সোমালি জলদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এডেন উপসাগরের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ সময় বুধবার দুপুর ১২টায় এই এলাকা অতিক্রম করার পর জাহাজের নাবিকদের মধ্যে পূর্ণ স্বস্তি ফিরেছে। জাহাজটি বর্তমানে ঘণ্টায় ১২ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলছে। এই গতিতে চললে আগামী ২২ এপ্রিল সকাল নাগাদ এটি দুবাইয়ের হামরিয়া বন্দরে পৌঁছবে। এই বন্দর থেকেই জাহাজের নাবিকদের তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী বিমানে অথবা জাহাজে করে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। নাবিকদের স্বাগত জানাতে মালিকপক্ষ এবং তাদের প্রতিনিধিরা ২১ অথবা ২২ এপ্রিল দুবাই রওয়ানা হবেন। এসআর শিপিংসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে ইইউ নেভির যে দুটি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে পাহারা দিয়ে সোমালিয়া উপকূল থেকে নিয়ে আসছিল সেই দুটি জাহাজ এখনো পাহারায় আছে।
এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক এখন জাহাজে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। একটি জাহাজ চলার ক্ষেত্রে যার যে দায়িত্ব রয়েছে সেই দায়িত্ব পালনসহ খাওয়া-দাওয়া সবকিছুই এখন স্বাভাবিক রয়েছে। মালিকপক্ষ জাহাজটির গতিপথ এবং প্রতিটি ক্ষণের চিত্র লাইভ ধারণ করছে। নাবিকদের পরিবারও প্রতিনিয়ত জানছে তাদের খবরাখবর। নাবিকদের দেশে ফেরার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন স্বজনরা।
কেএসআরএম-এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম বুধবার বিকালে যুগান্তরকে এমভি আবদুল্লাহর সর্বশেষ আপডেট জানান। তিনি বলেন, সবকিছু যদি ঠিক থাকে তাহলে এমভি আবদুল্লাহ আগামী ২২ এপ্রিল সকালে দুবাইয়ের হামরিয়া বন্দরে পৌঁছবে। আমাদের জাহাজের সঙ্গে এখনো নেভির দুটি জাহাজ কাছাকাছি অবস্থানে আছে। জাহাজের ক্যাপ্টেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে জাহাজের স্পিড, ফোর্স সব মেনটেইন করছেন।
অন্যদিকে জাহাজের মালিকপক্ষ ডিজিটাল ম্যাপের মাধ্যমে এমভি আবদুল্লাহর সার্বক্ষণিক গতিবিধি অনলাইনে পর্যবেক্ষণ করছে। ওই জাহাজ থেকে ধারণ করা বেশকিছু ছবিও সরবরাহ করেছে এসআর শিপিং। সেখানে দেখা যায়, জাহাজের নাবিকরা কখনো মেসরুমে খাওয়া-দাওয়ায় ব্যস্ত। কখনো বা ছবির জন্য পোজ দিচ্ছেন। কখনো মেতে উঠছেন গল্প-আড্ডায়। নাবিকদের এমন স্বস্তিদায়ক পরিবেশের ছবি দেখে দেশে অবস্থানরত তাদের স্বজনরাও বেশ উৎফুল্ল।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের ভাই আসিফ নুর বুধবার যুগান্তরকে বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক আছে। ভাই ভালো আছেন। প্রতিমুহূর্তের খবরাখবর পাচ্ছি। এখন ভাইয়ের ফেরার অপেক্ষায় আছি।
১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাফুতো বন্দর থেকে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে জাহাজটি দুবাই যাচ্ছিল। জলদস্যুরা জাহাজটি নিয়ে যায় সোমালিয়া উপকূলে। জিম্মি করে জাহাজের ২৩ নাবিককে। দাবি করে মুক্তিপণ। এরপর তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে সমঝোতা এবং মুক্তিপণের ডলার দস্যুদের কাছে পৌঁছানোর ৮ ঘণ্টা পর ছিনতাইয়ের ৩৩ দিনের মাথায় জাহাজটি থেকে নেমে যায় জলদস্যুরা। অবসান ঘটে জাহাজ ও ২৩ নাবিকের জিম্মিদশার।