ঢাকা ০২:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
এখনো বই পায়নি ৮১ শতাংশ শিক্ষার্থী, অভিযোগের তীর সিন্ডিকেটের দিকে তিব্বতে শক্তিশালী ভূমিকম্প, মৃত বেড়ে ১২৬ জুলাই ঘোষণাপত্র’ বিষয়ক কর্মসূচি: কুমিল্লায় হাসনাত, সারজিস যাবেন নরসিংদী নোয়াখালীতে থানা থেকে লুট হওয়া রাইফেল খাল পাড় থেকে উদ্ধার বোরো ধানের চারায় বিষ প্রয়োগে ২ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে ৭ দিনব্যাপী জেলাভিত্তিক কর্মসূচি শুরু শর্ষে ও মধুর সমন্বিত চাষে লাভবান সব পক্ষ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জামায়াত আমিরের একান্ত বৈঠক সীমান্ত পেরিয়ে মৈত্রী ! দিল্লি কি অবশেষে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করতে চাইছে মোংলায় ১১ কেজি হরিণের মাংসসহ ৬ চোরাচালানকারীকে আটক করেছে কোস্ট গার্ড

টেকনাফে অপহরণ আতঙ্ক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫
  • ২ বার

মেরিন ড্রাইভ, নাফ নদ ও সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্যে ঘেরা টেকনাফ উপজেলায় এখন বড় আতঙ্কের নাম অপহরণ ও মুক্তিপণ বাণিজ্য। এক বছরে উপজেলায় ১৯২ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। গত এক সপ্তাহে অপহৃত হয়েছেন ৩০ জন। এর মধ্যে দুজন এখনও মুক্তি পাননি। কিছু দিন এখানকার বাসিন্দারা মিয়ানমারে যুদ্ধের কারণে গোলাবারুদের বিস্ফোরণজনিত আতঙ্কে থাকলেও বর্তমানে বড় আতঙ্কের নাম এই অপহরণ-মুক্তিপণ। দিন দিন এমন ঘটনা বেড়ে চললেও মিলছে না কোনো স্থায়ী সমাধান। বেশি অপহরণের ঘটনা ঘটছে টেকনাফের বাহারছড়া, জাহাজপুরা, লেদা, মুছনি, হ্নীলা, রইক্ষং, জাদিমুড়া ও হোয়াইক্যং এলাকায়।

জানা গেছে, কৃষক, শ্রমিক, কাঠুরিয়া, বনকর্মী, সিএনজি ও টমটম চালক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী পর্যটক ছাড়াও রোহিঙ্গারাও অপহরণের শিকার হচ্ছেন। অধিকাংশই মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে। এদিকে টেকনাফে অপহরণের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় প্রশাসন-রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। কেন তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে নাÑ সে প্রশ্নও তুলেছেন তারা। অপহরণ বন্ধে স্থানীয়রা কঠোর আইনি পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন।

অপহরণ বাণিজ্যে ১২ গ্রুপের শতাধিক ব্যক্তি জড়িত উল্লেখ করে বাহারছড়ার একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, রোহিঙ্গা ও স্থানীয় কিছু ডাকাত মিলে এসব অপহরণ বাণিজ্য করছে। এসব ডাকাতের কাছে ভারী অস্ত্রও রয়েছে। এদের সঙ্গে মানব পাচারকারী চক্রের যোগসূত্রও রয়েছে। মুক্তিপণ দিতে না পারলে অনেককে মানব পাচারকারীদের কাছে অর্থের বিনিময়ে তুলে দেওয়া হচ্ছে। পরে অপহৃতদের পাচার করে ভুক্তভোগী পরিবার থেকে অর্থ আদায় করা হয়। পাহাড়ি-রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় উপজেলার হ্নীলা ও বাহারছাড়া ইউনিয়নে অপহরণের ঘটনা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা। তাদের ভাষ্য মতে, গত বছরের তুলনায় এ বছর অপহরণের ঘটনা বেশি। যদিও পুলিশের খাতায় কম।

হ্নীলা ইউনিয়নের মেম্বার মোহাম্মদ আলী বলেন, সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কে কখন অপহরণের শিকার হয়, তা নিয়ে ভয় সবার। এসব ঘটনার পেছনে রয়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। সর্বশেষ গত রবিবার টেকনাফের সন্তান কবি ও সাংবাদিক নুপা আলমের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কক্সবাজারে শুরু হয় অবস্থান কর্মসূচি।

যেখানে বিভিন্ন পেশাজীবী, রাজনৈতিকবিদসহ অনেকেই সংহতি জানিয়ে তার পাশে অবস্থান নেন। সেখানে নুপা আলম বলেন, গত কয়েক বছর ধরে টেকনাফের পাহাড়কেন্দ্রিক রোহিঙ্গা ও স্থানীয় কতিপয় অপরাধীর নেতৃত্বে স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীগোষ্ঠী পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে, যারা কয়েক বছরে ধরে ধারাবাহিকভাবে সাধারণ স্থানীয় মানুষ ও রোহিঙ্গাদের অপহরণ করে পাহাড়ে জিম্মি করে আসছে। ওখানে নির্যাতন-পরবর্তী মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ও হত্যা ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। শুধু গত এক বছরেই টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৯২ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, যাদের বেশিভাগকেই মুক্তিপণ দিয়ে ফিরতে হয়েছে। হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। ধারাবাহিক অপহরণের ঘটনায় তিনটি ইউনিয়নের মানুষ চরম আতঙ্কিত রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে টেকনাফের পাহাড়ে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে বিশেষ অভিযানের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে উদ্ধারসহ কয়েকজন অপহরণকারীকে আটক করা হয়। তবে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে চলাচলের সুযোগ বন্ধ না হলে অপহরণের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না। সেটি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে নিশ্চিত করতে হবে।

ওসি আর বলেন, গত এক বছরে অপহরণের ২০টি মামলায় ৫৭ জনকে, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ৪২টি অপহরণ মামলায় ৮১ জনকে উদ্ধার, মানব পাচারের সাত মামলায় ১৬৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। মানব পাচার মামলায় ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।

কক্সবাজার র‌্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, দুর্গম পাহাড়ে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি অভিযানে অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর দীর্ঘ অভিযানে অপহৃত ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। অপহরণ, মাদক ও মানব পাচারকারীদের ধরতে র‌্যাবের নিয়মিত অভিযান চলছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

এখনো বই পায়নি ৮১ শতাংশ শিক্ষার্থী, অভিযোগের তীর সিন্ডিকেটের দিকে

টেকনাফে অপহরণ আতঙ্ক

আপডেট টাইম : ১০:৫৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫

মেরিন ড্রাইভ, নাফ নদ ও সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্যে ঘেরা টেকনাফ উপজেলায় এখন বড় আতঙ্কের নাম অপহরণ ও মুক্তিপণ বাণিজ্য। এক বছরে উপজেলায় ১৯২ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। গত এক সপ্তাহে অপহৃত হয়েছেন ৩০ জন। এর মধ্যে দুজন এখনও মুক্তি পাননি। কিছু দিন এখানকার বাসিন্দারা মিয়ানমারে যুদ্ধের কারণে গোলাবারুদের বিস্ফোরণজনিত আতঙ্কে থাকলেও বর্তমানে বড় আতঙ্কের নাম এই অপহরণ-মুক্তিপণ। দিন দিন এমন ঘটনা বেড়ে চললেও মিলছে না কোনো স্থায়ী সমাধান। বেশি অপহরণের ঘটনা ঘটছে টেকনাফের বাহারছড়া, জাহাজপুরা, লেদা, মুছনি, হ্নীলা, রইক্ষং, জাদিমুড়া ও হোয়াইক্যং এলাকায়।

জানা গেছে, কৃষক, শ্রমিক, কাঠুরিয়া, বনকর্মী, সিএনজি ও টমটম চালক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী পর্যটক ছাড়াও রোহিঙ্গারাও অপহরণের শিকার হচ্ছেন। অধিকাংশই মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে। এদিকে টেকনাফে অপহরণের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় প্রশাসন-রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। কেন তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে নাÑ সে প্রশ্নও তুলেছেন তারা। অপহরণ বন্ধে স্থানীয়রা কঠোর আইনি পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন।

অপহরণ বাণিজ্যে ১২ গ্রুপের শতাধিক ব্যক্তি জড়িত উল্লেখ করে বাহারছড়ার একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, রোহিঙ্গা ও স্থানীয় কিছু ডাকাত মিলে এসব অপহরণ বাণিজ্য করছে। এসব ডাকাতের কাছে ভারী অস্ত্রও রয়েছে। এদের সঙ্গে মানব পাচারকারী চক্রের যোগসূত্রও রয়েছে। মুক্তিপণ দিতে না পারলে অনেককে মানব পাচারকারীদের কাছে অর্থের বিনিময়ে তুলে দেওয়া হচ্ছে। পরে অপহৃতদের পাচার করে ভুক্তভোগী পরিবার থেকে অর্থ আদায় করা হয়। পাহাড়ি-রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় উপজেলার হ্নীলা ও বাহারছাড়া ইউনিয়নে অপহরণের ঘটনা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা। তাদের ভাষ্য মতে, গত বছরের তুলনায় এ বছর অপহরণের ঘটনা বেশি। যদিও পুলিশের খাতায় কম।

হ্নীলা ইউনিয়নের মেম্বার মোহাম্মদ আলী বলেন, সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কে কখন অপহরণের শিকার হয়, তা নিয়ে ভয় সবার। এসব ঘটনার পেছনে রয়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। সর্বশেষ গত রবিবার টেকনাফের সন্তান কবি ও সাংবাদিক নুপা আলমের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কক্সবাজারে শুরু হয় অবস্থান কর্মসূচি।

যেখানে বিভিন্ন পেশাজীবী, রাজনৈতিকবিদসহ অনেকেই সংহতি জানিয়ে তার পাশে অবস্থান নেন। সেখানে নুপা আলম বলেন, গত কয়েক বছর ধরে টেকনাফের পাহাড়কেন্দ্রিক রোহিঙ্গা ও স্থানীয় কতিপয় অপরাধীর নেতৃত্বে স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীগোষ্ঠী পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে, যারা কয়েক বছরে ধরে ধারাবাহিকভাবে সাধারণ স্থানীয় মানুষ ও রোহিঙ্গাদের অপহরণ করে পাহাড়ে জিম্মি করে আসছে। ওখানে নির্যাতন-পরবর্তী মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ও হত্যা ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। শুধু গত এক বছরেই টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৯২ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, যাদের বেশিভাগকেই মুক্তিপণ দিয়ে ফিরতে হয়েছে। হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। ধারাবাহিক অপহরণের ঘটনায় তিনটি ইউনিয়নের মানুষ চরম আতঙ্কিত রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে টেকনাফের পাহাড়ে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে বিশেষ অভিযানের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে উদ্ধারসহ কয়েকজন অপহরণকারীকে আটক করা হয়। তবে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে চলাচলের সুযোগ বন্ধ না হলে অপহরণের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না। সেটি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে নিশ্চিত করতে হবে।

ওসি আর বলেন, গত এক বছরে অপহরণের ২০টি মামলায় ৫৭ জনকে, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ৪২টি অপহরণ মামলায় ৮১ জনকে উদ্ধার, মানব পাচারের সাত মামলায় ১৬৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। মানব পাচার মামলায় ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।

কক্সবাজার র‌্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, দুর্গম পাহাড়ে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি অভিযানে অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর দীর্ঘ অভিযানে অপহৃত ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। অপহরণ, মাদক ও মানব পাচারকারীদের ধরতে র‌্যাবের নিয়মিত অভিযান চলছে।