সিলেটে বন্যার পানি কোথাও কমছে কোথাও বাড়ছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কোন স্থানে কিছুটা উন্নতি, আবার কোথাও অবনতি হয়েছে। ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সোমবার (১জুলাই) নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে জেলার বিভিন্ন উপজেলায়।
জেলা প্রশাসকের তথ্য মতে, জেলার ১৩ উপজেলায় ৯৭টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত। ১ হাজার ১৮৪টি গ্রামের ৭ লাখ ১১ হাজারের বেশি মানুষ বন্যাকবলিত রয়েছেন। জেলার ৬৫৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী প্রদানসহ বন্যার্ত মানুষের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ৬টি পয়েন্টের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ৮১ সে.মি.,যা ২৪ ঘন্টা আগে ছিলো ১১৭ সে.মিটারের উপরে, একই নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপদ সীমায় ০১ সে. মি. উপর দিয়ে চলছে, যা আগের দিন বিপদসীমার নীচে ছিলো। কুশিয়ারা নদীর পানি আজ আমলশীদ পয়েন্টে ১৪০ সে.মি. উপরে যা, ২৪ ঘন্টা আগে একই পয়েন্টে ৭৭ সে.মি. ছিলো। এ নদীর পানি শেওলা পয়েন্টে ৪৩ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগেরদিন যা ২৩ সে. মি. উপরে ছিলো। একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯৯ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগের দিন সেখানে পানি ৯৫ সে.মি.উপরে ছিলো। কুশিয়ারা নদী শেরপুর পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৯ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, আগে রদিন এ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ১৪ সে.মি উপরে ছিলো। এছাড়াও সিলেটের লোভাছড়া, সারি নদী, জাফলং নদী, গোয়াইন নদী ও ধলাই নদীর সবগুলো পয়েন্টের পানি গত ২৪ ঘন্টায় কিছুটা কমে বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ বুধবার সকাল থেকে উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢল কিছুটা কমেছে বলে স্থানীয় বিভিন্ন সুত্র জানিয়েছে। আজ বুধবার সিলেটে দিনের বেলা বৃষ্টিপাত না হলেও বিকেলে ভারি বৃষ্টি নেমেছে।
এদিকে সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সহকারী সিভিল সার্জন ডাঃ জন্মজেয় দত্ত বাসস’কে জানান বন্যার্ত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে সিলেট জেলায় ১২৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। তারা বন্যা কবলিত এলাকায় গিয়ে বন্যার্ত মানুষকে পানি বাহিত রোগ থেকে মুক্ত রাখতে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওরস্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে বন্যার্ত মানুষের জরুরী স্বাস্থ্য সেবায় বিশেষ গুরত্ব দিয়ে কাজ করছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, সিলেটে গত ২৭ মে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুই সপ্তাহ ব্যাপী স্থায়ী এ বন্যায় পানিবন্দী ছিলেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রথম বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন থেকে ফের বন্যা হয় সিলেটে। বিশেষ করে ঈদুল আযহার দিন ভোররাত থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার অতিভারী বর্ষণে মহানগরসহ সিলেটের সব উপজেলায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। পরবর্তী এক সপ্তাহ সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ছিলো ভয়াবহ। এরপর পানি নামতে শুরু করে। তবে সে গতি ছিলো খুব ধীর। দ্বিতীয় দফা বন্যা শেষ হওয়ার আগেই সোমবার থেকে সিলেটে ধাক্কা দেয় তৃতীয় দফা বন্যা। রবিবার (৩০ জুন) দিনভর সিলেটে থেমে থেমে এবং উজানে ভারী বৃষ্টির ফলে নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে।
সূত্র: বাসস