আগামী প্রজন্ম কিভাবে জানবে বিপ্লব ভাষা সৈনিক ছিলেন

ফেব্রুয়ারি মানে ভাষার মাস। ফেব্রুয়ারি এলেই মনে পড়ে যায় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনকারী সৈনিকদের কথা। আমরা শুধু এই মাসেই সেই সব মহান ব্যক্তিদের স্মরণ করি যাদের অবদানে আজ আমরা আমাদের মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারি।

কিন্তু এখনো দেশের বিভিন্ন স্থানের নাম না জানা অনেক ভাষা সৈনিক ও তাদের পরিবার খুবই অবহেলিত। সেই ভাষা আন্দোলনের অন্যতম এক সৈনিক ছিলেন নওগাঁর সুলতানপুর পন্ডিত পাড়া গ্রামের মৃত-মোবারক আলীর সন্তান মরহুম ডা. মনজুর হোসেন। কিন্তু অবহেলিত তার পরিবার। আজোও এই ভাষা সৈনিকের পরিবার রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন স্বীকৃতি পায়নি।

পরিবার সূত্রে জানা, মনজুর হোসেন ১৯২৮ সালে ১৫ই জুন সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি দেশ ভাগের সময় ১৯৪৭ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন।

এরপর তিনি দেশ ভাগ হলে দেশে ফিরে এসে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হোন। এরপর থেকে মেধাবী মনজুর হোসেন অংশগ্রহণ করেন আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে আর তখন থেকে খেতাব পান বিপ্লব দা।

জেলে গেছেন বহুবার। ভাষা আন্দোলনের সময় ডা. মনজুর হোসেন ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র। ভাষা আন্দোলনের পূর্বের অনেক আন্দোলনে তিনি ছিলেন প্রথম সারির সক্রিয় আন্দোলনকারী। ভাষা আন্দোলনের পর প্রথম শহীদ মিনার তৈরিতে তিনিই ছিলেন অন্যতম কারিগর। পরিবারের কথা কখনো ভাবেননি। ভেবেছেন এই দেশের আর মানুষের কথা।

তাই নিজের পরিবারের জন্য তিনি কিছুই করে যেতেন পারেননি। তার পরিবারে এখন রয়েছেন তার স্ত্রী, ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে। কোনো মতে জীবন-যাপন করে আসছে এই ভাষা সৈনিকের পরিবারের অসহায় সদস্যরা। এই পরিবারের সদস্যরাও মুক্তিযোদ্ধাদের মতো রাষ্ট্রীয় সম্মান পেতে চান। কারণ ভাষার জন্ম আগে পরে মুক্তিযুদ্ধ।

বড় ছেলে মাহবুব আলম আলো জানান, আমার বাবা ডাক্তারী পড়া শেষ করে চাকরীর মোহ ত্যাগ করে নওগাঁয় এসে সাধারণ গরীব মানুষদেরকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতেন। তাই তিনি এলাকায় গরীব মানুষের চিকিৎসক হিসাবে পরিচিত ছিলেন।

আমার বাবা আমাদের জন্য কোন কিছুই করে যেতে পারেননি। সারা জীবন দেশ ও মানুষের জন্যই করে গেছেন। আজ আমার পরিবার অসহায়। কোন মতে বেঁচে আছি আমরা। সরকার যদি আমাদেরকে বাড়ি করার মতো একটু জায়গার ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে আমরা খুবই উপকৃত হতাম।

ছেলে হাসান ইমাম তমাল জানান, সেই সময়ের পাকিস্তানী সরকার আমার বাবাকে কোন চাকরিতে প্রবেশ করতে দেয়নি বরং তাকে ধীরে ধীরে চিকিৎসার অভাব দিয়ে হত্যা করেছে। বাবার নামে একুশে পদক নিতে আমার পরিবারকে মন্ত্রণালয়ে বহুবার ধন্না দিতে হয়েছে।

অনেক ঘোরাঘুরির পর তা পেয়েছি। আজ আমাদের দেশে ভাষা সৈনিকদের কোন মর্যাদা নেই। শুধু মর্যাদা আছে মুক্তিযোদ্ধাদের। কিন্তু আজ বাংলাদেশ স্বাধীন। একজন অন্যতম ভাষা সৈনিকের সন্তান হিসাবে আমরাও মুক্তিযোদ্ধাদের মতো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেতে চাই।

ছোট ছেলে হাসান নাছির চন্দন জানান, আমার বাবা ১৯৬৮ সালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা একজন সক্রিয় ভাষা সৈনিকের পরিবার হিসাবে কোনো কিছুই পাই না। ভাষা সৈনিকদের পরিবাররা কোনো দিন কি কোন সুযোগ-সুবিধা পাবে? বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশে কেন ভাষা সৈনিকদের পরিবারের মূল্যায়ন নেই? কেন এই সব মহান ব্যক্তিদের উত্তরসূরি হিসাবে পরিবারগুলো অবহেলিত?

স্ত্রী জাকেরা জেমানী জানান, আমি একজন সক্রিয় ভাষা সৈনিকের স্ত্রী। আমার ভাবতেই কষ্ট লাগে এখনো আমাদের কোন প্রকার মূল্যায়ন করা হলো না। তাহলে আগামী প্রজন্ম জানবে কেমন করে যে আমার স্বামী একজন বিপ্লব দা নামের ভাষা সৈনিক ছিলেন। আমরা রাষ্ট্রীয় ভাবে কোন সুযোগ-সুবিধা কোনদিন পাইনি। আজ আমরা খুবই অবহেলিত ও অসহায়। আমি একজন অন্যতম ভাষা সৈনিকের স্ত্রী হিসাবে শেষ জীবনে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পেতে চাই।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর