হাইকোর্টের রায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে এই আন্দোলন দানা বাঁধে এবং মুহূর্তেই তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রথমদিকে এই আন্দোলনকে গুরুত্ব না দিলেও পরে নড়েচড়ে বসে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে অযৌক্তিক ও ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যা দিয়ে কোণঠাসা করার জন্য উঠে-পড়ে লাগে।
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও প্রশাসনিক দক্ষতার সবটুকু শক্তি-সামর্থ্য-বুদ্ধি দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে। কিন্তু, সুফল পায়নি। ১৬ থেকে ১৮ জুলাই, মাত্র ৩ দিনে সংঘটিত প্রশিক্ষিত আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী কর্তৃক অন্তত দুশো নৃশংস হত্যাকাণ্ড এবং বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী, সংক্ষুব্ধ জনতা ও সুযোগসন্ধানীদের দ্বারা রাষ্ট্রীয় স্থাপনার বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ আর এসবের অনিবার্য অভিঘাত-প্রতিঘাত ও পট-প্রতিক্রিয়া থেকে আওয়ামী লীগের অর্জন কী, তা এখন রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন প্রত্যেক মানুষের প্রশ্ন।
ছাত্র আন্দোলনে অবশ্যই আওয়ামী লীগ ছোট-বড় অনেক কিছু অর্জনের পথে ছিলো। এক. অর্থনৈতিক লুটপাট, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অভিযোগ থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়া। দুই. দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে বলে সামাজিক গণমাধ্যমে যে প্রচারণা শুরু হয়েছিলো, তা থামিয়ে দেয়া। তিন. সব গ্রেডে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরিয়ে এনে ২০১৮ সালের ভুল সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা। চার. স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তি সম্পর্কে জনগণকে পুনরায় চেতনাসমৃদ্ধ করা। পাঁচ. ভিন্নমতের অবাধ্য মানুষগুলোকে আরেকবার পরাস্ত করে রাষ্ট্রক্ষমতায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত পনেরো বছরের রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতি ও মনোভাব বিবেচনায় নিয়ে বলা যায় : এক. আওয়ামী লীগ ক্রমশই অন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে। এখন বাম বা ডান বা জোট কোনো রাজনৈতিক শক্তিই আওয়ামী লীগের কাছে কিছু নয়। দুই. বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। যা আছে তা তাদেরই ঘরানার ও তাদেরই প্রতিপালিত এবং আওয়ামী লীগের বৃত্তের বাহিরে যাওয়ার দুঃসাহস সেসব বুদ্ধিজীবী ও সুশীলরা কখনোই দেখাবে না। তিন. প্রতিবেশী শক্তিধর রাষ্ট্র ভারতের সমর্থন আওয়ামী লীগ সবসময়ই পেয়েছে এবং পাবে। ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতায় বিজিপি বা কংগ্রেস যে রাজনৈতিক দলই আসুক না কেনো, তাতে আওয়ামী লীগের দুশ্চিন্তা বা সমস্যা নেই। চার. বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় যেহেতু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হয়েছে, সেহেতু এদেশের সব বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার একমাত্র এ দলই রাখে। পাঁচ. প্রধানমন্ত্রী হলেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা; তিনি কখনো ভুল করতে পারেন না। তিনি সবসময়ই ভুল-ত্রুটি ও সমালোচনার ঊর্ধ্বে।
রাজনীতিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিপক্ষ বানানোর একটা ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ও বিকাশ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অগ্রগামী অংশগ্রহণ ও আত্মত্যাগের ইতিহাস কারো অজানা নয়।
আওয়ামী লীগের এই মনোভাবের সঙ্গে সময়ান্তে দেশবাসী মানিয়ে নিয়েছিলো বললে অত্যুক্তি হবে না। যে-কারণে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়া ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনীব্যবস্থা ও নির্বাচনহীনতা, উচ্চমাত্রায় শুল্ক ও করারোপ, নিরীক্ষামূলক শিক্ষাক্রম, মানবাধিকার ও মিডিয়ার স্বাধীনতা, বিদ্যুৎ-গ্যাস-তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যমান পে-স্কেল সংস্কার ইত্যাদি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিষয় নিয়ে তেমন কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম বা উচ্চবাচ্য হয়নি দেশজুড়ে। বিরোধী দল ও অধিকার প্রত্যাশীরা ততোটুকুই করতে পেরেছে যতোটুকু আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র রক্ষার্থে করতে দিয়েছে। কিন্তু, এই নির্বিঘ্ন, নির্ঝঞ্ঝাট ও বস্তুত ফাঁকা রাজনৈতিক ময়দানে আওয়ামী লীগই যেনো একাকীত্ব বোধ করে একপর্যায়ে। নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য প্রকাশের জন্য তারা যেনো নতুন কোনো শক্ত প্রতিপক্ষ খুঁজতে থাকে এবং চেতন ও অবচেতনভাবে বিশেষত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলে।
রাজনীতিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিপক্ষ বানানোর একটা ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ও বিকাশ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অগ্রগামী অংশগ্রহণ ও আত্মত্যাগের ইতিহাস কারো অজানা নয়। বিশেষত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফুঁসে উঠলে সরকারের পতন যে অনিবার্য, তা অতীতে সবসময়ই দেখা গেছে। গত পনেরো বছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা হু-হু করে বেড়ে যাওয়ায় সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চারিত্র্য খর্ব হয়েছে।
সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে স্বায়ত্তশাসনের চর্চা। দলীয়করণ হয়েছে নিয়োগপদ্ধতি। অন্যদিকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বৃহৎ আয়তনও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধমুখর আন্দোলনগুলো এখন যেনো আঞ্চলিক এবং ছোট ও বিচ্ছিন্নপ্রায়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রতি ঈর্ষান্বিত ও ক্ষোভাক্রান্ত হবার যথেষ্ট কারণও আছে আমলা ও রাজনীতিকদের মধ্যে। সবকিছু মিলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকেই প্রতিপক্ষ ভাবতে লাগলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই কল্পিত প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে বাক্সবন্দি করলে অন্তত আগামী দশ-পনেরো বছরে আওয়ামী লীগের নিত্যদিনের জয়-পরাজয়ের আর কোনো আশঙ্কা নেই, বাধা থাকবে না, এমনটাই হয়তো কেউ কিংবা কেউ কেউ বুঝেছিলো এবং বুঝিয়েছিলো।
২০১৫ সালের পে-স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মর্যাদা নিম্নমুখী হয়েছে। উচ্চতর স্বতন্ত্র পে-স্কেল, সিনিয়র সচিব সমমান সুপার গ্রেড, পিএইচ.ডি. ইনক্রিমেন্ট, দেশে-বিদেশে স্কলারশিপ প্রাপ্তি, লাভজনক প্রতিষ্ঠানে লিয়েনে বা প্রেষণে যোগদান ও অন্যান্য সুবিধাদির ক্ষেত্রে শিক্ষকরা হতাশ হয়েছে। শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটের মাত্র দেড় বা পোনে দুই শতাংশ বরাদ্দ রেখে প্রকারান্তরে বিশ্বমান অর্জনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যর্থ করে রাখা হয়েছে। এতে রাষ্ট্রিক ও সামাজিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। উপরন্তু উচ্চতর শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো হীন, দুর্বল ও অকার্যকর করতে ১ জুলাই ২০২৪ থেকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ চাপিয়ে দেয়ার জন্য শক্ত অবস্থানে ছিলো আওয়ামী লীগ সরকার। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিগুলো ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন আওয়ামী লীগ সরকারকে অভিযুক্ত করেনি। এজন্য শিক্ষক নেতারা অভিযুক্ত করেছেন উচ্চ পর্যায়ের আমলাদেরকে। আর আমলারা এটাকে শিক্ষকদের কৌশলগত অভিমত ও অবস্থান হিসেবে নিয়েছে।
সবকিছু মিলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিষ্প্রভ হতে থাকে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পর ১ জুলাই থেকে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শাটডাউন হয়ে যায়। যোগসূত্র না থাকলেও এদিন থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও দ্বিতীয় পর্যায়ে গতিপ্রাপ্ত হয়। ১০ জুলাই হাইকোর্ট আপিল বিভাগ কোটা ইস্যুতে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা দিলেও ছাত্র আন্দোলনে কোনোরূপ ভাটা পড়েনি। আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বশীলরা আত্মদম্ভে দুটো আন্দোলনের কোনোটিকেই গুরুত্বারোপ করেননি। বরং আন্দোলনকারীদের আত্মসম্মানে আঘাত হেনেছেন বিভিন্ন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যবাচক কথাবার্তায়। শিক্ষকরা চুপ থেকেছে।
শিক্ষার্থীরাও যথাসম্ভব মুখ খুলেনি। শিক্ষার্থীরা মুখ খুলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকেন্দ্রিক ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত একটি সাংবাদিক সম্মেলনের পরে। সেরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ব্যথিত ও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিলো : ‘তুমি কে আমি কে/ রাজাকার রাজাকার/ কে বলেছে কে বলেছে/ স্বৈরাচার স্বৈরাচার’, কিংবা ‘চাইতে গেলাম অধিকার/ হয়ে গেলাম রাজাকার’, কিংবা ‘পা চাটলে সঙ্গী/ না চাটলে জঙ্গি/ কথায় কথায় বাংলা ছাড়/ বাংলা কি তোর বাপ দাদার?’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
বস্তুত, শিক্ষার্থীদের এসব আত্মবিনাশী ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ স্লোগানের মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগের এতোদিনের সব রাজনৈতিক অর্জন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। আওয়ামী লীগের এতোদিনের আত্মতুষ্টি ও আত্মমুদ্ধতা, আত্মদম্ভ ও আত্ম-অহমিকা, আর্থরাজনৈতিক অঙ্গীকার ও উচ্চাভিলাষ যেনো চপেটাঘাতে হয় পতিত। যে প্রজন্মটির সম্পূর্ণভাবে বেড়ে ওঠা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়াবহে, সেই প্রজন্মটি এসব কী বলছে? যে দলটি গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করেছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে বহুভাবে, সেই দলের সভানেত্রীকে এ কী শুনতে হচ্ছে? দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের গলদটা কোথায়?
আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করে মেধা ও কোটার অনুপাত তিরানব্বই ও সাত শতাংশ করার নির্দেশ দিলে এবং সে-অনুযায়ী ২৩ জুলাই সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করলে আওয়ামী লীগ কি রাজনৈতিকভাবে জয়ী হয়েছে? এখন মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদেরকে আওয়ামী লীগ কী বলবে? এখন মুক্তিযোদ্ধা কোটা কতোজনইবা কাজে লাগাতে পারবে? এখন এটা রাখা না রাখা একই নয় কি? মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সম্বল করে অগ্রসরমান আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্তুতির নিকট উন্নত শিরে নৈতিক চিত্তে আন্তরিকভাবে যদি দাঁড়াতে না পারে, তাহলে আওয়ামী লীগের আর কী অবশিষ্ট থাকে?
আওয়ামী লীগের জীয়নকাঠি আকস্মিক প্রবল তরঙ্গে হারিয়ে গেলো না কি? আওয়ামী লীগ কি আবারও প্রজ্ঞাপন পরিবর্তন করতে চাইবে আদালতের আশ্রয়ে কিংবা নির্বাহী ক্ষমতাবলে? তাহলে বাহান্নর ভাষা-আন্দোলনের চেয়েও অনেক অনেক গুণ বেশি শহীদ ও আহত-নিহতদের সঙ্গে এবং এই প্রজন্মের তারুণ্যের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে না কি? এসব কি পুনরায় সম্পাদন করা সহজ হবে? ছাত্রলীগ ও প্রশিক্ষিত আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী দিয়ে হামলা-মামলা-নির্যাতন ও উপহাস করা আওয়ামী লীগকে কি এই প্রজন্ম কখনও ক্ষমা করতে পারবে?
পঁচাত্তরের আগে-পরেও আওয়ামী লীগ অনেক দুঃসময় পার করেছে। এবারের দুঃসময় একেবারেই ভিন্ন। ক্ষমতায় থেকে এতো বড় দুঃসময় আর কখনো আসেনি। ক্ষমতা আছে, অথচ নিশ্চয়তা নেই। বর্তমান আছে, কিন্তু নিশ্চিত ভবিষ্যৎ নেই অবস্থা। তারপরও আওয়ামী লীগ হাল ছেড়ে দেবে না, এটাই স্বাভাবিক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যেমন কৌশলগত অবস্থান নিয়ে তাদের সব অপ্রাপ্তির জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তে আমলাদের দায়ী করে, তেমনি আওয়ামী লীগও উদ্ভূত নির্মম ও ভয়ংকর পরিস্থিতির জন্য বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে জামাত-শিবির-বিএনপি-ছাত্রদলকে অভিযুক্ত করছে। এতো বিচক্ষণ একটি দলের একজন একবারও বলছে না যে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী কর্তৃক এতো উৎসাহ নিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর নেপথ্যে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এসব বাহিনীর প্রাক্তন রাঘব-বোয়ালরা জড়িত থাকতে পারে। যারা শত শত বা হাজার হাজার টাকা দুর্নীতি করে এখন ফেঁসে গেছে, তারাও উঠে-পড়ে লাগতে পারে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে।
পঁচাত্তরের আগে-পরেও আওয়ামী লীগ অনেক দুঃসময় পার করেছে। এবারের দুঃসময় একেবারেই ভিন্ন। ক্ষমতায় থেকে এতো বড় দুঃসময় আর কখনো আসেনি। ক্ষমতা আছে, অথচ নিশ্চয়তা নেই। বর্তমান আছে, কিন্তু নিশ্চিত ভবিষ্যৎ নেই অবস্থা। তারপরও আওয়ামী লীগ হাল ছেড়ে দেবে না, এটাই স্বাভাবিক।
আওয়ামী লীগ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে যেমন বিলম্ব করেছে, তেমনি স্বাধীনতাবিরোধী জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করতেও যে অনেক বেশি সময় নিলো, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আওয়ামী লীগ আগামীতে বলবে, আইনের শাসন মেনে সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কার আমরা করেছি এবং মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ-শক্তি জামাত-শিবিরকে আমরাই নিষিদ্ধ করেছি। এতোটুকু হলেও কম কী? গুণগত পরিবর্তনহীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে কথার লড়াই বা বাহাসটাই তো মুখ্য!