ঢাকা ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ৮

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১২:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অগাস্ট ২০২৪
  • ৩০ বার

আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৮ জন নিহত এবং দুই শতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে কুষ্টিয়া মডেল থানা ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলাকে কেন্দ্র করে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রফিকুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শহরের মজমপুর গেটে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ কয়েক দফা টিয়ারসেল ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। বেলা ১টার পর আন্দোলনকারীদের অপর একটি অংশ কুষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা চালায়। পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে আন্দোলনকারীদের হটাতে ব্যর্থ হয়। পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় পুলিশের। কাঁদানে গ্যাসের শেলের শব্দে থানার আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতেও আন্দোলনকারীরা পিছু হটেননি। খবর পেয়ে সেনা সদস্যরা এসে মডেল থানার সব পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়।

পরে আন্দোলনকারীরা থানা ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে থানার ভেতরের আসবাবপত্র ও জরুরি রেকর্ডসহ অন্যান্য দ্রব্য পুড়ে যায়। এছাড়া ভবনের সামনে থাকা ৮-১০টি মোটরসাইকেল ভস্মীভূত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে, বেলা ২টার পর আন্দোলনকারীদের আরেকটি গ্রুপ কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে ঢুকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ও শটগানের গুলি চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। তাদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা ৮ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শহরের থানাপাড়া এলাকার ইউসুফ আলী (৭০) ও লোকমানের ছেলে আব্দুল্লাহ (১৩), সদর উপজেলার হরিপুর এলাকার নওশের আলীর ছেলে বাবু (৪০) ও কফিলুদ্দিনের ছেলে আশরাফ (৪২)। বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

অন্যদিকে, শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, কুষ্টিয়া-২ আসনের সাংসদ কামারুল আরেফিনসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর চালানো হয়। আওয়ামী সমর্থকদের বেশ কয়েকজনের দোকানে লুটপাট হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে অরক্ষিত মডেল থানা থেকেও কিছু জিনিসপত্র লুটপাট হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এছাড়া কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুরাল ও ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার খবর পাওয়া গেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ৮

আপডেট টাইম : ১১:১২:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অগাস্ট ২০২৪

আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৮ জন নিহত এবং দুই শতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে কুষ্টিয়া মডেল থানা ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলাকে কেন্দ্র করে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রফিকুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শহরের মজমপুর গেটে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ কয়েক দফা টিয়ারসেল ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। বেলা ১টার পর আন্দোলনকারীদের অপর একটি অংশ কুষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা চালায়। পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে আন্দোলনকারীদের হটাতে ব্যর্থ হয়। পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় পুলিশের। কাঁদানে গ্যাসের শেলের শব্দে থানার আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতেও আন্দোলনকারীরা পিছু হটেননি। খবর পেয়ে সেনা সদস্যরা এসে মডেল থানার সব পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়।

পরে আন্দোলনকারীরা থানা ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে থানার ভেতরের আসবাবপত্র ও জরুরি রেকর্ডসহ অন্যান্য দ্রব্য পুড়ে যায়। এছাড়া ভবনের সামনে থাকা ৮-১০টি মোটরসাইকেল ভস্মীভূত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে, বেলা ২টার পর আন্দোলনকারীদের আরেকটি গ্রুপ কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে ঢুকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ও শটগানের গুলি চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। তাদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা ৮ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শহরের থানাপাড়া এলাকার ইউসুফ আলী (৭০) ও লোকমানের ছেলে আব্দুল্লাহ (১৩), সদর উপজেলার হরিপুর এলাকার নওশের আলীর ছেলে বাবু (৪০) ও কফিলুদ্দিনের ছেলে আশরাফ (৪২)। বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

অন্যদিকে, শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, কুষ্টিয়া-২ আসনের সাংসদ কামারুল আরেফিনসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর চালানো হয়। আওয়ামী সমর্থকদের বেশ কয়েকজনের দোকানে লুটপাট হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে অরক্ষিত মডেল থানা থেকেও কিছু জিনিসপত্র লুটপাট হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এছাড়া কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুরাল ও ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার খবর পাওয়া গেছে।