ভুটান সীমান্ত পর্যন্ত ভারতীয় রেলওয়ের পরিবহনের সুবিধার্থে বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। এতে ভারত থেকে ট্রেন বাংলাদেশে প্রবেশ করে পুনরায় ভারত হয়ে ভুটানের সীমান্তের কাছাকাছি স্টেশন পর্যন্ত ট্রেন চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ভারতের এই রেল ট্রান্সশিপমেন্ট প্রস্তাবের বিপরীতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দুটি রুট প্রস্তাব করার বিষয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
ভারতের দেওয়া প্রস্তাবে যে রুটের কথা বলা হয়েছে তা হলো- ভারতের গেদে দিয়ে বাংলাদেশের দর্শনা হয়ে ঈশ্বরদী, আব্দুলপুর, পার্বতীপুর ও চিলাহাটি বর্ডার হয়ে ভারতের হলদিবাড়ী দিয়ে ডালগাঁও (ভুটান সীমান্তের নিকটবর্তী ভারতীয় রেলওয়ে স্টেশন) পর্যন্ত। এর ফলে অন্তত ৩০০ কিলোকিলোমিটার পথ সাশ্রয় হবে ভারতের। বর্তমানে ভারতীয় রেলওয়ে পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে বিহার হয়ে ঘুরে আবার পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি তথা শিলিগুড়ি পথে ট্রেন চালায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী জানান, ট্রেন চালানোর একটি প্রস্তাব পেয়ে মতামত নিচ্ছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। ট্রেন চালানোর বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি দিয়েছে।
জানা গেছে, ভারতের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে গত ১৫ মে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় পরীক্ষামূলক ট্রেন পরিচালনার প্রস্তাবের ওপর মতামত চাওয়া হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের কাছে।। এরপর চিঠি দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত পাওয়া গেছে। ইতিবাচক মত পাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র।
রেল সূত্র জানায়, ভারতের দেওয়া রুটের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে দুটি রুটের প্রস্তাব করার ব্যাপারে পরিকল্পনা তৈরি করছে। যার একটি বাংলাদেশ দর্শনা-চিলাহাটি হয়ে ভারতের হলদিবাড়ী, জলপাইগুড়ি, ধুপগুড়ি, ফালাকাটা, ডালগাঁও হয়ে হাসিমারা স্টেশন পর্যন্ত। অর্থাৎ হাসিমারা স্টেশন পর্যন্ত ট্রেন চালানো যেতে পারে। সেই সুযোগ আছে। হাসিমারা স্টেশনের কাছাকাছি ১৮ কিলোমিটারে মধ্যে ভুটানের ল্যান্ড পোর্ট আছে, যার নাম ফুলছড়িং। যদি এই ল্যান্ড পোর্ট পর্যন্ত যাওয়া যায়, তাহলে ট্রান্সশিপমেন্ট করে ট্রেন থেকে মাল আনলোড করে ট্রাকে ভুটানে নেওয়া যাবে। কারণ ভুটানে কোনো রেললাইন নেই। তবে ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য আছে, যা ভুটান থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশ আসে।
রেলওয়ের আরেকটি রুটের পরিকল্পনা হচ্ছে আসামের কোকরাজ থেকে গেলেগু পর্যন্ত ৫৮ কিলোমিটার রেলপথ হচ্ছে। এই ৫৮ কিলোমিটার রেলপথ হলে ভুটানের অভ্যন্তরে রেলপথ হয়ে যাবে। বর্তমানে ভুটানে কোনো রেলপথ নেই। ফলে বাংলাদেশের চিলাহাটি হয়ে ভারতের হলদিবাড়ী দিয়ে আসাম কোকরাজ-গেলেগু (ভুটান) পর্যন্ত এই রুটেরও পরিকল্পনা করা হয়েছে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতের প্রস্তাবের বিপরীতে এই দুটি রুটের প্রস্তাব করা হবে। যদিও গেলেগু পর্যন্ত রেললাইন হতে সময় লাগবে। এটি যতদিন না হয় ততদিন হাসিমারা পর্যন্ত ট্রেন চালানো যেতে পারে।