ঢাকা ০৮:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪, ৯ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জীবনে সফল হতে অপরিহার্য দুটি বিষয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:২৬:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুন ২০২৪
  • ৬ বার

কথিত আছে, বই শব্দটি ওহি থেকে এসেছে। ওহি থেকে বহি, বহি থেকে বই। মানবজীবনে ওহির গুরুত্ব ও প্রভাব যেমন বইয়ের গুরুত্বও তেমনই বলা চলে। জীবন সুন্দর ও সমৃদ্ধ করতে বইয়ের প্রভাব অনস্বীকার্য।

বইপাঠ মানুষকে খোদাভীরু করে তোলে।

পবিত্র কুরআনে রয়েছে, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল আল্লাহকে ভয় করে।’ (সুরা ফাতির : ২৮)। আর জ্ঞান অর্জন হয় বই পাঠে। পবিত্র কুরআনে যেসব দৃষ্টান্ত রয়েছে, তা অনুধাবনের জন্যও জ্ঞানী হওয়া প্রয়োজন।

যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর এসব দৃষ্টান্ত আমি মানুষের জন্য উপস্থাপন করি, আর জ্ঞানী লোকেরা ছাড়া কেউ তা বুঝে না।’ (সুরা আনকাবুত : ৪৩)। যে জানে এবং যে জানে না এই দুই ব্যক্তি সমান হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, বল, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে? (সুরা যুমার : ৯)

মস্তিষ্ককে চিন্তা করার উপাদান তৈরি করে দেয়

চিন্তাশীল মানুষকে সবাই ভালোবাসে। চিন্তাশীল মানুষের ভুল ত্রুটিও কম হয়। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে চিন্তা করতে বলেছেন। বই মস্তিষ্ককে চিন্তা করার উপাদান তৈরি করে দেয়। একজন মানুষ যখন বইয়ের মধ্যে নতুন কোনো বিষয় পায় তখন সে এটা নিয়ে ভাবতে থাকে। এভাবে তার সামনে ভাবনার দুয়ার খুলে যায়।

সৃজনশীলতা বিস্তৃত করে

প্রতিটি সৃজনশীল লেখকই মনযোগী পাঠক৷ লেখা পাঠ থেকেই তৈরি হয়। যে লেখক যত বেশি বই পড়েন। তিনি তত বেশি সৃজনশীল লেখেন। বই মানুষের সৃজনশীলতা বিস্তৃত করে। শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ করে। কল্পনাশক্তি উন্নত করার মাধ্যমে মানুষের কল্পনার জগতকে বড় করে তোলে। সমাজ নিয়ে ভাবায়। আশেপাশের মানুষকে নিয়ে ভাবায়।

বানান শুদ্ধ করার ক্ষেত্রে বইয়ের তুলনা নেই

আমরা বাংলাদেশি। আমাদের ভাষা বাংলা। আমাদের নিজেদের ভাষা শুদ্ধ বলতে ও লিখতে পারা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। আর শুদ্ধ বানান চর্চা ও শুদ্ধ ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে বইয়ের তুলনা অন্য কিছু নেই। বইপড়ুয়াদের বানানে ভুল কম হয়। তারা অন্যদের তুলনায় শুদ্ধ বলায় অধিক পারদর্শী হয়ে থাকে৷

বইপড়ুয়ারা স্বাপ্নিক হয়ে থাকে

মানুষ তার স্বপ্নের মতো বড়। বড় স্বপ্ন দেখে তা অর্জনের চেষ্টা করতে থাকলে একজন মানুষ সফল হয়। আর বই পড়লে মানুষের স্বপ্ন বড় হয়। এবং মানুষ তা অর্জনের চেষ্টা করতে থাকে। যখন কোনো পাঠক কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির জীবন চরিত অধ্যয়ন করে তখন সে তাঁর মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখে। এবং নিজেকে সেভাবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়।

এছাড়াও বই মানসিক প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখে। উদ্দীপনা বাড়ায়। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীর ভৌগোলিক অবস্থান, ইতিহাস-ঐতিহ্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় জানতে পারে। ধর্ম, ইতিহাস, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে থাকে।

বইয়ের কথা আসলে এর সঙ্গে শিক্ষকের কথাও এসে যায়। বইয়ের মতো মানবজীবনে শিক্ষকের প্রভাবও অপরিসীম। পৃথিবীর প্রথম শিক্ষক হলেন আল্লাহ তাআলা। আর প্রথম ছাত্র হলেন আদম আ.। আদম আলাইহিস সালামের জীবনে শিক্ষকের প্রভাবের ফলে নূরের ফেরেশতারা পর্যন্ত তাকে সেজদা করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

শিক্ষক ছাত্রকে সোনালী মানুষে পরিণত করে

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন শিক্ষক। আর সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন ছাত্র। রাসুল সা. থেকে শিক্ষা লাভের পূর্বে তারা ছিলো অন্ধকারে নিমজ্জিত এক জাতি। কিন্তু রাসুলের সাহচর্যে দিনযাপন করে তারা সোনালী মানুষে পরিণত হয়েছিলেন।

শিক্ষক ছাত্রকে ভালোকাজে অনুপ্রাণিত করেন

একজন মানুষ সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত হয় তার শিক্ষক দ্বারা। কেননা তারা নিজেদের জীবনের বিশাল একটি সময় কাটায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষা গ্রহণের কাজে নিয়োজিত থেকে। এক্ষেত্রে একজন আদর্শ শিক্ষককে তারা নিজেদের জীবনের আইডল বানিয়ে নেয়।

শিক্ষকের সান্নিধ্যে থাকা শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগী হয়

যে শিক্ষার্থী নিজেকে শিক্ষকের সান্নিধ্যে রাখে সে পড়াশোনায় মনোযোগী হয়। শিক্ষকের কাছে জবাবদিহিতার ভয় তাকে মনোযোগী হতে বাধ্য করে। ফলে তার সময়ে বরকত হয়। সময় অযথা নষ্ট হয় না।

শিক্ষকের ব্যক্তিত্ব ছাত্রের জীবনবোধ উন্নত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে

শিক্ষক যদি উন্নত ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকেন তাহলে ছাত্রের মানসিক গড়ন, দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনবোধও উন্নত হয়ে উঠে। তার চিন্তা স্বচ্ছ হয়। এবং সমাজের শৃঙ্খলা বজায় ও উন্নতি সাধনে সে ছাত্র বিরাট ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়।

এজন্যে আমাদের বই পাঠ ও শিক্ষকের সান্নিধ্য অর্জনে সচেষ্ট হওয়া উচিত। বই পাঠ ও আদর্শ শিক্ষকের সান্নিধ্য অর্জন মানুষকে সফলতায় চূঁড়ায় নিয়ে যায়। এর বিপরীতে অবস্থানরত মানুষ সফল হয় না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জীবনে সফল হতে অপরিহার্য দুটি বিষয়

আপডেট টাইম : ০৬:২৬:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুন ২০২৪

কথিত আছে, বই শব্দটি ওহি থেকে এসেছে। ওহি থেকে বহি, বহি থেকে বই। মানবজীবনে ওহির গুরুত্ব ও প্রভাব যেমন বইয়ের গুরুত্বও তেমনই বলা চলে। জীবন সুন্দর ও সমৃদ্ধ করতে বইয়ের প্রভাব অনস্বীকার্য।

বইপাঠ মানুষকে খোদাভীরু করে তোলে।

পবিত্র কুরআনে রয়েছে, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল আল্লাহকে ভয় করে।’ (সুরা ফাতির : ২৮)। আর জ্ঞান অর্জন হয় বই পাঠে। পবিত্র কুরআনে যেসব দৃষ্টান্ত রয়েছে, তা অনুধাবনের জন্যও জ্ঞানী হওয়া প্রয়োজন।

যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর এসব দৃষ্টান্ত আমি মানুষের জন্য উপস্থাপন করি, আর জ্ঞানী লোকেরা ছাড়া কেউ তা বুঝে না।’ (সুরা আনকাবুত : ৪৩)। যে জানে এবং যে জানে না এই দুই ব্যক্তি সমান হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, বল, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে? (সুরা যুমার : ৯)

মস্তিষ্ককে চিন্তা করার উপাদান তৈরি করে দেয়

চিন্তাশীল মানুষকে সবাই ভালোবাসে। চিন্তাশীল মানুষের ভুল ত্রুটিও কম হয়। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে চিন্তা করতে বলেছেন। বই মস্তিষ্ককে চিন্তা করার উপাদান তৈরি করে দেয়। একজন মানুষ যখন বইয়ের মধ্যে নতুন কোনো বিষয় পায় তখন সে এটা নিয়ে ভাবতে থাকে। এভাবে তার সামনে ভাবনার দুয়ার খুলে যায়।

সৃজনশীলতা বিস্তৃত করে

প্রতিটি সৃজনশীল লেখকই মনযোগী পাঠক৷ লেখা পাঠ থেকেই তৈরি হয়। যে লেখক যত বেশি বই পড়েন। তিনি তত বেশি সৃজনশীল লেখেন। বই মানুষের সৃজনশীলতা বিস্তৃত করে। শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ করে। কল্পনাশক্তি উন্নত করার মাধ্যমে মানুষের কল্পনার জগতকে বড় করে তোলে। সমাজ নিয়ে ভাবায়। আশেপাশের মানুষকে নিয়ে ভাবায়।

বানান শুদ্ধ করার ক্ষেত্রে বইয়ের তুলনা নেই

আমরা বাংলাদেশি। আমাদের ভাষা বাংলা। আমাদের নিজেদের ভাষা শুদ্ধ বলতে ও লিখতে পারা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। আর শুদ্ধ বানান চর্চা ও শুদ্ধ ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে বইয়ের তুলনা অন্য কিছু নেই। বইপড়ুয়াদের বানানে ভুল কম হয়। তারা অন্যদের তুলনায় শুদ্ধ বলায় অধিক পারদর্শী হয়ে থাকে৷

বইপড়ুয়ারা স্বাপ্নিক হয়ে থাকে

মানুষ তার স্বপ্নের মতো বড়। বড় স্বপ্ন দেখে তা অর্জনের চেষ্টা করতে থাকলে একজন মানুষ সফল হয়। আর বই পড়লে মানুষের স্বপ্ন বড় হয়। এবং মানুষ তা অর্জনের চেষ্টা করতে থাকে। যখন কোনো পাঠক কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির জীবন চরিত অধ্যয়ন করে তখন সে তাঁর মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখে। এবং নিজেকে সেভাবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়।

এছাড়াও বই মানসিক প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখে। উদ্দীপনা বাড়ায়। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীর ভৌগোলিক অবস্থান, ইতিহাস-ঐতিহ্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় জানতে পারে। ধর্ম, ইতিহাস, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে থাকে।

বইয়ের কথা আসলে এর সঙ্গে শিক্ষকের কথাও এসে যায়। বইয়ের মতো মানবজীবনে শিক্ষকের প্রভাবও অপরিসীম। পৃথিবীর প্রথম শিক্ষক হলেন আল্লাহ তাআলা। আর প্রথম ছাত্র হলেন আদম আ.। আদম আলাইহিস সালামের জীবনে শিক্ষকের প্রভাবের ফলে নূরের ফেরেশতারা পর্যন্ত তাকে সেজদা করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

শিক্ষক ছাত্রকে সোনালী মানুষে পরিণত করে

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন শিক্ষক। আর সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন ছাত্র। রাসুল সা. থেকে শিক্ষা লাভের পূর্বে তারা ছিলো অন্ধকারে নিমজ্জিত এক জাতি। কিন্তু রাসুলের সাহচর্যে দিনযাপন করে তারা সোনালী মানুষে পরিণত হয়েছিলেন।

শিক্ষক ছাত্রকে ভালোকাজে অনুপ্রাণিত করেন

একজন মানুষ সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত হয় তার শিক্ষক দ্বারা। কেননা তারা নিজেদের জীবনের বিশাল একটি সময় কাটায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষা গ্রহণের কাজে নিয়োজিত থেকে। এক্ষেত্রে একজন আদর্শ শিক্ষককে তারা নিজেদের জীবনের আইডল বানিয়ে নেয়।

শিক্ষকের সান্নিধ্যে থাকা শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগী হয়

যে শিক্ষার্থী নিজেকে শিক্ষকের সান্নিধ্যে রাখে সে পড়াশোনায় মনোযোগী হয়। শিক্ষকের কাছে জবাবদিহিতার ভয় তাকে মনোযোগী হতে বাধ্য করে। ফলে তার সময়ে বরকত হয়। সময় অযথা নষ্ট হয় না।

শিক্ষকের ব্যক্তিত্ব ছাত্রের জীবনবোধ উন্নত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে

শিক্ষক যদি উন্নত ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকেন তাহলে ছাত্রের মানসিক গড়ন, দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনবোধও উন্নত হয়ে উঠে। তার চিন্তা স্বচ্ছ হয়। এবং সমাজের শৃঙ্খলা বজায় ও উন্নতি সাধনে সে ছাত্র বিরাট ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়।

এজন্যে আমাদের বই পাঠ ও শিক্ষকের সান্নিধ্য অর্জনে সচেষ্ট হওয়া উচিত। বই পাঠ ও আদর্শ শিক্ষকের সান্নিধ্য অর্জন মানুষকে সফলতায় চূঁড়ায় নিয়ে যায়। এর বিপরীতে অবস্থানরত মানুষ সফল হয় না।