ঢাকা ০৫:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোয়াখালীতে পানিবন্দি ২০ লাখ মানুষ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫০:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪
  • ৩১ বার

কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নোয়াখালীর মাইজদীতে হাঁটুপানি জমেছে। জেলার ৯টি উপজেলার সবকটিতেই বসতঘর, গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়ছে ২০ লাখ মানুষ। চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা বন্যা কবলি হয়ে পড়েছে। এসব জায়গায় ডুবে গেছে আমন ধানের বীজতলা, শাক-সবজি খেত। মাঠে পানি বেশি থাকায় অনেক এলাকার কৃষক আমন ধান লাগাতে পারছেন না। ডুবে গেছে সড়ক, বাসাবাড়িতেও ঢুকছে পানি। পানি বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষসহ মৎস্যচাষিরা। ইতোমধ্যেই বেশকিছু মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে।

বড় বড় মাছের ঘেরে জাল দিয়ে মাছ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন মৎষ্যচাষিরা। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার মেঘনা নদীসংলগ্ন উত্তর চরবংশি ও চরআবাবিল ইউপির ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠায় স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আগের ভাঙন স্থান দিয়ে পানি ঢুকে তৃতীয় দফায় পরশুরাম উপজেলায় ৫৫টি গ্রাম ও ফুলগাজী উপজেলায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কের কবাখালি এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় সাজেকের সঙ্গে সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মৌলভীবাজার জেলার ৪টি নদ-নদীতে বিপৎসীমার উপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

নোয়াখালী ও কোম্পানীগঞ্জ: নোয়াখালীর পানিবন্দি মানুষ খাল উদ্ধার ও পানি নিষ্কাশনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন। জেলার সদর, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর উপজেলার বেশিরভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন এসব উপজেলার বাসিন্দারা।

আবহাওয়া অফিস বলছে, সোমবার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দিনেও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। জেলার সদর উপজেলার পশ্চিম চর উরিয়ার বাসিন্দা রেজাউল হক বলেন, টানা কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে বাড়ির চারপাশে পানি ওঠে গেছে। ডুবে গেছে চলাচলের রাস্তা। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন বলেন, রাস্তাঘাট ডুবে এখন মানুষের বসতঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। মাছের ঘেরসহ সব ভেসে গেছে। কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা রুবেল বলেন, হাঁটুপানি দিয়ে আমাদের চলাফেরা করতে হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল বলেন, নোয়াখালীতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। যা বিগত ২০ বছরেও হয়নি।

রায়পুর ও কমলনগর (লক্ষ্মীপুর): লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনা নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১০ ফুট বেশি জোয়ারে নদী এলাকা থেকে ৪ কিলোমিটার দূরের লোকালয় পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে। মেঘনা নদীসংলগ্ন বেড়িবাঁধের পাশে জোয়ার ও ৫ দিনের টানা বৃষ্টির কারণে পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অন্তত ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এতে চরাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠদান বন্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ফেনী: পরশুরাম পৌরসভা ও তিনটি ইউনিয়নের ৫৫টি গ্রাম এবং ফুলগাজী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামসহ অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর পানি পরশুরাম ও ফুলগাজী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চলতি বছরের ১ জুলাই প্রথম দফা ও ২ আগস্ট দ্বিতীয় দফা মুহুরী-কুহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকে দুই উপজেলার শত শত গ্রাম প্লাবিত হয়।

কমলনগরে পচে গেছে ৯৭৬ হেক্টর জমির আমন ধানের বীজতলা। বীজ সংকটের কারণে নতুন বীজতলাও তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না।

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর): চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকা ও গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মাছের ঘের, জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বসতবাড়ি, কৃষি আবাদ, পোলট্রি খামার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত হয়েছে। গাছপালা ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ।

মীরসরাই (চট্টগ্রাম): পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন মীরসরাইয়ের সহস্রাধিক পরিবার। বৃষ্টির পানি জমে ঘরবাড়ি ভাঙনের ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা। উপজেলার খৈয়াছড়া, মীরসরাই, মঘাদিয়া, মিঠানালা, করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মীরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, কাটাছরা, দুর্গাপুর, ওসমানপুর ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

নাঙ্গলকোট ও চান্দিনা (কুমিল্লা): তলিয়ে গেছে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের অনেক রাস্তাঘাট। পৌর সদরসহ গ্রামগঞ্জে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চল, নদী অঞ্চল, স্কুল, মাদ্রাসা ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ঘরে ঢুকে পড়েছে পানি। চান্দিনা উপজেলা সদরের ৩টি খেলার মাঠ পানিতে ডুবে গেছে।

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পুরো জেলায় অন্তত ৫০টির বেশি গ্রামে পানি উঠেছে। গত দুই মাসের ব্যবধানে তিনবার পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন শহরতলী ও পৌর এলাকার নদী পাড়ে বসবাসকারী লোকজন। এসব এলাকার বাসিন্দারা স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মেরুং ইউনিয়ন। খাগড়াছড়ি-লংগদু সড়কের মেরুং হেডকোর্য়ার্টার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় রাঙামাটির লংগদুর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

রাঙামাটি: জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সড়কে ধস হওয়ায় সাময়িকভাবে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। রাঙামাটি শহরের পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। পাহাড়ের ঢালে ও পাদদেশে বসবাসকারী ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে নিরাপদ স্থানে বা আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে শহরে মাইকিং করে সতর্কবার্তা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

রাঙামাটিতে টানা ৫ দিন ধরে থেমে থেমে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে শহরসহ জেলায় পাহাড় ধস ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ভোলা: ভোলায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। মঙ্গলবার সকালে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তেমন ছিল না। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। এদিকে মেঘনা নদীতে পানির চাপ বাড়ায় উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে। জোয়ারে ডুবে গেছে ফেরিঘাট।

মৌলভীবাজার, কমলগঞ্জ ও বড়লেখা: জেলার কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও জুড়ী নদে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সাগরের লঘু চাপের প্রভাব ও ভারতের অতি বৃষ্টির ঢলে পানি বেড়েছে। এদিকে, শরৎ মৌসুমে আরেক ধাপে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী পারের সাধারণ মানুষ আবারও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। জেলার মনু, ধলাই ও জুড়ী নদে পানি বেড়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু নদের রেলওয়ে ব্রিজে বিপদসীমার ১৫ সেমি., চাঁদনীঘাটে ১৩ সেমি., জুড়ী নদে ১৫১ সেমি. ও ধলাই নদে বিপৎসীমার ৩৩ সেমি. উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।  ধলাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৩টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রাবিহত হচ্ছে। এতে সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ): পানিতে তলিয়ে গেছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ২০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল ও রাস্তাঘাট। খোয়াই নদীর পানি বাল্লা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া খোয়াই ও করাঙ্গী নদীর পানি উপচে বন্যা প্লাবিত হয়েছে অনেক গ্রাম।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

নোয়াখালীতে পানিবন্দি ২০ লাখ মানুষ

আপডেট টাইম : ১০:৫০:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪

কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নোয়াখালীর মাইজদীতে হাঁটুপানি জমেছে। জেলার ৯টি উপজেলার সবকটিতেই বসতঘর, গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়ছে ২০ লাখ মানুষ। চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা বন্যা কবলি হয়ে পড়েছে। এসব জায়গায় ডুবে গেছে আমন ধানের বীজতলা, শাক-সবজি খেত। মাঠে পানি বেশি থাকায় অনেক এলাকার কৃষক আমন ধান লাগাতে পারছেন না। ডুবে গেছে সড়ক, বাসাবাড়িতেও ঢুকছে পানি। পানি বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষসহ মৎস্যচাষিরা। ইতোমধ্যেই বেশকিছু মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে।

বড় বড় মাছের ঘেরে জাল দিয়ে মাছ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন মৎষ্যচাষিরা। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার মেঘনা নদীসংলগ্ন উত্তর চরবংশি ও চরআবাবিল ইউপির ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠায় স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আগের ভাঙন স্থান দিয়ে পানি ঢুকে তৃতীয় দফায় পরশুরাম উপজেলায় ৫৫টি গ্রাম ও ফুলগাজী উপজেলায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কের কবাখালি এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় সাজেকের সঙ্গে সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মৌলভীবাজার জেলার ৪টি নদ-নদীতে বিপৎসীমার উপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

নোয়াখালী ও কোম্পানীগঞ্জ: নোয়াখালীর পানিবন্দি মানুষ খাল উদ্ধার ও পানি নিষ্কাশনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন। জেলার সদর, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর উপজেলার বেশিরভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন এসব উপজেলার বাসিন্দারা।

আবহাওয়া অফিস বলছে, সোমবার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দিনেও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। জেলার সদর উপজেলার পশ্চিম চর উরিয়ার বাসিন্দা রেজাউল হক বলেন, টানা কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে বাড়ির চারপাশে পানি ওঠে গেছে। ডুবে গেছে চলাচলের রাস্তা। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন বলেন, রাস্তাঘাট ডুবে এখন মানুষের বসতঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। মাছের ঘেরসহ সব ভেসে গেছে। কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা রুবেল বলেন, হাঁটুপানি দিয়ে আমাদের চলাফেরা করতে হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল বলেন, নোয়াখালীতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। যা বিগত ২০ বছরেও হয়নি।

রায়পুর ও কমলনগর (লক্ষ্মীপুর): লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনা নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১০ ফুট বেশি জোয়ারে নদী এলাকা থেকে ৪ কিলোমিটার দূরের লোকালয় পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে। মেঘনা নদীসংলগ্ন বেড়িবাঁধের পাশে জোয়ার ও ৫ দিনের টানা বৃষ্টির কারণে পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অন্তত ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এতে চরাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠদান বন্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ফেনী: পরশুরাম পৌরসভা ও তিনটি ইউনিয়নের ৫৫টি গ্রাম এবং ফুলগাজী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামসহ অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর পানি পরশুরাম ও ফুলগাজী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চলতি বছরের ১ জুলাই প্রথম দফা ও ২ আগস্ট দ্বিতীয় দফা মুহুরী-কুহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকে দুই উপজেলার শত শত গ্রাম প্লাবিত হয়।

কমলনগরে পচে গেছে ৯৭৬ হেক্টর জমির আমন ধানের বীজতলা। বীজ সংকটের কারণে নতুন বীজতলাও তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না।

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর): চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকা ও গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মাছের ঘের, জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বসতবাড়ি, কৃষি আবাদ, পোলট্রি খামার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত হয়েছে। গাছপালা ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ।

মীরসরাই (চট্টগ্রাম): পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন মীরসরাইয়ের সহস্রাধিক পরিবার। বৃষ্টির পানি জমে ঘরবাড়ি ভাঙনের ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা। উপজেলার খৈয়াছড়া, মীরসরাই, মঘাদিয়া, মিঠানালা, করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মীরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, কাটাছরা, দুর্গাপুর, ওসমানপুর ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

নাঙ্গলকোট ও চান্দিনা (কুমিল্লা): তলিয়ে গেছে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের অনেক রাস্তাঘাট। পৌর সদরসহ গ্রামগঞ্জে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চল, নদী অঞ্চল, স্কুল, মাদ্রাসা ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ঘরে ঢুকে পড়েছে পানি। চান্দিনা উপজেলা সদরের ৩টি খেলার মাঠ পানিতে ডুবে গেছে।

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পুরো জেলায় অন্তত ৫০টির বেশি গ্রামে পানি উঠেছে। গত দুই মাসের ব্যবধানে তিনবার পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন শহরতলী ও পৌর এলাকার নদী পাড়ে বসবাসকারী লোকজন। এসব এলাকার বাসিন্দারা স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মেরুং ইউনিয়ন। খাগড়াছড়ি-লংগদু সড়কের মেরুং হেডকোর্য়ার্টার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় রাঙামাটির লংগদুর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

রাঙামাটি: জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সড়কে ধস হওয়ায় সাময়িকভাবে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। রাঙামাটি শহরের পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। পাহাড়ের ঢালে ও পাদদেশে বসবাসকারী ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে নিরাপদ স্থানে বা আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে শহরে মাইকিং করে সতর্কবার্তা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

রাঙামাটিতে টানা ৫ দিন ধরে থেমে থেমে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে শহরসহ জেলায় পাহাড় ধস ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ভোলা: ভোলায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। মঙ্গলবার সকালে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তেমন ছিল না। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। এদিকে মেঘনা নদীতে পানির চাপ বাড়ায় উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে। জোয়ারে ডুবে গেছে ফেরিঘাট।

মৌলভীবাজার, কমলগঞ্জ ও বড়লেখা: জেলার কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও জুড়ী নদে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সাগরের লঘু চাপের প্রভাব ও ভারতের অতি বৃষ্টির ঢলে পানি বেড়েছে। এদিকে, শরৎ মৌসুমে আরেক ধাপে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী পারের সাধারণ মানুষ আবারও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। জেলার মনু, ধলাই ও জুড়ী নদে পানি বেড়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু নদের রেলওয়ে ব্রিজে বিপদসীমার ১৫ সেমি., চাঁদনীঘাটে ১৩ সেমি., জুড়ী নদে ১৫১ সেমি. ও ধলাই নদে বিপৎসীমার ৩৩ সেমি. উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।  ধলাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৩টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রাবিহত হচ্ছে। এতে সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ): পানিতে তলিয়ে গেছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ২০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল ও রাস্তাঘাট। খোয়াই নদীর পানি বাল্লা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া খোয়াই ও করাঙ্গী নদীর পানি উপচে বন্যা প্লাবিত হয়েছে অনেক গ্রাম।