ঢাকা ১০:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমি অনুরোধের মাস্টার: রাষ্ট্রপতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:৪৮:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০১৭
  • ৩১০ বার

নিজেকে নিজেই ‘অনুরোধের মাস্টার’ অভিহিত করে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক বলেছেন, “ইচ্ছা করলে যে আমি দিতে পারি তা কিন্তু না।”

রোববার কিশোরগঞ্জের আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানে অংশ নেন রাষ্ট্রপতি। অনুষ্ঠানে প্রাচীন এই বিদ্যালয়টি সরকারি করার দাবি জানানো হয়।

এলাকার আরও নানা দাবি তুলে ধরেন স্থানীয় চারজন সংসদ সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, আফজাল হোসেন, সোহরাব উদ্দিন ও রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।

শুনে আবদুল হামিদ বলেন, “আমি ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার, বিরোধীদলীয় উপনেতা, আবার স্পিকার এবং বর্তমানে রাষ্ট্রপতি হয়েছি। কিন্তু মন্ত্রী কখনও হই নাই। মন্ত্রী হল মন্ত্রণালয়ের মালিক। আমি হলাম অনুরোধের মাস্টার। সবার কাছে অনুরোধ করা লাগে আমার এটা করে দিন। আমাকে টাকা দিন।

“… ক্ষমতা নাই। রাষ্ট্রপতিরে…বাজেট যখন পাস হয়, বলে কী, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নির্বাহের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হোক। তখন এমপিরা সবাই ‘হ্যাঁ’ বলে পাস করে।”

“পাস করে আমারে দিয়ে দিল। যেদিন দিল, পরের দিন অর্থবিলে সই দিয়ে সব টাকা নিয়ে যায়। মালিক আমি একদিন থাকি। দিবারও কোনো ভাও নাই।”

হাওর অঞ্চলের তৃণমূল রাজনীতি থেকে উঠে এসে এখন বঙ্গভবনের বাসিন্দা আবদুল হামিদের কণ্ঠে নিরাপত্তার কারণে সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে আসতে না পারার দুঃখও ফুটে ওঠে।

“কিশোরগঞ্জে অনেকদিন পরে আসি। আসলে ভালোই লাগে। কাছে যাইতে পারি না। বাঁশের বেড়া দিয়া আটকায়া রাখে। একটা গান ছিল, দূরের মানুষ কাছে এসো, শুনবে যদি আমার গান। এখন দূরের মানুষ কাছে আসা তো দূরের কথা, কাছের মানুষ দূরে রাখা হয় বাঁশের বেড়া দিয়া। কাছে আসার সুযোগ নাই।”

প্রথা অনুযায়ী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির লিখিত বক্তব্যের বাইরে নিজের বেদনাবোধের কথা বলেন আবদুল হামিদ।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “কিশোরগঞ্জ আমার প্রাণের শহর। এ শহরে আমার শৈশব ও কৈশোরসহ জীবনের বেশীরভাগ সময় কেটেছে। এখনও সুযোগ পেলেই মাটির টানে এখানে আসার চেষ্টা করি।”

নিজের বর্তমান অবস্থানের জন্য কিশোরগঞ্জবাসীর ঋণের কথাও স্মরণ করেন আবদুল হামিদ।

“একটি কথা স্পষ্টভাবে বলতে চাই আমি কিশোরগঞ্জের সন্তান, আপনাদের স্নেহ, আদর, ভালবাসা ও শ্রদ্ধায় বড় হয়েছি। যতদিন বেঁচে থাকব, এ এলাকার উন্নয়নে আমার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।”

কিশোরগঞ্জে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও অনুষ্ঠানে জানান তিনি।

বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তির এই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সুশিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করতে শিক্ষকদের নিবেদিতপ্রাণ হওয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন কমিটির সভাপতি আবুল কাসেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ ন ম নৌশাদ খানও বক্তব্য রাখেন।

এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুপুর দেড়টার দিকে রাষ্ট্রপতি হেলিকপ্টারে কিশোরগঞ্জ পৌঁছান। দুই দিনের সফর শেষে বিকালে ঢাকা ফিরবেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আমি অনুরোধের মাস্টার: রাষ্ট্রপতি

আপডেট টাইম : ০১:৪৮:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০১৭

নিজেকে নিজেই ‘অনুরোধের মাস্টার’ অভিহিত করে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক বলেছেন, “ইচ্ছা করলে যে আমি দিতে পারি তা কিন্তু না।”

রোববার কিশোরগঞ্জের আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানে অংশ নেন রাষ্ট্রপতি। অনুষ্ঠানে প্রাচীন এই বিদ্যালয়টি সরকারি করার দাবি জানানো হয়।

এলাকার আরও নানা দাবি তুলে ধরেন স্থানীয় চারজন সংসদ সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, আফজাল হোসেন, সোহরাব উদ্দিন ও রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।

শুনে আবদুল হামিদ বলেন, “আমি ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার, বিরোধীদলীয় উপনেতা, আবার স্পিকার এবং বর্তমানে রাষ্ট্রপতি হয়েছি। কিন্তু মন্ত্রী কখনও হই নাই। মন্ত্রী হল মন্ত্রণালয়ের মালিক। আমি হলাম অনুরোধের মাস্টার। সবার কাছে অনুরোধ করা লাগে আমার এটা করে দিন। আমাকে টাকা দিন।

“… ক্ষমতা নাই। রাষ্ট্রপতিরে…বাজেট যখন পাস হয়, বলে কী, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নির্বাহের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হোক। তখন এমপিরা সবাই ‘হ্যাঁ’ বলে পাস করে।”

“পাস করে আমারে দিয়ে দিল। যেদিন দিল, পরের দিন অর্থবিলে সই দিয়ে সব টাকা নিয়ে যায়। মালিক আমি একদিন থাকি। দিবারও কোনো ভাও নাই।”

হাওর অঞ্চলের তৃণমূল রাজনীতি থেকে উঠে এসে এখন বঙ্গভবনের বাসিন্দা আবদুল হামিদের কণ্ঠে নিরাপত্তার কারণে সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে আসতে না পারার দুঃখও ফুটে ওঠে।

“কিশোরগঞ্জে অনেকদিন পরে আসি। আসলে ভালোই লাগে। কাছে যাইতে পারি না। বাঁশের বেড়া দিয়া আটকায়া রাখে। একটা গান ছিল, দূরের মানুষ কাছে এসো, শুনবে যদি আমার গান। এখন দূরের মানুষ কাছে আসা তো দূরের কথা, কাছের মানুষ দূরে রাখা হয় বাঁশের বেড়া দিয়া। কাছে আসার সুযোগ নাই।”

প্রথা অনুযায়ী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির লিখিত বক্তব্যের বাইরে নিজের বেদনাবোধের কথা বলেন আবদুল হামিদ।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “কিশোরগঞ্জ আমার প্রাণের শহর। এ শহরে আমার শৈশব ও কৈশোরসহ জীবনের বেশীরভাগ সময় কেটেছে। এখনও সুযোগ পেলেই মাটির টানে এখানে আসার চেষ্টা করি।”

নিজের বর্তমান অবস্থানের জন্য কিশোরগঞ্জবাসীর ঋণের কথাও স্মরণ করেন আবদুল হামিদ।

“একটি কথা স্পষ্টভাবে বলতে চাই আমি কিশোরগঞ্জের সন্তান, আপনাদের স্নেহ, আদর, ভালবাসা ও শ্রদ্ধায় বড় হয়েছি। যতদিন বেঁচে থাকব, এ এলাকার উন্নয়নে আমার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।”

কিশোরগঞ্জে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও অনুষ্ঠানে জানান তিনি।

বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তির এই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সুশিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করতে শিক্ষকদের নিবেদিতপ্রাণ হওয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন কমিটির সভাপতি আবুল কাসেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ ন ম নৌশাদ খানও বক্তব্য রাখেন।

এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুপুর দেড়টার দিকে রাষ্ট্রপতি হেলিকপ্টারে কিশোরগঞ্জ পৌঁছান। দুই দিনের সফর শেষে বিকালে ঢাকা ফিরবেন তিনি।