ঢাকা ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভুট্টায় দানা নেই, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৮:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
  • ৩৬৩ বার

দেশে ভুট্টা চাষের প্রসিদ্ধ অঞ্চল হিসেবে ইতোমধ্যে স্থান করে নিয়েছে উত্তরের জেলা লালমনিরহাট। এ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা-ধরলাসহ বিভিন্ন ছোটখাট নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলসহ ৫ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছরই বাড়ছে এ ফসলের চাষ।

এ চাষাবাদ করে দিনদিন আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে কৃষকদের। তবে এই ধারাবাহিকতায় এবার যেন ছন্দপতন ঘটিয়েছে নিম্নমানের বীজ। বীজ লাগানোর পর থেকে শুরু করে গাছ বেড়ে ওঠা পর্যন্ত সবই ঠিকই ছিল। কিন্তু যখন গাছে মোচা ধরেছে ঠিক তখনই দেখা গেছে বিপত্তি। প্রতিটি গাছেই মোচা আছে তবে নেই ভুট্টার দানা। এতে যে-সকল কৃষক ধার-দেনা করে চাষাবাদ করেছে সে-সকল কৃষক হয়ে পড়ছেন দিশেহারা। বিশেষ করে কাবেরী-৫০, সিপি-৯৮১, বন্ধন-৯০৯১ বীজের ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।

পাটগ্রাম উপজেলার সিট জমগ্রাম এলাকার কৃষক হামিদুল ইসলাম জানান, নানা প্রতিকূলতার মাঝেও ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। তবে তার পাঁচ বিঘা জমির ভুট্টার মোচায় আসেনি কোনো দানা। এই পাঁচ বিঘাতে তিনি দিয়েছিলেন ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার হাইব্রিড সিড লিমিটেডের সিপি-৯৮৮ জাতের ভুট্টা। ১১ জনের সংসার এখন কীভাবে চলবে সেই চিন্তায় দিশেহারা আমি। এ পর্যন্ত আমার ব্যয় হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা।

এদিকে হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর পারুলিয়া এলাকার কৃষক শিরাজুদ্দিন জানান, জমি মালিকের কাছ থেকে প্রতি বিঘা ৩ হাজার টাকায় বর্গা নিয়ে মোট ৬ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। তবে আড়াই বিঘা জমির ভুট্টার মোচায় কোনো দানা আসেনি। এই আড়াই বিঘাতে কাবেরী সিড লিমিটেডের কাবেরী-৫০ জাতের ভুট্টা বীজ রোপণ করেছিলাম। ভুট্টা চাষে যা খরচ করেছি তা ঋণের টাকায়। এখন কি হবে? এই ভাবনা তাড়া করছে সারাক্ষণ।

একই এলাকার ভুট্টা চাষী মফিজুল ইসলাম, নুর ইসলাম, রহিজ উদ্দিন, গোলাপসহ অনেকেই অভিযোগ করেন, গত বছর কাবেরী-৫০ জাতের ফলন ভালো হওয়ায় চলতি মৌসুমেও ওই জাতের ভুট্টার বীজ রোপণ করেছিলাম। কিন্ত এবার কাবেরী-৫০ জাতের ভুট্টার মোচা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাতে কোন দানা হয়নি। এতে শুধু আমরা নই, প্রায় সব কৃষকই হতাশ হয়ে পড়েছেন।

একই অভিযোগ করে ভুট্টা চাষী জাহিদুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য জাতের পাশাপাশি এবার আমি দেড় বিঘা জমিতে বাধন-৯০৯১ জাতের ভুট্টার বীজ রোপণ করেছিলাম। ওই জাতের ভুট্টার মোচাগুলো হয়েছে অনেক বড়। কিন্তু তাতে কোন ভুট্টার দানা হয়নি।

এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ভুট্টা চাষীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনাসহ ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার হাইব্রিড সিড লিমিটেডের মার্কেটিং অফিসার মাসুদ রানা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দ্য রিপোর্টকে জানান, বিভিন্ন কারণে ভুট্টার মোচায় দানা নাও হতে পারে। অভিযোগ পাওয়ার পর আমাদের লোকজন ক্ষেত পরির্দশন শেষে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা করা হবে।

এ বিষয়ে কাবেরী সিড লিমিটেডের সিনিয়র মার্কেটিং অফিসার শাহিনুর কিবরিয়া জানান, বিষয়টি তিনি ইতোমধ্যে অবগত হয়ে কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এটা হতে পারে। তাছাড়া শুধু কারেরী-৫০ নয় এবার বিভিন্ন কোম্পানির ভুট্টার মোচায় দানা হায়নি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ভুট্টায় দানা নেই, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক

আপডেট টাইম : ১১:২৮:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৭

দেশে ভুট্টা চাষের প্রসিদ্ধ অঞ্চল হিসেবে ইতোমধ্যে স্থান করে নিয়েছে উত্তরের জেলা লালমনিরহাট। এ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা-ধরলাসহ বিভিন্ন ছোটখাট নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলসহ ৫ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছরই বাড়ছে এ ফসলের চাষ।

এ চাষাবাদ করে দিনদিন আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে কৃষকদের। তবে এই ধারাবাহিকতায় এবার যেন ছন্দপতন ঘটিয়েছে নিম্নমানের বীজ। বীজ লাগানোর পর থেকে শুরু করে গাছ বেড়ে ওঠা পর্যন্ত সবই ঠিকই ছিল। কিন্তু যখন গাছে মোচা ধরেছে ঠিক তখনই দেখা গেছে বিপত্তি। প্রতিটি গাছেই মোচা আছে তবে নেই ভুট্টার দানা। এতে যে-সকল কৃষক ধার-দেনা করে চাষাবাদ করেছে সে-সকল কৃষক হয়ে পড়ছেন দিশেহারা। বিশেষ করে কাবেরী-৫০, সিপি-৯৮১, বন্ধন-৯০৯১ বীজের ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।

পাটগ্রাম উপজেলার সিট জমগ্রাম এলাকার কৃষক হামিদুল ইসলাম জানান, নানা প্রতিকূলতার মাঝেও ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। তবে তার পাঁচ বিঘা জমির ভুট্টার মোচায় আসেনি কোনো দানা। এই পাঁচ বিঘাতে তিনি দিয়েছিলেন ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার হাইব্রিড সিড লিমিটেডের সিপি-৯৮৮ জাতের ভুট্টা। ১১ জনের সংসার এখন কীভাবে চলবে সেই চিন্তায় দিশেহারা আমি। এ পর্যন্ত আমার ব্যয় হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা।

এদিকে হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর পারুলিয়া এলাকার কৃষক শিরাজুদ্দিন জানান, জমি মালিকের কাছ থেকে প্রতি বিঘা ৩ হাজার টাকায় বর্গা নিয়ে মোট ৬ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। তবে আড়াই বিঘা জমির ভুট্টার মোচায় কোনো দানা আসেনি। এই আড়াই বিঘাতে কাবেরী সিড লিমিটেডের কাবেরী-৫০ জাতের ভুট্টা বীজ রোপণ করেছিলাম। ভুট্টা চাষে যা খরচ করেছি তা ঋণের টাকায়। এখন কি হবে? এই ভাবনা তাড়া করছে সারাক্ষণ।

একই এলাকার ভুট্টা চাষী মফিজুল ইসলাম, নুর ইসলাম, রহিজ উদ্দিন, গোলাপসহ অনেকেই অভিযোগ করেন, গত বছর কাবেরী-৫০ জাতের ফলন ভালো হওয়ায় চলতি মৌসুমেও ওই জাতের ভুট্টার বীজ রোপণ করেছিলাম। কিন্ত এবার কাবেরী-৫০ জাতের ভুট্টার মোচা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাতে কোন দানা হয়নি। এতে শুধু আমরা নই, প্রায় সব কৃষকই হতাশ হয়ে পড়েছেন।

একই অভিযোগ করে ভুট্টা চাষী জাহিদুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য জাতের পাশাপাশি এবার আমি দেড় বিঘা জমিতে বাধন-৯০৯১ জাতের ভুট্টার বীজ রোপণ করেছিলাম। ওই জাতের ভুট্টার মোচাগুলো হয়েছে অনেক বড়। কিন্তু তাতে কোন ভুট্টার দানা হয়নি।

এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ভুট্টা চাষীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনাসহ ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার হাইব্রিড সিড লিমিটেডের মার্কেটিং অফিসার মাসুদ রানা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দ্য রিপোর্টকে জানান, বিভিন্ন কারণে ভুট্টার মোচায় দানা নাও হতে পারে। অভিযোগ পাওয়ার পর আমাদের লোকজন ক্ষেত পরির্দশন শেষে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা করা হবে।

এ বিষয়ে কাবেরী সিড লিমিটেডের সিনিয়র মার্কেটিং অফিসার শাহিনুর কিবরিয়া জানান, বিষয়টি তিনি ইতোমধ্যে অবগত হয়ে কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এটা হতে পারে। তাছাড়া শুধু কারেরী-৫০ নয় এবার বিভিন্ন কোম্পানির ভুট্টার মোচায় দানা হায়নি।