১৯৮৬ সালের পর আবারো কোনো চীনা প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে আসছেন। আগামীকাল শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) ২২ ঘণ্টার এক সফরে ঢাকা আসছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীনা রাষ্ট্রপতির সফর ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হচ্ছে পুরো ঢাকা নগরীকে। এছাড়া নতুন সাজে সাজানো হয়েছে পুরো নগরীকে। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে ঢাকার গুরত্বপূর্ণ সব সড়কে বাংলাদেশ-চীনের জাতীয় পতাকা উড়ছে। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ছবি সম্বলিত ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে গোটা রাজধানী। তাকে বরণ করে নিতে পুরোপুরি প্রস্তুত ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশেষ বিমানযোগে ২২ ঘণ্টারও কিছু বেশি সময়ের জন্য ঢাকা সফরে আসবেন জিনপিং। পরদিন শনিবার (১৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় ভারতে ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকা ত্যাগ করবেন অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এই দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান।
পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক পূর্বপশ্চিমকে বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর পর চীনা প্রেসিডেন্টের এ সফরকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বাংলাদেশ। ১৪ ও ১৫ অক্টোবর দুদিনের সফরে চীনা প্রেসিডেন্টকে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান দেওয়া হবে। ১৪ অক্টোবর বিশেষ বিমানযোগে কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেন থেকে বাংলাদেশের আকাশসীমায় পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে বিমানবাহিনীর তিনটি জেট বিমান অভ্যর্থনা দিয়ে তাকে নিয়ে আসবে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে তাকে স্বাগত জানাবেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার, ২১ বার তোপধ্বনি, পুষ্পার্ঘ্য প্রদানের মাধ্যমে চীনা প্রেসিডেন্টকে বরণ করে নেওয়া হবে। বিমানবন্দর থেকে কড়া নিরাপত্তায় তিনি যাবেন হোটেল ল্য মেরিডিয়ানে।
সফরকালে শি জিনপিং রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। এছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জিনপিংয়ের সঙ্গে হোটেলে সাক্ষাৎ করবেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও দেখা করার কথা রয়েছে।
এদিকে, চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের সময় বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ২৫টি মেগা প্রকল্পের জন্য দুই বিলিয়ন ডলার (এক লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা) ঋণের বিষয় চূড়ান্ত হতে পারে।
এই সফরে বঙ্গোপসাগরে পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের সহায়তার বিষয়টিও চূড়ান্ত হবে। চীনের প্রেসিডেন্টের এ সফরে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অধীনে ঋণ সহায়তার সমঝোতা চুক্তি সই হবে।
শুক্রবার বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শি জিনপিং আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। বৈঠক শেষে সেখানে দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষর হবে। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শি জিনপিং বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সন্ধ্যা ৭টায় রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন শি জিনপিং।
পরদিন শনিবার সকালে জিনপিং সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করবেন এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি সম্মান জানাবেন। সেখানে তিনি চারাগাছ রোপণ করে হোটেলে ফিরে আসবেন। ফিরে এসে তিনি যাবেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন তিনি।
ঢাকায় ফেরার পর হোটেলে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। এর পর ভারতের গোয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন জিনপিং। এছাড়া বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শনের কথাও রয়েছে চীনা প্রেসিডেন্টের।
এর আগে ২০১০ সালে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেন জিনপিং। এরও আগে ১৯৮৬ সালে চীনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লি শিয়াননিয়ান ঢাকা সফরে আসেন।