ঢাকা ০১:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেদিন হাসিনার ডাকে সাড়া দেননি সেখ বশির উদ্দিন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:৫৫:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪
  • ১০ বার

অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে গত রবিবার শপথ নিয়েছেন আকিজ বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ বশির উদ্দিন। এরপর থেকেই তাকে নিয়ে দেশজুড়ে নানা আলোচনা চলছে। কেউ কেউ তাকে ‘আওয়ামীদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে অন্তর্বতী সরকারের অংশ হওয়ার প্রতিবাদ করছে। তবে এ বিষয়ে দৈনিক আমাদের সময়কে সেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। তাদের সকল কার্যক্রমে আমাদের সম্মতি ছিল।’

তিনি বলেন, ‘গত ২৩ জুলাই দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শেখ হাসিনার যে বৈঠক হয়েছিল সেখানে আমি দাওয়াত পেলেও সেই ডাকে আমি সাড়া দেইনি। এমনকি ৫ আগস্ট রাস্তায় নেমে বিজয় মিছিলও করেছি।’

নতুন বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও জানান, তিনি কখনোই আওয়ামী লীগের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। এমন কী কখনো আওয়ামী লীগের নির্বাচনে ভোটও দেননি।

এদিকে সেখ বশির উদ্দিনের ভাই সাবেক সংসদ সদস্য সেখ আফিল উদ্দিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছু বিতর্ক সৃষ্টি হয়। সে বিষয়েও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন নতুন উপদেষ্টা। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘সেখ আফিল উদ্দিন আমার ভাই হলেও আমরা গত ২৫ বছর ধরে আলাদা এবং আমরা দুই মায়ের সন্তান। তবে তাকে আমি বড় ভাই হিসেবে শ্রদ্ধা করি। আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ সম্পূর্ণ ভিন্ন মতের। কেউ কারও কাজে বা ব্যবসায় হস্তক্ষেপ করি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভিন্ন মা হওয়াতে ১৯৯৯ সালে পারিবারিকভাবে আমরা আলাদা হই। পরে আফিল ভাই রাজনীতিতে যুক্ত হন। আমরা সবাই দীর্ঘদিন ধরেই আলাদা ব্যবসা পরিচালনা করছি। তিনি মূলত যশোর কেন্দ্রীক ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা ও রাজনীতি করছেন। আমিসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ঢাকা কেন্দ্রীক।’

সেখ বশির উদ্দিনের এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা গ্রুপ আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সেখ আকিজ উদ্দিনের সপ্তম ছেলে বশির উদ্দিন। তার ১৫ সন্তানের মধ্যে ১০ ছেলে, পাঁচ মেয়ে। বড় ছেলে শেখ মহিউদ্দিন আদ-দ্বীনের নির্বাহী পরিচালক। শেখ মোমিন উদ্দিন, শেখ আফিল উদ্দিন, শেখ আমিন উদ্দিন, আজিজ উদ্দিন, নাসির উদ্দিন, বশির উদ্দিন, জামিল উদ্দিন, জসিম উদ্দিন ও শামিম উদ্দিন আকিজ শিল্প গ্রুপের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করেন। তবে প্রত্যেক ভাইয়ের ব্যবসা আলাদা।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, ‘আকিজ উদ্দিনের সব ছেলেই আলাদা। তারা আকিজ গ্রুপের ব্যবসা ভাগাভাগি করে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলাদা ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।’

জানা যায়, ১৯৯৯ থেকেই তিনটি ধারায় চলে আকিজ গ্রুপের ব্যবসা। বড় মায়ের তিন ছেলে ড. সেখ মহিউদ্দিন, সেখ আফিল উদ্দিন ও সেখ মোমেন উদ্দিন, মেজো মায়ের দুই ছেলে সেখ আমিন ও সেখ মিলন এবং ছোট মায়ের পাঁচ ছেলে।

২০০৬ সালে সেখ আকিজ উদ্দিনের মৃত্যুর পর সেখ বসির উদ্দিন ৫ ভাইয়ের আকিজ গ্রুপের এমডির দায়িত্ব নেন। ২০২২ সালে তারা ২য় বার পরিবার ভাগ করেন এবং ৫ ভাই ভিন্ন ভিন্নভাবে ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন এবং তখন থেকেই সেখ বসির উদ্দিন নিজের গ্রুপের নামকরণ করেন আকিজ বসির গ্রুপ। সিরামিকস, পার্টিকেল বোর্ড, পাট, স্টিল, চা-সহ ১৬ ধরনের ব্যবসা পরিচালনা হচ্ছে আকিজ বশির গ্রুপের অধীনে।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সোহান শাহ (৩০) নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ৫৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বিবরণে দেখা যায়, ৪৮ নম্বর ক্রমিকে যশোর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য পরিচয়ে সেখ আফিল উদ্দিন ভূঁইয়া এবং ৪৯ নম্বর ক্রমিকে সেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়াকে আসামি করা হয়েছে। যেখানে উভয়ের বাবার নাম শেখ আকিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আসামির তালিকায় থাকা ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’ নামটি আংশিকভাবে মিলে যায় বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে। এমনকি তার বাবার নামের সঙ্গে আসামি তালিকায় থাকা ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’র বাবার নামেরও আংশিক মিল রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমি খুব ভালো জানি না। আমাদের লিগ্যাল টিম বিষয়টি দেখছে। ওখানে (মামলার এজাহার) আমার নামের, আবার বাবার নামের কিছু সংগতি আছে, কিছু অসংগতি আছে। এটা আসলেই আমি কি না, আমি নিশ্চিত নই। নিশ্চিত হলে লিগ্যালি ফেস (আইনিভাবে মোকাবিলা) করা হবে।’

উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে বিভিন্নজনের মন্তব্যের ও সমালোচনার বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা আন্দোলন করেছেন, তাদের আবেগের সঙ্গে আমার দ্বিমত নেই, আমি তাদের মতামতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। তবে আমার ধারণা, ওনারা মিস ইনফরমড (ভুল তথ্য পাওয়া)। ওনাদের তথ্যের ভিত্তি সঠিক নয়। আমি অনুরোধ করব উনারা যেনো আরেকটু ধৈর্যশীল হয়ে সঠিক তথ্য উপাত্ত দিয়ে আমাকে বিচার করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপদেষ্টা হওয়ার প্রতি আমার মায়া আছে কিন্তু লোভ নাই, আমি অনেক বড় একটা প্রতিষ্ঠান ও অনেক সহকরকর্মীকে রেখে এসেছি। তবে দেশ সেবার সুযোগ পেলে করতে চাই।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সেদিন হাসিনার ডাকে সাড়া দেননি সেখ বশির উদ্দিন

আপডেট টাইম : ০৫:৫৫:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে গত রবিবার শপথ নিয়েছেন আকিজ বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ বশির উদ্দিন। এরপর থেকেই তাকে নিয়ে দেশজুড়ে নানা আলোচনা চলছে। কেউ কেউ তাকে ‘আওয়ামীদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে অন্তর্বতী সরকারের অংশ হওয়ার প্রতিবাদ করছে। তবে এ বিষয়ে দৈনিক আমাদের সময়কে সেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। তাদের সকল কার্যক্রমে আমাদের সম্মতি ছিল।’

তিনি বলেন, ‘গত ২৩ জুলাই দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শেখ হাসিনার যে বৈঠক হয়েছিল সেখানে আমি দাওয়াত পেলেও সেই ডাকে আমি সাড়া দেইনি। এমনকি ৫ আগস্ট রাস্তায় নেমে বিজয় মিছিলও করেছি।’

নতুন বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও জানান, তিনি কখনোই আওয়ামী লীগের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। এমন কী কখনো আওয়ামী লীগের নির্বাচনে ভোটও দেননি।

এদিকে সেখ বশির উদ্দিনের ভাই সাবেক সংসদ সদস্য সেখ আফিল উদ্দিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছু বিতর্ক সৃষ্টি হয়। সে বিষয়েও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন নতুন উপদেষ্টা। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘সেখ আফিল উদ্দিন আমার ভাই হলেও আমরা গত ২৫ বছর ধরে আলাদা এবং আমরা দুই মায়ের সন্তান। তবে তাকে আমি বড় ভাই হিসেবে শ্রদ্ধা করি। আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ সম্পূর্ণ ভিন্ন মতের। কেউ কারও কাজে বা ব্যবসায় হস্তক্ষেপ করি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভিন্ন মা হওয়াতে ১৯৯৯ সালে পারিবারিকভাবে আমরা আলাদা হই। পরে আফিল ভাই রাজনীতিতে যুক্ত হন। আমরা সবাই দীর্ঘদিন ধরেই আলাদা ব্যবসা পরিচালনা করছি। তিনি মূলত যশোর কেন্দ্রীক ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা ও রাজনীতি করছেন। আমিসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ঢাকা কেন্দ্রীক।’

সেখ বশির উদ্দিনের এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা গ্রুপ আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সেখ আকিজ উদ্দিনের সপ্তম ছেলে বশির উদ্দিন। তার ১৫ সন্তানের মধ্যে ১০ ছেলে, পাঁচ মেয়ে। বড় ছেলে শেখ মহিউদ্দিন আদ-দ্বীনের নির্বাহী পরিচালক। শেখ মোমিন উদ্দিন, শেখ আফিল উদ্দিন, শেখ আমিন উদ্দিন, আজিজ উদ্দিন, নাসির উদ্দিন, বশির উদ্দিন, জামিল উদ্দিন, জসিম উদ্দিন ও শামিম উদ্দিন আকিজ শিল্প গ্রুপের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করেন। তবে প্রত্যেক ভাইয়ের ব্যবসা আলাদা।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, ‘আকিজ উদ্দিনের সব ছেলেই আলাদা। তারা আকিজ গ্রুপের ব্যবসা ভাগাভাগি করে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলাদা ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।’

জানা যায়, ১৯৯৯ থেকেই তিনটি ধারায় চলে আকিজ গ্রুপের ব্যবসা। বড় মায়ের তিন ছেলে ড. সেখ মহিউদ্দিন, সেখ আফিল উদ্দিন ও সেখ মোমেন উদ্দিন, মেজো মায়ের দুই ছেলে সেখ আমিন ও সেখ মিলন এবং ছোট মায়ের পাঁচ ছেলে।

২০০৬ সালে সেখ আকিজ উদ্দিনের মৃত্যুর পর সেখ বসির উদ্দিন ৫ ভাইয়ের আকিজ গ্রুপের এমডির দায়িত্ব নেন। ২০২২ সালে তারা ২য় বার পরিবার ভাগ করেন এবং ৫ ভাই ভিন্ন ভিন্নভাবে ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন এবং তখন থেকেই সেখ বসির উদ্দিন নিজের গ্রুপের নামকরণ করেন আকিজ বসির গ্রুপ। সিরামিকস, পার্টিকেল বোর্ড, পাট, স্টিল, চা-সহ ১৬ ধরনের ব্যবসা পরিচালনা হচ্ছে আকিজ বশির গ্রুপের অধীনে।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সোহান শাহ (৩০) নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ৫৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বিবরণে দেখা যায়, ৪৮ নম্বর ক্রমিকে যশোর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য পরিচয়ে সেখ আফিল উদ্দিন ভূঁইয়া এবং ৪৯ নম্বর ক্রমিকে সেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়াকে আসামি করা হয়েছে। যেখানে উভয়ের বাবার নাম শেখ আকিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আসামির তালিকায় থাকা ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’ নামটি আংশিকভাবে মিলে যায় বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে। এমনকি তার বাবার নামের সঙ্গে আসামি তালিকায় থাকা ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’র বাবার নামেরও আংশিক মিল রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমি খুব ভালো জানি না। আমাদের লিগ্যাল টিম বিষয়টি দেখছে। ওখানে (মামলার এজাহার) আমার নামের, আবার বাবার নামের কিছু সংগতি আছে, কিছু অসংগতি আছে। এটা আসলেই আমি কি না, আমি নিশ্চিত নই। নিশ্চিত হলে লিগ্যালি ফেস (আইনিভাবে মোকাবিলা) করা হবে।’

উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে বিভিন্নজনের মন্তব্যের ও সমালোচনার বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা আন্দোলন করেছেন, তাদের আবেগের সঙ্গে আমার দ্বিমত নেই, আমি তাদের মতামতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। তবে আমার ধারণা, ওনারা মিস ইনফরমড (ভুল তথ্য পাওয়া)। ওনাদের তথ্যের ভিত্তি সঠিক নয়। আমি অনুরোধ করব উনারা যেনো আরেকটু ধৈর্যশীল হয়ে সঠিক তথ্য উপাত্ত দিয়ে আমাকে বিচার করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপদেষ্টা হওয়ার প্রতি আমার মায়া আছে কিন্তু লোভ নাই, আমি অনেক বড় একটা প্রতিষ্ঠান ও অনেক সহকরকর্মীকে রেখে এসেছি। তবে দেশ সেবার সুযোগ পেলে করতে চাই।’