ঢাকা ০২:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চরম দুর্ভোগে চরাঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৫:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪
  • ৩৮ বার

চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে কুড়িগ্রামের বন্যা কবলিত চরাঞ্চলের মানুষের। নতুন চরে বসতগড়া পরিবারগুলোর ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা ও ঘরের মাচা উচু করে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তারা। অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে নৌকায় করে দুরবর্তী উচু জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন।

সরেজমিনে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগন্জ ইউনিয়নের চর বালাডোবা ও মুসার চর ঘুরে দেখা গেছে সেখানকার প্রায় শতাধিক পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।

এসব পরিবারের কেউ নৌকায় আবার কেউ ঘরের ভিতর উচু করা মাচায় বসবাস করছেন। তাদের পালিত গরুসহ অন্যান্য গবাদি পশুগুলোকেও রাখা হয়েছে ঘরের উচু করা জায়গায়। আবার অনেক পরিবার তাদের গবাদি পশু নৌকায় করে উচু জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন।

পুর্ববালাডোবার চরে ৫ দিন আগে ভুমিষ্ট হওয়া কন্যা সন্তান নিয়ে নৌকায় অবস্থান করছেন মনছুর আলীর স্ত্রী মাজেদা বেগম। সাথে রয়েছে আরেক শিশু সন্তানসহ প্রতিবেশি এক নারী। মাজেদা বেগম জানান, সন্তান জন্ম দেয়ার দুইদিন পর ঘর-বাড়িতে পানি উঠেছে। সন্তানসহ উচু জায়গায় আত্মীয়র বাড়িতে চলে যাবেন বলে জানান তিনি।

উলিপুরের বেগমগন্জ ইউনিয়নের বালাডোবা চরের মনসুর আলী জানান, পানি বাড়তেছে। ঘরের ভিতর এক কোমর পানি। আর থাকা যাচ্ছে না। গরুসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নৌকায় করে উচু জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি।

বেগমগন্জ ইউনিয়নের মতিয়ার রহমান জানান, খুব কষ্ট, যাওযার জায়গা নাই। পার্শ্ববর্তী চর ভেঙ্গে এই চরে এসেছি। ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ায় ঘরে পানি উঠেছে। কোন রকমে থাকলে পানি আর একটু বৃদ্ধি পেলে থাকার উপায় থাকবে না।

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নদ-নদীর অববাহিকার চর ও নিম্নাঞ্চল। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ১৫ হাজারের বেশি পরিবার।

উলিপুরের বেগমগন্জ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মতো তলিয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার মশালের চরসহ নতুন জেগে উঠা চরাঞ্চলগুলো। এসব চরের মানুষজন পরিবার পরিজন নিয়ে অবস্থান করছেন নৌকায় এবং ঘরের উচু মাচায়।

বন্যা কবলিত এসব পরিবারের মানুজন জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলেও গত তিন ধরে তাদের ঘরে পানি প্রবেশ করায় খেয়ে না কেয়ে মানবেতর জাীবন কাটাচ্ছেন তারা। পাশাপাশি গবাদি পশু নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।

চরাঞ্চলের বন্যা কবলিত অনেক পরিবার ঘর-বাড়ি ছেড়ে অবস্থান নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী উচু স্থানে। অন্যদিকে নদ-নদীর অববাহিকার সড়ক তলিয়ে থাকায় ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। চরাঞ্চলের অনেক ঘর- বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুড়িগ্রামের তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ধরলা পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  আগামী ৭২ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় পানি উন্নযন বোর্ড।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ১শ ৭৬ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

চরম দুর্ভোগে চরাঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষ

আপডেট টাইম : ১২:০৫:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪

চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে কুড়িগ্রামের বন্যা কবলিত চরাঞ্চলের মানুষের। নতুন চরে বসতগড়া পরিবারগুলোর ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা ও ঘরের মাচা উচু করে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তারা। অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে নৌকায় করে দুরবর্তী উচু জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন।

সরেজমিনে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগন্জ ইউনিয়নের চর বালাডোবা ও মুসার চর ঘুরে দেখা গেছে সেখানকার প্রায় শতাধিক পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।

এসব পরিবারের কেউ নৌকায় আবার কেউ ঘরের ভিতর উচু করা মাচায় বসবাস করছেন। তাদের পালিত গরুসহ অন্যান্য গবাদি পশুগুলোকেও রাখা হয়েছে ঘরের উচু করা জায়গায়। আবার অনেক পরিবার তাদের গবাদি পশু নৌকায় করে উচু জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন।

পুর্ববালাডোবার চরে ৫ দিন আগে ভুমিষ্ট হওয়া কন্যা সন্তান নিয়ে নৌকায় অবস্থান করছেন মনছুর আলীর স্ত্রী মাজেদা বেগম। সাথে রয়েছে আরেক শিশু সন্তানসহ প্রতিবেশি এক নারী। মাজেদা বেগম জানান, সন্তান জন্ম দেয়ার দুইদিন পর ঘর-বাড়িতে পানি উঠেছে। সন্তানসহ উচু জায়গায় আত্মীয়র বাড়িতে চলে যাবেন বলে জানান তিনি।

উলিপুরের বেগমগন্জ ইউনিয়নের বালাডোবা চরের মনসুর আলী জানান, পানি বাড়তেছে। ঘরের ভিতর এক কোমর পানি। আর থাকা যাচ্ছে না। গরুসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নৌকায় করে উচু জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি।

বেগমগন্জ ইউনিয়নের মতিয়ার রহমান জানান, খুব কষ্ট, যাওযার জায়গা নাই। পার্শ্ববর্তী চর ভেঙ্গে এই চরে এসেছি। ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ায় ঘরে পানি উঠেছে। কোন রকমে থাকলে পানি আর একটু বৃদ্ধি পেলে থাকার উপায় থাকবে না।

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নদ-নদীর অববাহিকার চর ও নিম্নাঞ্চল। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ১৫ হাজারের বেশি পরিবার।

উলিপুরের বেগমগন্জ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মতো তলিয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার মশালের চরসহ নতুন জেগে উঠা চরাঞ্চলগুলো। এসব চরের মানুষজন পরিবার পরিজন নিয়ে অবস্থান করছেন নৌকায় এবং ঘরের উচু মাচায়।

বন্যা কবলিত এসব পরিবারের মানুজন জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলেও গত তিন ধরে তাদের ঘরে পানি প্রবেশ করায় খেয়ে না কেয়ে মানবেতর জাীবন কাটাচ্ছেন তারা। পাশাপাশি গবাদি পশু নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।

চরাঞ্চলের বন্যা কবলিত অনেক পরিবার ঘর-বাড়ি ছেড়ে অবস্থান নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী উচু স্থানে। অন্যদিকে নদ-নদীর অববাহিকার সড়ক তলিয়ে থাকায় ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। চরাঞ্চলের অনেক ঘর- বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুড়িগ্রামের তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ধরলা পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  আগামী ৭২ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় পানি উন্নযন বোর্ড।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ১শ ৭৬ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।