ঢাকা ০৯:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উচ্চফলনশীল সয়াবিনের নতুন জাত উদ্ভাবন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:০৯:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৪৫ বার

জলাবদ্ধতা সহনশীল, স্বল্পজীবনকাল ও দেশের সবচেয়ে বড় দানা বিশিষ্ট উচ্চফলনশীল সয়াবিনের নতুন একটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। জাতটির নামকরণ করা হয়েছে বিইউ সয়াবিন-৫। জাতটি উদ্ভাবন করেছে গাজীপুরস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল। সম্প্রতি জাতটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগে নিবন্ধন করা হয়েছে।

নতুন জাতের সয়াবিনের অনুমোদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) গিয়াস উদ্দিন মিয়া।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি) কর্তৃক বিইউ সয়াবিন-৫ নামে সম্প্রতি সয়াবিনের একটি জলাবদ্ধতা সহনশীল, স্বল্পজীবনকাল ও দেশের সবচেয়ে বড় দানা বিশিষ্ট উচ্চফলনশীল সয়াবিনের একটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। তাইওয়ানের Asian Vegetable Research and Development Center (AVRDC/ World Vegetable Center), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং দেশের নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর এলাকা থেকে প্রায় ২০০ জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে ২০০৬ সাল থেকেই বিভিন্ন আঙ্গিকে সয়াবিন নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে বশেমুরকৃবি এর কৃষিতত্ত্ব বিভাগ। এ পর্যন্ত সয়াবিন উৎপাদনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য ৬ জন পিএইচ ডি ও আঠার জন ছাত্র-ছাত্রী এম.এস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায়শই সয়াবিনের পরিপক্বতার প্রারম্ভেই সাইক্লোনের জন্য আকস্মিক অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়। ফলে পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় এবং সয়াবিনের প্রভূত ক্ষতিসাধন করে। উপকূলীয় অঞ্চলের সয়াবিন চাষিদের দীর্ঘদিন যাবত স্বল্পজীবনকাল ও জলাবদ্ধতা সহনশীল জাতের চাহিদা ছিল। তার প্রেক্ষিতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে দীর্ঘদিন যাবত গবেষণা করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, জার্মপ্লাজমটি উচ্চ ফলনের পাশাপাশি সাতদিন যাবত জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে।

জাতটি উদ্ভাবন টিমের প্রধান প্রফেসর আব্দুল করিম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা শেষ করে কৃষক পর্যায়ে জাতটির সঠিকতা যাচাই করার জন্য নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জাতটির মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সম্পৃক্ত করে রবি ও খরিফ দুই মৌসুমেই চাষ করা হয়। কৃষক ও গবেষকদের মতামতের ভিত্তিতে জার্মপ্লাজমটি বিইউ সয়াবিন-৫ নামে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগে নিবন্ধন করা হয়। বিভিন্ন উপজেলায় জাতটির ফলন পাওয়া গিয়েছে ৩ দশমিক ৫ মেট্রিকটন। দেশের অন্যান্য জাতের জীবনকাল যেখানে ১০০-১১০ দিন সেখানে বিইউ সয়াবিন-৫ মৌসুম ভেদে ৭৫-৮৫ দিনেই পরিপক্ব হয়। ফলে সয়াবিনের ফল পাকার আগে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে আকস্মিক জলাবদ্ধতা থেকে জাতটি রক্ষা পাবে। বিইউ সয়াবিন-৫ এর ১০০০-বীজের ওজন ২৮৫ গ্রাম, যা বাংলাদেশের বিদ্যমান যে কোনো জাতের চেয়ে বেশী। জাতটির প্রোটিনের পরিমাণ ৩৮ ভাগ এবং তেল ২০ ভাগ। বাংলাদেশে এখনও পশু ও মাছের খাদ্য হিসেবেই মূলত সয়াবিন ব্যবহৃত হয়। তবে ইদানিং বিভিন্ন স্নাকস, সয়ামিট বল ও সয়ামিল্ক হিসেবে এর ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি গিয়াস উদ্দিন মিয়া জানান, বশেমুরকৃবি থেকে উদ্ভাবিত প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর উপযোগী সয়াবিনের জাতগুলি প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। তাছাড়া জাতগুলোর বীজের আকার দেশের প্রচলিত জাতের তুলনায় অনেক বড় ও জীবনকাল কম ও প্রোটিনের পরিমাণও বেশি। প্রোটিনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হওয়ায় দেশের পশু ও মাছের খাবারের উপকরণ হিসাবেও জাতগুলোর ব্যাপক চাহিদা আছে। উপকূলীয় অঞ্চলে সাইক্লোনের কারণে হঠাৎ জলাবদ্ধ সৃষ্টি হলে জমিতে সয়াবিনের উৎপাদন বৃদ্ধিতে নতুন জাত বিইউ সয়াবিন-৫ বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

উচ্চফলনশীল সয়াবিনের নতুন জাত উদ্ভাবন

আপডেট টাইম : ০৪:০৯:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জলাবদ্ধতা সহনশীল, স্বল্পজীবনকাল ও দেশের সবচেয়ে বড় দানা বিশিষ্ট উচ্চফলনশীল সয়াবিনের নতুন একটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। জাতটির নামকরণ করা হয়েছে বিইউ সয়াবিন-৫। জাতটি উদ্ভাবন করেছে গাজীপুরস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল। সম্প্রতি জাতটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগে নিবন্ধন করা হয়েছে।

নতুন জাতের সয়াবিনের অনুমোদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) গিয়াস উদ্দিন মিয়া।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি) কর্তৃক বিইউ সয়াবিন-৫ নামে সম্প্রতি সয়াবিনের একটি জলাবদ্ধতা সহনশীল, স্বল্পজীবনকাল ও দেশের সবচেয়ে বড় দানা বিশিষ্ট উচ্চফলনশীল সয়াবিনের একটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। তাইওয়ানের Asian Vegetable Research and Development Center (AVRDC/ World Vegetable Center), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং দেশের নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর এলাকা থেকে প্রায় ২০০ জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে ২০০৬ সাল থেকেই বিভিন্ন আঙ্গিকে সয়াবিন নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে বশেমুরকৃবি এর কৃষিতত্ত্ব বিভাগ। এ পর্যন্ত সয়াবিন উৎপাদনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য ৬ জন পিএইচ ডি ও আঠার জন ছাত্র-ছাত্রী এম.এস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায়শই সয়াবিনের পরিপক্বতার প্রারম্ভেই সাইক্লোনের জন্য আকস্মিক অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়। ফলে পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় এবং সয়াবিনের প্রভূত ক্ষতিসাধন করে। উপকূলীয় অঞ্চলের সয়াবিন চাষিদের দীর্ঘদিন যাবত স্বল্পজীবনকাল ও জলাবদ্ধতা সহনশীল জাতের চাহিদা ছিল। তার প্রেক্ষিতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে দীর্ঘদিন যাবত গবেষণা করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, জার্মপ্লাজমটি উচ্চ ফলনের পাশাপাশি সাতদিন যাবত জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে।

জাতটি উদ্ভাবন টিমের প্রধান প্রফেসর আব্দুল করিম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা শেষ করে কৃষক পর্যায়ে জাতটির সঠিকতা যাচাই করার জন্য নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জাতটির মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সম্পৃক্ত করে রবি ও খরিফ দুই মৌসুমেই চাষ করা হয়। কৃষক ও গবেষকদের মতামতের ভিত্তিতে জার্মপ্লাজমটি বিইউ সয়াবিন-৫ নামে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগে নিবন্ধন করা হয়। বিভিন্ন উপজেলায় জাতটির ফলন পাওয়া গিয়েছে ৩ দশমিক ৫ মেট্রিকটন। দেশের অন্যান্য জাতের জীবনকাল যেখানে ১০০-১১০ দিন সেখানে বিইউ সয়াবিন-৫ মৌসুম ভেদে ৭৫-৮৫ দিনেই পরিপক্ব হয়। ফলে সয়াবিনের ফল পাকার আগে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে আকস্মিক জলাবদ্ধতা থেকে জাতটি রক্ষা পাবে। বিইউ সয়াবিন-৫ এর ১০০০-বীজের ওজন ২৮৫ গ্রাম, যা বাংলাদেশের বিদ্যমান যে কোনো জাতের চেয়ে বেশী। জাতটির প্রোটিনের পরিমাণ ৩৮ ভাগ এবং তেল ২০ ভাগ। বাংলাদেশে এখনও পশু ও মাছের খাদ্য হিসেবেই মূলত সয়াবিন ব্যবহৃত হয়। তবে ইদানিং বিভিন্ন স্নাকস, সয়ামিট বল ও সয়ামিল্ক হিসেবে এর ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি গিয়াস উদ্দিন মিয়া জানান, বশেমুরকৃবি থেকে উদ্ভাবিত প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর উপযোগী সয়াবিনের জাতগুলি প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। তাছাড়া জাতগুলোর বীজের আকার দেশের প্রচলিত জাতের তুলনায় অনেক বড় ও জীবনকাল কম ও প্রোটিনের পরিমাণও বেশি। প্রোটিনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হওয়ায় দেশের পশু ও মাছের খাবারের উপকরণ হিসাবেও জাতগুলোর ব্যাপক চাহিদা আছে। উপকূলীয় অঞ্চলে সাইক্লোনের কারণে হঠাৎ জলাবদ্ধ সৃষ্টি হলে জমিতে সয়াবিনের উৎপাদন বৃদ্ধিতে নতুন জাত বিইউ সয়াবিন-৫ বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।