ঢাকা ০৮:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হৃদরোগ প্রতিরোধে কুরআন-হাদিসের নির্দেশনা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৪:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৩ বার

২৯ সেপ্টেম্বর ছিল বিশ্ব হার্ট দিবস। বিশ্বজুড়ে হৃদরোগ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশসহ বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়েছে। স্বাস্থ্যবিষয়ক দিনগুলোর মধ্যে অন্যতম দিন হলো- বিশ্ব হার্ট দিবস।

হৃদরোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের বৃহত্তম একটি দিন এটি। ২০২৪ সালে বিশ্ব হার্ট দিবসের থিম হল ‘অ্যাকশনের জন্য হার্ট ব্যবহার’। এই থিম বোঝায় হৃদপিন্ডকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত। হৃদয়ের যত্ন নেওয়া উচিত, যাতে পদক্ষেপ নিতে সক্ষম থাকে হৃদয়। হার্টের স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলছে এই থিমটি।

একবার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। কিন্তু হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে স্থানান্তর করতে পারলে আধুনিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে সুস্থ করা সম্ভব। কিন্তু পূর্বে হৃদরোগ শনাক্ত করা না গেলে অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা দেয়ার পূর্বেই রোগীর মৃত্যু ঘটে। তাই প্রতিরোধটাই সবচেয়ে জরুরি।

এ পরিস্থিতিতে রোগের ভয়াবহতা কমাতে উন্নত চিকিৎসার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, বাংলাদেশের মানুষও এই ঝুঁকিতে রয়েছে। উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও যুবকরা হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

সুস্থ–সবলভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেউ, কোনো সমস্যা নেই, একদিন হঠাৎ শোনা যায় তার ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়ে গেছে। সমস্যা হলো এমন ঘটনা ঘটে যাওয়ার আগে প্রায়ই কিছু জানা যায় না। এ রকম হার্ট অ্যাটাকের পরিণতি হয় সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু, নয়তো জীবনের সঙ্গে আপস করে কোনোমতে চলা। তাই হৃদ্‌রোগ হওয়ার আগেই সাবধান হতে হবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে হার্ট বা হৃদপিণ্ডের যাবতীয় রোগ-ব্যাধির চিকিৎসা-

মানবদেহে রোগের বিস্তার সম্পর্কে কুরআন, হাদিস ও বিজ্ঞানের ধারাসমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হার্ট আল্লাহ তায়ালার অনন্য দান।  হাদিসে এসেছে, আল্লাহর কাছে তোমরা সুস্বাস্থ্য প্রার্থনা কর, কারণ ইমানের পর সুস্বাস্থ্যের চেয়ে অধিক মঙ্গলজনক কোনো কিছু কাউকে দান করা হয়নি। (ইবনে মাজাহ)

সুতরাং নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন করে হার্টের সুস্থতাসহ সর্বপ্রকার রোগ-বালাই থেকে নিরাপদ থাকা জরুরি। হৃদরোগের যতগুলো কারণ রয়েছে, তার প্রতিটির ব্যাপারেই কুরআন ও হাদিসে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দশনা।

তার কিছু তুলে ধরা হলো-আল্লাহ বলেন- অর্থাৎ যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন। (সূরা শোয়ারা : আয়াত ৮০)

রোগাক্রান্ত বান্দাহকে আল্লাহ নিরাময় করবেন। এ কথা আল্লাহ কুরআনুল কারিমে বলেছেন। কিন্তু আল্লাহ মানুষের প্রতিটি রোগ ব্যধির নিয়ামক হিসেবে পৃথিবীতে প্রতিষেধক পাঠিয়েছেন। এবং অসংখ্য খাবার উপাদান পাঠিয়েছেন। এ উপাদান যদি মাত্রাতিরিক্ত আকারে কেউ গ্রহণ করে তখনই বাঁধে সমস্যা। তাই খাবার গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে হৃদরোগের প্রধান কারণ হচ্ছে- থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা, রক্তশূন্যতা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুঃশ্চিন্তা, যে কোনো ধরনের ভয়-ভীতি, অত্যধিক মদপান, নেশাজাতীয় বস্তু গ্রহণ, অতিরিক্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ মেডিসিন ব্যবহার এবং অনেক মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই হৃদরোগের কারণ।

একজন মানুষ যদি ইসলামি অনুশাসন মেনে নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন করে তবে সুস্থ থাকার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। জীবনের নানা প্রাঙ্গনে মানুষ হরহামেশাই নানা ধরনের হতাশা ও দুঃশিন্তায় ভুগে থাকে। যা মানুষের জন্য বড়ই ক্ষতির কারণ।

আল্লাহ বলেন- আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। (সূরা ইউসুফ : আয়াত ৮৭) আল্লাহ অন্যত্র বলেন- অর্থাৎ মানুষকে যখন দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে আমাকে ডাকতে শুরু করে, এরপর আমি যখন তাকে আমার পক্ষ থেকে নিআমত দান করি, তখন সে বলে, এটা তো আমি পূর্বের জানা মতেই প্রাপ্ত হয়েছি। অথচ এটা এক পরীক্ষা, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বোঝে না। (সুরা জুমার : আয়াত ৪৯)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি উৎকণ্ঠা থেকে, মনোকষ্ট থেকে, অলসতা থেকে, কাপুরুষতা থেকে, কৃপণতা থেকে, ঋণগ্রস্ততা থেকে এবং মানুষের কর্তৃত্বাধীন হয়ে যাওয়া থেকে। (বুখারি)

মদ্যপান ও মাদকদ্রব্য সেবন জটিল ও প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টি করে তথা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ। যা আমাদেরকে অনেক ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে আত্মহননের দিকে ঠেলে দেয়।

আল্লাহ তাআলা হলেন আমাদের জীবনের মালিক এবং মানুষ হিসেবে আমদের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়াকে আল্লাহ তাআলা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা মাদক ও নেশাকে হারাম করেছেন।

হৃদরোগসহ সব রোগ থেকে প্রতিকারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ ব্যক্তিকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা দিতে এবং সবিশেষ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিতেন। হারাম বস্তু ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন।

হাদিসে এসেছে ‘আল্লাহ তায়ালা রোগও দিয়েছেন, রোগের প্রতিষেধকও দিয়েছেন। প্রত্যেক রোগের চিকিৎসা রয়েছে। সুতরাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর। তবে হারাম বস্তু দ্বারা চিকিৎসা নিয়ো না। হারাম বস্তুতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য আরোগ্য বা রোগমুক্তি রাখেননি।’

হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, ইসলামের দৃষ্টিতে চিকিৎসা গ্রহণ করা শুধু বৈধই নয় বরং তা গ্রহণ করাই কাম্য। যেসব কারণে মানুষ অসুস্থ হতে পারে, সেসব থেকে বেঁচে থাকার জোর তাগিদ দিয়েছে ইসলাম।

খাদ্য-পানীয় মানুষের রোগ-ব্যাধির অন্যতম কারণ। হাদিস শরিফে আছে, ‘পেট সকল রোগের কেন্দ্রস্থল।’

ইসলাম এ বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছে এবং অতিভোজন করতে নিরুৎসাহিত করেছে এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ বলেন- অর্থাৎ ‘তোমরা খাও ও পান কর এবং অপচয় কর না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আরাফ : আয়াত ৩১)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্য দ্বারা, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে’। (ইবনে মাজা)

খাদ্যদ্রব্য ঢেকে রাখা ও কিছু পান করার সময় তাতে ফুঁ না দেওয়া। কারণ এতে রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। অন্য হাদিসে আছে, ‘খবরদার! তোমরা পানিতে ফুঁ দিয়ো না।’ (তিরমিজি)

খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধৌত করার প্রতি ইসলামের নির্দেশ রয়েছে। কারণ হাতে বিষাক্ত জীবাণু থাকার কারণে রোগ সৃষ্টি হওয়ার আশংকা রয়েছে।

শরীরকে সুস্থ, সবল ও সতেজ রাখার জন্য শরীর চর্চামূলক খেলাধুলা, ব্যায়াম ও সাঁতার কাটা ইত্যাদির প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম ও বিশ্রাম সুস্বাস্থ্যের জন্য অতীব জরুরি।

ইসলামে অলসতাকে অত্যন্ত ঘৃণা করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি উৎকণ্ঠা, মনোকষ্ট, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণগ্রস্ততা এবং মানুষের কর্তৃত্বাধীন হয়ে যাওয়া থেকে।’ (বুখারি)

শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে মানুষের মানসিক সুস্থতাও জরুরি। কারণ মানসিক প্রশান্তি ও উৎফল্লতা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মানসিক উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতা দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। আল্লাহ বলেন- , ‘জেনে রাখ! আল্লাহ তায়ালার জিকির দ্বারা অন্তরসমূপ্রশান্ত হয়।’ (সূরা রাদ : আয়াত ২৮)

আমল-

কুরআনুল কারিমের আমলেও হৃদপিণ্ডের ব্যথা ও ব্যধি থেকে মুক্ত থাকা যায়। যারা নিয়মিত কুরআনের আমল করবে আল্লাহ তাআলা তাদের হৃদপিণ্ডের ব্যথাসহ যাবতীয় রোগ-ব্যধিগুলো দূর করে দেবেন।

দোয়াটি হলো-

উচ্চারণ: আল্লাজিনা আমানু ওয়া তাত্বমাইন্নু ক্বুলুবুহুম বিজিকরিল্লাহি আলা বিজিকরিল্লাহি তাত্বমাইন্নুল ক্বুলুবু।’ (সুরা রাদ : আয়াত ১৩)

আমল যে ব্যক্তি সুরা রাদের উল্লেখিত আয়াত নিয়মিত ৪১ বার পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার হার্ট বা হৃদপিণ্ডের ব্যথা ও রোগ-ব্যধি দূর করে দেবেন। আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী বেশি বেশি জিকির করাও জরুরি। সুতরাং আল্লাহর স্মরণ ও কুরআনের আমলই মানুষকে হার্ট বা হৃদপিণ্ডের যাবতীয় রোগ-ব্যধি ও ব্যথা থেকে মুক্ত রাখতে পারে।

পরিশেষে বলতে চাই, ইসলাম মানবতার কল্যাণ ও সফলতায় প্রয়োজনীয় সবই করেছে। যার প্রমাণ বহন করে কুরআন ও হাদিস। তাই সবার উচিত, সুস্থ হার্ট ও সুস্থ শরীরের জন্য কুরআনের বিধি-নিষেধগুলো বাস্তব জীবনে মেনে চলা।

ইসলামি অনুশাসনগুলোর ওপর গুরত্ব দেওয়া। তাই আমাদের উচিত প্রকৃত মুসলিম হিসবে ইসলাম প্রদত্ত স্বাস্থ্য নীতি মেনে সুন্দর জীবন যাপণে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্ঠা করা

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হৃদরোগ প্রতিরোধে কুরআন-হাদিসের নির্দেশনা

আপডেট টাইম : ০৬:৩৪:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

২৯ সেপ্টেম্বর ছিল বিশ্ব হার্ট দিবস। বিশ্বজুড়ে হৃদরোগ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশসহ বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়েছে। স্বাস্থ্যবিষয়ক দিনগুলোর মধ্যে অন্যতম দিন হলো- বিশ্ব হার্ট দিবস।

হৃদরোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের বৃহত্তম একটি দিন এটি। ২০২৪ সালে বিশ্ব হার্ট দিবসের থিম হল ‘অ্যাকশনের জন্য হার্ট ব্যবহার’। এই থিম বোঝায় হৃদপিন্ডকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত। হৃদয়ের যত্ন নেওয়া উচিত, যাতে পদক্ষেপ নিতে সক্ষম থাকে হৃদয়। হার্টের স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলছে এই থিমটি।

একবার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। কিন্তু হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে স্থানান্তর করতে পারলে আধুনিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে সুস্থ করা সম্ভব। কিন্তু পূর্বে হৃদরোগ শনাক্ত করা না গেলে অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা দেয়ার পূর্বেই রোগীর মৃত্যু ঘটে। তাই প্রতিরোধটাই সবচেয়ে জরুরি।

এ পরিস্থিতিতে রোগের ভয়াবহতা কমাতে উন্নত চিকিৎসার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, বাংলাদেশের মানুষও এই ঝুঁকিতে রয়েছে। উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও যুবকরা হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

সুস্থ–সবলভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেউ, কোনো সমস্যা নেই, একদিন হঠাৎ শোনা যায় তার ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়ে গেছে। সমস্যা হলো এমন ঘটনা ঘটে যাওয়ার আগে প্রায়ই কিছু জানা যায় না। এ রকম হার্ট অ্যাটাকের পরিণতি হয় সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু, নয়তো জীবনের সঙ্গে আপস করে কোনোমতে চলা। তাই হৃদ্‌রোগ হওয়ার আগেই সাবধান হতে হবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে হার্ট বা হৃদপিণ্ডের যাবতীয় রোগ-ব্যাধির চিকিৎসা-

মানবদেহে রোগের বিস্তার সম্পর্কে কুরআন, হাদিস ও বিজ্ঞানের ধারাসমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হার্ট আল্লাহ তায়ালার অনন্য দান।  হাদিসে এসেছে, আল্লাহর কাছে তোমরা সুস্বাস্থ্য প্রার্থনা কর, কারণ ইমানের পর সুস্বাস্থ্যের চেয়ে অধিক মঙ্গলজনক কোনো কিছু কাউকে দান করা হয়নি। (ইবনে মাজাহ)

সুতরাং নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন করে হার্টের সুস্থতাসহ সর্বপ্রকার রোগ-বালাই থেকে নিরাপদ থাকা জরুরি। হৃদরোগের যতগুলো কারণ রয়েছে, তার প্রতিটির ব্যাপারেই কুরআন ও হাদিসে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দশনা।

তার কিছু তুলে ধরা হলো-আল্লাহ বলেন- অর্থাৎ যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন। (সূরা শোয়ারা : আয়াত ৮০)

রোগাক্রান্ত বান্দাহকে আল্লাহ নিরাময় করবেন। এ কথা আল্লাহ কুরআনুল কারিমে বলেছেন। কিন্তু আল্লাহ মানুষের প্রতিটি রোগ ব্যধির নিয়ামক হিসেবে পৃথিবীতে প্রতিষেধক পাঠিয়েছেন। এবং অসংখ্য খাবার উপাদান পাঠিয়েছেন। এ উপাদান যদি মাত্রাতিরিক্ত আকারে কেউ গ্রহণ করে তখনই বাঁধে সমস্যা। তাই খাবার গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে হৃদরোগের প্রধান কারণ হচ্ছে- থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা, রক্তশূন্যতা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুঃশ্চিন্তা, যে কোনো ধরনের ভয়-ভীতি, অত্যধিক মদপান, নেশাজাতীয় বস্তু গ্রহণ, অতিরিক্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ মেডিসিন ব্যবহার এবং অনেক মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই হৃদরোগের কারণ।

একজন মানুষ যদি ইসলামি অনুশাসন মেনে নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন করে তবে সুস্থ থাকার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। জীবনের নানা প্রাঙ্গনে মানুষ হরহামেশাই নানা ধরনের হতাশা ও দুঃশিন্তায় ভুগে থাকে। যা মানুষের জন্য বড়ই ক্ষতির কারণ।

আল্লাহ বলেন- আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। (সূরা ইউসুফ : আয়াত ৮৭) আল্লাহ অন্যত্র বলেন- অর্থাৎ মানুষকে যখন দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে আমাকে ডাকতে শুরু করে, এরপর আমি যখন তাকে আমার পক্ষ থেকে নিআমত দান করি, তখন সে বলে, এটা তো আমি পূর্বের জানা মতেই প্রাপ্ত হয়েছি। অথচ এটা এক পরীক্ষা, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বোঝে না। (সুরা জুমার : আয়াত ৪৯)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি উৎকণ্ঠা থেকে, মনোকষ্ট থেকে, অলসতা থেকে, কাপুরুষতা থেকে, কৃপণতা থেকে, ঋণগ্রস্ততা থেকে এবং মানুষের কর্তৃত্বাধীন হয়ে যাওয়া থেকে। (বুখারি)

মদ্যপান ও মাদকদ্রব্য সেবন জটিল ও প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টি করে তথা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ। যা আমাদেরকে অনেক ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে আত্মহননের দিকে ঠেলে দেয়।

আল্লাহ তাআলা হলেন আমাদের জীবনের মালিক এবং মানুষ হিসেবে আমদের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়াকে আল্লাহ তাআলা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা মাদক ও নেশাকে হারাম করেছেন।

হৃদরোগসহ সব রোগ থেকে প্রতিকারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ ব্যক্তিকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা দিতে এবং সবিশেষ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিতেন। হারাম বস্তু ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন।

হাদিসে এসেছে ‘আল্লাহ তায়ালা রোগও দিয়েছেন, রোগের প্রতিষেধকও দিয়েছেন। প্রত্যেক রোগের চিকিৎসা রয়েছে। সুতরাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর। তবে হারাম বস্তু দ্বারা চিকিৎসা নিয়ো না। হারাম বস্তুতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য আরোগ্য বা রোগমুক্তি রাখেননি।’

হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, ইসলামের দৃষ্টিতে চিকিৎসা গ্রহণ করা শুধু বৈধই নয় বরং তা গ্রহণ করাই কাম্য। যেসব কারণে মানুষ অসুস্থ হতে পারে, সেসব থেকে বেঁচে থাকার জোর তাগিদ দিয়েছে ইসলাম।

খাদ্য-পানীয় মানুষের রোগ-ব্যাধির অন্যতম কারণ। হাদিস শরিফে আছে, ‘পেট সকল রোগের কেন্দ্রস্থল।’

ইসলাম এ বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছে এবং অতিভোজন করতে নিরুৎসাহিত করেছে এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ বলেন- অর্থাৎ ‘তোমরা খাও ও পান কর এবং অপচয় কর না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আরাফ : আয়াত ৩১)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্য দ্বারা, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে’। (ইবনে মাজা)

খাদ্যদ্রব্য ঢেকে রাখা ও কিছু পান করার সময় তাতে ফুঁ না দেওয়া। কারণ এতে রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। অন্য হাদিসে আছে, ‘খবরদার! তোমরা পানিতে ফুঁ দিয়ো না।’ (তিরমিজি)

খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধৌত করার প্রতি ইসলামের নির্দেশ রয়েছে। কারণ হাতে বিষাক্ত জীবাণু থাকার কারণে রোগ সৃষ্টি হওয়ার আশংকা রয়েছে।

শরীরকে সুস্থ, সবল ও সতেজ রাখার জন্য শরীর চর্চামূলক খেলাধুলা, ব্যায়াম ও সাঁতার কাটা ইত্যাদির প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম ও বিশ্রাম সুস্বাস্থ্যের জন্য অতীব জরুরি।

ইসলামে অলসতাকে অত্যন্ত ঘৃণা করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি উৎকণ্ঠা, মনোকষ্ট, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণগ্রস্ততা এবং মানুষের কর্তৃত্বাধীন হয়ে যাওয়া থেকে।’ (বুখারি)

শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে মানুষের মানসিক সুস্থতাও জরুরি। কারণ মানসিক প্রশান্তি ও উৎফল্লতা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মানসিক উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতা দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। আল্লাহ বলেন- , ‘জেনে রাখ! আল্লাহ তায়ালার জিকির দ্বারা অন্তরসমূপ্রশান্ত হয়।’ (সূরা রাদ : আয়াত ২৮)

আমল-

কুরআনুল কারিমের আমলেও হৃদপিণ্ডের ব্যথা ও ব্যধি থেকে মুক্ত থাকা যায়। যারা নিয়মিত কুরআনের আমল করবে আল্লাহ তাআলা তাদের হৃদপিণ্ডের ব্যথাসহ যাবতীয় রোগ-ব্যধিগুলো দূর করে দেবেন।

দোয়াটি হলো-

উচ্চারণ: আল্লাজিনা আমানু ওয়া তাত্বমাইন্নু ক্বুলুবুহুম বিজিকরিল্লাহি আলা বিজিকরিল্লাহি তাত্বমাইন্নুল ক্বুলুবু।’ (সুরা রাদ : আয়াত ১৩)

আমল যে ব্যক্তি সুরা রাদের উল্লেখিত আয়াত নিয়মিত ৪১ বার পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার হার্ট বা হৃদপিণ্ডের ব্যথা ও রোগ-ব্যধি দূর করে দেবেন। আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী বেশি বেশি জিকির করাও জরুরি। সুতরাং আল্লাহর স্মরণ ও কুরআনের আমলই মানুষকে হার্ট বা হৃদপিণ্ডের যাবতীয় রোগ-ব্যধি ও ব্যথা থেকে মুক্ত রাখতে পারে।

পরিশেষে বলতে চাই, ইসলাম মানবতার কল্যাণ ও সফলতায় প্রয়োজনীয় সবই করেছে। যার প্রমাণ বহন করে কুরআন ও হাদিস। তাই সবার উচিত, সুস্থ হার্ট ও সুস্থ শরীরের জন্য কুরআনের বিধি-নিষেধগুলো বাস্তব জীবনে মেনে চলা।

ইসলামি অনুশাসনগুলোর ওপর গুরত্ব দেওয়া। তাই আমাদের উচিত প্রকৃত মুসলিম হিসবে ইসলাম প্রদত্ত স্বাস্থ্য নীতি মেনে সুন্দর জীবন যাপণে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্ঠা করা