ঢাকা ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৫:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪
  • ৪৬ বার
বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও তার ২৩ নাবিককে জিম্মি করা সোমালি জলদস্যুদের সঙ্গে জাহাজ মালিকপক্ষের প্রথমবারের মতো যোগাযোগ হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দস্যুরা জাহাজ মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তবে মুক্তিপণ নিয়ে কোনো কথা হয়নি বলে কবির গ্রুপের ভাষ্য।

ভারত মহাসাগরে গত ১২ মার্চ জাহাজসহ নাবিকদের জিম্মি করার ঘটনার ৯ দিনের মাথায় যোগাযোগ স্থাপনকে অনেকে ইতিবাচক মনে করছেন।

জানতে চাইলে জাহাজ মালিক চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম গতকাল দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জলদস্যুরা সরাসরি যোগাযোগ করেনি। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তারা বুধবার দুপুর ১২টার দিকে আমাদের (মালিকপক্ষ) সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের কাছে জাহাজ ও ২৩ নাবিক জিম্মি থাকার কথা জানিয়েছে। তবে তারা এখনো কোনো মুক্তিপণ দাবি করেনি।
জিম্মি ২৩ নাবিকের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তারা কী জানিয়েছে—এ প্রশ্নের জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘তারা বলেছে, নাবিকদের সবাই সুস্থ ও ভালো আছেন। আমরা মনে করছি আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। আশা করছি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নাবিকদের দ্রুত মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।’

জিম্মিকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী।

গতকাল বিকেলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যোগাযোগ হওয়ার বিষয়টি বড় ইতিবাচক ঘটনা। মুক্তি নিয়ে সমঝোতার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। এখন তাদের (দস্যু) দাবির ওপর নির্ভর করবে জাহাজ ও নাবিকদের মুক্তি। দাবি নিয়ে জাহাজ মালিক ও ইনস্যুরেন্স কম্পানি একসঙ্গে কাজ করবে।’

জিম্মি মুক্তি প্রক্রিয়ায় কত দিন লাগতে পারে—এ প্রশ্নের জবাবে ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, ‘তাদের ডিমান্ডের পর দুই পক্ষের মধ্যে দর-কষাকষিও হতে পারে।

সমঝোতা হলে লেনদেন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সপ্তাহ দুয়েক লাগতে পারে। আর নাবিকরা কোন পথে দেশে ফিরবেন তা-ও সমঝোতা চুক্তিতে থাকতে পারে। আলোচনা শুরু হয়েছে, এখন একের পর এক ধাপ সম্পন্ন হবে। পুরো বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।’

জাহাজ মালিক কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেহেরুল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তাদের (তৃতীয় পক্ষ) সঙ্গে ১০/১৫ মিনিট কথা হয়েছে। জাহাজ ও নাবিকদের মুক্তির ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে আজকে (গতকাল) কোনো মুক্তিপণ দাবি করেনি তারা। আশা করি জাহাজ ও নাবিকদের জলদস্যুদের কাছ থেকে দ্রুত মুক্ত করতে পারব।’

গত কয়েক দিনে শুধু নাবিকদের সঙ্গেই বিক্ষিপ্তভাবে যোগাযোগ হচ্ছিল জাহাজ মালিকপক্ষের। জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় একটা অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ কাজ করছিল। এরই মধ্যে জাহাজটি নিয়ে সাগরে কয়েকবার অবস্থান পাল্টেছে জলদস্যুরা। সর্বশেষ তারা নিজের দেশ সোমালিয়ার উপকূলের একেবারে কাছে সরে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতীয় নৌবাহিনী সম্প্রতি সোমালি জলদস্যুদের আরেকটি দলের হাতে আটক মাল্টার জাহাজ এমভি রুয়েন উদ্ধার করাতেই বাংলাদেশি জাহাজটিকে সোমালি উপকূলের কাছে সরিয়ে নেওয়া হয়। আটক জাহাজটিতে জলদস্যুদের সংখ্যাও বেড়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

গোপনীয়তা রাখার তাগিদ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র বলেন, জিম্মি অবস্থা থেকে নাবিকদের মুক্তির প্রক্রিয়াটি খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। দস্যুরা মুক্তিপণ দাবি করলেও উদ্ধার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত পুরো বিষয়টি গোপন রাখা জরুরি। এখন যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমঝোতা করে নাবিকদের মুক্ত করতে হবে। এর আগে একই মালিকের জাহাজ জাহানমনির নাবিকদেরও মুক্ত করতে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছিল।

পূর্ব আফ্রিকার উপকূলে জলদস্যুতা প্রতিরোধে সক্রিয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স তাদের ‘অপারেশন আটলান্টার’ অংশ হিসেবে এমভি আবদুল্লাহর ওপর নজর রাখছে। ইউরোপীয় এই বাহিনী জাহাজটির জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালানোর প্রস্তাব দিলেও নাবিকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার তাতে সায় দেয়নি বলে এরই মধ্যে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব খুরশেদ আলম।

প্রসঙ্গত, আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী বেসরকারি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিকের সবাইকে জিম্মি করে।

এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ‘এমভি জাহানমনি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিক ও ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ

আপডেট টাইম : ১০:৩৫:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪
বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও তার ২৩ নাবিককে জিম্মি করা সোমালি জলদস্যুদের সঙ্গে জাহাজ মালিকপক্ষের প্রথমবারের মতো যোগাযোগ হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দস্যুরা জাহাজ মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তবে মুক্তিপণ নিয়ে কোনো কথা হয়নি বলে কবির গ্রুপের ভাষ্য।

ভারত মহাসাগরে গত ১২ মার্চ জাহাজসহ নাবিকদের জিম্মি করার ঘটনার ৯ দিনের মাথায় যোগাযোগ স্থাপনকে অনেকে ইতিবাচক মনে করছেন।

জানতে চাইলে জাহাজ মালিক চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম গতকাল দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জলদস্যুরা সরাসরি যোগাযোগ করেনি। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তারা বুধবার দুপুর ১২টার দিকে আমাদের (মালিকপক্ষ) সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের কাছে জাহাজ ও ২৩ নাবিক জিম্মি থাকার কথা জানিয়েছে। তবে তারা এখনো কোনো মুক্তিপণ দাবি করেনি।
জিম্মি ২৩ নাবিকের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তারা কী জানিয়েছে—এ প্রশ্নের জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘তারা বলেছে, নাবিকদের সবাই সুস্থ ও ভালো আছেন। আমরা মনে করছি আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। আশা করছি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নাবিকদের দ্রুত মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।’

জিম্মিকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী।

গতকাল বিকেলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যোগাযোগ হওয়ার বিষয়টি বড় ইতিবাচক ঘটনা। মুক্তি নিয়ে সমঝোতার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। এখন তাদের (দস্যু) দাবির ওপর নির্ভর করবে জাহাজ ও নাবিকদের মুক্তি। দাবি নিয়ে জাহাজ মালিক ও ইনস্যুরেন্স কম্পানি একসঙ্গে কাজ করবে।’

জিম্মি মুক্তি প্রক্রিয়ায় কত দিন লাগতে পারে—এ প্রশ্নের জবাবে ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, ‘তাদের ডিমান্ডের পর দুই পক্ষের মধ্যে দর-কষাকষিও হতে পারে।

সমঝোতা হলে লেনদেন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সপ্তাহ দুয়েক লাগতে পারে। আর নাবিকরা কোন পথে দেশে ফিরবেন তা-ও সমঝোতা চুক্তিতে থাকতে পারে। আলোচনা শুরু হয়েছে, এখন একের পর এক ধাপ সম্পন্ন হবে। পুরো বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।’

জাহাজ মালিক কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেহেরুল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তাদের (তৃতীয় পক্ষ) সঙ্গে ১০/১৫ মিনিট কথা হয়েছে। জাহাজ ও নাবিকদের মুক্তির ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে আজকে (গতকাল) কোনো মুক্তিপণ দাবি করেনি তারা। আশা করি জাহাজ ও নাবিকদের জলদস্যুদের কাছ থেকে দ্রুত মুক্ত করতে পারব।’

গত কয়েক দিনে শুধু নাবিকদের সঙ্গেই বিক্ষিপ্তভাবে যোগাযোগ হচ্ছিল জাহাজ মালিকপক্ষের। জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় একটা অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ কাজ করছিল। এরই মধ্যে জাহাজটি নিয়ে সাগরে কয়েকবার অবস্থান পাল্টেছে জলদস্যুরা। সর্বশেষ তারা নিজের দেশ সোমালিয়ার উপকূলের একেবারে কাছে সরে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতীয় নৌবাহিনী সম্প্রতি সোমালি জলদস্যুদের আরেকটি দলের হাতে আটক মাল্টার জাহাজ এমভি রুয়েন উদ্ধার করাতেই বাংলাদেশি জাহাজটিকে সোমালি উপকূলের কাছে সরিয়ে নেওয়া হয়। আটক জাহাজটিতে জলদস্যুদের সংখ্যাও বেড়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

গোপনীয়তা রাখার তাগিদ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র বলেন, জিম্মি অবস্থা থেকে নাবিকদের মুক্তির প্রক্রিয়াটি খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। দস্যুরা মুক্তিপণ দাবি করলেও উদ্ধার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত পুরো বিষয়টি গোপন রাখা জরুরি। এখন যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমঝোতা করে নাবিকদের মুক্ত করতে হবে। এর আগে একই মালিকের জাহাজ জাহানমনির নাবিকদেরও মুক্ত করতে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছিল।

পূর্ব আফ্রিকার উপকূলে জলদস্যুতা প্রতিরোধে সক্রিয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স তাদের ‘অপারেশন আটলান্টার’ অংশ হিসেবে এমভি আবদুল্লাহর ওপর নজর রাখছে। ইউরোপীয় এই বাহিনী জাহাজটির জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালানোর প্রস্তাব দিলেও নাবিকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার তাতে সায় দেয়নি বলে এরই মধ্যে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব খুরশেদ আলম।

প্রসঙ্গত, আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী বেসরকারি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিকের সবাইকে জিম্মি করে।

এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ‘এমভি জাহানমনি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিক ও ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়।