ঢাকা ০৬:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

কোরআনের বর্ণনায় মহানবী (সা.)-এর অবমাননাকারীর শাস্তি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:১১:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
  • ৪১ বার
যারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে গালি দেয় এবং তাঁর অবমাননা করে তাদের কোরআন, হাদিস, সাহাবায়ে কিরাম, সমগ্র মুসলিম উম্মতের ঐকমত্যে সুস্পষ্ট কাফির ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামের প্রথম যুগে যারা নবীকে কষ্ট দিয়েছিল, তাকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছিল শাস্তিস্বরূপ তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। নিম্নে ইসলামী আইনে নবী অবমাননার শাস্তির বিশদ বিবরণ তুলে ধরা হলো—

কোরআনের দৃষ্টিতে শাতিমে রাসুল কাফির

কোরআনের বেশ কয়েকটি স্থানে ‘শাতিমে রাসুল কাফির ও মুরতাদ’ এই মর্মে ইঙ্গিত রয়েছে, যার কয়েকটি নিম্নরূপ :

১. যে ব্যক্তি নবী ও ধর্মের অবমাননা করে সে কাফির ও মুরতাদ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : ‘তাদের (অর্থাৎ মুনাফিকদের) মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং (তাঁর সম্পর্কে) বলে, সে তো আপাদমস্তক কান (কান কথা শুনে)।

বলে দাও, তোমাদের পক্ষে যা মঙ্গলজনক, সে তারই জন্য কান। সে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং মুমিনদের কথা বিশ্বাস  করে।  তোমাদের  মধ্যে যারা (বাহ্যিকভাবে) ঈমান এনেছে, তাদের জন্য সে রহমত (সুলভ আচরণকারী)। যারা আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত আছে।
’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬১)২. অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তারা কি জানে না, কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতা করলে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, যাতে সে সর্বদা থাকবে? এটা তো চরম লাঞ্ছনা!’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬৩)

৩. আরেক আয়াতে এসেছে, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৬)

উপরিউক্ত আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয়, যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে কষ্ট দেয় বা অবমাননা করে সে যেন আল্লাহকেই কষ্ট দেয় বা অবমাননা করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে কষ্ট দেয় বা অবমাননা করে সে কাফির। (আস সারিমুল মাসলুল, পৃষ্ঠা ৩৩-৩৪; আস সাইফুল মাসলুল, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৭০)

হাদিসের আলোকে শাতিমে রাসুলকে হত্যার নির্দেশ

যে ব্যক্তি মহানবী (সা.)-কে অসম্মান করে, নবীর সম্মানহানি করে এবং অবমাননাকর মনোভাব পোষণ করে সেও কাফির।

জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, নবী (সা.) একবার বলেন, ‘কে আছ যে কাব ইবনু আশরাফের (হত্যার) দায়িত্ব নেবে? কেননা সে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুল (সা.)-কে কষ্ট দিয়েছে।’ মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রা.) বলেন, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর তিনি তাকে হত্যা করে ফেলেন।
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫১০- ৩০৩১)আলী (রা.) বলেন, এক ইহুদি নারী নবী (সা.)-কে গালাগাল করত এবং তাঁর সম্পর্কে মন্দ কথা বলত। একদা জনৈক ব্যক্তি তাকে গলা টিপে হত্যা করে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) তার রক্তপণ বাতিল বলে ঘোষণা করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৩৬২)উলামায়ে কিরাম বলেছেন, শাতিমে রাসুলকে হত্যা করার ব্যাপারে এটি সুস্পষ্ট প্রমাণ। (আকদিয়াতু রাসুলুল্লাহ (সা.), খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৭)

ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে গালি দেয় তাকে হত্যা করার বিধান রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পরও বলবৎ আছে; বরং আগের চেয়ে অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। (আস সারিমুল মাসলুল, পৃষ্ঠা-৯৪)

ইতিহাসবেত্তারা লিখেছেন, নবী (সা.) আবদুল্লাহ ইবনে খাতালের দুই নারী ক্রীতদাসীকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন; যারা নবী করিম (সা.)-কে তিরস্কার করে লেখা ইবনে খাতলের কবিতা গাইতেন। তাদের একজনের নাম ফারতানা এবং অন্যজনের নাম কারিনা বা অর্ণিব। আর তাদের মধ্যে একজনকে হত্যা করা হয়েছিল এবং ফারতানা ঈমান এনেছিল, সে জন্য তার ওপর থেকে হত্যার আদেশ শিথিল করা হয়েছিল এবং সে উসমান (রা.)-এর শাসনামল পর্যন্ত জীবিত ছিল। এই দুই দাসীকে হত্যার আদেশ একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ যে নবী অবমাননার অপরাধের কারণে তাদের হত্যার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। (আস সারিমুল মাসলুল, পৃষ্ঠা-১১০)

মুসআব ইবনে সাদ (রা.) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) সবাইকে নিরাপত্তা দান করেন, কিন্তু চারজন পুরুষ ও দুজন নারী ছাড়া। তিনি তাদের সম্পর্কে বলেন, তাদের যেখানে পাবে হত্যা করবে, যদিও তারা কাবার পর্দা ধরে থাকে। তারা হলো ইকরিমা ইবন আবু জাহল, আবদুল্লাহ ইবনে খাতাল, মিকয়াস ইবন সুবাবা, আবদুল্লাহ ইবনে সাদ ইবনে আবু সারাহ। আবদুল্লাহ ইবনে খাতালকে কাবার গিলাফের সঙ্গে লটকে থাকা অবস্থায় পাওয়া গেল এবং তাকে হত্যা করার জন্য দুই ব্যক্তি ছুটে গেল। একজন হলো সাঈদ ইবনে হুরায়স, অন্যজন আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.)। সাঈদ ছিলেন জাওয়ান, তিনি আগে গিয়ে তাকে হত্যা করলেন। আর মিকয়াস ইবনে সুবাবাকে লোকেরা বাজারে পেল এবং তারা তাকে হত্যা করল..। (নাসাঈ, হাদিস : ৪০৬৭)

সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈনদের ঐকমত্য

নবী অবমাননার শাস্তি হত্যা এবং এ বিষয়ে সাহাবায়ে কিরাম একমত এবং বহু ঘটনা দ্বারা এই ঐকমত্য প্রমাণিত। ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, কোনো মাসআলায় এর চেয়ে বেশি সুস্পষ্ট ঐকমত্যের প্রমাণ করা সম্ভব নয় এবং কোনো একজন সাহাবায়ে কিরাম বা তাবেঈদের কেউ এই ইস্যুতে সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈনদের ঐকমত্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন এমন কোনো প্রমাণ নেই। (আস সারিমুল মাসলুল, পৃষ্ঠা-২০০)

শাতিমে রাসুলের ব্যাপারে ইসলামী আইনশাস্ত্রের চিন্তাধারা

শাতিমে রাসুলকে হত্যার ব্যাপারে ইসলামী আইনশাস্ত্রের বিজ্ঞ আইনবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি নিম্নে তুলে ধরা হলো—

আবু বকর আল জাসসাজ (রহ.) বলেন, মুসলমানদের মধ্যে এ বিষয়ে কোনো বিরোধ নেই যে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নবী (সা.)-কে গালি দেয় সে মুরতাদ এবং তাকে হত্যা করা ওয়াজিব। (আহকামুল কোরআন, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৮৬)

ইমাম ইবনে নুজাইম (রহ.) বলেন, মাতাল বা পাগল ব্যক্তির ধর্মত্যাগ বৈধ নয়, তবে নবীকে গালি দেওয়ার কারণে সে মুরতাদ হয়ে যায়। তাই তাকে (মুরতাদ হিসেবে) হত্যা করা ওয়াজিব এবং তার এ অপরাধ (কখনোই) ক্ষমাযোগ্য নয়। (আল আশবাহ ওয়া আন নাজায়ির, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৯১)

ইবনে আবেদীন আশ শামী (রহ.) বলেন, মাতাল বা পাগল ব্যক্তির ধর্মত্যাগ বৈধ নয়, তবে নবীকে গালি দেওয়ার কারণে সে মুরতাদ হয়ে যায়। তাই তাকে (মুরতাদ হিসেবে) হত্যা করা ওয়াজিব এবং তার এ অপরাধ (কখনোই) ক্ষমাযোগ্য নয়। (ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-২২৪)

ইমাম মালেক (রহ.) ও মদিনার সব আলেমের আকিদা এই যে যদি কোনো অমুসলিম নবী (সা.)-কে অপমান করে, গালি দেয় বা অবমাননা করে, তাহলে তাকেও হত্যা করা ওয়াজিব। (আস সারিমুল মাসলুল, পৃষ্ঠা-৪)

ইমাম ইবনে মুনজির ও ইমাম আল-খাত্তাবি (রহ.) ইমাম শাফেঈ (রহ.) সম্পর্কে লিখেছেন যে শাতিমে রাসুলকে হত্যা করা হবে। (আস সারিমুল মাসলুল, পৃষ্ঠা-৮)

ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে গালি দেয় তার শাস্তি হলো তাকে হত্যা করা। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি ইসলামকে অবমাননা করে এবং তা অবজ্ঞার সঙ্গে উল্লেখ করে তারও শাস্তি হত্যা। (তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৪৭)

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন, যদি কেউ নবী (সা.)-কে গালি দেয় বা তাঁর শানে বেয়াদবি কিংবা কটূক্তি করে তাহলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, সে মুসলিম হোক বা কাফির। আর আমার অভিমত হলো তাকে হত্যা করা ওয়াজিব, তার তাওবা গ্রহণযোগ্য নয়। (আস সাইফুল মাসলুল আলা মান শাব্বার রাসুল, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৩৮)

যে ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর সম্মানের অবমাননা করে, গালি দেয় বা তাঁর শানে বেয়াদবি ও কটূক্তি করে কিংবা ইসলাম ধর্মের অবমাননা করে সে কাফির এবং তাকে হত্যা করা মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামী রাষ্ট্রের ওপর আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অবশেষে বিল পাস করে ‘শাটডাউন’ এড়াল যুক্তরাষ্ট্র

কোরআনের বর্ণনায় মহানবী (সা.)-এর অবমাননাকারীর শাস্তি

আপডেট টাইম : ০৭:১১:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
যারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে গালি দেয় এবং তাঁর অবমাননা করে তাদের কোরআন, হাদিস, সাহাবায়ে কিরাম, সমগ্র মুসলিম উম্মতের ঐকমত্যে সুস্পষ্ট কাফির ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামের প্রথম যুগে যারা নবীকে কষ্ট দিয়েছিল, তাকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছিল শাস্তিস্বরূপ তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। নিম্নে ইসলামী আইনে নবী অবমাননার শাস্তির বিশদ বিবরণ তুলে ধরা হলো—

কোরআনের দৃষ্টিতে শাতিমে রাসুল কাফির

কোরআনের বেশ কয়েকটি স্থানে ‘শাতিমে রাসুল কাফির ও মুরতাদ’ এই মর্মে ইঙ্গিত রয়েছে, যার কয়েকটি নিম্নরূপ :

১. যে ব্যক্তি নবী ও ধর্মের অবমাননা করে সে কাফির ও মুরতাদ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : ‘তাদের (অর্থাৎ মুনাফিকদের) মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং (তাঁর সম্পর্কে) বলে, সে তো আপাদমস্তক কান (কান কথা শুনে)।

বলে দাও, তোমাদের পক্ষে যা মঙ্গলজনক, সে তারই জন্য কান। সে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং মুমিনদের কথা বিশ্বাস  করে।  তোমাদের  মধ্যে যারা (বাহ্যিকভাবে) ঈমান এনেছে, তাদের জন্য সে রহমত (সুলভ আচরণকারী)। যারা আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত আছে।
’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬১)২. অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তারা কি জানে না, কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতা করলে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, যাতে সে সর্বদা থাকবে? এটা তো চরম লাঞ্ছনা!’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬৩)

৩. আরেক আয়াতে এসেছে, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৬)

উপরিউক্ত আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয়, যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে কষ্ট দেয় বা অবমাননা করে সে যেন আল্লাহকেই কষ্ট দেয় বা অবমাননা করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে কষ্ট দেয় বা অবমাননা করে সে কাফির। (আস সারিমুল মাসলুল, পৃষ্ঠা ৩৩-৩৪; আস সাইফুল মাসলুল, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৭০)

হাদিসের আলোকে শাতিমে রাসুলকে হত্যার নির্দেশ

যে ব্যক্তি মহানবী (সা.)-কে অসম্মান করে, নবীর সম্মানহানি করে এবং অবমাননাকর মনোভাব পোষণ করে সেও কাফির।

জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, নবী (সা.) একবার বলেন, ‘কে আছ যে কাব ইবনু আশরাফের (হত্যার) দায়িত্ব নেবে? কেননা সে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুল (সা.)-কে কষ্ট দিয়েছে।’ মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রা.) বলেন, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর তিনি তাকে হত্যা করে ফেলেন।
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫১০- ৩০৩১)আলী (রা.) বলেন, এক ইহুদি নারী নবী (সা.)-কে গালাগাল করত এবং তাঁর সম্পর্কে মন্দ কথা বলত। একদা জনৈক ব্যক্তি তাকে গলা টিপে হত্যা করে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) তার রক্তপণ বাতিল বলে ঘোষণা করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৩৬২)উলামায়ে কিরাম বলেছেন, শাতিমে রাসুলকে হত্যা করার ব্যাপারে এটি সুস্পষ্ট প্রমাণ। (আকদিয়াতু রাসুলুল্লাহ (সা.), খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৭)

ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে গালি দেয় তাকে হত্যা করার বিধান রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পরও বলবৎ আছে; বরং আগের চেয়ে অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। (আস সারিমুল মাসলুল, পৃষ্ঠা-৯৪)

ইতিহাসবেত্তারা লিখেছেন, নবী (সা.) আবদুল্লাহ ইবনে খাতালের দুই নারী ক্রীতদাসীকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন; যারা নবী করিম (সা.)-কে তিরস্কার করে লেখা ইবনে খাতলের কবিতা গাইতেন। তাদের একজনের নাম ফারতানা এবং অন্যজনের নাম কারিনা বা অর্ণিব। আর তাদের মধ্যে একজনকে হত্যা করা হয়েছিল এবং ফারতানা ঈমান এনেছিল, সে জন্য তার ওপর থেকে হত্যার আদেশ শিথিল করা হয়েছিল এবং সে উসমান (রা.)-এর শাসনামল পর্যন্ত জীবিত ছিল। এই দুই দাসীকে হত্যার আদেশ একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ যে নবী অবমাননার অপরাধের কারণে তাদের হত্যার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। (আস সারিমুল মাসলুল, পৃষ্ঠা-১১০)

মুসআব ইবনে সাদ (রা.) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) সবাইকে নিরাপত্তা দান করেন, কিন্তু চারজন পুরুষ ও দুজন নারী ছাড়া। তিনি তাদের সম্পর্কে বলেন, তাদের যেখানে পাবে হত্যা করবে, যদিও তারা কাবার পর্দা ধরে থাকে। তারা হলো ইকরিমা ইবন আবু জাহল, আবদুল্লাহ ইবনে খাতাল, মিকয়াস ইবন সুবাবা, আবদুল্লাহ ইবনে সাদ ইবনে আবু সারাহ। আবদুল্লাহ ইবনে খাতালকে কাবার গিলাফের সঙ্গে লটকে থাকা অবস্থায় পাওয়া গেল এবং তাকে হত্যা করার জন্য দুই ব্যক্তি ছুটে গেল। একজন হলো সাঈদ ইবনে হুরায়স, অন্যজন আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.)। সাঈদ ছিলেন জাওয়ান, তিনি আগে গিয়ে তাকে হত্যা করলেন। আর মিকয়াস ইবনে সুবাবাকে লোকেরা বাজারে পেল এবং তারা তাকে হত্যা করল..। (নাসাঈ, হাদিস : ৪০৬৭)

সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈনদের ঐকমত্য

নবী অবমাননার শাস্তি হত্যা এবং এ বিষয়ে সাহাবায়ে কিরাম একমত এবং বহু ঘটনা দ্বারা এই ঐকমত্য প্রমাণিত। ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, কোনো মাসআলায় এর চেয়ে বেশি সুস্পষ্ট ঐকমত্যের প্রমাণ করা সম্ভব নয় এবং কোনো একজন সাহাবায়ে কিরাম বা তাবেঈদের কেউ এই ইস্যুতে সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈনদের ঐকমত্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন এমন কোনো প্রমাণ নেই। (আস সারিমুল মাসলুল, পৃষ্ঠা-২০০)

শাতিমে রাসুলের ব্যাপারে ইসলামী আইনশাস্ত্রের চিন্তাধারা

শাতিমে রাসুলকে হত্যার ব্যাপারে ইসলামী আইনশাস্ত্রের বিজ্ঞ আইনবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি নিম্নে তুলে ধরা হলো—

আবু বকর আল জাসসাজ (রহ.) বলেন, মুসলমানদের মধ্যে এ বিষয়ে কোনো বিরোধ নেই যে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নবী (সা.)-কে গালি দেয় সে মুরতাদ এবং তাকে হত্যা করা ওয়াজিব। (আহকামুল কোরআন, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৮৬)

ইমাম ইবনে নুজাইম (রহ.) বলেন, মাতাল বা পাগল ব্যক্তির ধর্মত্যাগ বৈধ নয়, তবে নবীকে গালি দেওয়ার কারণে সে মুরতাদ হয়ে যায়। তাই তাকে (মুরতাদ হিসেবে) হত্যা করা ওয়াজিব এবং তার এ অপরাধ (কখনোই) ক্ষমাযোগ্য নয়। (আল আশবাহ ওয়া আন নাজায়ির, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৯১)

ইবনে আবেদীন আশ শামী (রহ.) বলেন, মাতাল বা পাগল ব্যক্তির ধর্মত্যাগ বৈধ নয়, তবে নবীকে গালি দেওয়ার কারণে সে মুরতাদ হয়ে যায়। তাই তাকে (মুরতাদ হিসেবে) হত্যা করা ওয়াজিব এবং তার এ অপরাধ (কখনোই) ক্ষমাযোগ্য নয়। (ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-২২৪)

ইমাম মালেক (রহ.) ও মদিনার সব আলেমের আকিদা এই যে যদি কোনো অমুসলিম নবী (সা.)-কে অপমান করে, গালি দেয় বা অবমাননা করে, তাহলে তাকেও হত্যা করা ওয়াজিব। (আস সারিমুল মাসলুল, পৃষ্ঠা-৪)

ইমাম ইবনে মুনজির ও ইমাম আল-খাত্তাবি (রহ.) ইমাম শাফেঈ (রহ.) সম্পর্কে লিখেছেন যে শাতিমে রাসুলকে হত্যা করা হবে। (আস সারিমুল মাসলুল, পৃষ্ঠা-৮)

ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে গালি দেয় তার শাস্তি হলো তাকে হত্যা করা। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি ইসলামকে অবমাননা করে এবং তা অবজ্ঞার সঙ্গে উল্লেখ করে তারও শাস্তি হত্যা। (তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৪৭)

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন, যদি কেউ নবী (সা.)-কে গালি দেয় বা তাঁর শানে বেয়াদবি কিংবা কটূক্তি করে তাহলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, সে মুসলিম হোক বা কাফির। আর আমার অভিমত হলো তাকে হত্যা করা ওয়াজিব, তার তাওবা গ্রহণযোগ্য নয়। (আস সাইফুল মাসলুল আলা মান শাব্বার রাসুল, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৩৮)

যে ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর সম্মানের অবমাননা করে, গালি দেয় বা তাঁর শানে বেয়াদবি ও কটূক্তি করে কিংবা ইসলাম ধর্মের অবমাননা করে সে কাফির এবং তাকে হত্যা করা মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামী রাষ্ট্রের ওপর আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।