়েকজন নাবিক সেটি চালনা করবেন। তারপর সমুদ্রে গিয়ে পড়লে ন্যাভিগেশন ও লোকালাইজেশন প্রযুক্তির নেটওয়ার্ক জাহাজটিকে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাবে।
জার্মানির ফ্রাউনহোফার সামুদ্রিক গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা প্রায় দুই বছর ধরে নাবিক ছাড়াই মালবাহী জাহাজ চালানোর সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করছেন। এমন অ্যাটোম্যাটিক জাহাজের সুবিধা কী?
ফ্রাউনহোফার সিএমএল-এর কার্লোস ইয়ান বলেন, ”প্রথমত, কর্মীর প্রয়োজন না থাকায় অর্থ বাঁচছে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। আরেকটি সুবিধা হলো, সেন্সর প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সমুদ্রে জাহাজকে আরো নিরাপদ করে তোলা যাবে। ভুললে চলবে না, মানুষের ভুলের কারণেই সবচেয়ে বেশি জাহাজ দুর্ঘটনা ঘটে। তাছাড়া ধীর গতিতে চলা স্বয়ংক্রিয় জাহাজ পরিবেশ দূষণ কমাতেও সাহায্য করবে। কার্বন নির্গমন ও জ্বালানির ব্যবহার কমবে।”
প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সিমুলেটরে গবেষকরা তাঁদের সফটওয়্যার পরীক্ষা করে দেখছেন। সিমুলেশনের মাধ্যমে দ্রুত বোঝা গিয়েছিল, যে নাবিক ছাড়া বন্দরের মধ্যে জাহাজ চলতে পারবে না। সেখানে জাহাজ চালানো অত্যন্ত জটিল কাজ। তাই ভবিষ্যতেও বন্দর ছেড়ে যাবার এবং সেখানে ঢোকার সময় নাবিকরাই জাহাজ চালাবেন। তারপর মালবাহী জাহাজ সমুদ্রে পৌঁছালে নাবিকরা ছোট নৌকা বা হেলিকপ্টারে চড়ে জাহাজ ছেড়ে চলে যাবে।
গন্তব্যে ঠিক উল্টোটা ঘটবে। বন্দরে ঢোকার আগে ঠিক সময়ে নাবিকরা জাহাজে পৌঁছবে। তারপর নিরাপদে জাহাজটি নোঙর করবে। সমুদ্রে চলার সময়ে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জাহাজের দায়িত্ব নেবে। সবচেয়ে বড় আশা হলো, জাহাজ চলাচল আরো নিরাপদ হবে, কারণ সেন্সর মানুষের তুলনায় অনেক বেশি দক্ষতার সঙ্গে চারিদিকে নজর রাখবে।
ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের হান্স-ক্রিস্টফ বুয়রমাইস্টার বলেন, ”কোনো বাধা শনাক্ত করতে আগের মতোই আমরা রাডার ও অটোম্যাটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ব্যবহার করছি। সেইসঙ্গে জাহাজে সাধারণ ও ইনফ্রারেড ক্যামেরাও থাকছে। সব সিস্টেম একসঙ্গে কাজ করতে পারে। এক সেন্সর ফিউশন কনসেপ্টের সাহায্যে তখন অপেক্ষাকৃত ছোট বস্তুও শনাক্ত করা সহজ হবে, যা রাডারে সরাসরি ধরা পড়ে না। ইনটেলিজেন্ট অ্যালগোরিদম সেটা সম্ভব করবে।”
নাবিক ছাড়াই চলবে জাহাজ!অন্য কোনো জাহাজের সঙ্গে সংঘাতের উপক্রম হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা চিনতে পারা হলো প্রথম পদক্ষেপ। ‘স্বতন্ত্র’ জাহাজ তখন নিজেই স্থির করবে, এই অবস্থায় কী করা উচিত – তার নিজের এগিয়ে যাবার অধিকার আছে, নাকি পাশ কাটিয়ে যেতে হবে? ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের হান্স-ক্রিস্টফ বুয়রমাইস্টার বলেন, ”আমরা জাহাজকে আরো বুদ্ধি দিতে চাই, যাতে সে নিজস্ব ক্ষমতায় যাত্রাপথ স্থির করতে পারে এবং নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে যেমন – সংঘাত এড়িয়ে যাওয়া, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নিরাপদে এগিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।”
তবে একেবারেই কোনো নজরদারি ছাড়া নাবিকহীন জাহাজ চলবে না। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি সব কিছুর উপর নজর রাখবেন এবং প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করবেন – যেমন জাহাজের স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম পরিস্থিতি সামলাতে না পারলে অথবা সেগুলি বিকল হয়ে গেলে। এমন পরিস্থিতিতে ৬টি পর্যন্ত জাহাজ দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
এই যান্ত্রিক উদ্ভাবনের ফলে নাবিকের পেশার চরিত্রও বদলে যাবে। ফ্রাউনহোফার সিএমএল-এর প্রধান কার্লোস ইয়ান বলেন, ”আমাদের ধারণা, খোলা সমুদ্রে জাহাজ স্বতন্ত্রভাবে চলবে। তবে সীমাবদ্ধ জলপথ বা বন্দরে সেটা সম্ভব হবে না। তখন জাহাজ বন্দর থেকে বার করা এবং বন্দরে নিয়ে আসা নতুন এক পেশা হয়ে উঠবে। অথবা কনট্রোল রুমে বসে দূরের জাহাজ নিয়ন্ত্রণ করাও নতুন কাজ হবে।”
এই মুহূর্তে নাবিকহীন জাহাজ সমুদ্রে পাঠানো বেআইনি কাজ। ফলে আজই এই ব্যবস্থা যাচাই করতে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে সিমুলেটারই একমাত্র ভরসা।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

নাবিক ছাড়াই চলবে জাহাজ

আপডেট টাইম : ০৪:৪২:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুন ২০১৫
আকাশে ভাসমান ড্রোন চালায় দূরে বসা মানুষ। ভবিষ্যতে বিশাল মালবাহী জাহাজও সেভাবে কনট্রোল রুমে বসে চালানো সম্ভব করতে চান জার্মান বিজ্ঞানীরা।
ভবিষ্যতের জাহাজ হয়তো শীঘ্র একেবারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মহাসাগর পাড়ি দেবে। শুধু বন্দরের মধ্যে এলে কয়েকজন নাবিক সেটি চালনা করবেন। তারপর সমুদ্রে গিয়ে পড়লে ন্যাভিগেশন ও লোকালাইজেশন প্রযুক্তির নেটওয়ার্ক জাহাজটিকে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাবে।
জার্মানির ফ্রাউনহোফার সামুদ্রিক গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা প্রায় দুই বছর ধরে নাবিক ছাড়াই মালবাহী জাহাজ চালানোর সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করছেন। এমন অ্যাটোম্যাটিক জাহাজের সুবিধা কী?
ফ্রাউনহোফার সিএমএল-এর কার্লোস ইয়ান বলেন, ”প্রথমত, কর্মীর প্রয়োজন না থাকায় অর্থ বাঁচছে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। আরেকটি সুবিধা হলো, সেন্সর প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সমুদ্রে জাহাজকে আরো নিরাপদ করে তোলা যাবে। ভুললে চলবে না, মানুষের ভুলের কারণেই সবচেয়ে বেশি জাহাজ দুর্ঘটনা ঘটে। তাছাড়া ধীর গতিতে চলা স্বয়ংক্রিয় জাহাজ পরিবেশ দূষণ কমাতেও সাহায্য করবে। কার্বন নির্গমন ও জ্বালানির ব্যবহার কমবে।”
প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সিমুলেটরে গবেষকরা তাঁদের সফটওয়্যার পরীক্ষা করে দেখছেন। সিমুলেশনের মাধ্যমে দ্রুত বোঝা গিয়েছিল, যে নাবিক ছাড়া বন্দরের মধ্যে জাহাজ চলতে পারবে না। সেখানে জাহাজ চালানো অত্যন্ত জটিল কাজ। তাই ভবিষ্যতেও বন্দর ছেড়ে যাবার এবং সেখানে ঢোকার সময় নাবিকরাই জাহাজ চালাবেন। তারপর মালবাহী জাহাজ সমুদ্রে পৌঁছালে নাবিকরা ছোট নৌকা বা হেলিকপ্টারে চড়ে জাহাজ ছেড়ে চলে যাবে।
গন্তব্যে ঠিক উল্টোটা ঘটবে। বন্দরে ঢোকার আগে ঠিক সময়ে নাবিকরা জাহাজে পৌঁছবে। তারপর নিরাপদে জাহাজটি নোঙর করবে। সমুদ্রে চলার সময়ে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জাহাজের দায়িত্ব নেবে। সবচেয়ে বড় আশা হলো, জাহাজ চলাচল আরো নিরাপদ হবে, কারণ সেন্সর মানুষের তুলনায় অনেক বেশি দক্ষতার সঙ্গে চারিদিকে নজর রাখবে।
ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের হান্স-ক্রিস্টফ বুয়রমাইস্টার বলেন, ”কোনো বাধা শনাক্ত করতে আগের মতোই আমরা রাডার ও অটোম্যাটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ব্যবহার করছি। সেইসঙ্গে জাহাজে সাধারণ ও ইনফ্রারেড ক্যামেরাও থাকছে। সব সিস্টেম একসঙ্গে কাজ করতে পারে। এক সেন্সর ফিউশন কনসেপ্টের সাহায্যে তখন অপেক্ষাকৃত ছোট বস্তুও শনাক্ত করা সহজ হবে, যা রাডারে সরাসরি ধরা পড়ে না। ইনটেলিজেন্ট অ্যালগোরিদম সেটা সম্ভব করবে।”
নাবিক ছাড়াই চলবে জাহাজ!অন্য কোনো জাহাজের সঙ্গে সংঘাতের উপক্রম হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা চিনতে পারা হলো প্রথম পদক্ষেপ। ‘স্বতন্ত্র’ জাহাজ তখন নিজেই স্থির করবে, এই অবস্থায় কী করা উচিত – তার নিজের এগিয়ে যাবার অধিকার আছে, নাকি পাশ কাটিয়ে যেতে হবে? ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের হান্স-ক্রিস্টফ বুয়রমাইস্টার বলেন, ”আমরা জাহাজকে আরো বুদ্ধি দিতে চাই, যাতে সে নিজস্ব ক্ষমতায় যাত্রাপথ স্থির করতে পারে এবং নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে যেমন – সংঘাত এড়িয়ে যাওয়া, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নিরাপদে এগিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।”
তবে একেবারেই কোনো নজরদারি ছাড়া নাবিকহীন জাহাজ চলবে না। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি সব কিছুর উপর নজর রাখবেন এবং প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করবেন – যেমন জাহাজের স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম পরিস্থিতি সামলাতে না পারলে অথবা সেগুলি বিকল হয়ে গেলে। এমন পরিস্থিতিতে ৬টি পর্যন্ত জাহাজ দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
এই যান্ত্রিক উদ্ভাবনের ফলে নাবিকের পেশার চরিত্রও বদলে যাবে। ফ্রাউনহোফার সিএমএল-এর প্রধান কার্লোস ইয়ান বলেন, ”আমাদের ধারণা, খোলা সমুদ্রে জাহাজ স্বতন্ত্রভাবে চলবে। তবে সীমাবদ্ধ জলপথ বা বন্দরে সেটা সম্ভব হবে না। তখন জাহাজ বন্দর থেকে বার করা এবং বন্দরে নিয়ে আসা নতুন এক পেশা হয়ে উঠবে। অথবা কনট্রোল রুমে বসে দূরের জাহাজ নিয়ন্ত্রণ করাও নতুন কাজ হবে।”
এই মুহূর্তে নাবিকহীন জাহাজ সমুদ্রে পাঠানো বেআইনি কাজ। ফলে আজই এই ব্যবস্থা যাচাই করতে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে সিমুলেটারই একমাত্র ভরসা।