‘জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গতকাল সোমবার প্রকাশ করে আইএলও।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে কতসংখ্যক শ্রমিক ঝুঁকিতে রয়েছে, এ নিয়ে জরিপে দেখা যায়, ২০২০ সালে যা ছিল ৬৫.৫ শতাংশ, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৭০.৯ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দুই কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার পেশাগত দুর্ঘটনার কারণে ১৮ হাজার ৯৭০ শ্রমিকের প্রাণহানি ও ২০ লাখ ৯০ হাজার শ্রমিকের অক্ষমতার ঘটনা ঘটেছে, যার প্রধান কারণ ছিল মাত্রাতিরিক্ত তাপপ্রবাহ।
আইএলও বলেছে, কর্মীদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অত্যধিক তাপের সংস্পর্শের বাইরেও যায়। এটি ‘বিপদের ককটেল’ তৈরি করছে।
এর বিপজ্জনক প্রভাবের মধ্যে রয়েছে ১৬০ কোটি শ্রমিক ইউভি রেডিয়েশনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ননমেলানোমা স্কিন ক্যান্সারের কারণে বছরে কর্মসংশ্লিষ্ট ১৮ হাজার ৯৬০ জনের মৃত্যু ঘটছে। ১৬০ কোটি শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে বায়ুদূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে।
কৃষি খাতে কীটনাশকের ঝুঁকিতে রয়েছে ৮৭ কোটির বেশি কর্মী। এতে দেখা যায়, কীটনাশকের বিষে বছরে তিন লাখের বেশি শ্রমিকের মৃত্যু ঘটছে। এ ছাড়া বছরে ১৫ হাজারের বেশি শ্রমিকের মৃত্যু ঘটছে জীবাণুবাহিত ও সংক্রামক ব্যাধির কারণে।
আইএলওর ওএসএইচ টিম লিড মানাল আজ্জি বলেন, ‘এটি স্পষ্ট যে জলবায়ু পরিবর্তন এরই মধ্যে শ্রমিকদের জন্য গুরুতর বাড়তি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে শুরু করেছে। এসব সতর্কবার্তার বিষয়ে আমাদের কর্ণপাত করা উচিত। জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে আমাদের যে ব্যবস্থা পেশাগত সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যের বিষয়টি তার অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে নীতি গ্রহণ করার পাশাপাশি কাজও করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ আইএলওর মৌলিক নীতিমালার মধ্যেই রয়েছে। সুতরাং আমাদের সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এর আগে জলবায়ু পরিবর্তনকে মানবসভ্যতার মুখোমুখি হওয়া একক বৃহত্তম স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। চরম তাপমাত্রা, বায়ুদূষণ ও সংক্রামক রোগের বিস্তার বৃদ্ধি এর কয়েকটি কারণ। ডাব্লিউএইচওর মতে, মানব স্বাস্থ্যের বিপর্যয়কর প্রভাব ও জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত লাখ লাখ মৃত্যু এড়াতে গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি অবশ্যই প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হবে। বর্তমান জাতীয় কার্বন নিঃসরণ পরিকল্পনার অধীনে বিশ্ব এই শতাব্দীতে ২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়নের পথে রয়েছে বলে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে কেউই পুরোপুরি নিরাপদে না থাকলেও নারী, শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, অভিবাসী ও গ্রিনহাউস গ্যাস সবচেয়ে কম নিঃসৃত করা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মানুষই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছেন।
১৯৯১ থেকে ২০০০ ও ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তাপমাত্রার কারণে মারা যাওয়া ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা ৮৫ শতাংশ বেড়েছে। ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ২০৫০ সাল নাগাদ এই মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ গুণ বাড়বে বলে ল্যানসেট কাউন্টডাউন ধারণা করছে।
এ ছাড়া তাপমাত্রা বাড়তে থাকা পৃথিবীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, হতাশা, এমনকি আঘাত-পরবর্তী মানসিক চাপ বাড়াতে পারে, বিশেষ করে যাঁরা এরই মধ্যে এসব নিয়ে ভুগছেন তাঁদের ওপর বিষয়গুলো প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনোবিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন।