যশোরের চৌগাছায় জুয়েলারি ব্যবসায়ী ধীরেন্দ্র দে (৬২)কে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির ২ ঘন্টার মধ্যে মোবাইল ট্রাকিং করে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার সলুয়া বিশ্বাসপাড়া এলাকা থেকে চৌগাছা থানা ও যশোর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যৌথ অভিযানে দুই অপহরণকারীকে আটক করা হয়। এ সময় অন্য দুই অপহরণকারী পালিয়ে যান। পরে পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঝিকরগাছা থানার একটি স্থান থেকে ঝিকরগাছা থানা পুলিশ অপহৃত ধীরেন দে’কে উদ্ধার করে। এ সময় অপহরণ কাজে ব্যবহৃত একটি মাইক্রো বাস জব্দ করে পুলিশ।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাত ১১টা ৪০মিনিটে ধীরেন দে’ ঝিকরগাছা থানায় এবং অপহরণকারী দুজনকে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল।
এ ঘটনায় আটককৃতরা হলেন ঝিকরগাছার বোদখানা এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে আবু সাইদ আল মামুন বাবু (৪২) ও যশোর সদরের ইছালি এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে ফিরোজ হোসেন (৪৫)।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাত ৮টার দিকে শহরের সরকারি খাদ্যগুদামের সামনের সড়ক থেকে অপহরণের শিকার হন ধীরেন্দ্র দে’ নামে চৌগাছা বাজারের উত্তম জুয়েলার্সের মালিক।
ধীরেনের স্ত্রী পদ্মরানী দে জানান, তার স্বামী শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ। দোকানে বসতে পারেন না। ঘটনার দিন বাড়িতেই ছিলেন তিনি। ছেলের বাড়িতে ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে তিনি সন্ধ্যার পর দোকানে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। দোকান বন্ধ করে ছেলে বাড়ি আসলে ছেলেকে বাবার কথা জিজ্ঞেস করলে ছেলে জানায় বাবা দোকানে যাননি। তখন তাকে ফোন দিলে ফোনটি বন্ধ দেখায়। এর পর থেকেই তাকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না।
তিনি জানান, শহরের পরিচিত একজন জানান যে, ধীরেন্দ্রকে ফুড গোডাউনের সামনে একটি মাইক্রো গাড়িতে উঠতে দেখেছেন তিনি। এর কিছুক্ষন পরেই তার (ধীরেনের) মোবাইল থেকে ছেলে উত্তমের ফোনে কল আসে। ওপাশ থেকে বলা হয়, তাকে জীবিত পেতে হলে ২০ লাখ টাকা রেডি কর। ১০ মিনিট পরেই আবারও কল আসে। তারা বলে, একটি ব্যাগে করে টাকাটা নিয়ে আয়। কোনো পুলিশে খবর দিলে ফল ভাল হবে না। অপহরণকারীদের কথা অগ্রাহ্য করে উত্তম বিষয়টি চৌগাছা থানা পুলিশকে জানান।
এরপরই তাৎক্ষণিক অভিযানে নামে চৌগাছা থানা পুলিশ ও যশোর ডিবি পুলিশ। মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে তাদের সনাক্ত করে যশোর থেকে অপহরণকারীদের গাড়ির পিছু নেয় ডিবি। অপহরণকারীর গাড়িটি চৌগাছার দিকে দ্রুত পালাতে চেষ্টা করলে চৌগাছার দিক থেকে ওসি কামাল হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ আটকানোর চেষ্টা করে। এ সময় অপহরণকারীদের গাড়িটি মাঝের রাস্তা দিয়ে ঝিকরগাছার কায়েমখোলার দিকে পালানোর চেষ্টা করলে সলুয়া বিশ্বাসপাড়া নামক স্থানে স্থানীয়দের সহায়তায় ডিবি ও থানা পুলিশ তাদের আটক করতে সক্ষম হয়। অপহরণকারীদের দুজন তখন পালিয়ে যান।
এ প্রসঙ্গে ধীরেনের ছেলে উত্তম কুমার দে বলেন, ‘গত সোমবার আমাদের দোকানে হালখাতা ছিল। অনেকে হালখাতার বিষয়টি জানেন। সন্ত্রাসীরা সেই হালখাতার টাকার জন্য হয়তো বাবাকে অপহরণ করতে পারে।’
এদিকে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি কামাল হোসেন উদ্ধার ও আটকের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’