ঢাকা ০৮:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভয়ংকর এপ্রিল দেখল দেশ, ১৫ জেলায় ৪০ ডিগ্রির ওপর তাপমাত্রা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০২৪
  • ১১ বার
রেকর্ড ভাঙা এক তাপমাত্রার দিন দেখল বাংলাদেশ। দেশের চারটি জেলায় গতকাল মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর ওপর। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৪৪টি পর্যবেক্ষণাগারের ১৫টিতেই তাপমাত্রা ছড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রির ওপর। সে হিসাবে দেশের ৩৪ শতাংশ এলাকায়ই গতকাল তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল।

এপ্রিল মাসের মধ্যে গতকালই প্রথম দেশের সব অঞ্চলে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। গরমে অসুস্থ হয়ে গতকাল সারা দেশে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতির মাত্রা তুলে ধরে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এত বেশি জায়গাজুড়ে দীর্ঘ এক মাসব্যাপী তাপপ্রবাহ নজিরবিহীন ঘটনা।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, রাজশাহী, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল।

টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নারায়ণঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর এবং খুলনা বিভাগে ছিল তীব্র তাপপ্রবাহ। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) সারা দেশে তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৭৬ বছরের মধ্যে এপ্রিল মাসজুড়ে তাপপ্রবাহের এ রকম রেকর্ড ছিল না এত বিস্তৃত অঞ্চলে।

এর আগে ১৯৯২ সালে সর্বোচ্চ একটানা ৩০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল দেশের পশ্চিমাঞ্চলে। সুতরাং তাপপ্রবাহের এলাকা ও বিস্তৃতি বিবেচনায় এবং এপ্রিল মাস হিসেবে এ রকম দীর্ঘ এক মাসব্যাপী তাপপ্রবাহ এর আগে ছিল না।’

তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তা মৃদু, ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। ৪২ ডিগ্রি বা এর বেশি তাপমাত্রা হলে তখন তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হয়।

আবহাওয়া অফিস বলছে, আজও এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।

তবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে দিনের তাপমাত্রা কমতে পারে। শুক্রবার থেকে দেশে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়তে পারে। এদিন দেশের পূর্বাঞ্চলে তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি কমতে পারে। তারপর থেকে সারা দেশে ক্রমে বৃষ্টিপাতের এলাকা বেড়ে তাপমাত্রা আরো কমতে পারে।

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩.৮ ডিগ্রি যশোরে

গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে, ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা কয়েক দিন ধরে গরমের তালিকার ওপরের দিকে থাকা চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩.৭ ডিগ্রি।

এ ছাড়া পাবনার ঈশ্বরদী ও রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৪৩.২ ও ৪৩ ডিগ্রি। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৯৭২ সালের মে মাসে রাজশাহীতে, ৪৫.১ ডিগ্রি। এ ছাড়া ১৯৬৪ সালের ১৫ এপ্রিল যশোরে ৪৪.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা ছিল।

চুয়াডাঙ্গায় ৪০, রাজশাহীতে ১৯ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা

চুয়াডাঙ্গায় এপ্রিল মাসজুড়ে ছিল রেকর্ড তাপমাত্রা। ঝাঁজালো রোদ আর ভাপসা গরমের কষ্টে মাসজুড়ে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। সব শ্রেণির মানুষকেই তীব্র গরমে কষ্ট পেতে হয়েছে। রিকশা-ভ্যানচালক, দিনমজুর ও কৃষি শ্রমিকের দুর্ভোগ ছিল সবচেয়ে বেশি।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, ১৯৮৫ সালে জেলার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গতকালই ছিল এখানে রেকর্ড হওয়া সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে গত বছর চুয়াডাঙ্গা জেলায় এপ্রিল মাসে টানা ১৭ দিন তাপপ্রবাহের রেকর্ড ছিল। এ বছর গতকাল পর্যন্ত টানা তাপপ্রবাহ চলেছে ২০ দিন। পরিসংখান অনুযায়ী সম্প্রতি অন্তত ১০ বছরের মধ্যে এ জেলায় এত বেশি তাপপ্রবাহ দেখা যায়নি।

চুয়াডাঙ্গা শেখপাড়ার বাসিন্দা শরীফউদ্দিন একজন আইনজীবী। তিনি কৃষি কাজ করেন। শরীফউদ্দিন বলেন, ‘এবারের এপ্রিল মাসের তীব্র তাপপ্রবাহে শুধু মানুষ নয়, প্রাণিকুলকেও অবর্ণনীয় কষ্টে থাকতে হয়েছে। কৃষকরা পড়েছেন মহা বিড়ম্বনায়। রোদ-গরমের কারণে তাঁরা মাঠে গিয়ে কাজ করতে পারেননি। ধান কাটতে যাঁরা গেছেন তাঁরা খুব ভোরে মাঠে গিয়ে সকাল ১০টার মধ্যে কাজ শেষ করে ফিরে এসেছেন।’

তীব্র তাপপ্রবাহে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ও চিকিৎসা নিয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল, দামুড়হুদা, আলমডাঙ্গা ও জীবননগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ ছিল বেশি।

রাজশাহীর তাপমাত্রা এবার অনেক বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। গতকাল বিকেল ৩টায় রাজশাহীতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত ১৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

আবহাওয়া অফিসের হিসাবে রাজশাহীতে এখন অতি তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। সর্বশেষ গত ৩০ মার্চ মাত্র এক মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। পরদিন থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

গরমে আরো ৫ মৃত্যু

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গরমে অসুস্থ হয়ে আরো অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ সদরে গতকাল গরমে অসুস্থ হয়ে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সদর উপজেলার চর কিশোরগঞ্জের মোল্লার চরে ওমর আলী (৬৫) ও মুন্সীগঞ্জ সদর রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে আব্দুল বাতেন মাঝি (৬৮) মারা যান। একই দিনে হিট স্ট্রোকের লক্ষণ নিয়ে চারজন মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার শৈবাল বসাক বলেছেন, প্রচণ্ড গরমে দুই বৃদ্ধ জ্ঞান হারিয়ে মারা গেছেন। এটা হিট স্ট্রোক হতে পারে, তবে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।

নাটোরে ভুট্টা ক্ষেতে কাজ করার সময় গরমে অসুস্থ হয়ে মো. খাইরুল ইসলাম (৫০) নামের এক সৌদিপ্রবাসী মারা গেছেন। গতকাল নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা ইউনিয়নের উজানপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন, ‘সব কিছু শুনে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, খাইরুল ইসলাম হয়তো হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন।’

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে গরমে অসুস্থ হয়ে জিল্লুর রহমান (৩৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান। গতকাল সকালে উপজেলার সলপ ইউনিয়নের চর তাড়াবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল দুপুরে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার তালতলা গ্রামে গরমে মনছের আলী সরকার (৯৫) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।

হিট স্ট্রোকে ৯ দিনে ১১ জনের মৃত্যু : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২২ এপ্রিল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত হিট স্ট্রোকে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ জনই পুরুষ। অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ‘মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ দুজন। এ ছাড়া একজন করে মারা গেছে খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, হবিগঞ্জ, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, লালমনিরহাট, বান্দরবান ও মাদারীপুরে।’

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি, নাটোর প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ভয়ংকর এপ্রিল দেখল দেশ, ১৫ জেলায় ৪০ ডিগ্রির ওপর তাপমাত্রা

আপডেট টাইম : ১১:১৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০২৪
রেকর্ড ভাঙা এক তাপমাত্রার দিন দেখল বাংলাদেশ। দেশের চারটি জেলায় গতকাল মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর ওপর। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৪৪টি পর্যবেক্ষণাগারের ১৫টিতেই তাপমাত্রা ছড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রির ওপর। সে হিসাবে দেশের ৩৪ শতাংশ এলাকায়ই গতকাল তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল।

এপ্রিল মাসের মধ্যে গতকালই প্রথম দেশের সব অঞ্চলে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। গরমে অসুস্থ হয়ে গতকাল সারা দেশে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতির মাত্রা তুলে ধরে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এত বেশি জায়গাজুড়ে দীর্ঘ এক মাসব্যাপী তাপপ্রবাহ নজিরবিহীন ঘটনা।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, রাজশাহী, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল।

টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নারায়ণঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর এবং খুলনা বিভাগে ছিল তীব্র তাপপ্রবাহ। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) সারা দেশে তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৭৬ বছরের মধ্যে এপ্রিল মাসজুড়ে তাপপ্রবাহের এ রকম রেকর্ড ছিল না এত বিস্তৃত অঞ্চলে।

এর আগে ১৯৯২ সালে সর্বোচ্চ একটানা ৩০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল দেশের পশ্চিমাঞ্চলে। সুতরাং তাপপ্রবাহের এলাকা ও বিস্তৃতি বিবেচনায় এবং এপ্রিল মাস হিসেবে এ রকম দীর্ঘ এক মাসব্যাপী তাপপ্রবাহ এর আগে ছিল না।’

তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তা মৃদু, ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। ৪২ ডিগ্রি বা এর বেশি তাপমাত্রা হলে তখন তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হয়।

আবহাওয়া অফিস বলছে, আজও এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।

তবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে দিনের তাপমাত্রা কমতে পারে। শুক্রবার থেকে দেশে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়তে পারে। এদিন দেশের পূর্বাঞ্চলে তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি কমতে পারে। তারপর থেকে সারা দেশে ক্রমে বৃষ্টিপাতের এলাকা বেড়ে তাপমাত্রা আরো কমতে পারে।

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩.৮ ডিগ্রি যশোরে

গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে, ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা কয়েক দিন ধরে গরমের তালিকার ওপরের দিকে থাকা চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩.৭ ডিগ্রি।

এ ছাড়া পাবনার ঈশ্বরদী ও রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৪৩.২ ও ৪৩ ডিগ্রি। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৯৭২ সালের মে মাসে রাজশাহীতে, ৪৫.১ ডিগ্রি। এ ছাড়া ১৯৬৪ সালের ১৫ এপ্রিল যশোরে ৪৪.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা ছিল।

চুয়াডাঙ্গায় ৪০, রাজশাহীতে ১৯ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা

চুয়াডাঙ্গায় এপ্রিল মাসজুড়ে ছিল রেকর্ড তাপমাত্রা। ঝাঁজালো রোদ আর ভাপসা গরমের কষ্টে মাসজুড়ে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। সব শ্রেণির মানুষকেই তীব্র গরমে কষ্ট পেতে হয়েছে। রিকশা-ভ্যানচালক, দিনমজুর ও কৃষি শ্রমিকের দুর্ভোগ ছিল সবচেয়ে বেশি।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, ১৯৮৫ সালে জেলার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গতকালই ছিল এখানে রেকর্ড হওয়া সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে গত বছর চুয়াডাঙ্গা জেলায় এপ্রিল মাসে টানা ১৭ দিন তাপপ্রবাহের রেকর্ড ছিল। এ বছর গতকাল পর্যন্ত টানা তাপপ্রবাহ চলেছে ২০ দিন। পরিসংখান অনুযায়ী সম্প্রতি অন্তত ১০ বছরের মধ্যে এ জেলায় এত বেশি তাপপ্রবাহ দেখা যায়নি।

চুয়াডাঙ্গা শেখপাড়ার বাসিন্দা শরীফউদ্দিন একজন আইনজীবী। তিনি কৃষি কাজ করেন। শরীফউদ্দিন বলেন, ‘এবারের এপ্রিল মাসের তীব্র তাপপ্রবাহে শুধু মানুষ নয়, প্রাণিকুলকেও অবর্ণনীয় কষ্টে থাকতে হয়েছে। কৃষকরা পড়েছেন মহা বিড়ম্বনায়। রোদ-গরমের কারণে তাঁরা মাঠে গিয়ে কাজ করতে পারেননি। ধান কাটতে যাঁরা গেছেন তাঁরা খুব ভোরে মাঠে গিয়ে সকাল ১০টার মধ্যে কাজ শেষ করে ফিরে এসেছেন।’

তীব্র তাপপ্রবাহে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ও চিকিৎসা নিয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল, দামুড়হুদা, আলমডাঙ্গা ও জীবননগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ ছিল বেশি।

রাজশাহীর তাপমাত্রা এবার অনেক বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। গতকাল বিকেল ৩টায় রাজশাহীতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত ১৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

আবহাওয়া অফিসের হিসাবে রাজশাহীতে এখন অতি তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। সর্বশেষ গত ৩০ মার্চ মাত্র এক মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। পরদিন থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

গরমে আরো ৫ মৃত্যু

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গরমে অসুস্থ হয়ে আরো অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ সদরে গতকাল গরমে অসুস্থ হয়ে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সদর উপজেলার চর কিশোরগঞ্জের মোল্লার চরে ওমর আলী (৬৫) ও মুন্সীগঞ্জ সদর রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে আব্দুল বাতেন মাঝি (৬৮) মারা যান। একই দিনে হিট স্ট্রোকের লক্ষণ নিয়ে চারজন মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার শৈবাল বসাক বলেছেন, প্রচণ্ড গরমে দুই বৃদ্ধ জ্ঞান হারিয়ে মারা গেছেন। এটা হিট স্ট্রোক হতে পারে, তবে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।

নাটোরে ভুট্টা ক্ষেতে কাজ করার সময় গরমে অসুস্থ হয়ে মো. খাইরুল ইসলাম (৫০) নামের এক সৌদিপ্রবাসী মারা গেছেন। গতকাল নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা ইউনিয়নের উজানপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন, ‘সব কিছু শুনে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, খাইরুল ইসলাম হয়তো হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন।’

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে গরমে অসুস্থ হয়ে জিল্লুর রহমান (৩৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান। গতকাল সকালে উপজেলার সলপ ইউনিয়নের চর তাড়াবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল দুপুরে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার তালতলা গ্রামে গরমে মনছের আলী সরকার (৯৫) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।

হিট স্ট্রোকে ৯ দিনে ১১ জনের মৃত্যু : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২২ এপ্রিল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত হিট স্ট্রোকে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ জনই পুরুষ। অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ‘মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ দুজন। এ ছাড়া একজন করে মারা গেছে খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, হবিগঞ্জ, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, লালমনিরহাট, বান্দরবান ও মাদারীপুরে।’

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি, নাটোর প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা