হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিসহ ৯ জন নিহতের পর থেকে এ ঘটনা নিয়ে চলছে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের আলোচনা। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে এ ঘটনার জন্য অনেকে সন্দেহ করছে। তবে ইরানি সেনাবাহিনীর (আইআরজিসি) গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে এমন কিছু পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ দুর্ঘটনার ব্যাপারে সন্দেহজনক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সবকিছুই স্বাভাবিক নিয়মেই চলছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
তাসনিম ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার তদন্ত প্রতিবেদন আইআরজিসির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের পর গত সোমবার (২০ মে) দুর্ঘটনাস্থলে যায় তদন্তকারী দলের সদস্যরা। বিশেষজ্ঞ, প্রযুক্তিবিদদের সমন্বয়ে এ তদন্তকারী দল গঠিত হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হেলিকপ্টারটি পুরো পথ ধরে তার পূর্বনির্ধারিত পথেই ছিল এবং ফ্লাইট রুট থেকে বিচ্যুত হয়নি। দুর্ঘটনার দেড় মিনিট আগেই বিধ্বস্ত হওয়া হেলিকপ্টারের পাইলট প্রেসিডেন্টের বহরে থাকা অন্য দুই হেলিকপ্টারের পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিধ্বস্ত হওয়া হেলিকপ্টারে বুলেট বা অনুরূপ কোনো জিনিসের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয় একটি পর্বতে। এরপরই সেটিতে আগুন ধরে যায়।
আরও উল্লেখ করা হয়, ড্রোনের সহায়তায় বিধ্বস্ত হেলিপ্টারের সঠিক অবস্থান শনাক্ত করা হয়। দুর্ঘটনার সময় ওয়াচটাওয়ার এবং ফ্লাইট ক্রুদের মধ্যে কথোপকথনেও কোনো সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনে এও বলা হয়, এ দুর্ঘটনা নিয়ে আরও তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে এই তদন্ত প্রতিবেদনে বিশ্লেষকদের অনেকেই সন্তুষ্ট হতে পারেননি। কেউ কেউ এটাকে আইআরজিসির মিডিয়া কৌশল হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, কোনো কিছু আড়াল করতেই এ ধরনের প্রতিবেদন দিয়ে রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দিয়ে উল্লেখ করেছেন, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো প্রায়ই চাপিয়ে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। কারণ অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের কাছে এই ধরনের তথ্যের অ্যাক্সেস থাকে না।
রাষ্ট্রীয়ভাবে এই কৌশলটির লক্ষ্য হলো জনগণকে ধীরে ধীরে সম্ভাব্য বড় কোনো খবরের জন্য প্রস্তুত করা। সে অনুযায়ী, পরস্পরবিরোধী বা প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে আইআরজিসি অধিভুক্ত মিডিয়া জনসাধারণকে বড় খবর সহজে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত করতে চাইছে। এতে সামাজিকভাবে যে প্রতিক্রিয়া আসার কথা ছিল তা ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে। কোনো কোনো বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করাও আইআরজিসির কৌশল। সেইমতো নিশ্চিত করা হয়েছে যে, তাদের উদ্দেশ্য মতোই সংবাদগুলো পরিবেশন করা হয়েছে এবং জনগণের প্রতিক্রিয়া হ্রাস করা গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাইসির মতো রাষ্ট্রের কোনো নেতার সফরের জন্য স্ট্যান্ডার্ড প্রোটোকলে তিনটি হেলিকপ্টার থাকে। একটি থাকে সামনে, অন্যটি মাঝখানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য এবং তৃতীয়টি পেছন থেকে সহায়তার জন্য। তবে রাইসির বেলায় শেষ মুহূর্তে হেলিকপ্টারের পজিশনে অদলবদল করা হয়, যা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ছিল না। তদন্তে এসব এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকরা, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নেতৃত্বে আরোহণের জন্য ‘ষড়যন্ত্রের’ বিষয়টিও ইঙ্গিত করছেন। কারণ সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির পরবর্তী অবস্থানে ছিলেন রাইসি। তিনি মারা যাওয়ায় এই অবস্থানে চলে এসেছেন তার ছেলে। বিষয়টি ইঙ্গিতপূর্ণ বলে অনেকে মনে করেন।