ঈদুল আজহা সামনে রেখে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাড়ছে মসলা পণ্যের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, হলুদ ও জিরার দাম ফের বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগি ও ডিম খুচরা বাজারে বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে ভোজ্যতেল। ফলে বাজারে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতার ভোগান্তি বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি রসুন, পেঁয়াজের দাম মাত্র ক’দিনের ব্যবধানেই কেজিপ্রতি অন্তত ১০ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আদার দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এভাবে শুকনা মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ থেকে শুরু করে সব ধরনের মসলা পণ্যের দামই অস্বাভাবিক বেড়েছে। যদিও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে বলেই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শুধু পেঁয়াজ-আদা-রসুন নয়, বাজারে চাল, ডাল ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। মসলার না হয় চাহিদা বেশি; কিন্তু ভরা মৌসুমেও চালের দাম কেন বাড়তি, সে প্রশ্নের উত্তর কী?
সাধারণভাবে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে বাজারে পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকলে পণ্যের দাম বাড়তেই পারে। কিন্তু আমাদের দেশে এ নিয়ম খাটছে না। দ্রব্যমূল্যের অযৌক্তিক বৃদ্ধির পেছনে কাজ করছে বাজার সিন্ডিকেট। তারা যোগসাজশের মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো তারা পণ্যের কৃত্রিম সংকটও সৃষ্টি করে। এছাড়া নানা অজুহাত তুলেও বাড়ানো হয় পণ্যের দাম। এ অবস্থায় বেশি দামে পণ্য ক্রয় করা ছাড়া ভোক্তাদের কোনো উপায় থাকে না। অতিমুনাফার লোভে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের শাস্তি হওয়া উচিত; কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা বিরল। ফলে কারসাজি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। আমরা মনে করি, যারা পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করছে, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া দরকার। সরকার অবশ্য সরবরাহ বাড়ানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার পরিচয় দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি অতি মুনাফালোভী সিন্ডিকেটকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো কঠিন হবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।