ঢাকা ০৭:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গরমে আরো ৬ মৃত্যু, ১ মে থেকে কমতে পারে তাপমাত্রা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪২:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • ৮৬ বার
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে একটানা ২৯ দিন ধরে বয়ে চলা তাপপ্রবাহ থামার কোনো লক্ষণ নেই। আগের দিন কিছুটা কমলেও গতকাল রবিবার স্থানভেদে তাপমাত্রা বেড়েছে ১ থেকে ৫ ডিগ্রি। এতে সারা দেশে অতি তীব্র ও তীব্র তাপপ্রবাহের আওতাধীন এলাকার সংখ্যাও বেড়েছে। গরমে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের।

পাশাপাশি আবহাওয়া অধিদপ্তর এও বলেছে, আগামী বুধবার (১ মে) থেকে দিনের তাপমাত্রা কমতে পারে।চলমান পরিস্থিতিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল নতুন করে আরো তিন দিনের জন্য তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে। এ নিয়ে চলতি মাসে অষ্টমবারের মতো তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা দেওয়া হলো। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, চলমান তাপপ্রবাহ বুধবার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে এ সময়ে গরমের অনুভূতি বাড়তে পারে।আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ ও আগামীকাল মঙ্গলবার সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী মাসের শুরুর দিকে সারা দেশেই বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামী দুই দিন তাপমাত্রা ও তাপপ্রবাহ কমবেশি একই রকম থাকতে পারে।

বুধবার থেকে তাপমাত্রা কমতে পারে। বৃহস্পতিবার (২ মে) সিলেট, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের কিছু অংশে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পরদিন থেকে বৃষ্টিপাতের এলাকা ও পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।’তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহের এলাকা বেড়েছে
আগের দিনের তুলনায় গতকাল সারা দেশে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে, ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজধানীতে আগের দিনের তুলনায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ১.৬ ডিগ্রি। ঢাকায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি।আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক জানান, আগের দিনের তুলনায় গতকাল সারা দেশে তাপমাত্রা স্থানভেদে ১ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে অঞ্চলভেদে তাপমাত্রা বেশি ছিল ১ থেকে ৮ ডিগ্রি।

গতকাল দেশের দুই জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। আগের দিন পাঁচ জেলায় থাকলেও গতকাল তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে অন্তত ১১ জেলার ওপর দিয়ে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজশাহী ও যশোর জেলায় গতকাল অতি তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল। যশোর ছাড়া খুলনা বিভাগের বাকি অংশ এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা ও নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বাকি জেলাগুলোতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল। বরিশাল বিভাগের সব জেলা, চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচ জেলা, ময়মনসিংহ বিভাগের এক জেলা ও সিলেট বিভাগের এক জেলায়ও মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মৃদু, ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। ৪২ ডিগ্রি বা এর বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সিলেটের দুই জেলায় বৃষ্টি
এদিকে দেশের অন্য কোথাও বৃষ্টি না হলেও গতকাল সিলেট বিভাগের দুই জেলায় ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১৬ মিলিমিটার ও শ্রীমঙ্গলে ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে আজও। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগের কোনো কোনো অঞ্চলেও ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

গরমে ৬ জনের মৃত্যু
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসহনীয় গরমে অসুস্থ হয়ে অন্তত ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে গতকাল মাদারীপুরের কালকিনি ও ডাসার উপজেলায় শাহাদাত্ সরদার (৫২) ও মোসলেম ঘরামী (৫৮) নামের দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। শাহাদাত্ সরদার কালকিনির পশ্চিম শিকারমঙ্গল গ্রামের মৃত সালাম সরদারের ছেলে এবং মোসলেম ঘরামী ডাসার উপজেলার পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামের মৃত ইসলাম ঘরামীর ছেলে।

পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, গতকাল সকালে প্লাস্টিক কারখানা মালিক শাহাদাত্ সরদার নিজ বাড়িতে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর বুকে ব্যথা শুরু হলে বাড়িতেই মৃত্যু হয় তাঁর। অন্যদিকে সকালে বাড়ির পাশে পাটক্ষেতে কাজে যাওয়ার পর কৃষক মোসলেম ঘরামীকে দুপুরে সেখানেই মৃত পাওয়া যায়।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, হিট স্ট্রোকে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবারের সদস্যরা।

নরসিংদী আদালত প্রাঙ্গণে গরমে অসুস্থ হয়ে গতকাল দুপুরে সুলতান উদ্দিন (৭৮) নামের এক বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। সদর উপজেলার ভেলানগর এলাকার বাসিন্দা সুলতান উদ্দিন পেশায় একজন আইনজীবীর সহকারী (মুহুরি) ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনরা জানায়, আদালতে কাজ করার সময় মানুষের ভিড়ে হঠাত্ অসুস্থ হয়ে পড়েন সুলতান উদ্দিন। ১০০ শয্যার জেলা হাসপাতালে নেওয়ার সময় পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ এন এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা মুশকিল। তবে স্বজনরা জানিয়েছে, রোগীর বুকে ব্যথা ছিল।’

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে গতকাল সকালে মাওলানা মোস্তাক আহমদ কুতুবী (৫৬) নামের এক মাদরাসা শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজারের উত্তর লেমশীখালীর ধুরুং বাজার এলাকার বাসিন্দা মোস্তাক আহমদ বোয়ালখালীর খিতাপচর আজিজিয়া মাবুদিয়া সিনিয়র মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কালুরঘাট ফেরিতে উঠে সেখানেই ঢলে পড়েন মোস্তাক আহমদ। সহকর্মী মো. মাসুম জানান, তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সক সাড়ে ১০টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।

যশোরের কেশবপুরে প্রচণ্ড গরমে কাজ করার সময় জোহর আলী সরদার (৫০) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার বড়েঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। জোহর আলীর ছেলে জসিম উদ্দীন জানান, তাঁর বাবা গতকাল সকালে বাড়ির পাশের জমিতে কেটে রাখা ধানের আঁটি বেঁধে বাড়ি নিয়ে আসেন। এরপর তিনি পানি খেতে চান। পানি দেওয়া হলেও তা পান করার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ক্ষেতে কাজ করার সময় অসুস্থ হয়ে নুর ইসলাম (৪৭) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল হরিরামপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে বলে পার্বতীপুর মডেল থানার ওসি চিত্ত রঞ্জন রায় নিশ্চিত করেছেন।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ির পাশের ভুট্টাক্ষেতে গরুর জন্য ঘাস কাটতে যান নুর ইসলাম। দুপুরের পর অন্য কৃষকরা ঘাস কাটতে গেলে তাঁকে সেখানে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরিবারের ধারণা, হিট স্ট্রোকে নুর ইসলামের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে যশোরে ধান কেটে বাড়ি ফেরার পর আহসান হাবিব (৩৭) নামের এক স্কুল শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের আমদাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ছিলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা আহসান হাবিবকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিলে সেখানে চিকিত্সক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে স্থানীয়রা হিট স্ট্রোকের কথা বললেও জরুরি বিভাগের চিকিত্সক হাসিব মোহাম্মদ আলী আহসান জানান, হিট স্ট্রোকে যে ধরনের লক্ষণ থাকে তা ছিল না। এটা সাধারণ স্ট্রোকজনিত মৃত্যু।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন যশোর, নরসিংদী, কালকিনি (মাদারীপুর), বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম), কেশবপুর (যশোর), পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

গরমে আরো ৬ মৃত্যু, ১ মে থেকে কমতে পারে তাপমাত্রা

আপডেট টাইম : ১০:৪২:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে একটানা ২৯ দিন ধরে বয়ে চলা তাপপ্রবাহ থামার কোনো লক্ষণ নেই। আগের দিন কিছুটা কমলেও গতকাল রবিবার স্থানভেদে তাপমাত্রা বেড়েছে ১ থেকে ৫ ডিগ্রি। এতে সারা দেশে অতি তীব্র ও তীব্র তাপপ্রবাহের আওতাধীন এলাকার সংখ্যাও বেড়েছে। গরমে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের।

পাশাপাশি আবহাওয়া অধিদপ্তর এও বলেছে, আগামী বুধবার (১ মে) থেকে দিনের তাপমাত্রা কমতে পারে।চলমান পরিস্থিতিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল নতুন করে আরো তিন দিনের জন্য তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে। এ নিয়ে চলতি মাসে অষ্টমবারের মতো তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা দেওয়া হলো। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, চলমান তাপপ্রবাহ বুধবার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে এ সময়ে গরমের অনুভূতি বাড়তে পারে।আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ ও আগামীকাল মঙ্গলবার সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী মাসের শুরুর দিকে সারা দেশেই বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামী দুই দিন তাপমাত্রা ও তাপপ্রবাহ কমবেশি একই রকম থাকতে পারে।

বুধবার থেকে তাপমাত্রা কমতে পারে। বৃহস্পতিবার (২ মে) সিলেট, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের কিছু অংশে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পরদিন থেকে বৃষ্টিপাতের এলাকা ও পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।’তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহের এলাকা বেড়েছে
আগের দিনের তুলনায় গতকাল সারা দেশে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে, ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজধানীতে আগের দিনের তুলনায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ১.৬ ডিগ্রি। ঢাকায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি।আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক জানান, আগের দিনের তুলনায় গতকাল সারা দেশে তাপমাত্রা স্থানভেদে ১ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে অঞ্চলভেদে তাপমাত্রা বেশি ছিল ১ থেকে ৮ ডিগ্রি।

গতকাল দেশের দুই জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। আগের দিন পাঁচ জেলায় থাকলেও গতকাল তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে অন্তত ১১ জেলার ওপর দিয়ে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজশাহী ও যশোর জেলায় গতকাল অতি তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল। যশোর ছাড়া খুলনা বিভাগের বাকি অংশ এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা ও নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বাকি জেলাগুলোতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল। বরিশাল বিভাগের সব জেলা, চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচ জেলা, ময়মনসিংহ বিভাগের এক জেলা ও সিলেট বিভাগের এক জেলায়ও মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মৃদু, ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। ৪২ ডিগ্রি বা এর বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সিলেটের দুই জেলায় বৃষ্টি
এদিকে দেশের অন্য কোথাও বৃষ্টি না হলেও গতকাল সিলেট বিভাগের দুই জেলায় ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১৬ মিলিমিটার ও শ্রীমঙ্গলে ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে আজও। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগের কোনো কোনো অঞ্চলেও ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

গরমে ৬ জনের মৃত্যু
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসহনীয় গরমে অসুস্থ হয়ে অন্তত ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে গতকাল মাদারীপুরের কালকিনি ও ডাসার উপজেলায় শাহাদাত্ সরদার (৫২) ও মোসলেম ঘরামী (৫৮) নামের দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। শাহাদাত্ সরদার কালকিনির পশ্চিম শিকারমঙ্গল গ্রামের মৃত সালাম সরদারের ছেলে এবং মোসলেম ঘরামী ডাসার উপজেলার পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামের মৃত ইসলাম ঘরামীর ছেলে।

পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, গতকাল সকালে প্লাস্টিক কারখানা মালিক শাহাদাত্ সরদার নিজ বাড়িতে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর বুকে ব্যথা শুরু হলে বাড়িতেই মৃত্যু হয় তাঁর। অন্যদিকে সকালে বাড়ির পাশে পাটক্ষেতে কাজে যাওয়ার পর কৃষক মোসলেম ঘরামীকে দুপুরে সেখানেই মৃত পাওয়া যায়।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, হিট স্ট্রোকে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবারের সদস্যরা।

নরসিংদী আদালত প্রাঙ্গণে গরমে অসুস্থ হয়ে গতকাল দুপুরে সুলতান উদ্দিন (৭৮) নামের এক বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। সদর উপজেলার ভেলানগর এলাকার বাসিন্দা সুলতান উদ্দিন পেশায় একজন আইনজীবীর সহকারী (মুহুরি) ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনরা জানায়, আদালতে কাজ করার সময় মানুষের ভিড়ে হঠাত্ অসুস্থ হয়ে পড়েন সুলতান উদ্দিন। ১০০ শয্যার জেলা হাসপাতালে নেওয়ার সময় পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ এন এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা মুশকিল। তবে স্বজনরা জানিয়েছে, রোগীর বুকে ব্যথা ছিল।’

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে গতকাল সকালে মাওলানা মোস্তাক আহমদ কুতুবী (৫৬) নামের এক মাদরাসা শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজারের উত্তর লেমশীখালীর ধুরুং বাজার এলাকার বাসিন্দা মোস্তাক আহমদ বোয়ালখালীর খিতাপচর আজিজিয়া মাবুদিয়া সিনিয়র মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কালুরঘাট ফেরিতে উঠে সেখানেই ঢলে পড়েন মোস্তাক আহমদ। সহকর্মী মো. মাসুম জানান, তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সক সাড়ে ১০টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।

যশোরের কেশবপুরে প্রচণ্ড গরমে কাজ করার সময় জোহর আলী সরদার (৫০) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার বড়েঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। জোহর আলীর ছেলে জসিম উদ্দীন জানান, তাঁর বাবা গতকাল সকালে বাড়ির পাশের জমিতে কেটে রাখা ধানের আঁটি বেঁধে বাড়ি নিয়ে আসেন। এরপর তিনি পানি খেতে চান। পানি দেওয়া হলেও তা পান করার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ক্ষেতে কাজ করার সময় অসুস্থ হয়ে নুর ইসলাম (৪৭) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল হরিরামপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে বলে পার্বতীপুর মডেল থানার ওসি চিত্ত রঞ্জন রায় নিশ্চিত করেছেন।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ির পাশের ভুট্টাক্ষেতে গরুর জন্য ঘাস কাটতে যান নুর ইসলাম। দুপুরের পর অন্য কৃষকরা ঘাস কাটতে গেলে তাঁকে সেখানে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরিবারের ধারণা, হিট স্ট্রোকে নুর ইসলামের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে যশোরে ধান কেটে বাড়ি ফেরার পর আহসান হাবিব (৩৭) নামের এক স্কুল শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের আমদাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ছিলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা আহসান হাবিবকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিলে সেখানে চিকিত্সক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে স্থানীয়রা হিট স্ট্রোকের কথা বললেও জরুরি বিভাগের চিকিত্সক হাসিব মোহাম্মদ আলী আহসান জানান, হিট স্ট্রোকে যে ধরনের লক্ষণ থাকে তা ছিল না। এটা সাধারণ স্ট্রোকজনিত মৃত্যু।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন যশোর, নরসিংদী, কালকিনি (মাদারীপুর), বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম), কেশবপুর (যশোর), পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি