বর্ণিকে বিয়ের উদ্দেশ্যে বাবুল খুন করতে পারে: মিতুর বাবা

নিহত পুলিশ কর্মকর্তা আকরামের স্ত্রী বনানী বিনতে বসির বর্ণিকে বিয়ে করার জন্য মিতুকে বাবুল আক্তার খুন করতে পারেন বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। মিতুর বাবা এও বলেছেন, বাবুলের সঙ্গে বর্ণির বিয়ে দিতে তার পরিবারের পক্ষ থেকেও হত্যাকাণ্ডটি হতে পারে। মিতুকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন অত্যাচার করত জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এ জন্য সে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিল।

রোববার মিতু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. কামরুজ্জামানকে এসব তথ্য দিয়েছেন মোশাররফ হোসেন।

এর আগে দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এডিসি মো. কামরুজ্জামান রাজধানীর মেরাদিয়ায় মোশাররফ হোসেনের বাসায় যান। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ওই বাসায় অবস্থানকালে তদন্তকারী নিহত মিতুর বাবা ছাড়াও মা শাহেদা মোশাররফ ও ছোট বোন শায়লা মোশাররফের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় রোববার রাতেই বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা মিতুর পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে যান।

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের শ্বশুর ও মাহমুদা আক্তার মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন রোববার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তদন্ত কর্মকর্তা তাদের বাসায় প্রবেশ করে বের হন বিকাল ৪টায়। দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘণ্টা তিনি পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলেন।

মোশাররফ হোসেন বলেন, তারা তার মেয়েকে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। এমনকি কয়েক দফায় মিতু আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বলেও তারা তথ্য দিয়েছেন।

এ বিষয়টি মিতুর সন্তান ছাড়াও বাসার কাজের মেয়ে ফাতেমা ও সে সময় ওই বাসায় দায়িত্বরত অর্ডারলি (পুলিশের কনস্টেবল) বিষয়টি জানতেন বলে তারা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন।

মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, পরকীয়ার বিষয়টি না জানলেও একবার বাবুল আক্তারের ছোট বোন মিতুকে বলেছিল, তার ভাইকে আবার বিয়ে দেবে। আর মেয়ে আগে থেকেই ঠিক করা আছে এবং তার বাড়ি মাগুরায়।

এ বিষয়টি নিয়ে তখন বাবুলের ছোট বোন লাবনীর সঙ্গে ঝগড়ার বিষয়টি মারা যাওয়ার আগে মিতু তার মা ও ছোট বোনকে জানিয়েছিল।

এর আগে ২৬ জানুয়ারি বাবুল আক্তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি শাহেদা মোশাররফকে, ৮ জানুয়ারি বাবুল আক্তারের খালাতো ভাই মফিজকে, ২২ জানুয়ারি সফিউদ্দিন নামে বাবুল আক্তারের অপর খালাতো ভাইকে, ১ জানুয়ারি বাবুল আক্তারের মা-বাবাকে, ২২ ডিসেম্বর শ্বশুও মোশাররফ হোসেন, ১৫ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিএমপির এডিসি কামরুজ্জামান।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। হত্যাকাণ্ডের পর তথ্যানুসন্ধানের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে পুলিশ সদর দফতর। ওই কমিটি পুলিশ সদর দফতরে প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর হঠাৎ করেই পাল্টে যায় পরিস্থিতি।

গত বছরের ২৪ জুন মধ্যরাতে বাবুল আক্তারকে খিলগাঁওয়ের ভুঁইয়াপাড়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে ঢাকার ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে সাড়ে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ওই সময় একাধিক সন্দেহভাজনকে বাবুল আক্তারের মুখোমুখি করা হয়। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য বেরিয়ে আসে, যা আজও অজানা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর