নুর হোসেনের মৃত্যুদণ্ডে ‘বান্ধবী’ নীলাও খুশি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নুর হোসেনের ‘বান্ধবী’ বলে খ্যাত জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা সাত খুনের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, শুধু নূর হোসেন নন, এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত সবার শাস্তি কার্যকর চান তিনি।

সাত খুন মামলায় সোমবার রায় ঘোষণার পর রাতে এক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন নিজেকে নূর হোসেনের স্ত্রী দাবি করা নীলা।
সাত খুনের কারণে সাতটি পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে উল্লেখ করে নীলা বলেন, ‘উপার্জনক্ষম মানুষগুলো হারিয়ে পরিবারগুলো এখন পথে বসে পড়েছে। আমি অন্তর থেকে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, নুর হোসেনসহ সবার শাস্তি কার্যকর চাই।’

জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা নূর হোসেনের ‘রক্ষিতা’ ছিলেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছিল। কোথাও কোথাও আবার তাকে বান্ধবী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সেসব খবর নাকচ করে তিনি নূর হোসেনের স্ত্রী বলে দাবি করেন কাছে। নীলা জানান, সাত খুনের একজন কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ছিলেন তার বিয়ের উকিল বাবা। তবে মিডিয়ায় তাকে রক্ষিতা বা যেভাবেই তুলে ধরা হোক না কেন, তাতে একটা লাভও হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, তিনি এখন সেলিব্রিটি।

নীলা বলেন, ‘কিছু কিছু মিডিয়া লেখে আমি নাকি নুর হোসেনের রক্ষিতা। বিয়ের পর একজন স্ত্রী কীভাবে স্বামীর রক্ষিতা হয়?’
মিডিয়ার কারণে তার সংসার আজ তছনছ হয়ে গেছে অভিযোগ করে নীলা বলেন, ‘তবে আমি মিডিয়ার কারণে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তেমনি আবার মিডিয়ার কারণে সেলিব্রেটি হয়েছি। দেশে-বিদেশে আজ অনেকে চেনে আমাকে। লন্ডনে আমার আজ অনেক ফ্রেন্ড-শুভাকাক্সক্ষী সৃষ্টি হয়েছে।’

নুর হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে দাবি করে এর সাক্ষীও হাজির করেন নীলা। বলেন, ‘নুর হোসেনের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে এটা নারায়ণগঞ্জের জনপ্রতিনিধি, সাংসদ, কাউন্সিলরসহ নারায়ণগঞ্জবাসী সবাই জানে। বিয়ের পর একজন নারী কীভাবে কারো রক্ষিতা হয় সেটা আমার প্রশ্ন।’

তবে সাত খুন ঘটনার সময় নূর হোসেনের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না বলে দাবি করে নীলা তাদের সম্পর্ক ভাঙার পূর্বাপর তুলে ধরেন- ‘২০১৩ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ছোট নজরুল ও বিএনপির এক নেতাকে মারধর করেন নুর হোসেন ও তার ক্যাডাররা। তার পর থেকে নুর হোসেনের সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। একপর্যায়ে ভুলে যাই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কথা। এভাবে আস্তে আস্তে দূরত্ব তৈরি হয় নুর হোসেনের সঙ্গে আমার।’

নুর হোসেনের সঙ্গে তার সম্পর্কের ছাড়াছাড়ি হয়েছে কি না-এমন প্রশ্ন এড়িয়ে নীলা বলেন, ‘২০১৩ সালের পর থেকে তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’ তবে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে কি না তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল দাবি করেন জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা। বলেন, ‘নজরুল কাকা আমার বিয়েতে উকিল হয়েছিল। আমার মা-বাবা নজরুল কাকাকে নিজের ছেলের মেতো ভালোবাসত। আমার সাথে নজরুল কাকার খুব চমৎকার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু নুর হোসেনের কারণে নজরুল কাকার পরিবারের সাথে আমার সম্পর্কের অবনতি হয়। আর যুবলীগ নেতা ছোট নজরুল ও বিএনপির এক নেতার কারণে নুর হোসেনের সাথে সম্পর্ক ভেঙে যায়।’

কাউন্সিলর নজরুলের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতার গভীরতা সম্পর্কে উদাহরণ দিতে গিয়ে নীলা বলেন, ‘আমার বাবার অ্যাকাউন্টে টাকা রাখতেন নজরুল কাকা।’

সাত খুনে সন্দেহ করা হয়েছিল নীলাকেও। তদন্তে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। নীলা বলেন, ‘আমি নির্দোষ ও সৎ ছিলাম। আর সৎ ছিলাম বলেই আল্লাহ আমাকে সেভ করেছে। সাত খুন, সিদ্ধিরগঞ্জের মার্ডার মামলাসহ কোনো মামলাতেই আমাকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারে নাই। আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি অনেক তদন্ত করেছে। কিন্তু কোনো তদন্তেই আমার দোষ খুঁজে পায়নি।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর