কৃষি প্রধান উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের ধ্যান, জ্ঞান, ধান, আম, লিচু, আলু, পানসহ রকমারী ফসল নিয়ে। কর্মবীর কৃষক সারা বছর ব্যস্ত থাকে আবাদ নিয়ে। রোদে পুড়ে ঘাম ঝরিয়ে ফসল ফলিয়ে মানুষের মুখে তুলে দেয়াতে তাদের আনন্দ। প্রধান অর্থকরী ফসল হলো ধান। বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ করে আসছে। হঠাৎ করেই বেগুনি রংয়ের ধান চাষ করে আলোচনায় এসেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার পিড়াশন এলাকার কৃষক রবিউল ইসলাম। তার চাষ করা ধানের নাম ‘দুলালী সুন্দরী’। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর বলছে এই ধানের ফলন ভালো হলে আগামী চাষিদের চাষাবাদ করার জন্য উৎসাহিত করা।
চাপাইনবাবগঞ্জের সাংবাদিক মুসা মিয়াকে সাথে নিয়ে রবিউল ইসলামের ‘দুলালী সুন্দরী’ ধানক্ষেতে গিয়ে দেখা যায় চারপাশে সবুজ ধানের সমারোহ। মাঝখানে বেগুনি রঙের পাতার ধানক্ষেত। একপাশে বোরো সোনালী আভার ধানের শীষ অপরদিকে বেগুনি রংয়ের পাতার ধানক্ষেত। যা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। রাস্তায় যাওয়া পথচারীরা চারদিকে বিস্তৃত সবুজ ধানক্ষেতের মধ্যে বেগুনি রঙের ধান গাছ দেখে অনেকে অবাক হচ্ছেন। কেউ কেউ কাছে এসে নাড়াচাড়া করে দেখছেন। ছবিও তুলছেন। রবিউল ইসলাম এর সঙ্গে কথা হলে জানান, ইউটিউবে দেখে গাইবান্ধা থেকে বীজ নিয়ে এসে শখ করে ১২ কাঠা জমিতে বেগুনি রঙের ‘দুলালি সুন্দরী’ ধানের চাষ করেছেন।
এ অঞ্চলে এই ধান প্রথম আবাদের ফলে ইতোমধ্যে স্থানীয়দের মাঝে কৌতুহল তৈরী হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় থেকে কৃষকসহ, দর্শনার্থীরা প্রায় প্রতিদিন তার ক্ষেতে ভিড় করছেন বেগুনি রঙের ধান দেখার জন্য। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন এ ধানে যদি ফলন ভালো হয় এবং বাজার মূল্য বেশি হয় তাহলে আগামীতে আরো এ ধানের চাষ করবেন। যদি ফলন আশানুরূপ হয় তবে কৃষকদের মাঝে এই জাতের ধান ছড়িয়ে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ইউটিউব দেখে জেনেছি, দেশে সর্বপ্রথম এ জাতের ধানের আবাদ শুরু হয়েছিল গাইবান্ধায়। সৌন্দর্য্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এ ধান। ধানের গায়ের রং সোনালি ও চালের রং বেগুনি হয়। উফশী জাতের এ ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অনেকটাই কম হয়। রোপণ থেকে ধান পাকতে সময় লাগে ১৪৫ থেকে ১৫৫ দিন। অন্য জাতের ধানের চেয়ে এ ধানের গোছা প্রতি কুশির পরিমাণ বেশি থাকায় একর প্রতি ফলনও বেশ ভালো হয়ে থাকে। অন্য সব ধানের তুলনায় এ ধান মোটা, তবে পুষ্টিগুণ অনেক। এ চালের ভাত খেতেও সুস্বাদু। তবে কাটা মাড়াই পর বলতে পারবো ফলন কেমন হবে।
রবিউল ইসলাম জানান, চারপাশে সবুজ ধানের মাঝে বেগুনি এ ধানক্ষেতটি প্রথম দেখায় দৃষ্টি কাড়ছে সবার। সবাই এ ধান সম্পর্কে জানাতে চাইছেন। এজন্য জমিতে ব্যানার টানিয়েছি। ব্যানারে নাম দিয়েছেন দুলালী সুন্দরী।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা চলতি মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ৪৭ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। জেলা কৃষি স¤প্রসারণের উপ-পরিচালক ড. ইয়াছিন আলী জানান, জেলায় বেগুনি জাতের এ ধান প্রথম চাষ করেছেন একজন কৃষক। ফলে কৃষকদের মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। ধান কাটার পর এর ফলন জানা যাবে। এবং এ ধানের পুষ্টিগুণ যাচাই করে, যদি ভালো হয়। তাহলে আগামীতে কৃষকদের মধ্যে এর বিস্তার ঘটানো হবে।