চাই একটা ভালো সাইট
দেশের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরই তথ্যপ্রযুক্তি কিংবা ওয়েবসাইট নিয়ে ধারণা কম। তাই সাইট চালু বা কাউকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার সময় সঠিক নির্দেশনা দিতে পারেন না। ফলে যে কারণে সাইট খোলা হচ্ছে, তার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা সাইট খুলেও দরকারি কিছু পাচ্ছে না। আবার সাইট খোলার পর পড়ে আছে এমন নজিরও আছে। কয়েক মাস ধরে আপডেট হচ্ছে না এমনও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাইট আছে।
ভালো মানের একটি সাইটে সাধারণ ফিচার যেমন-শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারী ডাটাবেইস, স্কুলের তথ্য, ম্যানেজিং কমিটির তথ্য, ফলাফল, নোটিশ পেইজ অবশ্যই থাকতে হবে।
আরো যা যা থাকলে ভালো-
* শিক্ষার্থী কিংবা তাদের অভিভাবকরা যেন লগ ইন করে ক্লাস রুটিন ও হোম টাস্ক দেখার সুযোগ পায়।
* ট্রান্সফার সার্টিফিকেট, টেস্টিমনিয়ালসহ বিভিন্ন দরকারি আবেদনের ফরম যেন ডাউনলোডের সুযোগ থাকে।
* শিক্ষার্থীরা লগ ইন করে যেন পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করতে পারে।
* শিক্ষার্থীর যেন আলাদা আলাদা ফলাফল ও প্রোগ্রেস রিপোর্ট দেওয়া থাকে।
* মাসিক ও অন্যান্য ফি নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে কি না, কত দেওয়া হচ্ছে, কোনো বকেয়া আছে কি না-সেসব তথ্য যাতে পাওয়া যায়।
* মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন-ভাতা ও ফি দেওয়ার সুযোগ থাকা জরুরি।
* শিক্ষার্থী স্কুলে উপস্থিত না হলে তার অভিভাবকের মোবাইলে মেসেজ যাবে, অনলাইনভিত্তিক এ সুবিধা এরই মধ্যে অনেক স্কুলে চালু হয়েছে। এ সেবা বেশ কার্যকর।
* শিক্ষকরা ক্লাসের পাশাপাশি ওয়েবসাইটেও দরকারি শিক্ষা উপকরণ ও হোমটাস্ক সরবরাহ করবেন।
* শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় হিসাব সংরক্ষণের সুযোগ। তবে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে না। বিশেষ ব্যবহারকারীরা লগ ইন করলে দেখতে পাবেন।
* অনলাইনে ভর্তিসংক্রান্ত তথ্য ও আবেদনের সুযোগ।
আগে চাই ডোমেইন
ওয়েবসাইট চালুর আগে সবার আগে যেটা করতে হবে, তা হলো ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন। অর্থাৎ আপনার সাইটের ঠিকানা যেটা হবে, সেটি আগে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ডোমেইন রেজিস্ট্রেশনের পাশাপাশি ওয়েবসাইট তৈরি করে এমন অনেক আইটি প্রতিষ্ঠান আছে। সরকারি নির্দেশনায় ডোমেইন হিসেবে নির্বাচন করতেও বলা হয়েছে .edu.bd। অর্থাৎ ডোমেইনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম বা নামের সংক্ষিপ্ত অংশের পর .edu.bd বসে। যেমন-আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ওয়েব ঠিকানা :www.acc.edu.bd। চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়-ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করার পর জেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে অধিদপ্তরকে জানাতে হবে।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কম্পানি লিমিটেডেও (বিটিসিএল) ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। এর জন্য যোগাযোগ করতে হবে-ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও কো-অর্ডিনেশন), ডাটা ও ইন্টারনেট সার্ভিস বিভাগ, বিটিসিএল, মগবাজার, ঢাকা।
ডোমেইন রেজিস্ট্রেশনের পরই ওয়েব হোস্টিং করতে হবে। অনলাইনে আপনার ডোমেইন বা ওয়েব ঠিকানার জন্য স্পেস বা জায়গা বরাদ্দের জন্যই হোস্টিং। ডোমেইন নিবন্ধন করলে শুধু ঠিকানাটা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সাইট চালু করতে তো জায়গাও দরকার। কারণ সাইটে অনেক ফাইল বা কনটেন্ট থাকবে।
মোট কথা, সাইটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ধাপগুলো হচ্ছে-
* ডোমেইন নিবন্ধন
* ওয়েব হোস্টিং
* সাইট তৈরি (ডিজাইন, ডেভেলপ)
খরচাপাতি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডোমেইন-অর্থাৎ .edu.bd রেজিস্ট্রেশনে প্রথম দুই বছরের জন্য লাগবে এক হাজার ৭৫০ টাকা, এরপর প্রতিবছর ৯৮০ টাকা দিয়েই নবায়ন করা যাবে।
এরপর হোস্টিং। এর খরচ নির্ভর করে সার্ভারের মান, সুবিধা ও জায়গার ওপর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সাধারণত ৫০০ মেগাবাইট স্পেস হলেই চলে। পরে জায়গা লাগলে বাড়িয়ে নেওয়া যাবে, এ ক্ষেত্রে বাড়তি টাকা গুনতে হবে।
৫০০ মেগাবাইট স্পেসের জন্য বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠান এক হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়।
ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন, হোস্টিংয়ের পরেই ওয়েবসাইট তৈরির কাজ। কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়ে করালে তিন থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। সাইটের ডিজাইন ও সেবার ওপর নির্ভর করবে খরচ। অভিজ্ঞ কাউকে দিয়েও করাতে পারেন।
সাইট দেখভাল
সাইট তৈরি হওয়ার পর নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। নোটিশ, শিক্ষা সংবাদ, ভর্তি, শিক্ষা কার্যক্রমের তথ্য নিয়মিত পোস্ট করতে হবে। সাইট যিনি তৈরি করবেন, তাঁর কাছ থেকে সাইট পরিচালনা বা কন্ট্রোলের জন্য ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড জেনে নেবেন। নির্ধারিত লিংক থেকে লগ ইন করার পর লেখা পোস্ট দেওয়ার অপশনও দেখা যাবে। লেখা টাইপ করে ক্যাটাগরি নির্বাচন করে পোস্ট করুন। চাইলে লেখার সঙ্গে ছবি বা ফাইলও যুক্ত করতে পারবেন। কোনো লেখা পোস্ট করার পর তা পরবর্তী সম্পাদনা বা হালনাগাদও করা যাবে।
সাইট দেখভালের জন্য আলাদা কাউকে নিয়োগ না দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়াই ভালো। কম্পিউটার চালাতে পারেন এমন কোনো শিক্ষক, বই বা অনলাইন থেকে সাইট পরিচালনার খুঁটিনাটি জেনে নিতে পারেন।