ঢাকা ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতিসংঘে ‘নতুন বাংলাদেশ’কে উপস্থাপন করবেন ড. ইউনূস

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৭:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ২ বার

১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে স্বাধীন বাংলাদেশ ১৩৬তম সদস্য রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি পায়। ২৫ সেপ্টেম্বর সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেন শেখ মুজিবুর রহমান। এ বছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার ৫০ বছর পূর্তি।

সদস্যপদ প্রাপ্তির পর থেকে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় তার ভূমিকা রেখে চলেছে এবং জাতিসংঘের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক এবং নিরাপত্তাবিষয়ক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।

এবার সরকারপ্রধান হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেবেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরই মধ্যে নিউইয়র্কের পথে রয়েছেন তিনি। চেনা পরিবেশে নতুন পরিচয়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন তিনি। বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন নতুন বাংলাদেশকে।

ভিন্নমাত্রা যোগ করবে ড. ইউনূসের উপস্থিতি

ড. ইউনূস এমন সময় জাতিসংঘের এই অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন, যার মাত্র দেড় মাস আগে বাংলাদেশে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসন ক্ষমতাকে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে হটিয়ে এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনা করছে বাংলাদেশ। ফলে এবারের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য একটা ভিন্ন পরিস্থিতিতে হচ্ছে

মানবাধিকার ও গণতন্ত্র ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা অনেক দেশের সাথে বাংলাদেশের একপ্রকার টানাপড়েন তৈরি হয়েছিল। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশের পরিস্থিতির কড়া সমালোচনা করে আসছিল। ফলে, এই সম্মেলনকে বাংলাদেশের জন্য ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি প্রেক্ষাপট হিসাবে বিশ্লেষকদের অনেকেই দেখছেন। এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনও।

এবারের অধিবেশন দেশের জন্য ‘বিশ্বসভায় নতুন পদচারণা’ এবং বিশ্ব দরবারে নতুনভাবে বাংলাদেশকে তুলে ধরার ‘বিশাল সুযোগ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ায় এবারের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন এই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বাংলাদেশ একটি উচ্চ পর্যায়ের রিসেপশন আয়োজন করেছে। এতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদলের প্রধান, জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তা, কিছু সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এবারের অধিবেশনে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপট, এই মুহূর্তে কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন, ভবিষ্যতে তারা কী করতে চান, এ বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরা এবং তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আহ্বান জানানো’—এ বিষয়গুলো দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ড. ইউনূসের মতো ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া এবং বাংলাদেশের হয়ে কথা বলাটা একটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পর আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে শুভেচ্ছা পেয়েছেন। বিশ্বপরিসরে খ্যাতির কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি বাংলাদেশের জন্য একটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারবেন বলে বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন।

একই সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের জায়গা, বিভিন্ন সংস্কারের কৌশলগত বা টেকনিক্যাল দিকে সাপোর্ট, বিদেশে টাকা পাচার, অত্যাচার-নির্যাতন নিয়ে চলমান তদন্ত, এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতার পথও সুগম হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ৫০ বছর পর এই প্রথম বাংলাদেশের কোনও সরকারপ্রধানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বৈঠক করতে যাচ্ছেন এবারের অধিবেশনকে কেন্দ্র করে। তাই এই বৈঠক অনেক সম্মানের বাংলাদেশের জন্য।

৫০ বছর অনেক দীর্ঘ সময়। এ সময়ের ভেতর বাংলাদেশের কোনও রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক হয়নি কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্টের। তবে, সব ঠিক থাকলে নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় ২৪ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে বসছেন। এ বৈঠক হবে দ্বিপক্ষীয়।

৫০ বছরে জাতিসংঘে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জন

জাতিসংঘে সদস্যপদ লাভের এক বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সাধারণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হয় এবং ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৮১ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত দুইবার অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ অর্থাৎ ইকোসক’র সদস্য হিসেবে কাজ করে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী ১৯৮৬—৮৭ মেয়াদে সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসাবে দুইবার নির্বাচিত হয়।

বাংলাদেশ জাতিসংঘের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রধান সম্মেলনগুলোতে বরাবরই অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের উদ্যোগে গৃহীত অনেকগুলো আন্তর্জাতিক চুক্তি ও মানবাাধিকার সনদেও স্বাক্ষরদাতা ও অনুসমর্থনকারী দেশ। ১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতিসংঘ পরিচালিত ৪৫টি শান্তিরক্ষা মিশন কার্যক্রমের মাধ্যমে ২৫টি রাষ্ট্রে ৮৩ হাজার শান্তিরক্ষী পাঠানোর মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে জাতিসংঘের বিভিন্ন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে লক্ষণীয়। জাতিসংঘের ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়।

জাতিসংঘে সদস্যপদ লাভের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন। সেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ গঠন করা হয়েছিল ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে। জাতিসংঘের প্রধান নীতিনির্ধারণী অংশ এই পরিষদ।

প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সারা বিশ্বের জাতিসংঘের সদস্য সব দেশের নেতারা বৈঠকে বসেন এবং বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশগুলোর মাঝে ভোটাভুটিও হয়।

যেমন, এবারের অধিবেশনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ফিলিস্তিন। জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য না হয়েও এবারে অধিবেশনে অংশ নিয়েছে ফিলিস্তিন মিশন। এ বছর মে মাসে সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে পূর্ণাঙ্গ সদস্য করতে পক্ষে ভোট দিয়েছিল ১৪৩টি দেশ।

এবারের অধিবেশনে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের যুদ্ধ এবং দখলদারিত্ব বন্ধ নিয়েও ভোট হয়েছে। সেখানে ১৯৩টির মধ্যে ১২৪টি দেশ পক্ষে, ১৪টি বিপক্ষে ভোট দিয়েছে, ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল ৪৩টি দেশ।

এই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের মধ্য দিয়ে আগামী এক বছরের মধ্যে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বেআইনি দখলদারিত্ব বন্ধে প্রস্তাব পাস হয়েছে।

পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমে বিশ্বের সার্বিক উন্নয়ন ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা জাতিসংঘের মূল লক্ষ্য। এমন উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচালিত হয় বার্ষিক অধিবেশন।

এবারের অধিবেশন শুরু হয়ে গেছে ১০ সেপ্টেম্বরে। এ অধিবেশনে সংঘাত নিরসন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য করাসহ ভবিষ্যৎ-কেন্দ্রিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সংস্থাটির একমাত্র শাখা, যেখানে ১৯৩টি সদস্য দেশের সবাই প্রতিনিধিত্ব করার এবং সভায় বক্তব্য রাখার সুযোগ পায়। সভার বাইরে নেতাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক সাধারণত বেশি গুরুত্ব বহন করে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জাতিসংঘে ‘নতুন বাংলাদেশ’কে উপস্থাপন করবেন ড. ইউনূস

আপডেট টাইম : ১২:০৭:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে স্বাধীন বাংলাদেশ ১৩৬তম সদস্য রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি পায়। ২৫ সেপ্টেম্বর সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেন শেখ মুজিবুর রহমান। এ বছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার ৫০ বছর পূর্তি।

সদস্যপদ প্রাপ্তির পর থেকে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় তার ভূমিকা রেখে চলেছে এবং জাতিসংঘের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক এবং নিরাপত্তাবিষয়ক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।

এবার সরকারপ্রধান হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেবেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরই মধ্যে নিউইয়র্কের পথে রয়েছেন তিনি। চেনা পরিবেশে নতুন পরিচয়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন তিনি। বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন নতুন বাংলাদেশকে।

ভিন্নমাত্রা যোগ করবে ড. ইউনূসের উপস্থিতি

ড. ইউনূস এমন সময় জাতিসংঘের এই অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন, যার মাত্র দেড় মাস আগে বাংলাদেশে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসন ক্ষমতাকে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে হটিয়ে এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনা করছে বাংলাদেশ। ফলে এবারের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য একটা ভিন্ন পরিস্থিতিতে হচ্ছে

মানবাধিকার ও গণতন্ত্র ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা অনেক দেশের সাথে বাংলাদেশের একপ্রকার টানাপড়েন তৈরি হয়েছিল। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশের পরিস্থিতির কড়া সমালোচনা করে আসছিল। ফলে, এই সম্মেলনকে বাংলাদেশের জন্য ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি প্রেক্ষাপট হিসাবে বিশ্লেষকদের অনেকেই দেখছেন। এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনও।

এবারের অধিবেশন দেশের জন্য ‘বিশ্বসভায় নতুন পদচারণা’ এবং বিশ্ব দরবারে নতুনভাবে বাংলাদেশকে তুলে ধরার ‘বিশাল সুযোগ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ায় এবারের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন এই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বাংলাদেশ একটি উচ্চ পর্যায়ের রিসেপশন আয়োজন করেছে। এতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদলের প্রধান, জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তা, কিছু সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এবারের অধিবেশনে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপট, এই মুহূর্তে কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন, ভবিষ্যতে তারা কী করতে চান, এ বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরা এবং তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আহ্বান জানানো’—এ বিষয়গুলো দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ড. ইউনূসের মতো ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া এবং বাংলাদেশের হয়ে কথা বলাটা একটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পর আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে শুভেচ্ছা পেয়েছেন। বিশ্বপরিসরে খ্যাতির কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি বাংলাদেশের জন্য একটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারবেন বলে বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন।

একই সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের জায়গা, বিভিন্ন সংস্কারের কৌশলগত বা টেকনিক্যাল দিকে সাপোর্ট, বিদেশে টাকা পাচার, অত্যাচার-নির্যাতন নিয়ে চলমান তদন্ত, এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতার পথও সুগম হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ৫০ বছর পর এই প্রথম বাংলাদেশের কোনও সরকারপ্রধানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বৈঠক করতে যাচ্ছেন এবারের অধিবেশনকে কেন্দ্র করে। তাই এই বৈঠক অনেক সম্মানের বাংলাদেশের জন্য।

৫০ বছর অনেক দীর্ঘ সময়। এ সময়ের ভেতর বাংলাদেশের কোনও রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক হয়নি কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্টের। তবে, সব ঠিক থাকলে নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় ২৪ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে বসছেন। এ বৈঠক হবে দ্বিপক্ষীয়।

৫০ বছরে জাতিসংঘে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জন

জাতিসংঘে সদস্যপদ লাভের এক বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সাধারণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হয় এবং ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৮১ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত দুইবার অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ অর্থাৎ ইকোসক’র সদস্য হিসেবে কাজ করে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী ১৯৮৬—৮৭ মেয়াদে সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসাবে দুইবার নির্বাচিত হয়।

বাংলাদেশ জাতিসংঘের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রধান সম্মেলনগুলোতে বরাবরই অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের উদ্যোগে গৃহীত অনেকগুলো আন্তর্জাতিক চুক্তি ও মানবাাধিকার সনদেও স্বাক্ষরদাতা ও অনুসমর্থনকারী দেশ। ১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতিসংঘ পরিচালিত ৪৫টি শান্তিরক্ষা মিশন কার্যক্রমের মাধ্যমে ২৫টি রাষ্ট্রে ৮৩ হাজার শান্তিরক্ষী পাঠানোর মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে জাতিসংঘের বিভিন্ন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে লক্ষণীয়। জাতিসংঘের ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়।

জাতিসংঘে সদস্যপদ লাভের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন। সেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ গঠন করা হয়েছিল ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে। জাতিসংঘের প্রধান নীতিনির্ধারণী অংশ এই পরিষদ।

প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সারা বিশ্বের জাতিসংঘের সদস্য সব দেশের নেতারা বৈঠকে বসেন এবং বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশগুলোর মাঝে ভোটাভুটিও হয়।

যেমন, এবারের অধিবেশনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ফিলিস্তিন। জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য না হয়েও এবারে অধিবেশনে অংশ নিয়েছে ফিলিস্তিন মিশন। এ বছর মে মাসে সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে পূর্ণাঙ্গ সদস্য করতে পক্ষে ভোট দিয়েছিল ১৪৩টি দেশ।

এবারের অধিবেশনে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের যুদ্ধ এবং দখলদারিত্ব বন্ধ নিয়েও ভোট হয়েছে। সেখানে ১৯৩টির মধ্যে ১২৪টি দেশ পক্ষে, ১৪টি বিপক্ষে ভোট দিয়েছে, ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল ৪৩টি দেশ।

এই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের মধ্য দিয়ে আগামী এক বছরের মধ্যে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বেআইনি দখলদারিত্ব বন্ধে প্রস্তাব পাস হয়েছে।

পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমে বিশ্বের সার্বিক উন্নয়ন ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা জাতিসংঘের মূল লক্ষ্য। এমন উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচালিত হয় বার্ষিক অধিবেশন।

এবারের অধিবেশন শুরু হয়ে গেছে ১০ সেপ্টেম্বরে। এ অধিবেশনে সংঘাত নিরসন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য করাসহ ভবিষ্যৎ-কেন্দ্রিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সংস্থাটির একমাত্র শাখা, যেখানে ১৯৩টি সদস্য দেশের সবাই প্রতিনিধিত্ব করার এবং সভায় বক্তব্য রাখার সুযোগ পায়। সভার বাইরে নেতাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক সাধারণত বেশি গুরুত্ব বহন করে।