ঢাকা ০১:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিনি ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫১:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
  • ২ বার

রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বগুণের অধিকারী, তিনি ছিলেন একজন সাহসী, পরমুখাপেক্ষীহীন, ধৈর্যশীল, শোকরগুজার, অল্পেতুষ্ট, ত্যাগী, বিনয়ী, দানশীল ও সকল মানবিক গুণের অধিকারী। যেন তাঁর ব্যক্তিত্ব বিশ্ব মানবতার জন্য একটি আয়না, যাতে দেখে দেখে সকল মানুষ নিজের ভেতর-বাইরকে ঠিক করে নিতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যখন প্রথম অহী নাযিল হলো তখন তাঁর জীবন-সঙ্গিনী খাদিজা (রাযি.) বলেছিলেন : আল্লাহ তায়ালা কখনো আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়ান, দুর্বলের ভার বহন করেন, মেহমানের সম্মান করেন। (সহীহ বুখারী : ৩)। তাঁর চরিত্রের প্রশংসা কুরআনে এভাবে এসেছে-তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত। (সূরা আল কলাম : ৪)।

এমনকি মক্কার বিধর্মীরা যারা তাঁর জানের দুশমন ছিল তারাও তাঁর বিশ্বস্ততা, আমানতদারী ও সত্যবাদিতা স্বীকার করত। আবু জাহল বলত, মুহাম্মাদ! আমি তোমাকে মিথ্যাবাদী বলি না, কিন্তু তোমার আনিত বাণীকে ঠিক মনে করতে পারছি না। এমনকি মক্কাবাসীরা তাদের দামী জিনিসগুলো হেফাজতের জন্য কাছে আমানত রাখত। হিজরতের রাতে আলী (রাযি.)-কে নিজের ঘরে রেখে গিয়েছিলেন পরদিন তাদের আমানত তাদেরকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ক্ষমার গুণ আলাদাভাবে আলোচনা করার মতোই একটি বিষয়। হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ব্যক্তিগত বিষয়ে কারো থেকে কখনো বদলা নেননি। খারাপের বদলা খারাপ দিয়ে কখনো নেননি। এমনকি তিনি নিজের জানের দুশমনকেও ছেড়ে দিয়েছেন। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাযি.) বর্ণনা করেন- একবার এক যুদ্ধ থেকে ফেরার সময় একস্থানে আমরা বিশ্রামের জন্য থামলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি বৃক্ষকা-ে তাঁর তরবারী ঝুলিয়ে রেখে সেখানেই বিশ্রাম করছিলেন। আমরা সবাই একটু দূরে দূরে ছিলাম।

হঠাৎ তাঁর ডাকে আমি উঠে গেলাম। কাছে গিয়ে দেখি, এক গ্রাম্যলোক তাঁর সামনে বসে আছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি বিশ্রাম করছিলাম তখন এই লোকটি এসে আমার তরবারী নিয়ে নেয়। আমি তাড়াতাড়ি উঠে দেখি আমার খোলা তরবারী তার হাতে। সে আমাকে বলল, আমার হাত থেকে তোমাকে এখন কে বাঁচাবে? আমি বললাম, আল্লাহ। তখন এর হাত থেকে তরবারী পড়ে গেল। হযরত জাবির (রাযি.) বলেন, এরপরও তিনি কোনোরূপ বদলা নিলেন না। (সহীহ বুখারী : ৪১৩৫)।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এই ক্ষমার আদর্শ শুধু তাঁর পারিবারিক জীবন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তাঁর এই গুণ তিনি ইসলামী রাষ্ট্র-প্রধান হয়েও প্রকাশ করেছেন। মক্কার সেই সব দুষ্ট লোকদের কথা কে না জানে, যারা রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর প্রিয় সাহাবীদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল! যাদের কারণে দেশ ছেড়ে হিজরত করার কষ্ট বরদাশত করতে হয়েছে। এইসব মানুষের ক্ষমার তো কোনো প্রশ্নই আসে না, যাদেরকে সারাবিশ্ব অপরাধী বলে স্বীকার করে। কিন্তু রহমতের নবী (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন তাদেরকে মাফ করে দিয়েছেন এবং ঘোষণা করে দিয়েছেন, আজ তোমাদের উপর কোনো অভিযোগ নেই, তোমরা সবাই মুক্ত।

তাঁর জীবনের আরেকটি উজ্জ্বল দিক, তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভারসাম্য রক্ষাকারী। তিনি ইবাদত বা মুআমালাত সকল ক্ষেত্রেই ভারসাম্য ও সহজতা রক্ষা করতেন। তার ইবাদতের অবস্থা এই ছিল যে, রাতে লম্বা কিয়ামের কারণে পা মোবারক ফুলে যেত। যবানে সর্বদা আল্লাহর নামের গুঞ্জন উঠে থাকতো। সবসময় রোযার এহতেমাম করতেন। দারিদ্র্যের কষ্ট তো বরদাশত করতেনই, কিন্তু এসব কিছু সত্ত্বেও বৈরাগ্য কখনো পছন্দ করেননি। তিনি বিবাহ-শাদি করেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন এবং সাহাবাদেরকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন : নিজের হাতের কষ্টের কামাইয়ের চেয়ে উত্তম রিজিক আর কিছু নেই। আল্লাহর নবী হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে কামাই করে খেতেন। (সহীহ বুখারী : ২০৭২)।

যদি তাঁর মজলিসে ভয় ও আযাবের বয়ানে কান্না ও নিরবতা এসে যেত তাহলে তাঁর হাসি-খুশি মেযাযের কারণে তা আবার আশা ও আনন্দে ভরে উঠত। একবার এক বৃদ্ধা তাঁর খেদমতে হাজির হলো, যেন তার জন্য জান্নাতের দোআ করা হয়। আল্লাহর রাসূল ইরশাদ করলেন, কোনো বৃদ্ধা জান্নাতে যাবে না। বৃদ্ধা খুব বিষণœ হয়ে কান্নাকাটি করতে করতে ফিরে এলো। তখন তিনি সাহাবাদেরকে বললেন, তাকে গিয়ে বলো, বৃদ্ধরাও জান্নাতে যাবে, তবে জওয়ান হয়ে যাবে। (জামে তিরমিযী, শামায়েল, ২/১৭)।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

তিনি ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী

আপডেট টাইম : ১০:৫১:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪

রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বগুণের অধিকারী, তিনি ছিলেন একজন সাহসী, পরমুখাপেক্ষীহীন, ধৈর্যশীল, শোকরগুজার, অল্পেতুষ্ট, ত্যাগী, বিনয়ী, দানশীল ও সকল মানবিক গুণের অধিকারী। যেন তাঁর ব্যক্তিত্ব বিশ্ব মানবতার জন্য একটি আয়না, যাতে দেখে দেখে সকল মানুষ নিজের ভেতর-বাইরকে ঠিক করে নিতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যখন প্রথম অহী নাযিল হলো তখন তাঁর জীবন-সঙ্গিনী খাদিজা (রাযি.) বলেছিলেন : আল্লাহ তায়ালা কখনো আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়ান, দুর্বলের ভার বহন করেন, মেহমানের সম্মান করেন। (সহীহ বুখারী : ৩)। তাঁর চরিত্রের প্রশংসা কুরআনে এভাবে এসেছে-তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত। (সূরা আল কলাম : ৪)।

এমনকি মক্কার বিধর্মীরা যারা তাঁর জানের দুশমন ছিল তারাও তাঁর বিশ্বস্ততা, আমানতদারী ও সত্যবাদিতা স্বীকার করত। আবু জাহল বলত, মুহাম্মাদ! আমি তোমাকে মিথ্যাবাদী বলি না, কিন্তু তোমার আনিত বাণীকে ঠিক মনে করতে পারছি না। এমনকি মক্কাবাসীরা তাদের দামী জিনিসগুলো হেফাজতের জন্য কাছে আমানত রাখত। হিজরতের রাতে আলী (রাযি.)-কে নিজের ঘরে রেখে গিয়েছিলেন পরদিন তাদের আমানত তাদেরকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ক্ষমার গুণ আলাদাভাবে আলোচনা করার মতোই একটি বিষয়। হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ব্যক্তিগত বিষয়ে কারো থেকে কখনো বদলা নেননি। খারাপের বদলা খারাপ দিয়ে কখনো নেননি। এমনকি তিনি নিজের জানের দুশমনকেও ছেড়ে দিয়েছেন। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাযি.) বর্ণনা করেন- একবার এক যুদ্ধ থেকে ফেরার সময় একস্থানে আমরা বিশ্রামের জন্য থামলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি বৃক্ষকা-ে তাঁর তরবারী ঝুলিয়ে রেখে সেখানেই বিশ্রাম করছিলেন। আমরা সবাই একটু দূরে দূরে ছিলাম।

হঠাৎ তাঁর ডাকে আমি উঠে গেলাম। কাছে গিয়ে দেখি, এক গ্রাম্যলোক তাঁর সামনে বসে আছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি বিশ্রাম করছিলাম তখন এই লোকটি এসে আমার তরবারী নিয়ে নেয়। আমি তাড়াতাড়ি উঠে দেখি আমার খোলা তরবারী তার হাতে। সে আমাকে বলল, আমার হাত থেকে তোমাকে এখন কে বাঁচাবে? আমি বললাম, আল্লাহ। তখন এর হাত থেকে তরবারী পড়ে গেল। হযরত জাবির (রাযি.) বলেন, এরপরও তিনি কোনোরূপ বদলা নিলেন না। (সহীহ বুখারী : ৪১৩৫)।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এই ক্ষমার আদর্শ শুধু তাঁর পারিবারিক জীবন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তাঁর এই গুণ তিনি ইসলামী রাষ্ট্র-প্রধান হয়েও প্রকাশ করেছেন। মক্কার সেই সব দুষ্ট লোকদের কথা কে না জানে, যারা রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর প্রিয় সাহাবীদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল! যাদের কারণে দেশ ছেড়ে হিজরত করার কষ্ট বরদাশত করতে হয়েছে। এইসব মানুষের ক্ষমার তো কোনো প্রশ্নই আসে না, যাদেরকে সারাবিশ্ব অপরাধী বলে স্বীকার করে। কিন্তু রহমতের নবী (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন তাদেরকে মাফ করে দিয়েছেন এবং ঘোষণা করে দিয়েছেন, আজ তোমাদের উপর কোনো অভিযোগ নেই, তোমরা সবাই মুক্ত।

তাঁর জীবনের আরেকটি উজ্জ্বল দিক, তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভারসাম্য রক্ষাকারী। তিনি ইবাদত বা মুআমালাত সকল ক্ষেত্রেই ভারসাম্য ও সহজতা রক্ষা করতেন। তার ইবাদতের অবস্থা এই ছিল যে, রাতে লম্বা কিয়ামের কারণে পা মোবারক ফুলে যেত। যবানে সর্বদা আল্লাহর নামের গুঞ্জন উঠে থাকতো। সবসময় রোযার এহতেমাম করতেন। দারিদ্র্যের কষ্ট তো বরদাশত করতেনই, কিন্তু এসব কিছু সত্ত্বেও বৈরাগ্য কখনো পছন্দ করেননি। তিনি বিবাহ-শাদি করেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন এবং সাহাবাদেরকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন : নিজের হাতের কষ্টের কামাইয়ের চেয়ে উত্তম রিজিক আর কিছু নেই। আল্লাহর নবী হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে কামাই করে খেতেন। (সহীহ বুখারী : ২০৭২)।

যদি তাঁর মজলিসে ভয় ও আযাবের বয়ানে কান্না ও নিরবতা এসে যেত তাহলে তাঁর হাসি-খুশি মেযাযের কারণে তা আবার আশা ও আনন্দে ভরে উঠত। একবার এক বৃদ্ধা তাঁর খেদমতে হাজির হলো, যেন তার জন্য জান্নাতের দোআ করা হয়। আল্লাহর রাসূল ইরশাদ করলেন, কোনো বৃদ্ধা জান্নাতে যাবে না। বৃদ্ধা খুব বিষণœ হয়ে কান্নাকাটি করতে করতে ফিরে এলো। তখন তিনি সাহাবাদেরকে বললেন, তাকে গিয়ে বলো, বৃদ্ধরাও জান্নাতে যাবে, তবে জওয়ান হয়ে যাবে। (জামে তিরমিযী, শামায়েল, ২/১৭)।