ঢাকা ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রণোদনা দেয়ার কারণেই আউশ চাষ বৃদ্ধি বাড়ছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৪২:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অগাস্ট ২০২৪
  • ৩৪ বার

চুয়াডাঙ্গায় ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে রোপা আউশ ধানের আবাদ। সরকারিভাবে আউশ চাষ করতে কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার কারণেই আউশ চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

জানা যায়, জেলায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনতে ও ধানের চাষ বাড়াতে কৃষক পর্যায়ে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। আর এই সুবিধা পাচ্ছেন জেলার চার উপজেলার প্রায় ৪০ হাজার কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ৪৪ হাজার ৬৭৯ হেক্টর জমিতে রোপা আউশ ধানের হয়েছে।

এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৬ হাজার ১২০ হেক্টর, আলমডাঙ্গায় ৯ হাজার ৫২৭ হেক্টর, দামুড়হুদায় ১১ হাজার ৫২০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় সাত হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে রোপ আউশ ধানের চাষ হয়েছে।

গত বছর রোপা আউশ ধানের আবাদ হয়েছিল ৪৩ হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গার রোপা আউশ ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে।

জেলায় চাষযোগ্য জমির পরিমাণ আছে ৯৪ হাজার ২২০ হেক্টর। চাষযোগ্য জমির শতকরা ৪৭ শতাংশ জমিতে রোপা আউশে ধানের চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ শতাংশ জমিতে এই ধানের চাষ অর্জিত হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আউশ ধানের চাষে এ বছরও রেকর্ড করেছে চুয়াডাঙ্গা।

কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, সারাদেশের মধ্যে রোপা আউশ ধান চাষে চুয়াডাঙ্গা দ্বিতীয় এবং উৎপাদনে যশোর অঞ্চলের মধ্যে প্রথম।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ব্র্যাক সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় চলতি মৌসুমে হাইব্রিড ও উফশী জাতের ২৭ ভ্যারাইটির আউশ ধানের চাষ হয়েছে।

হাইব্রিড জাতের মধ্যে রয়েছে এসিআই-১ ও ২,ধানি গোল্ড, রাজকুমারী, চমক, নবীন, ইস্পাহানী, আগামনী, কৃষাণ, মধুমতি, রডমিনিকেট ও সিনজেনটা-১২০৫। উফশী জাতের মধ্যে ব্রি-ধান-৪৮, ব্রি-ধান-৫৫, ব্রি-ধান-৫৮, ব্রি ধান-৯৮, খাটো বাবু এবং বিনা ১৭ ও ২১ ধানের চাষ করেছে চাষিরা।

ব্র্যাকের চুয়াডাঙ্গার টেরিটরি ইনচার্জ মোজাহিদুল ইসলাম জানান, চলতি আউশ মৌসুমে হাইব্রিড জাতের মধ্যে সাথী,
মুক্তি, শক্তি-২, আলোড়ন, ব্র্যাক-১০, ব্র্যাক-১৮ ও ব্র্যাক-২৬ ধানের চাষ করেছেন কৃষকরা। উফশী জাতের মধ্যে ব্র্যাক-১ নামে নতুন জাতের একটি ধান জেলায় ছয় টন পরীক্ষামূলকভাবে বিক্রয় প্রতিনিধির মাধ্যমে দেয়া হয়েছে।

শোনা যাচ্ছে, এ জাতের ধানের ফলন ভালো এবং এ ধান চাষ করতে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা গেছে, ফলন বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ থেকে উফশী জাতের আউশ ধান আবাদে আগ্রহী কৃষকদের বিঘাপ্রতি পাঁচ কেজি করে ধানের বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সহায়তা দেয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাতিকাটা গ্রামের কৃষক আবির হাসান জানান, চলতি আউশ মৌসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে রোপা আউশ ধানের চাষ করেছি। এর মধ্যে তিন বিঘা জমিতে ব্রি-ধান-৪৮ ও দুই বিঘা জমিতে ইন্ডিয়ান ভ্যারাইটি রড মিনিকেট ধানের চাষ করেছি। ব্রি-ধান ৪৮ হারভেস্ট করা যায় ৯০ থেকে ১১০ দিনে, আর রড মিনিকেট ধানে ১০ দিন সময় বেশি লাগে। এই ধানের ফলন ভালো, চাহিদা ও বাজারদর বেশি। এ ধানের দিকে কৃষক ঝুঁকছে।

তিনি আরও জানান, বোরো মৌসুমে এই জাতের ধানে ৩০ থেকে ৩২ মণ ফলন হয়েছে। এই মৌসুমেও ২০-২২ মণ ফলন হবে। তিনি আরও জানান, ব্রি-ধান-৪৮ বাজারে যেখানে এক হাজার ২০০ টাকা দরে বিকিকিনি হয়, সেখানে রড মিনিকেট বিকিকিনি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকায়।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, এ জেলায় চাষাবাদের ক্ষেত্রে আবহাওয়া অত্যন্ত উপযোগী থাকে।

চাষিদের কোনো সমস্যা পোহাতে হয় না। এছাড়া সেচ ব্যবস্থা নিয়ে চাষিদের অসুবিধায় পড়তে হয় না। তাছাড়া মাঠপর্যায়ে কৃষি ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে চাষাবাদ-সংক্রান্ত সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন। সে কারণে
সমস্যা হলেও তা দ্রুত সমাধান করা যায়। তিনি জানান, চলতি মৌসুমে রোপা আউশ ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। চাষ হয়েছে ৪৪ হাজার ৬৭৯ হেক্টর জমিতে। শতকরা ৯৫ ভাগ জমিতে রোপা আউশ ধানের চাষ হয়েছে। গত বছর এ ধানের চাষ হয়েছিল ৪১ হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

প্রণোদনা দেয়ার কারণেই আউশ চাষ বৃদ্ধি বাড়ছে

আপডেট টাইম : ০৬:৪২:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অগাস্ট ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে রোপা আউশ ধানের আবাদ। সরকারিভাবে আউশ চাষ করতে কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার কারণেই আউশ চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

জানা যায়, জেলায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনতে ও ধানের চাষ বাড়াতে কৃষক পর্যায়ে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। আর এই সুবিধা পাচ্ছেন জেলার চার উপজেলার প্রায় ৪০ হাজার কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ৪৪ হাজার ৬৭৯ হেক্টর জমিতে রোপা আউশ ধানের হয়েছে।

এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৬ হাজার ১২০ হেক্টর, আলমডাঙ্গায় ৯ হাজার ৫২৭ হেক্টর, দামুড়হুদায় ১১ হাজার ৫২০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় সাত হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে রোপ আউশ ধানের চাষ হয়েছে।

গত বছর রোপা আউশ ধানের আবাদ হয়েছিল ৪৩ হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গার রোপা আউশ ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে।

জেলায় চাষযোগ্য জমির পরিমাণ আছে ৯৪ হাজার ২২০ হেক্টর। চাষযোগ্য জমির শতকরা ৪৭ শতাংশ জমিতে রোপা আউশে ধানের চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ শতাংশ জমিতে এই ধানের চাষ অর্জিত হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আউশ ধানের চাষে এ বছরও রেকর্ড করেছে চুয়াডাঙ্গা।

কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, সারাদেশের মধ্যে রোপা আউশ ধান চাষে চুয়াডাঙ্গা দ্বিতীয় এবং উৎপাদনে যশোর অঞ্চলের মধ্যে প্রথম।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ব্র্যাক সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় চলতি মৌসুমে হাইব্রিড ও উফশী জাতের ২৭ ভ্যারাইটির আউশ ধানের চাষ হয়েছে।

হাইব্রিড জাতের মধ্যে রয়েছে এসিআই-১ ও ২,ধানি গোল্ড, রাজকুমারী, চমক, নবীন, ইস্পাহানী, আগামনী, কৃষাণ, মধুমতি, রডমিনিকেট ও সিনজেনটা-১২০৫। উফশী জাতের মধ্যে ব্রি-ধান-৪৮, ব্রি-ধান-৫৫, ব্রি-ধান-৫৮, ব্রি ধান-৯৮, খাটো বাবু এবং বিনা ১৭ ও ২১ ধানের চাষ করেছে চাষিরা।

ব্র্যাকের চুয়াডাঙ্গার টেরিটরি ইনচার্জ মোজাহিদুল ইসলাম জানান, চলতি আউশ মৌসুমে হাইব্রিড জাতের মধ্যে সাথী,
মুক্তি, শক্তি-২, আলোড়ন, ব্র্যাক-১০, ব্র্যাক-১৮ ও ব্র্যাক-২৬ ধানের চাষ করেছেন কৃষকরা। উফশী জাতের মধ্যে ব্র্যাক-১ নামে নতুন জাতের একটি ধান জেলায় ছয় টন পরীক্ষামূলকভাবে বিক্রয় প্রতিনিধির মাধ্যমে দেয়া হয়েছে।

শোনা যাচ্ছে, এ জাতের ধানের ফলন ভালো এবং এ ধান চাষ করতে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা গেছে, ফলন বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ থেকে উফশী জাতের আউশ ধান আবাদে আগ্রহী কৃষকদের বিঘাপ্রতি পাঁচ কেজি করে ধানের বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সহায়তা দেয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাতিকাটা গ্রামের কৃষক আবির হাসান জানান, চলতি আউশ মৌসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে রোপা আউশ ধানের চাষ করেছি। এর মধ্যে তিন বিঘা জমিতে ব্রি-ধান-৪৮ ও দুই বিঘা জমিতে ইন্ডিয়ান ভ্যারাইটি রড মিনিকেট ধানের চাষ করেছি। ব্রি-ধান ৪৮ হারভেস্ট করা যায় ৯০ থেকে ১১০ দিনে, আর রড মিনিকেট ধানে ১০ দিন সময় বেশি লাগে। এই ধানের ফলন ভালো, চাহিদা ও বাজারদর বেশি। এ ধানের দিকে কৃষক ঝুঁকছে।

তিনি আরও জানান, বোরো মৌসুমে এই জাতের ধানে ৩০ থেকে ৩২ মণ ফলন হয়েছে। এই মৌসুমেও ২০-২২ মণ ফলন হবে। তিনি আরও জানান, ব্রি-ধান-৪৮ বাজারে যেখানে এক হাজার ২০০ টাকা দরে বিকিকিনি হয়, সেখানে রড মিনিকেট বিকিকিনি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকায়।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, এ জেলায় চাষাবাদের ক্ষেত্রে আবহাওয়া অত্যন্ত উপযোগী থাকে।

চাষিদের কোনো সমস্যা পোহাতে হয় না। এছাড়া সেচ ব্যবস্থা নিয়ে চাষিদের অসুবিধায় পড়তে হয় না। তাছাড়া মাঠপর্যায়ে কৃষি ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে চাষাবাদ-সংক্রান্ত সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন। সে কারণে
সমস্যা হলেও তা দ্রুত সমাধান করা যায়। তিনি জানান, চলতি মৌসুমে রোপা আউশ ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। চাষ হয়েছে ৪৪ হাজার ৬৭৯ হেক্টর জমিতে। শতকরা ৯৫ ভাগ জমিতে রোপা আউশ ধানের চাষ হয়েছে। গত বছর এ ধানের চাষ হয়েছিল ৪১ হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে।