কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাকে আমরা সাধারণত আশুরার স্মৃতি হিসেবে স্মরণ করি। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে মহররম মাসের ১০ তারিখে বরকতময় এমন কতগুলো ঘটনার স্মৃতি জড়িয়ে আছে যা আমরা জানি না। শুধু তাই নয়, এই স্মৃতিসমূহের সম্মানার্থেই এই মাসকে মহররম বা সম্মানিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
তবে আমাদের কাছে সব ঘটনাকে ছাপিয়ে বিশ্ব নবী (সা.) দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত বরণের ঘটনা জাগ্রত রয়েছে। মহররমের দশম দিনে ইয়াজিদ তার কয়েক হাজার সৈন্য নিয়ে মাত্র ১৭০ জন ইমাম কাফেলার সঙ্গে এক অসম যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। যাতে শহিদ হয়েছিলেন নবী করীম (সা.) দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.)সহ ৭২ জন।
তবে পবিত্র আশুরার দিনে যেসব উল্লেখযোগ্য ও বরকতময় ঘটনা ঘটেছে তার কয়েকটি হল-
১. মহান আল্লাহ এই দিনে প্রথম মানব আদি পিতা আদম (আ.)কে সৃষ্টি করেন এবং স্বর্গ বা জান্নাতে স্থান দেন। পরবর্তীতে এই দিনেই আদম-হাওয়া (আ.)কে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। আবার এই তারিখেই তাঁরা আল্লাহর ক্ষমাও লাভ করেন।
২. আশুরার এই দিনে হযরত ইদ্রিস (আ.)কে আকাশে উত্তোলন করে নেন মহান আল্লাহ।
৩. এই দিনে হযরত নূহ (আ.)কে প্লাবন থেকে পরিত্রাণ দেওয়া হয় এবং পৃথিবীকে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলার সুযোগ পান তিনি।
৪. আশুরার এই দিনে আল্লাহর কৃপায় হযরত ইব্রাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকাণ্ড থেকে নিষ্কৃতি পান।
৫. মহররমের ১০ তারিখে হযরত আইয়ুব (আ.) কুষ্ঠরোগে ১৮ বছর ভোগার পর এ রোগ থেকে মুক্তি লাভ করেন।
৬. হযরত ইদ্রিস (আ.)কে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় পাঠানোর পর গুনাহ-অপরাধের জন্য কান্নাকাটি করলে আল্লাহপাক আবার তাঁকে জান্নাতে ফেরত নেন এই দিনে।
৭. মহররমের এই দিনে হযরত ইউনুস (আ.) ৪০ দিন পর মাছের পেট থেকে পরিত্রাণ পান।
৮. মহান আল্লাহ এই দিনে হযরত দাউদ (আ.)-এর সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন।
৯. রাজ্যহারা হয়ে আল্লাহর দয়ায় এই দিনে হযরত সোলাইমান (আ.) স্বীয় বাদশাহী ফেরত পান।
১০. কুমারী মাতা হযরত মরিয়ম (আ.)-এর গর্ভ হতে হযরত ঈসা (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এই দিনে।
১১. আশুরার এ দিনে হযরত ইউসুফ (আ.) তাঁর পিতা ইয়াকুব (আ.)-এর সঙ্গে সুদীর্ঘ ৪০ বছর পর সাক্ষাৎ লাভ করেন।
১২. এই দিনে হযরত ঈসা (আ.)কে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে আসমানে তুলে নেন।
১৩. প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এই দিনে মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনা শরীফে তাশরীফ নেন।
এসব বরকতময় ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে, মহান রাব্বুল আলামীন মহররমের এই ১০ তারিখকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলিমের উচিত এই দিনটির স্মরণে ইবাদত বন্দেগি করে কাটিয়ে দেওয়া।