অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করা হলে রাষ্ট্রপতিও তাতে সম্মতি দেন। এই অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য ১০ থেকে ১৫ জনের একটি প্রাথমিক তালিকা দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই তালিকাসহ অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম।
প্রাথমকি তালিকায় নাগরিক সমাজসহ ছাত্র প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই তালিকাটি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি ও তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন নাহিদ।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা সমন্বয়করা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটি এবং আমাদের সঙ্গে সম্মানিত শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান একত্রে বঙ্গভবনে এসেছিলাম। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনী প্রধানের উপস্থিতিতে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের একটি ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। ছাত্র ও নাগরিক অভ্যুত্থানকারীদের পক্ষ থেকে যে সরকারের প্রস্তাব করা হবে, সেই প্রস্তাবিত সরকারই চূড়ান্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে সেই নিশ্চয়তা আমরা বঙ্গভবন থেকে পেয়েছি।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সবার প্রতি আহ্বান থাকবে আজকে তিন বাহিনীর প্রধান ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিকদের সম্মান জানিয়েছেন। পাশাপাশি দেশে যে অরাজক পরিস্থিতি চলছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানাই, অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার প্রস্তাবকারী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘোষণা করা হবে। জনগণ যাতে সেই আস্থা রাখেন।’
রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদেরকে অবশ্যই স্থাপনা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে হবে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে দ্রুতই জনগণের মধ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়োগ করা হবে। ছাত্র নাগরিকেরা আজকেও ঢাকা শহরে ট্রাফিকের দায়িত্ব নিয়েছেন, মন্দির পাহারা দিচ্ছেন। সবাই এটির প্রশংসা করেছেন। দেশে আইনশৃঙ্খলা ফিরে না আসা পর্যন্ত আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কোনো ধরনের নাশকতা, লুটপাট না হয় সেজন্য পাহারা দিতে হবে, সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। সবাই মিলে দেশ গঠনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করব।’
ড. ইউনূস বর্তমানে ফ্রান্সে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে কবে আসবেন এ বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ওনার (ড. ইউনূস) একটি মাইনর অপারেশন হয়েছে। উনি আজ (বুধবার) দেশের উদ্দেশে রওনা হবেন। হয়তোবা আজ রাতে অথবা আগামীকাল সকালের মধ্যে দেশে এসে পৌঁছাবেন। এর মধ্যে আমাদের তালিকাটিও চূড়ান্ত হয়ে যাবে। হয়তো আমরা ২৪ ঘণ্টা কিংবা অধিক সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথের বিষয়টি করে ফেলতে পারব।’
বিভিন্ন গণমাধ্যমের ওপর হামলা প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা সবাইকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। ছাত্র-জনতা একটি অভ্যুত্থান করেছে, সেটি রক্ষা করে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন করার দায়িত্ব তাদের। আমরা দেখেছি, বিভিন্নভাবে নাশকতা করা হচ্ছে, পরিকল্পতিভাবে হামলা করে এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সবার প্রতি আহ্বান থাকবে এই ধরনের হামলা, লুটপাট বন্ধের। যারা গণহত্যা, দুর্নীতিতে জড়িত ছিলো তাদের আইনি প্রক্রিয়ায় আনা হবে। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আমরা প্রতিহিংসা ও রক্তপাত চাই না। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ চাই।’