শীতের আগমনীতে ময়মনসিংহে কাঁথা সেলাইয়ের ধুম পড়েছে। গ্রামাঞ্চলে গৃহবধূ, তরুণীরা সংসারের নিত্যকাজের ফাঁকে ব্যস্ত সময় পার করছেন কাঁথা তৈরি নিয়ে। পুরনো কাপড় আর সুঁই- সুতায় এখন তাদের অবসর কাটে। শিল্পকলার নিদর্শন হাজার বছরের প্রাচীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে এই সুচিশিল্পটি।
পুরনো বস্ত্রখণ্ডে তৈরি কাঁথায় বিচিত্র নকশাখচিত করার রেওয়াজ এক সময় ছিল গ্রাম-বাংলার প্রতিটি পরিবারের ঘরে ঘরে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৩ হাজার বছর থেকে ১ম ও ২য় শতকে হরপ্পা ও মহেঞ্জ-দাড়ো সাঁচীর ভাস্কর্য যেসব পোশাক পাওয়া যায়, তাতে সুচিশিল্পকলার নিদর্শন রয়েছে। মিশর, গ্রিস, ইসরায়েল, ব্যাবিলন প্রভৃতি দেশে সুচিশিল্পকলার নিদর্শন পাওয়া যায়। চারু ও কারুশিল্পে বৈচিত্রময় ময়মনসিংহ অঞ্চলে কাঁথাশিল্পের পরম্পরা আজও অব্যাহত। মুসলিম ঘরানার কিছু নিজস্বতার একটি দৃষ্টান্ত এ কাঁথাশিল্প। এই শিল্পটি সম্পূর্ণ নারীনির্ভর। বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের নারীরাই এই কারুশিল্পে পারদর্শী। কাঁথাশিল্প এদের প্রথাগত কোনো বিদ্যা নয়। বাড়ির প্রবীণ নারীদের নিকট থেকে ছোটরা শিখে নেন এই কাঁথা তৈরির কলাকৌশল। এভাবেই চলে আসছে কাঁথাশিল্পের পরম্পরা।
জেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ভোরের আলো জমিনে পড়ার আগেই নাওয়া-খাওয়া সেরে বয়স্ক, গৃহবধূ ও তরুণীরা পুরনো কাপড় আর সূঁই-সুতা নিয়ে বসে পড়েছেন বাড়ির উঠোন, ঘরের মেঝে এবং খোলাস্থানে।
তাদের তৈরি কাঁথায় রঙ-বেরঙের নকশিকরা কাঁথাগুলো দক্ষ ও নিপুণ হাতের ছোঁয়া যা দৃষ্টিনন্দন নজরকাড়া। কম্বলের আধিপত্যে এই কাঁথা শিল্পে কিছুটা ভাটা পড়লেও পরম্পরার ঐতিহ্য আজো ধরে রেখেছেন অনেকেই।