৪ নম্বর সতর্ক সংকেত নিম্নচাপটি রবিবার উপকূলে আঘাত হানতে পারে

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। তবে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ না নিয়ে এ অবস্থায়ই রবিবার (৬ নভেম্বর) সকালের মধ্যে বাংলাদেশের বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

এজন্য সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত নামিয়ে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। একই সঙ্গে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে উপকূলীয় জেলাগুলোতে জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ শনিবার দুপুরে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। গভীর নিম্নচাপটির আর শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না। তারপরও এটি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, আরও এগোলে বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলা যাবে। গভীর নিম্নচাপটি রবিবার সকাল নাগাদ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।’

প্রাকৃতিক নানা কারণে সমুদ্রের একটি অঞ্চলে কেন্দ্রাভিমুখী ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চল বা লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। ক্রমান্বয়ে এ ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চলটি শক্তি সঞ্চয় করে করে (বাতাসের গতি বৃদ্ধি পেয়ে) সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ ও শেষে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গভীর নিম্নচাপ হচ্ছে একটি ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চল, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ৫১ থেকে ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে।

বাতাসের গতিবেগ ৬১ থেকে ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে হলে তাকে বলে ঘূর্ণিঝড়।

এদিকে, শনিবার (৫ নভেম্বর) রাতে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৬০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

এটি আরও ঘণীভূত ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে রবিবার (৬ নভেম্বর) সকাল নাগাদ বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলেও বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৫০ কি.মি. যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত বহাল রাখতে বলা হয়েছে।

৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেতের মানে হল, বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার, তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনও আসেনি।

গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এর কাছাকাছি দ্বীপ ও চরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে ঘন্টায় ৫০ থেকে ৬০ কি.মি. বেগে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলো এবং এর কাছাকাছি দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতায় বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ভারতীয় আবহাওয়া দফতর শনিবার দুপুরে এক বুলেটিনে জানিয়েছে, গভীর নিম্নচাপটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে ৬ নভেম্বর (রবিবার) বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করবে।

নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) থেকেই ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি হচ্ছে। শনিবার সকাল থেকেই ঢাকায় হালকা বৃষ্টি হচ্ছে।

ভারী বর্ষণের এক সতর্কবাণীতে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, নিম্নচাপের প্রভাবে শনিবার সকাল ৯ টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে বরিশালের খেপুপাড়ায়। সেখানে ১২৭মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় ঢাকায় ৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর